Announcement

Collapse
No announcement yet.

যুদ্ধে না আসলে কি কাফেরের রক্ত হালাল নয়?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যুদ্ধে না আসলে কি কাফেরের রক্ত হালাল নয়?

    যুদ্ধে না আসলে কি কাফেরের রক্ত হালাল নয়?

    “কাফিরের রক্ত হালাল না হারাম? জুমহুরের মাযহাব কী??”- শিরোনামে একটা পোস্ট নজরে পড়ল। অনেকে অনেক রকম কথা বলেছেন। যতটুকু বুঝতে পারছি, বিষয়টাতে অনেক ভাইয়েরই সংশয় আছে। অনেকের কাছেই বিষয়টি পরিপূর্ণ পরিষ্কার নয়। বিষয়টা একটু পরিষ্কার করতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।


    কাফেরের রক্ত হালাল হাওয়ার সবব কি?
    ‘কাফেরের রক্ত কেন হালাল’ এ ব্যাপারে ২টা মত আছে-

    ক. কাফেরের রক্ত হালাল তার কুফরের কারণে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে অসংখ্য আয়াতে কাফের ও মুশরিকদের হত্যা করতে আদেশ দিয়েছেন। যা থেকে বুঝা যায়, তার কুফর ও শিরকটাই তার রক্ত হালাল হওয়ার সবব।

    এ মতের দাবি হলো, মহিলাদেরকেও হত্যা করা বৈধ, যদিও তারা কিতালে না আসে। অর্থাৎ আমরা যদি দারুল হারবে আক্রমণ করি, তাহলে যেসব মহিলা কখনও রান্না ঘরেরও বাহিরে যায়নি, দুনিয়া সম্পর্কে যাদের কোনোও খবর নেই, তাদেরকেও হত্যা করা বৈধ।

    এটাই হলো এ মতের দাবি। তবে যেহেতু খাসভাবে হাদিসে মহিলাকে কতল করতে নিষেধ করা হয়েছে, তাই মহিলা বাদ যাবে। অর্থাৎ কাফেরের ক্ষেত্রে সাধারণ হুকুম এটাই যে, তার রক্ত হালাল। তবে হাদিসে যাদের হত্যা করতে না করা হয়েছে, তারা শুধু খাস দলীলের কারণে বাদ যাবে।

    খ. হানাফি আইম্মাদের মতে কাফেরের রক্ত হালাল হওয়ার সবব হলো الحراب বা القتال। অর্থাৎ সে শুধু কাফের বা মুশরিক- এতটুকুতেই তার রক্ত হালাল না। তার রক্ত হালাল হবে হিরাব ও কিতালের কারণে। এ হিসেবেই বলা হয়, সকল মুহারিব ও মুকাতিল কাফেরকে হত্যা করা বৈধ।

    এই মুহারিব ও মুকাতিল কথাটি বুঝতে গিয়েই অনেকের সমস্যা হয়েছে। তারা মনে করেছেন, এর অর্থ হলো সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। অতএব, কাফের যদি সরাসরি যুদ্ধে না আসে তাহলে তাকে হত্যা করা জায়েয নয়।


    সামরিক বেসামরিক ভাগ
    এখান থেকেই সামরিক বেসামরিক ভাগটা এসেছে। যারা বাহিনিতে আছে তারা সামরিক, যারা সাধারণ নাগরিক তারা বেসামরিক। তারা মনে করেন, সামরিক কাফেরকে হত্যা করা বৈধ, বেসামরিকদের নাজায়েয।


    মুকাতিল-গাইরে মুকাতিল, মুহারিব-গাইরে মুহারিব দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
    আসলে তারা মুহারিব-মুকাতিল বুঝতে ভুল করেছেন। মুহারিব ও মুকাতিল দ্বারা ফুকাহায়ে কেরামের উদ্দেশ্য, যাদের কিতালের যোগ্যতা আছে। যাদের মাঝে কিতালের যোগ্যতা আছে তারাই মুহারিব-মুকাতিল, যদিও তারা ফিল হাল কিতালে জড়িত নয়।

    অর্থাৎ ফুকাহায়ে কেরাম ভাগ করেছেন কিতালের যোগ্যতা আছে কি নাই- এর উপর ভিত্তি করে; কিতালে জড়িত কি না- সে হিসেবে নয়।

    অতএব, যার মাঝে কিতালের যোগ্যতা আছে তাকে হত্যা করা বৈধ। আর যার মাঝে কিতালের যোগ্যতা নাই তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় হত্যা করা বৈধ নয়।


    গাইরে মুকাতিলরা কিতালে শরীক হলে তাদের রক্তও হালাল
    তবে যদি সে কোনো ভাবে কিতালে অংশ নেয় (শারীরিকভাবে হোক, মাল-সম্পদ, বুদ্ধি-পরামর্শ বা উৎসাহ দিয়ে হোক) যদি কোনোভাবে কিতালে অংশ নেয়, তাহলে তাকেও হত্যা করা বৈধ। কারণ, যোগ্যতা না থাকা সত্বেও যখন সে কিতালে জড়িয়ে পড়েছে তখন সে হত্যার উপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

    যেমন মুসলিমকে হত্যা করা নিষেধ। কিন্তু মুসলিম যদি আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে, তখন আমার জান বাঁচাতে তাকে হত্যা করা বৈধ। এমনিভাবে ইমামুল মুসলিমিনের বিরুদ্ধে বাগাওয়াত করলেও হত্যা করা বৈধ।

    তাহলে সারকথা দাঁড়াচ্ছে, ফিল হাল যদি কেউ কিতালে অংশ নেয় তাহলে তাকে হত্যা করা বৈধ। এমতাবস্থায় তার রক্ত হালাল, যদিও সে মূলত কিতালের যোগ্য ছিল না। কিন্তু যখন অংশ নিয়েছে তখন হত্যার উপযোগী হয়ে পড়েছে।


    মুকাতিল গাইরে মুকাতিল বিভক্তি শুধু তাদের ক্ষেত্রে যারা কিতালে শরীক হয়নি
    আর যারা কোনোভাবে কিতালে অংশ নেয়নি, তাদের দুই ভাগ:
    - যারা মুহারিব, অর্থাৎ যাদের মাঝে কিতালের যোগ্যতা আছে তাদের হত্যা করা যাবে।
    - যারা মুহারিব নয়, অর্থাৎ কিতাল করার যোগ্যতা তার মাঝে নেই, তাকে হত্যা করা যাবে না।

    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুহারিব কি মুহারিব না- এ বিভক্তি শুধু তাদের বেলায়, যারা কোনোভাবে যুদ্ধে অংশ নেয়নি।

    পক্ষান্তরে যারা কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে তারা তো যুদ্ধেই আছে। তারা তো কিতালেই আছে। তাদের সকলকে হত্যা করা বৈধ।


    কে মুহারিব আর কে মুহারিব নয়?
    এখন তাহলে প্রশ্ন আসবে, যারা যুদ্ধে অংশ নেয়নি, তাদের মাঝে কে মুহারিব আর কে মুহারিব নয়?
    আগেই বলেছি, ফুকাহায়ে কেরামের দৃষ্টিতে যার মাঝে কিতাল করার যোগ্যতা আছে সে মুহারিব, আর যার মাঝে কিতালের যোগ্যতা নেই সে মুহারিব নয়।

    কিতালের যোগ্যতা নেই এমন একটা শ্রেণী হচ্ছে মহিলা আরেকটি শ্রেণী হচ্ছে শিশু। স্বাভাবিক হালতে এদের হত্যা করতে হাদিসে নিষেধ এসেছে।

    আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে-

    «وجدت امرأة مقتولة في بعض مغازي رسول الله صلى الله عليه وسلم، «فنهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن قتل النساء والصبيان».
    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন এক যুদ্ধে এক মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেল। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করে দেন।”
    -সহিহ বুখারী ৩০১৫, সহিহ মুসলিম ১৭৪৪


    অন্য হাদিসে মহিলা হত্যা নিষেধ করার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    "ما كانت هذه لتقاتل". سنن أبي داود: 2669، (قال شعيب الأرنؤوط: إسناده صحيح)
    “এ তো লড়াই করার মতো ছিল না।” –সুনানে আবু দাউদ ২৬৬৯


    অর্থাৎ যেহেতু স্বাভাবিকভাবে মহিলারা কিতাল করে না এবং শারীরিকভাবেও তারা কিতাল করার উপযোগী নয়, তাই মহিলাকে হত্যা করা ঠিক হয়নি।

    নাবালেগের ক্ষেত্রেও একই কথা। তারা মুখাতাব নয় এবং কিতাল করার উপযুক্তও নয়। তাই হাদিসে তাদের কতল করতে নিষেধ এসেছে।


    বুঝা গেল, যারা কিতাল করার উপযোগী নয় তারা মুহারিব নয়, তাদের হত্যা করা হবে না। আর যারা কিতাল করার উপযোগী তারা মুহারিব। তাদের হত্যা করা হবে।

    এমনিভাবে যারা কিতালের উপযোগী নয় কিন্তু কিতালে শরীক হয়েছে তাদেরও হত্যা করা হবে। কারণ, সে বিলফেল মুহারিব। ফিলহাল তার থেকে মুহারাবা পাওয়া যাচ্ছে।


    কাসানী রহ. (৫৮৭ হি.) বলেন-

    لأن هؤلاء ليسوا من أهل القتال، فلا يقتلون، ولو قاتل واحد منهم قتل، وكذا لو حرض على القتال، أو دل على عورات المسلمين، أو كان الكفرة ينتفعون برأيه، أو كان مطاعا، وإن كان امرأة أو صغيرا؛ لوجود القتال من حيث المعنى. ... والأصل فيه أن كل من كان من أهل القتال يحل قتله، سواء قاتل أو لم يقاتل، وكل من لم يكن من أهل القتال لا يحل قتله إلا إذا قاتل حقيقة أو معنى بالرأي والطاعة والتحريض، وأشباه ذلك على ما ذكرنا. بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (7/ 101)
    (তাদের হত্যা করা হবে না) কারণ, তারা কিতালের উপযোগী নয়, তাই হত্যা করা হবে না। তবে তাদের কেউ যুদ্ধে লিপ্ত হলে তাকে হত্যা করা যাবে। তদ্রূপ তাদের কেউ যদি (কাফেরদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে, মুসলমানদের গোপন খবরাখবর তাদের অবগত করে বা কাফেররা তার বুদ্ধি-পরামর্শের মাধ্যমে উপকৃত হয় কিংবা সে নেতৃস্থানীয় কোন ব্যক্তি হয় তাহলে নারী হোক শিশু হোক- তাকেও হত্যা করা হবে। কারণ, তার থেকে (সরাসরি না হলেও) পরোক্ষভাবে কিতালে অংশগ্রহণ পাওয়া গেছে।


    ... এক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, যে কিতালের উপযোগী তাকে কতল করা হালাল; সে কিতালে আসুক বা না আসুক। আর যে কিতালের উপযোগী নয় তাকে হত্যা করা হালাল নয়। তবে যদি সে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে কিংবা মতামত, নেতৃত্বদান, উদ্বুদ্ধকরণ বা এ জাতীয় অন্য কোন মাধ্যমে -যা আমরা উল্লেখ করেছি- পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাহলে তাকেও হত্যা করা হালাল হয়ে যাবে।” -বাদায়িউস সানায়ে ৭/১০১


    ইমাম কাসানি রহ. বিষয়টা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, যারা যুদ্ধের উপযুক্ত তাদের রক্ত হালাল। আর যারা উপযুক্ত নয় তারাও যদি কিতালে অংশ নেয় তাহলে তাদের রক্তও হালাল হয়ে যাবে।


    হাদিসে মহিলাকে কিতালের অনুপযোগী বলা হয়েছে। একই কারণে নাবালেগদেরও হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, তারা মুকাল্লাফ না। অধিকন্তু শারীরিক যোগ্যতাও বালেগ হওয়ার আগে আসে না।


    কাফেরদের শ্রেণী বিভাগ
    এখন যদি আমরা কাফেরদের ভাগ করতে যাই, তাহলে প্রথমে ভাগ হবে বালেগ-নাবালেগ।

    নাবালেগ কিতালের উপযোগী নয়। তাই স্বাভাবিক হালতে তাকে হত্যা করা যাবে না। তবে কিতালে শরীক হলে যাবে।

    বালেগরা পুরুষ-মহিলা এ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত।

    মহিলারা কিতালের উপযোগী নয়।

    রইল বালেগ পুরুষরা। এই শ্রেণীটি কিতালের উপযোগী। অতএব, সকল বালেগ পুরুষ মুহারিব ও মুকাতিল তথা কিতালের যোগ্য। অতএব, তাকে হত্যা করা যাবে, যদিও সে কিতালে না আসে।


    মতভেদ যাদের নিয়ে
    তবে বালেগ পুরুষদের মধ্যেও কারও কারও ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের কিছুটা দ্বিমত আছে। যেমন কিতালের অনুপযোগী পঙ্গু, অন্ধ এবং এমন অতিবৃদ্ধ, যে না কিতাল করতে পারে, না সন্তান জন্ম দিতে পারে, আর না বুদ্ধি পরামর্শ দেওয়ার মতো যোগ্যতা আছে।

    যারা বলেন, কুফর ও শিরকটাই রক্ত হালাল হওয়ার সবব, তাদের মতে এদেরকেও হত্যা করা যাবে। আর হানাফি আইম্মায়ে কেরামের মতে যেহেতু কিতালের যোগ্যতা হচ্ছে রক্ত হালাল হওয়ার কারণ, তাই এ ধরনের অনুপযোগীদের হত্যা করা যাবে না, যদিও তারা কাফের। এ ধরনের অক্ষমরা ছাড়া সকল বালেগ পুরুষ মুহারিব। যুদ্ধে আসুক না আসুক তাদের হত্যা করা যাবে।

    বিষয়টি আরও পরিষ্কার করার জন্য শামসুল আইম্মা সারাখসী রহ.(৪৯০ হি.) এর কয়েকটি বক্তব্য উল্লেখ করছি-


    المقاتلة من له بنية صالحة للقتال إذا أراد القتال؛ وليس للنساء والصغار بنية صالحة للقتال، فلا يكونون من المقاتلة وإن باشروا قتالا بخلاف العادة. ألا ترى أن من لا يقاتل من الرجال البالغين فهو من جملة المقاتلة باعتبار أن له بنية صالحة للقتال وإن كان لا يباشر القتال لمعنى.
    ... والمريض والمغمى عليه من جملة المقاتلة؛ لأن له بنية صالحة للقتال، وما حل عارض على شرف الزوال، فلا يخرج به من أن يكون من المقاتلة، وإن كان لا يقاتل في الحال.
    ... ومن كان في الحصن من الرجال الزارعين الذين لم يقاتلوا قط فهم من جملة المقاتلة؛ لأن لهم بنية صالحة للقتال. شرح السير الكبير (ص: 1808، 1809)

    “মুকাতিল হচ্ছে যার শারীরিক গঠন এমন উপযোগী যে, কিতাল করতে চাইলে করতে পারবে। মহিলা ও শিশুদের শারীরিক গঠন কিতালের উপযোগী নয়। কাজেই ... তারা মুকাতিল শ্রেণীভুক্ত হবে না।

    ... বালেগ পুরুষরা কিতাল না করলেও মুকাতিল শ্রেণীভুক্ত। কারণ, কোনো কারণে কিতালে না আসলেও কিতাল করার মতো শারীরিক যোগ্যতা তার আছে।

    ... অসুস্থ ও বেহুঁশ বালেগ পুরুষও মুকাতিল শ্রেণীভুক্ত। কারণ, কিতাল করার মতো শারীরিক যোগ্যতা তার আছে। আর অসুস্থতা ও বেহুঁশি তো যেকোনো সময় দূর হয়ে যেতে পারে। কাজেই এটি সে মুকাতিল শ্রেণীভুক্ত হওয়ার পথে বাধা হবে না, যদিও সে ফিলহাল কিতাল করতে পারছে না।

    ... দূ্র্গে বিদ্যমান কৃষকরা, যারা কখনও কিতাল করেনি, তারাও মুকাতিল শ্রেণীভুক্ত। কারণ, কিতাল করার মতো শারীরিক যোগ্যতা তাদের আছে।” –শারহুস সিয়ারিল কাবির, পৃষ্ঠা ১৮০৮, ১৮০৯


    আরও বলেন,

    وإن ظفر المسلمون بقوم من الحراثين فسبيهم أحب إلي من قتلهم. لأنهم في القصد إلى القتال بمنزلة النساء، فإنهم لا يقاتلون ولا يهتمون لذلك وفي سبيهم منفعة للمسلمين حتى يشتغلوا بإقامة عمل الحراثة للمسلمين – ولكن مع هذا إن قتلوهم فلا بأس به. لأنهم لهم بنية صالحة للمحاربة، والحراثة ليست بلا ذمة، وقد يتحول المرء عن الحراثة إلى المقاتلة، بخلاف صفة الأنوثة. شرح السير الكبير (ص: 1443)
    মুসলিমরা যদি কাফেরদের কিছু কৃষক লোককে পেয়ে যায়, তাহলে হত্যা না করে বন্দী করে নিয়ে আসা আমার কাছে অধিক পছন্দের। কারণ, যুদ্ধের ক্ষেত্রে তারা মহিলাদের মতো। তারা সাধারণত কিতাল করে না এবং কিতাল নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথাও নেই। তাদের বন্দী করার মাঝেই মুসলিমদের ফায়েদা বেশি। তারা চাষবাসের কাজ আঞ্জাম দেয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের উপকারে আসবে।

    তবে যদি তাদের হত্যা করে ফেলে তাহলে তাতেও সমস্যার কিছু নেই। কারণ, মুহারাবা তথা কিতাল করার মতো শারীরিক যোগ্যতা তাদের আছে। আর কৃষি পেশা তো অপরিবর্তনীয় কিছু নয়। ব্যক্তি কৃষি পেশা ছেড়ে সৈনিক পেশায় যেতে পারে। কিন্তু ‘মহিলা’ বৈশিষ্ট্যটি এর ব্যতিক্রম।”- শারহুস সিয়ারিল কাবীর, পৃষ্ঠা ১৪৪৩

    অর্থাৎ মহিলারা জন্মগতভাগে কিতালের অনুপোযোগী। পক্ষান্তরে পুরুষরা জন্মগতভাবে কিতালের উপযোগী। সৈনিক পেশায় না থাকলেও তার এ যোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায় না। যে পেশায়ই থাকুক কিতালের যোগ্যতা তার মধ্যে বিদ্যমান। তাকে যেকোনো সময় অস্ত্র দিয়ে ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধের সারিতে দাঁড় করানো যাবে। কাজেই সে সর্বাবস্থায় মুহারিব-মুকাতিল। তাই যুদ্ধে আসুক না আসুক তাকে কতল করা যাবে।


    মুকাতিল-গাইরে মুকাতিল: একটি নজির
    আমরা কাফেরদের নজির যাকাতের সম্পদের মাঝে দেখতে পাই। যাকাত ফরয হয় মালে নামি তথা বর্ধনশীল সম্পদে।

    আমরা জানি, শরীয়তে স্বর্ণ-রূপা (এবং বর্তমানের টাকা পয়সা) সৃষ্টিগতভাবে বর্ধনশীল ধরা হয়েছে। তাই তা হাতে থাকলেই যাকাত দিতে হবে। পক্ষান্তরে অন্যান্য জিনিস ও সামানাপত্র স্বাভাবিক অবস্থায় বর্ধনশীল নয়। যদি ব্যবসায় লাগানো হয় তাহলে তা বর্ধনশীল ধরা হবে এবং যাকাত ফরয হবে।

    কাফেরদের বালেগ পুরুষরা সৃষ্টিগতভাবে মুহারিব। তারা যুদ্ধে আসুক না আসুক হত্যার উপযুক্ত। পক্ষান্তরে মহিলা শিশু হলো সৃষ্টিগতভাবে গাইরে মুহারিব। যুদ্ধে অংশ নিলে হত্যা করা হবে, নইলে নয়।

    ফুকাহায়ে কেরাম কিয়াস করে আরও কিছু যুদ্ধে অক্ষম কাফেরকে মহিলা শিশুর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেমন যুদ্ধে অনুপযোগী লেংড়া, অন্ধ, পঙ্গু এবং এমন অতিবৃদ্ধ, যে না কিতালে সক্ষম, না সন্তান জন্ম দানে, আর না বুদ্ধি-পরামর্শ দেয়ার উপযুক্ত। তবে যেহেতু তাদের বিষয়টা কিয়াসি, তাই এতে দ্বিমত রয়েছে। অনেকের মতে এদেরকেও হত্যা করা যাবে। হানাফি আইম্মাদের মতে যাবে না।


    যাদের হত্যা করা যাবে না তাদেরকে বন্দী করে নিয়ে আসবে
    যাদের হত্যা করা হবে না, তাদেরকে যে ছেড়ে রাখা হবে তা নয়। বন্দী করে দারুল ইসলামে নিয়ে আসা হবে। দাস দাসী বানানো হবে বা যিম্মি বানানো হবে। প্রয়োজনে বন্দী বিনিময় করা যাবে বা মুক্তিপণ আদায় করা যাবে।

    হাসকাফি রহ. (১০৮৮ হি.) বলেন,

    ثم لا يتركونهم في دار الحرب، بل يحملونهم تكثيرا للفئ، وتمامه في السراج. الدر المختار شرح تنوير الأبصار وجامع البحار (ص: 330)
    “(যাদের হত্যা করা জায়েয নেই) তাদের দারুল হারবে ছেড়ে আসবে না, বরং বহন করে (দারুল ইসলামে) নিয়ে আসবে, যাতে মুসলিমদের গনিমত বৃদ্ধি পায়।”-আদদুররুল মুখতার ৩৩০

    বিস্তারিত ফতোয়া শামি ও শারহুস সিয়ারে দ্রষ্টব্য।


    উপরোক্ত আলোচনার পর আমরা বলতে পারি-
    # ‘যুদ্ধে না আসলে কাফেরের রক্ত হালাল নয়’- কথাটা সহীহ নয়।

    # প্রচলিত সামরিক বেসামরিকের বিভক্তি সহীহ নয়। কারণ, যাদের মতে কুফরটাই রক্ত হালাল হওয়ার সবব, তাদের মতে তো সকল কাফেরের রক্তই হালাল। একান্ত হাদিসে যাদের হত্যা করতে নিষেধ এসেছে তারা শুধু বাদ যাবে।

    যাদের মতে রক্ত হালাল হওয়ার সবব হচ্ছে কিতাল, তাদের মতানুযায়ীও তেমন কোনো ব্যবধান নেই। সুস্থ-বালেগ সকল পুরুষ কাফের সবার মতেই মুহারিব, মুকাতিল এবং হত্যার উপযুক্ত। আমরা দেখেছি কৃষক, অসুস্থ এবং বেহুঁশ কাফেররাও মুকাতিল। শুধু কিতালের অনুপযুক্ত অতিবৃদ্ধ, অন্ধ ও লেংড়াদের ব্যাপারে মতভেদ।

    # মুকাতিল-গাইরে মুকাতিল, মুহারিব-গাইরে মুহারিব: এ বিভক্তি তাদের ক্ষেত্রে, যারা কিতালে কোনোভাবেই শরীক হয়নি। পক্ষান্তরে যারা জান, মাল বা বুদ্ধি-পরামর্শ যেকোনোভাবে কিতালে অংশ গ্রহণ করেছে, তাদের সবাইকে হত্যা করা যাবে; এমনিক মহিলা ও শিশু হলেও।

    # যাদের হত্যা করা হবে না, তাদেরকে যে ছেড়ে রাখা হবে তা নয়। বন্দী করে নিয়ে আসা হবে। দাস দাসী বা যিম্মি বানানো হবে কিংবা বন্দী বিনিময় করা হবে বা মুক্তিপণ আদায় করা হবে। ওয়াল্লাহু তাআলা আ’লাম।

    ***


  • #2
    যদি পুরুষদের উপর হামলার ফলে তাদের নারী-শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা নিহত হয়,তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই- এই বিষয়টা আর পূর্ববর্তী সালাফ/সালাফি আলেমদের বক্তব্য সংযুক্ত করলে,ভালো হতো।

    Comment


    • #3
      মাশা-আল্লাহ! ওয়ালহামদুলিল্লাহ!!
      খুবি সুন্দর ও সুস্পষ্ট আলোচনা। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা গোটা মুসলিম উম্মাহকে উপকৃত করুন এবং সেসকল মুসলিমদের দিলের পর্দা সরিয়ে দিন, যারা মুমিন দাবী করা সত্ত্বেও কাফেরদের ভাষায় কথা বলে।
      আল্লাহ তাআলা পোস্টকারী ভাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
      আমীন ইয়া রব্বাল মুজাহিদীন!!

      Comment


      • #4
        মাশা-আল্লাহ! ভাইয়ের এমন সুস্পষ্ট ইলমি আলোচনা পড়ে খুব-ই উপকৃত হচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ।
        আল্লাহ তাআলা ভাইয়ের ইলম ও আমলে বারাকাহ দান করুন, নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখুন, আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
        আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
        জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
        বিইযনিল্লাহ!

        Comment


        • #5
          উল্লেখ্য যে, মুহারিব ও মুকাতিল এর মধ্যে পারিভাষিক পার্থক্য স্থির করা যায় (যেহেতু যোদ্ধা ব্যাপক অর্থবোধক; অন্যদিকে হন্তারক/হন্তাক্ষম নির্দিষ্টতা বাচক); কিন্তু হানাফী মাযহাবে মুহারিব ও মুকাতিল পার্থক্য করা হয় না (যেহেতু রক্তকে শুধু যুদ্ধ বা ক্বতলের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়..)। আরও যে, আমরা যখন আলোচনা করছি তখন কাফিরদের জিম্মা কিংবা জিম্মাবিহীন অবস্থার ভিতর থেকে আলোচনা করছি। অতঃপর, (মুহারিব ও মুকাতিল) পার্থক্যটি হল - সকল কাফিরই মুহারিব ... পুরুষ-নারী, দূর্বল-সবল, অন্ধ-চোখা নির্বিশেষে সমস্ত কাফিরই মুহারিব অর্থাৎ যোদ্ধা। জিম্মিবিহীন অবস্থায় এদের সকলেই হত্যাযোগ্য। শরীয়তের মাকসাদ এ ভিন্ন অন্য নয়, যে, কাফিররা হয় পরাধীনতার মধ্যে থাকবে নচেৎ হত্যা করে দেয়া হবে। অর্থাৎ কুফরের কারণে কাফিরমাত্রই হত্যাযোগ্য।

          অন্যদিকে ফিক্বহি চাহিদায় মুকাতিল পরিভাষার স্বতন্ত্র অবস্থান আছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন কাফির নারী তার কুফরের কারণে মুহারিব বা যোদ্ধা। সে হত্যাযোগ্য। কিন্তু তাকে হত্যা করা হবে না যেহেতু সে মুকাতিল বা যোগ্যতা অর্থে হন্তারক নয় (অর্থাৎ সে গাইরে মুকাতিল)। কুফরের সাথে সাথে ঐ কাফির নারীর মধ্যে এমন সম্ভাবনা থাকতে পারে যে কারণে তাকে মুহারিবা বলাই যুক্তিসঙ্গত ও অধিকতর সঠিক, যেমন: সে হয়ত সুযোগ বুঝে একজন মুজাহিদ অথবা কোন মুসলিমকে হত্যা করে দিল; বনু কুরাইযার সে ইহুদি মহিলাটির মতো, যে যাঁতা ছুড়ে একজন সাহাবীকে শহীদ করে! কিন্তু, তারা যেহেতু গাইরে মুকাতিল (অর্থাৎ কাউকে হত্যার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন নয়,) তাই তাদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে, তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ হবে না - তবে ব্যতিক্রমঃ আক্রমণ এড়ানো সম্ভব না হলে, অথবা বন্দী করা সম্ভব না হলে যখন তাদের পক্ষ থেকে কোনভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়, অথবা তারা সামরিক-বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে শরীক হলে, অথবা শরয়ী কোন মাসলাহাত থাকলে যেমন: বিশেষ কোন কাফির দেশের অধিবাসী (উদাহরণস্বরূপ: আমেরিকা ও ইজরায়েল) যারা মুসলিম ভূখন্ডের নারী-শিশুদের উপর ইচ্ছাপ্রণোদিত আক্রমণ চালায়, এর জবাবে তাদের নারী-শিশুদের আক্রমণ করার বৈধতাও শরীয়ত আমাদেরকে প্রদান করে।

          এমনিভাবে ধর্মপালনের সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন কাফিরদের শিশুরাও মুহারিব।

          Comment


          • #6
            আল্লাহ তাআলা শায়েখকে উভয় জগতে উত্তম বিনিময় দান করুন, আমাদেরকে এ থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন,আমিন ইয়া রব্ব।

            Comment


            • #7
              আলহামদুলিল্লাহ, গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। আল্লাহ আমাদের এর থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন, আমীন।
              اللهم انی اسلک الهدی والتفی والعفافی والغناء

              Comment


              • #8
                .....................................

                Comment


                • #9
                  মুহতারাম ভাই বিষয়টি অনেক সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে কারো আর কোন অস্পষ্টতা থাকার কথা নয়। অনেক উপকারী একটি বিষয়ের সংশয় নিরসণ করা হয়েছে। আল্লাহ ভাইয়ের ইলমে ও আমলে বারাকাহ দান করুন। আমিন
                  গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

                  Comment


                  • #10
                    আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ!

                    আলহামদু লিল্লাহ, ছু্ম্মা আলহামদু লিল্লাহ, মুহতারাম ভাই এই মাসআলাটি দলিলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সুষ্পষ্ট করেছেন।
                    আল্লাহ যেন মুহতারাম ভাইয়ের ইলমে ও আমলে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি দান করেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম বদলা দেন।
                    আমাদের যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা অনলাইনে ও অফলাইনে লেখাটি ছড়িয়ে দিতে পারি। তাহলে উম্মাহ উপকৃত হতে পারবে।
                    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

                    Comment


                    • #11
                      আলহামদুলিল্লাহ, বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। জাযাকাল্লাহ ওয়া বারাকাল্লাহ ফি ইলমিক।

                      Comment


                      • #12
                        আলহামদুলিল্লাহ, উপকৃত হওয়ার মত মূল্যবান পোস্ট করেছেন প্রিয় ভাই...অনেক অনেক জাযাকাল্লাহ রইল।
                        এরপরেও যদি কেউ না বুঝে, তাহলে তো আর কোন কিছু করার নেই। তার কপালে দুঃখ আছে মনে হয়।
                        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                        Comment


                        • #13
                          জাযাকাল্লাহ, আখি।

                          Comment


                          • #14
                            আল্লাহু আকবর ! খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট । আল্লাহ তা’আলা আমার প্রিয় ভাইয়ের ইলম ও আমলে বারাকাহ দান করুন। আমিন।

                            তবে শাইখ “মুকাতিল হচ্ছে যার শারীরিক গঠন এমন উপযোগী যে, কিতাল করতে চাইলে করতে পারবে। মহিলা ও শিশুদের শারীরিক গঠন কিতালের উপযোগী নয়। কাজেই ... তারা মুকাতিল শ্রেণীভুক্ত হবে না।” এ ব্যাপারে আমার একটা অবজারভেশন আছে।

                            বর্তমানে আমরা দেখছি এমন কোন পেশা বা পদবী নেই যে পদবী বা পেশাতে মহিলারা নেই। যেমন ধরেন- রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পীকার, এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনৈতিক/সামাজিকসহ যেকোন সংগঠনের সদস্য থেকে সভাপতি পর্যন্ত, কনস্টেবল থেকে শুরু করে ডিআইজি, আইজি পর্যন্ত, কূটনীতিবিদ, সিপাহী থেকে শুরু করে জেনারেল পর্যন্ত, উকিল, ব্যারিস্টার, বিচারপতি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, পাইলট, ড্রাইভার, মেকানিক, শ্রমিকসহ কোন কাজের উপযোগী নয় মহিলারা ?

                            তাহলে হাদীসে বর্ণীত রুখসত কি কিতালে অংশ না নেয়া সকল মহিলাই পাবে ? নাকি নিতান্তই যে সকল মহিলা অবলা শুধু তারা পাবে ?

                            আমরা তো দেখছি যে সকল কাফের-মুশরিক মেয়েরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শিখছে তাদের প্রায় সকলেরই চিন্তা চেতনা ইসলাম বিদ্বেষী/বিরোধী।

                            তাহলে কাফের-মুশরিক মেয়েদের মধ্যে কিতালে অংশ না নেয়া শিক্ষিত মেয়েদেরকে কিতালে অংশ না নেয়া পুরুষদের মত বিবেচনা করতে কি কোন বাধা আছে ?
                            এসো জিহাদ শিখি

                            Comment


                            • #15
                              মাশাআল্লাহ, অনেক উপকারি পোষ্ট। জাযাকুমুল্লাহ।

                              Comment

                              Working...
                              X