Announcement

Collapse
No announcement yet.

বাংলার সূফীদের রক্তঝরা ইতিহাস ।। পর্ব-২।। বাবা আদম রহ.

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বাংলার সূফীদের রক্তঝরা ইতিহাস ।। পর্ব-২।। বাবা আদম রহ.

    যদিও অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে আফগানে জন্মগ্রহনকারী তুর্কী বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি কর্তৃক ১২০৪ সালে বাংলা জয়ের মাধ্যমে বাংলায় ইসলামের গোড়াপত্তন হয়েছিল এবং ইসলামি শ্বাসনের(শাসনের) সূচনা হয়েছিল, কিন্তু তার বহু পূর্ব হতেই বহু মুহাজির সূফী সাধকদের রক্তে বাংলার জমিন সিক্ত হয়ে দ্বীনি ইসলামের জন্য উর্বর হয়ে আসছিল।

    ১৯৮৭ সালে লালমনিরহাট জেলার পঞ্চগ্রামে জঙ্গল খননের সময় একটি প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এর একটি ইটে কালেমা তাইয়্যেবা ও সন ৬৯ হিজরি লেখা রয়েছে। এর থেকে অনুমান করা হয়, মসজিদটি হিজরি ৬৯ অর্থাৎ ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে স্থাপন কিংবা সংস্কার করা হয়েছিলো।

    রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.)-এর মামা, মা আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাস (রা.) ৬২০ থেকে ৬২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেন (পৃ. ১২৬)। অনেকে অনুমান করেন, পঞ্চগ্রামের মসজিদটিও তিনি নির্মাণ করেন যা ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কার করা হয়েছিলো।*[৮]

    আবার, বাংলার অনেক অঞ্চল বখতিয়ার খলজির আর অনেক পরে বিজিত হয়, যেমন- সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, মুন্সিগঞ্জ, খুলনা ইত্যাদি।

    ইনশাআল্লাহ, আজ হযরত বাবা আদম শহিদ রহ. সম্পর্কে আলোচনা করব, যিনি বখতিয়ার খলজির বাংলা জয়ের বহু পূর্বে ইসলামের জন্য বিক্রমপুর-মুন্সিগঞ্জের মাটিকে নিজের রক্ত দ্বারা সিক্ত করেছিলেন।

    প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত শহর তায়েফের সন্তান বাবা আদম রহ.। জন্ম খ্রিষ্টীয় ১০৯৯ সালে। শিক্ষার হাতেখড়ি পবিত্র শহর মক্কা নগরীতে।এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য হিজরত করে চলে আসেন বাগদাদে। দ্বীনের আলো দিকদিগন্তে ছড়িয়ে দিতে একদিন বাগদাদ ছাড়েন।[৭]

    কথিত আছে যে, বাবা আদম জনৈক হজ্জযাত্রীর মুখে বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ এলাকায় হিন্দু রাজা বল্লাল সেনের মুসলিম নির্যাতনের কাহিনী শুনতে পান।[৬] তিনি এই অত্যাচারের কথা শুনে মজলুম মুসলমানদের সাহায্য করতে তার সাথীদের নিয়ে নৌ-পথে সমন্দর বন্দর(চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রামে ইসলাম by ড. আব্দুল করিম, পৃঃ ৫,৬) হয়ে বিক্রমপুরের আব্দুল্লাহপুরে এসে উপস্থিত*হন।সেখানেই তিনি তাবু ফেলেন।সম্ভবত, তিনি রাজা বল্লাল সেনকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন নতুবা জিযিয়া প্রদান নতুবা যুদ্ধের আহ্বান করেছিলে।ইসলামের গভীর ইলমের অধিকারী হওয়ায় এমনটা না হওয়ার কথা নয়।আসলে, তৎকালীন বাংলায় তাদের ইসলামের দাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে এখনো কোন পান্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয়নি।এদিকে রাজা বল্লাল সেনও তাদের বিরুদ্ধে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।

    একদিন বাবা আদমের সাথীরা খাওয়ার জন্য একটি গরু জবাই করলে তার একটি গোশতের টুকরা দূর্ভাগ্যবশত কাক অথবা অন্য কোন মাধ্যমে বল্লাল সেনের সেনা ক্যাম্পের কাছে গিয়ে পড়ে।সেনারা বিষয়টি রাজাকে অবহিত করলে, তিনি অত্যন্ত রাগান্বিত হন এবং সেনা-প্রধানকে বাবা আদমের উপর আক্রমণের নির্দেশ দেন।বাবা আদমের সাথীরাও আত্মরক্ষার্থে তলোয়ার কোষমুক্ত করেন।
    বাবা আদম সুদূর আরব হতে হিজরত করে আসায়, আশেপাশে কোন মুসলিম অঞ্চল না থাকায় তার সৈন্য সংখ্যা কম এবং অস্ত্র-শস্ত্র হালকা হওয়ায় স্বাভাবিক। অপরদিকে, বল্লাল সেন স্থানীয় হিন্দু রাজা হওয়ায়, তার রাজ্যের প্রতিবেশি রাজ্যগুলোও হিন্দু রাজ্য হওয়ায় তার সেনাবাহিনী বিশাল এবং হাতিয়ার ভারী হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু, বাবা আদম এসব কিছুর পরোয়া না করে, শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে যুদ্ধে সামনের দিকে পা বাড়ান৷ এ যুদ্ধে রাজা বল্লাল সেনের বিরুদ্ধে তিনি যে বীরত্ব দেখিয়েছেন, সেটি বঙ্গে না হয়ে আরব, পারস্য কিংবা অন্য কোন প্রসিদ্ধ স্থানে হলে সেটি অবশ্যই ইতিহাসের পাতায় সোনালী অক্ষরে লিখা থাকতো। রচিত হতো এর উপর ভিত্তি করে শত শত উপন্যাস।

    একদিকে রাজা বল্লাল সেনের বিশাল সেনাবাহিনী অপরদিকে, বাবা আদমের নেতৃত্বে ঈমানের বলে বলিয়ান আরবের শার্দূলদের ক্ষুদ্র একটি দল।যুদ্ধ চলতে থাকে একদিন, দুদিন, তিনদিন, চারদিন এভাবে লাগাতার চৌদ্দ দিন। আসলে, এটি এমন এক যুদ্ধ যেখানে বাবা আদম ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে রাজা বল্লাল সেনের বিশাল সেনাবাহিনীকে নিঃশেষ করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারছিলেন না, অপরদিকে রাজা বল্লাল সেনের বাহিনীও বাবা আদমের বীরত্বের কাছে পেরে উঠছিলেন না।

    ওদিকে , রাজা বল্লাল সেন রাজ প্রসাদে প্রতিনিয়ত অস্থির হতে থাকেন।জয়- পরাজয় কোন কিছুর আভাস পাচ্ছিলেন না।আত্ম-অহমিকায় তিনি সন্ধিও করতে পারছিলেন না।

    পনেরতম দিনে রাজা আমৃত্যু লড়াইয়ের শপথ নিয়ে, নিজে রনাঙ্গনে এসে উপস্থিত হন।কিন্তু, তিনি বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না।আসলে, বাবা আদমের এভাবে তার বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লাগাতার চৌদ্দ দিন সম্মুখ সমরে দাড়িয়ে থাকা সহজ ব্যাপার ছিল না।

    রণাঙ্গনে আসার পূর্বে অহংকারী রাজা রাজধানীতে এক বিশাল অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে মহিলাদের নির্দেশ দেন, যেন রাজার পরাজয় হয়েছে জানতে পেলে সবাই অগ্নিকুন্ডে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।আসার সময় তিনি তার পোষাকের নিচে একটি কবুতর লুকিয়ে নিলেন।বলে গেলেন, কবুতরটি উড়ে এলে বুঝতে হবে রাজার পরাজয় হয়েছে।
    রণাঙ্গনে রাজা এক মরণপণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হলেন, অপরদিকে মুসলমানরাও তাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে রাজার সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করতে থাকেন।রাজার বিশাল সেনাবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণের মুখে মুসলমানরা লড়াই করতে করতে একের পর একে সবাই শহিদ হতে থাকেন।একসময় বাবা আদমও বীর বিক্রমে লড়াই লড়াই করতে আপন প্রভূর সাথে কৃত ওয়াদা সম্পন্ন করলেন এবং মুসলমানরা পরাজয় বরণ করলেন।

    যুদ্ধে স্বয়ং রাজা নিজে অংশগ্রহণ করেছিলেন, ফলে, তার পোশাক রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিলো। যুদ্ধ শেষে তিনি পুকুরে নেমে তার পোশাকটি ধুতে থাকেন।এমন সময় হঠাৎ কাপড়ের ভিতর হতে কবুতরটি বের হয়ে রাজ প্রসাদের দিকে উড়ে যায়। তার আগমনে রমণীকূল একে রাজার পরাজয় মনে করে অগ্নিকুণ্ডে ঝাপ দিয়ে আত্মাহুতি দেন।

    এদিকে প্রচন্ড উৎকন্ঠা নিয়ে রাজা ছুটলেন প্রসাদের দিকে।এসে দেখেন সবাই পুড়ে শেষ।শোকের প্রাবল্যে দ্বিকবিদিক হারিয়ে তিনিও সেই অগ্নিকুণ্ডে ঝাপ দিয়ে ইহকালেই জীবন্ত নরকে প্রবেশ করলেন।[১,২,৩]

    পরবর্তীতে, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি (১২০৪ খৃঃ) বাংলা বিজয় করলেও বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ এলাকা আরও দীর্ঘদিন মুসলিম নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। এমনকি রাজা লক্ষ্মণ সেন নদীয়া থেকে পালিয়ে এসে বিক্রমপুরেই শ্বাসন চালাতে থাকেন। শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের আমলে (১৩০১-১৩২২) উক্ত এলাকা স্থানীয়ভাবে মুসলমানদের শ্বাসনে আসে।[৬] ১৪৮৩ খৃস্টাব্দে জালালুদ্দিন ফাতেহ শাহ আমলে কাফুর নামক জনৈক ব্যক্তি বাবা আদমের স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন যেটি বাবা আদমের মসজিদ নামে পরিচিত [৪,৫]। ১৯৪৮ সাল হতে মসজিদটি প্রাত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর পরিচালনা করে আসছেন।অনুমান করা হয়, মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত কবরটি বাবা আদমের, কিন্তু তা নিয়ে মতভেদ আছে।

    তথ্যসূত্রঃ
    ১. এ হিস্ট্রি অব সুফিজম ইন বেঙ্গল। ড.এনামুল হক।পৃষ্ঠাঃ ২০৮-২১১
    ২.বাংলাদেশে ইসলামের আগমন। ড. এ কে এম নাজির আহমেদ।পৃষ্ঠাঃ ২০-২৭
    ৩.বরিশালে ইসলাম।আজিজুল হক বান্না।পৃষ্ঠাঃ ৮১-৮৫
    ৪.উইকিপিডিয়া
    ৫.বাংলাপিডিয়া
    ৬.দৈনিক সংগ্রাম, ১৯/০৪/২০১৪
    ৭.যুগান্তর, ১/১/২০২১
    ৮.বাংলাদেশ টুডে, ১৪/০১/২০১৯

  • #2
    যাজাকুমুল্লাহ।
    ইনশাআল্লাহ চালিয়ে যান ভাই। আল্লাহ তাআলা আপনার হাতকে কবুল করুন।

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ্ ভাইজান! খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, আল্লাহ তায়া-লা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন,আমিন।

      Comment


      • #4
        আলহামদুলিল্লাহ, তথ্যসূত্রসহ লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগল। জাযাকাল্লাহ
        আশা করি আগামী দিনেও আপনার এই খেদমতের ধারা অব্যাহত রাখবেন।
        আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দান করুন। আমীন
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment


        • #5
          mash ALLAH... vai onk valo laglo..

          Comment


          • #6
            Originally posted by ibn mumin 2021 View Post
            mash ALLAH... vai onk valo laglo..
            ফোরামে বাংলায় লেখার জন্য বলা হয়। মডারেটর ভাইয়েরা এমনই বলেন।
            গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

            Comment


            • #7
              মা-শা-আল্লাহ, অনেক ভাল একটি পোষ্ট হয়েছে ভাই। শিক্ষণীয়, ঈমান জাগানিয়া।

              Comment

              Working...
              X