গোস্তাখে রাসুলের ভয়ঙ্কর পরিণতি
শাইখ আহমাদ শাকির রহ.
*****************
‘শাইখ তাহা হুসাইন তখন (الجامعة المصرية) পুরাতন মিসর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। (বর্তমান কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়)। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তাকে সরকারি খরচে ইউরোপ পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। মাননীয় সুলতান হুসাইন রহ. আপন স্নেহ ও আনুকূল্য প্রদান করে তাকে সম্মানিত করার মনস্থ করেন। তিনি নিজ বাসভবনে তাকে আমন্ত্রণ জানান—ধন্য করেন মহামূল্যবান উপহার দিয়ে।
ওয়াক্ফ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত মসজিদগুলোর খতিবদের মধ্যে জনৈক খতিব খুব শক্তিমান বক্তা ছিলেন। তার অলঙ্কারপূর্ণ উচ্চ মার্গের বাকশৈলী শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তার নাম শাইখ মুহাম্মদ আল-মাহদি। তিনি হলেন ‘মসজিদে ইজবান’-এর খতিব। সুলতান হুসাইন রহ. নিয়মিত জুমার সালাত আদায় করতেন।
এক জুমাবার তিনি ‘আবিদিন আল-আমির’ ভবনের পাশে অবস্থিত ‘মসজিদে মাবদুলি’তে সালাত আদায় করেন। ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেই জুমাবারের জন্য চারুবাক খতিব সাহেবকে ওই মসজিদে খুতবা দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। খতিব সাহেব মনে মনে মাননীয় সুলতানের প্রশংসা করার সিদ্ধান্ত নেন। বিশেষভাবে শাইখ তাহা হুসাইনকে সম্মানিত করার বিষয়টিকে তিনি খুব গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। অবশ্য এটি যথার্থই ছিল। কিন্তু সেদিন তার বাগ্মিতা তাকে চরমভাবে প্রতারিত করে। উঁচু মানের সাহিত্যপূর্ণ প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি সীমা লঙ্ঘন করে বসেন। এমন এক মারাত্মক ভুল করে ফেলেন, যা কখনোই শোধরানো সম্ভব নয়।
খুতবায় তিনি বলে ফেলেন: (جاءه الأعمى فما عبس في وجهه وما تولى) ‘তার কাছে এলো এক অন্ধ—কিন্তু তিনি ভ্রূকুঞ্চিতও করেননি, মুখও ফিরিয়ে নেননি।’ সেদিন মসজিদে আমার পিতা শাইখ মুহাম্মদ শাকির রহ.ও ছিলেন। সালাত শেষে মুসল্লিদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করেন: ‘আপনাদের কারো সালাত আদায় হয়নি। সবাই পুনরায় জোহরের সালাত আদায় করে নিন।’ সবাই জোহরের সালাত আদায় করে নেয়। তারপর তিনি ঘোষণা করেন: ‘খতিব সাহেব রাসুলুল্লাহকে ইঙ্গিতে মন্দ বলে কুফরি করেছেন—যদিও তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেননি।’
একবার রাসুলুল্লাহ স. কুরাইশের বড় বড় সর্দারদের ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। এমন সময় অন্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম র. এসে তাঁকে প্রশ্ন করে বিব্রত করলেন। ফলে তিনি ভ্রূকুঞ্চিত করলেন এবং বিরক্তিতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ স.-কে এই প্রসঙ্গে সাবধান করে সুরা আবাসা নাজিল করেন। এই বোকা মূর্খ খতিব মাননীয় সুলতানের চাটুকারিতা করতে গিয়ে ইঙ্গিতে তার আচরণকে রাসুলুল্লাহ স. এর চেয়েও উত্তম বলে ফেলেছে। অবশ্য সুলতান তার এই চাটুকারিতার মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করুন। খতিবের এই অপকর্মে কোন মুসলমান সন্তুষ্ট হতে পারে না। এমনকি স্বয়ং সুলতানও সেদিন তার এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।
আখিরাতে সে তার প্রতিদান তো বুঝে পাবেই—কিন্তু আল্লাহ তাআলা এই বেয়াদবকে দুনিয়াতেও ছেড়ে দেননি। আল্লাহর কসম! কয়েক বছর পর তাকে আমি নিজের চোখে দেখেছি চরম লাঞ্ছিত ও অপদস্থ অবস্থায়। সে কায়রোর এক মসজিদের দরোজায় মুসল্লিদের জুতা পাহারা দিচ্ছিল। অথচ এক সময় গর্বে অহংকারে তার মাটিতে পা পড়ত না। বড় বড় আমির-ওমরাহদের সঙ্গে ছিল তার ওঠা-বসা। আমি তাকে চিনতাম—সেও আমাকে চিনত। আমাকে দেখে সে লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। তার প্রতি করুণা হওয়ার কোন কারণ নেই আবার তার পরিণামে খুশি হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। মহৎ লোকেরা অন্যের কষ্টে আনন্দিত হন না। তবে এই ঘটনা থেকে আমরা শিখতে পারি অনেক কিছু।’
(কালিমাতুল হক, শাইখ আহমদ মুহাম্মদ শাকির রহ. : ১৭৩ পৃষ্ঠা)
কিতাবটি ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকে :
https://ia800301.us.archive.org/24/i...haq/kalhaq.pdf
Comment