Announcement

Collapse
No announcement yet.

দারুল ইসলাম ও দারুল হারবের ব্যবধানটা যেখানে

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দারুল ইসলাম ও দারুল হারবের ব্যবধানটা যেখানে

    দারুল ইসলাম ও দারুল হারবের ব্যবধানটা যেখানে

    ফুকাহায়ে কেরাম দারুল হারবের হাকিকত বর্ণনা করতে গিয়ে কখনও বলেছেন,

    دار الحرب ليست بدار أحكام
    “দারুল হারব (সুনির্ধারিত) বিধি বিধানের ভূমি নয়।”

    আবার কখনও বলেছেন,

    دار الحرب دار نهبة
    “দারুল হরব হচ্ছে মগের মুল্লুক।”

    এ উভয়টির হাকিকত আসলে একই। এ হাকিকত বুঝতে হলে আপনাকে প্রথমে দারুল ইসলামের হাকিকত বুঝতে হবে।


    দারুল ইসলামের শাসননীতি আল্লাহ তাআলা কর্তৃক সুনির্ধারিত। এর ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই।

    যেমন ধরুন, দারুল ইসলামে কোনো ব্যক্তি যদি মারা যায় তাহলে তার সম্পদ কিভাবে বণ্টিত হবে তা শরীয়ত কর্তৃক সুনির্ধারিত। এর ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই। কোনো ব্যক্তি এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে মারা গেলে তার সম্পদ চার ভাগ হবে। ছেলে পাবে দুই ভাগ, দুই মেয়ে এক এক করে পাবে দুই ভাগ।

    এখন যদি বাপ মারা যাওয়ার পর ভাই তার বোনদের সম্পদ না দিয়ে নিজেই সব জবর দখল করে নেয়, তাহলে সে উক্ত সম্পদের মালিক হবে না। যতদিন ভোগ করবে হারাম ভোগ করবে। বোনদের সম্পদ অবশ্যই বোনদের ফিরিয়ে দিতে হবে। ভাই জবর দখল করে নিলেও বোনদের অংশ বাদ যাবে না। অংশ থেকেই যাবে। দশ পুরুষ পার হলেও উক্ত সম্পদ তার যথাযথ হকদারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।


    এমনিভাবে কোনো মুসলিম সুলতান যদি কয়েক ছেলে রেখে মারা যান এবং মৃত্যুর পর ছেলেরা মারামারি করতে করতে শেষে একজন অপরদের পরাজিত করে বিজয়ী হয়ে যায়, তাহলে এ বিজয়ী ছেলে পিতার সকল ধন-রত্ম ও দাস দাসির মালিক হয়ে যাবে না। শরীয়তের নিয়মমতো বিজয়ী বিজিত সকল ভাইয়ের মাঝে বণ্টন করতে হবে।


    পক্ষান্তরে দারুল হারব এর ব্যতিক্রম। দারুল হারব মগের মুল্লুক। সেখানে যে যা দখল করতে পারবে, সেটাই তার। এ কারণে এক হারবি দেশ অন্য হারবি দেশ বিজয় করে সেখানকার স্বাধীন অধিবাসীদের দাস দাসি বানিয়ে ফেললে তারা প্রকৃত অর্থেই তাদের দাস দাসিতে পরিণত হবে।

    দারুল হারবের কোনো বাদশা কয়েকজন ছেলে রেখে মারা গেলে যদি কোনো ছেলে বাকিদের পরাজিত করে সব দখল করে ফেলে, তাহলে বাপের রেখে যাওয়া সমুদয় ধন-রত্ম এবং দাস দাসির সে মালিক হয়ে যাবে। যদি সে পরে মুসলমান হয়ে যায় তাহলে এ সমুদয় সম্পদ তার বলেই গণ্য হবে। তার অন্য ভাইয়েরা কিছুই পাবে না। কারণ, দারুল হারব মগের মুল্লুক। যে যা হজম করতে পারবে, সেটাই তার হয়ে যাবে।


    তাহলে আমরা দারুল ইসলাম ও দারুল হারবের যে ব্যবধানটা দেখতে পাচ্ছি-
    দারুল ইসলামের বিধি বিধান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সুনির্ধারিত। দারুল ইসলাম মগের মুল্লুক না। এখানে গায়ের জোর চলে না। আল্লাহ তাআলা যে বিষয়ে যে বিধান দিয়ে রেখেছেন, অটোমেটিক তা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। কেউ গায়ের জোরে ব্যতিক্রম কিছু করলেও তা ধর্তব্য হবে না।

    এক কথায় দারুল ইসলামে সংবিধিবদ্ধ ও সুনির্ধারিত বিধি বিধান রয়েছে, যেগুলোতে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। সমগ্র দুনিয়া এর বিরুদ্ধে চলে গেলেও তা পরিবর্তন হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত হবে না। এসব অপরিবর্তিত বিধান অটোমেটিক ব্যক্তির উপর এসে পড়বে। চাইলেও না চাইলেও তা মানতে হবে। ব্যতিক্রম করার সুযোগ নেই। তা পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ কারও নেই।


    পক্ষান্তরে দারুল হারবে ইলাহি কোনো কানুন নেই যে, তা কখনও পরিবর্তন হতে পারবে না। সেখানে গায়ের জোরটাই মূল। আজ এক বিধান তো কাল আরেক বিধান। এক রাজার এক বিধান তো আরেক রাজার আরেক বিধান। যার যার সুবিধামতো যে যেটা চালু করে সেটাই তাদের বিধান। সেটাই ধর্তব্য। এমনকি দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে যদি গায়ের জোরে কেউ কোনো রাষ্ট্র দখল করে, তাহলে সেটা তাদেরই গণ্য হবে। সংবিধানেরও এখানে কোনো মূল্য নেই। গায়ের জোরটাই মূল।

    এক কথায় দারুল হারবে অপরিবর্তনীয় কোনো ইলাহি কানুন নেই। সেখানকার কানুন নির্ভর করে সেখানকার ক্ষমতাসীনদের মর্জির উপর। তারা যেটা আইন বানাবে সেটাই তাদের আইন। সেখানকার সকল হুকুম আহকাম সে আইন অনুযায়ীই বর্তাবে। আইন পরিবর্তন হলে হুকুমও পরিবর্তন হয়ে যাবে।

    কিন্তু ইসলামে এমন কোনো সুযোগ নেই। ইলাহি কানুন যা আছে তা-ই থাকবে। গায়ের জোরে পরিবর্তন করা যাবে না। করলে সে পরিবর্তিত আইনের কোনো মূল্য থাকবে না; ইসলামে যা আছে তাই ধর্তব্য হবে।


    ফুকাহায়ে কেরাম এ ইলাহি কানুনকে কখনওحكم الإسلام কখনও حكم المسلمين আবার কখনও حكم إمام المسلمين বলে ব্যক্ত করেছেন।

    আর দারুল হারবের সেই মানবরচিত কানুনকে حكم الشرك، حكم الكفار، حكم ملك الكفار، أمر رئيس الكافرين ইত্যাদি বলে ব্যক্ত করেছেন।


    উপরোক্ত নীতির আলোকেই তারা দারুল ইসলাম ও দারুল হারবকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন-

    دار الإسلام ما يجري فيه حكم إمام المسلمين. ودار الحرب ما يجري فيه أمر رئيس الكافرين
    “দারুল ইসলাম হলো যে ভূখণ্ডের শাসন حكم إمام المسلمين অনুযায়ী চলে। আর দারুল হারব হলো যে ভূখণ্ডের শাসন أمر رئيس الكافرين অনুযায়ী চলে।”


    অর্থাৎ যে ভূখণ্ড শাশ্বত ও চির-অপরিবর্তনীয় ইলাহি কানুন অনুযায়ী চলে সেটা দারুল ইসলাম, আর যে ভূখণ্ড ইলাহি কানুনের বিপরীতে ক্ষমতাসীন কাফেরদের মর্জি মাফিক চলে সেটা দারুল হারব।

    ***



  • #2
    আল্লাহ তা'আলা আপনাকে নেক আমল সমৃদ্ধি দীর্ঘ আয়ু দান করুন এবং আপনার ইলমে বারাকা দান করুন

    Comment


    • #3
      দারুল ইসলাম ও দারুল হরবের বিষয়টি অনেক সহজ এবং স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মুহতারাম ভাই। ভাইদের মাঝে লেখাটি বেশি বিশে শেয়ার করা দরকার।
      আল্লাহ ভাইয়ের ইলমে ও আমলে বারাকাহ দান করুন। আমিন
      গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ্ ভাইজান! আমাদের এই দেশ তো মুর্তাদদের হাতে, তারা তো অনেক মাজলুম মুসলিমদের সম্পদ জোর করে দখল করছে...এটার কি হবে শায়েখ!? একটু বুঝিয়ে বলবেন ইনশাআল্লাহ্।

        Comment


        • #5
          মাশা-আল্লাহ! বারাকাল্লাহু ফী ইলমিক ওয়া আমালিক!
          দারুল ইসলাম ও দারুল হারব -এর সংজ্ঞার হাওয়ালা উল্লেখ করে দিলে উপকার হতো মুহতারাম ভাই।
          আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
          জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
          বিইযনিল্লাহ!

          Comment


          • #6
            মাশা আল্লাহ, জাযাকাল্লাহু খইরন আহসানাল জাযা। আল্লাহ ভাইয়ের ইলমে আমলে ও ফাহমে ভরপুর বারাকাহ দান করুন। দারুল ইসলাম ও দারুল হরবের বিষয়টি অনেক সহজ এবং স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মুহতারাম ভাই। আল্লাহ ﷻ আপনার খেদমতসমূহ কবুল করুন এবং উম্মাহকে এ থেকে উপকৃত করুন।
            সাহসিকতা আয়ু কমায় না আর কাপুরুষতা আয়ু বৃদ্ধি করে না। জিহাদের মাধ্যমেই উম্মাহ জীবন লাভ করে।

            Comment

            Working...
            X