Announcement

Collapse
No announcement yet.

বাংলার সূফীদের রক্তঝরা ইতিহাস ।। পর্ব-১ ।। শাহ মাখদুম রুপোশ (১২১৬-১৩১৩) ।। প্রথম খণ্ড

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বাংলার সূফীদের রক্তঝরা ইতিহাস ।। পর্ব-১ ।। শাহ মাখদুম রুপোশ (১২১৬-১৩১৩) ।। প্রথম খণ্ড

    বাংলায় ইসলামের প্রচার-প্রসারে সূফী সাধকদের অবদান অবদান অনস্বীকার্য। তাদের হাত ধরেই মূলত এ দেশে ইসলামের আবির্ভাব। কিন্তু,ইসলাম প্রচার-প্রসারে তাদের ঘাম আর হিকমত এর ব্যাপারে যতটুকু আলোচনা হয়েছে তার কিঞ্চিৎ পরিমাণও তাদের রক্ত আর তরবারির সুন্নতের ব্যাপারে কোথাও আলোচনা করতে দেখা যায় নি।আজ তেমনি একজন সূফী-সাধকের তরবারির সুন্নত নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।তিনি হলেন রাজশাহীর শাহ মাখদুম রুপোশ।

    শাহ মখদুমের প্রকৃত নাম আব্দুল কুদ্দুস। 'শাহ','মখদুম','রুপোশ' ইত্যাদি তার উপাধি। তিনি ২রা রজব,৬১৫ হিজিরী মোতাবেক ১২১৬ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান ইরাকের বাগদাদ নগরীতে বিখ্যাত সূফী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সায়্যিদ আযাল্লাহ শাহ।পিতার দিক থেকে তার বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী হয়ে হযরত আলী রা. এর বংশধর ।

    শাহ মখদুমের বাল্যকাল কাটে বাগদাদ নগরীতে। ইলম চর্চার হাতে-খড়ি হয় তার পিতা আযাল্লাহ শাহের মাধ্যমে। আযাল্লাহ শাহ তৎকালীন সময়ের একজন বিশিষ্ট আলেম এবং ধার্মিক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। শিশু বয়সেই তিনি তার পুত্র আব্দুল কুদ্দুস শাহ মখদুমকে তার নিজের কাদেরিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। কিছুদিনের মধ্যেই শাহ মখদুমের তীক্ষ্ণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। অল্প বয়সেই তিনি কুরআন, হাদিস, ফিকহ, আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন।

    ১২৫৮ সালে তাতারীদের হাতে বাগদাদ নগরীর পতন ঘটে । বাগদাদ নগরীর পতন হওয়ার আগেই পিতা আযাল্লাহ শাহের সাথে শাহ মখদুম বাগদাদ ত্যাগ করে ভারত অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।বাগদাদ ছেড়ে যাওয়ার পর শাহ মখদুমের পরিবার কিছুকাল সিন্ধুতে অবস্থান করেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন সময়ে বিখ্যাত সূফী জালাল উদ্দীন শাহ সুরের মাদ্রাসায় তিনি ভর্তি হন এবং ইসলামের উচ্চতর বিষয়ে পড়াশোনা করেন। সে সময় তাকে “মখদুম” খেতাব দিয়ে ভূষিত করা হয়।সেখানে পড়াশোনা শেষ করে দিল্লিতে পিতার কাছে ফিরে যান।

    সেসময় দিল্লির সুলতান ছিলেন নাসিরুদ্দিন মাহমুদ। মাহমুদ ধার্মিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং দিনের অধিক সময় তিনি নামাজ এবং কুরআন লিপিবদ্ধকরণে ব্যয় করতেন। তার শ্বশুর গিয়াসউদ্দিন বলবনই মূলত শ্বাসনকার্জ পরিচালনা করতেন।তাদের উভয়ের সাথে শাহ মাখদুম এবং তার পিতা আযাল্লাহ শাহের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল।

    দিল্লীতে বসবাসকালীন সময়ে আযাল্লাহ শাহ তার তিন পুত্র সৈয়দ আহমেদ আলী তন্নরী ওরফে মিরান শাহ, শাহ মখদুম এবং সৈয়দ মনির আহমেদ শাহকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে পূর্ব ভারতে যাওয়ার আদেশ দান করেন। হালাকু খার মৃত্যুর পর আযাল্লাহ শাহ বাগদাদে ফিরে আসেন এবং তার তিন পুত্র ইসলাম প্রচারে ভারতে থেকে যান।

    ১২৬৬ সালে সুলতান মাহমুদ নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার পর গিয়াসউদ্দিন বলবন মসনদে বসেন।সেই সময় গৌড়ের শ্বাসক ছিলেন তুঘরিল খান। তিনি দিল্লীর সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। বিদ্রোহ দমন করতে বৃদ্ধ বয়সে গিয়াসউদ্দীন বলবন ১২৭৮ সালে গৌড়ে বিদ্রোহ দমন করতে আসেন। গিয়াসউদ্দীন বলবনের যুদ্ধযাত্রার সময় শাহ মখদুম তার তিন ভাই এবং শতাধিক অনুসারী নিয়ে গৌড়ের উদ্দেশ্যে তাদের অনুগামী হন। গিয়াসউদ্দীন বলবন এর সাথে যুদ্ধে তুঘরিল খান পরাজিত হলে বোখরা খানকে সুলতান বানানো হয়। বোখরা খান হলেন গিয়াসউদ্দীন বলবনের পুত্র। বোখরা খান আলেম এবং ধর্ম-প্রচারকদের খুব সম্মান করতেন। সেই সূত্রে তার সাথে শাহ মখদুমের গভীর সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তিনি গৌড়ে বসবাস শুরু করেন।

    ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে শাহ মখদুম রূপোশ গৌড় থেকে বের হয়ে দক্ষিণ দিকে যাত্রা শুরু করেন। নৌপথে যাত্রা করে তিনি নোয়াখালীতে এসে পৌঁছান। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী রেল স্টেশন থেকে ১০/১২ মাইল দূরে শ্যামপুর নামক গ্রামে তিনি তার প্রথম আস্তানা স্থাপন করে ধর্ম প্রচারের কাজ অব্যাহত রাখেন। ১২৮৭ সালে কাঞ্চনপুরে তিনি একটি খানকা নির্মাণ করেন। এসময় তার অনেক ভক্ত অনুরাগী তৈরি হয়। তার অনুপম চরিত্র, আর ইসলামের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে শত শত মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আসেন।

    তিনি নোয়াখালী অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে যাওয়ার আগে তার বিশ্বস্ত শিষ্য তুরকান শাহকে প্রধান করে কতিপয় শিষ্যকে মহাকালহড় তথা বর্তমান রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব প্রদান করেন। অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে তুরকান শাহ ও তার শিষ্যরা রাজশাহীতে আসেন। বর্তমান রাজশাহী শহরের দরগাহপাড়ায় এক গহীন জঙ্গলে আস্তানা স্থাপন করেন এবং সেখান থেকে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।মখদুম শাহের মত তুরকান শাহের জন্মও বর্তমান ইরাকের বাগদাদ নগরে এবং তিনি আব্দুল কাদের জিলানী হয়ে হযরত আলী রা. এর বংশধর।

    সেই সময় রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর দেও মূর্তি এবং যত্রতত্র মঠ মন্দির ছিলো। এসব জায়গায় নরবলী দেওয়ার মতো জঘন্য প্রথা প্রচলিত ছিলো। তখন অত্র অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন সামন্তরাজ কাপলিক তন্ত্রে বিশ্বাসী দুই ভাই। তাদের একজনের নাম হলো আংশুদেও চান্দভন্ডীও বর্মভোজ এবং অপর ভাই হলেন আংশুদেও খেজুর চান্দখড়্গ গুজ্জভোজ। তারা দুইজনেই প্রচন্ড অত্যাচারী এবং অহংকারী শাসক ছিলেন। প্রশাসন ব্যাবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ, অবিচার আর বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিলো। এমতাবস্থায় তুরকান শাহ এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের শান্তির বাণী প্রচার শুরু করেন। উন্নত চরিত্র আর মহানুভবতার জন্য কিছুদিনের মধ্যেই লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে আসা শুরু করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা এতই বাড়তে থাকে যে বিষয়টি দেওরাজদ্বয়ের নজরে চলে আসে। দেওরাজদ্বয় তুরকান শাহকে নানা ভাবে বাধা দিতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই তার ধর্ম প্রচার থামাতে না পেরে তার বিরুদ্ধে একদল সেনা প্রেরণ করে। তুরকান শাহ, তার সাথে থাকা শিষ্যদের নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা হালকা অস্ত্র দিয়েই দেওসেনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান এবং দেওরাজদ্বয়ের সেনাবাহিনীর সাথে এক অসম লড়ায়ে লিপ্ত হন।দেওরাজদ্বয়ের বিশাল সেনাবাহিনী আর তুরকান শাহের হালকা অস্ত্র সজ্জিত বাহিনীর এ অসম যুদ্ধে তুরকান শাহের সেনাবাহিনী পরাজিত হন এবং তুরকান শাহ নিজে শাহাদতবরণ করেন।

    তুরকান শাহের শাহাদতের খবর পেয়ে শাহ মখদুম রুপোশ ১২৮৯ সালে নোয়াখালী হতে রাজশাহী অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।

  • #2
    এই ইতিহাসের তথ্যগুলো কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে ভাই? জানালে উপকৃত হব। জাযাকাল্লাহ
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      ভাইজান! বাংলাদেশের এমন ইতিহাস কোন বই এ পাওয়া যাবে বলতে পারবেন?

      Comment

      Working...
      X