Announcement

Collapse
No announcement yet.

সংগঠন ও জিহাদঃ- একটি সাধারণ দিকনির্দেশনা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সংগঠন ও জিহাদঃ- একটি সাধারণ দিকনির্দেশনা

    بسم الله الرحمان الرحيم الحمد
    الحمد لله وكفى و سلام على عباده الذين المصطفى


    قال الله عز و جل:- و من الناس من يشري نفسه ابتغاء مرضات الله) البقرة:٢٥٨


    قال رسول الله ﷺ: انصر أخاك ظالمًا أو مظلومًا، فقال رجل: يا رسول الله، أنصره إذا كان مظلومًا، أفرأيت إذا كان ظالمًا كيف أنصره؟ قال: تحجزه أو تمنعه من الظلم فإن ذلك نصره(رياض الصالحين : ٢٤٢٧)




    আল্লাহ তালার দরবারে লাকো কোটি শুকরিয়া যে তিনি আমাদের হকপন্থী জামাতের সাথে যুক্ত হওয়ার,মানুষকে হক্বের পথে আহ্বান করার ও বাতিলকে চেনার তৌফিক দান করেছেন (আলহামদুলিল্লাহ).।হক্ব এবং বাতিলের এই লড়াইয়ে যে পক্ষ হক্বের উপর আছে তাদেরকে অবশ্যই এর উপর অটল - অবিচল ও দৃঢ় থাকতে হবে।অবশ্যই এই দ্বীনকে দুশমনদের সব ধরনের চক্রান্ত থেকে হেফাযত করতে হবে।শত্রু আমাদের উপর শারিরীক ও মানসিক সব ভাবেই আক্রমণ করেছে।অথএব আমাদেরও তাদেরকে সব দিক থেকেই মোকাবেলা করতে হবে,তাদেরকেও শারীরিক ও মানসিক ভাবে পাল্টা আক্রমণ করতে হবে।


    এই তো গেল প্রকাশ্য যুদ্ধ,এর বাইরেও আমাদের আরেক দুশমন আছে।বস্তুত এই শত্রুই আমাদের সকল শত্রুর পৃষ্টপোষক।আর সে হল "শয়তান"। দুশমন তো অতি সহজে আমাদের সৈন্য শিবিরে আক্রমণ করতে পারে না।কিন্তু এই শত্রু আমাদের সারিতে প্রবেশ করে আমাদের মধ্যে যাকে তার পছন্দ তাকে সে তার দলে ভিড়ানোর চেষ্টা করে।এরপর সে তার চক্রান্ত আমাদের মাঝে বাস্তবায়ন করে।


    এটা একটা চিরন্তন প্রক্রিয়া যে কখনো বন্ধ করা যাবে না।তাই একজন দায়ী ভাইয়ের উচিত বিষয়টা মেনে নেওয়া যে,আমাদের মাঝে কিছু আছে যারা আমাদের গোপন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত। এরপর দায়ী ভাই ওই সব ভাইদের পরিচালনা করবেন।কোন একটা বিষয় মেনে নিলে ঐ কাজটা করতে সহজ হয়।


    এ যেন পাঠশালা! একটা উন্মুক্ত পাঠশালা।একজন দায়ী ভাই যেন একজন শিক্ষক এর মত।স্বাভাবিকভাবেই একটি পাঠশালাতে শিক্ষক থাকে কম,সেই তুলনায় ছাত্র থাকে অনেক বেশী।


    একটি পাঠশালাতে তিন ধরণের ছাত্র বিদ্যমান থাকে।প্রথমতঃ- যারা খুব মেধাবী।এরা সংখ্যায় থাকে খুব কম।এরা পড়াশোনায় মনযোগী, ভদ্র।অন্য কোন কাজে এরা জড়িত থাকে না।এরাই সাধারণত A+ পায়।এদের মাধ্যমেই স্কুলের সম্মান বৃদ্ধি পায়।দ্বিতীয়তঃ- এরা মধ্যম মানের ছাত্র।এরা পড়াশোনা ও দুষ্টমিতে সমান পারদর্শী তবে এরা ভাল কোন গাইডলাইন ফেলে ভাল রেজাল্ট করে। এরাও সংখ্যায় সিমীত।তৃতীয়তঃ- নিম্ন মানের ছাত্র।এরা পড়ালেখা তো করেই না,বরং ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন কুকর্ম করে।এরা ফেলের লিস্টে।একটি প্রতিষ্ঠান বা বিদ্যালয়ের বদনাম সাধারণত তাদের কারণেই হয়।এই শ্রেণির উৎপাত এত বেশী থাকে যে,শিক্ষকরা এই শ্রেণীর ত্রুটি দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।তাদেরকে পরীক্ষার আগে বিশেষভাবে পড়ায়,কিন্তু তাদের থেকে সহজে কোন home work নেন না।কিন্তু প্রথম শ্রেণী ভুক্ত ছাত্রদের শিক্ষকরা কখনোই ছাড় দেন না।দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত ছাত্রদের শিক্ষকরা সব সময় চেষ্টা করতে থাকেন যেম তাদেরকে পড়ালেখায় মনযোগী করে তুলে ভাল রেজাল্ট করানো যায়।


    একইভাবে আমাদের মুজাহিদীন জামাত ও একই ধরণের।এখানেও তিন শ্রেণির ভাই বিদ্যমান।প্রথম শ্রেণিঃ- এরা A+ শ্রেণী।এরা দুনিয়া ত্যাগী।এরা তাদের জান মাল আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দিয়ে এই পথে এসেছে।জান্নাতের বিনিময়ে এরা তাদের মা বাবা ভাই বোন বিবি বাচ্ছা সব কিছু ছেড়ে এসেছে।এরা কখনো বসে থাকে না।দ্বীমের খদময়ের সব সুযোগই এরা কাজে লাগায়।জামাত তাদের মাধ্যমেই এগিয়ে চলে। এরা সংখ্যায় কম থাকে।এরাই প্রকৃত গুরাবা।যাদের কথা জাদীসে এসেছে,"(হাদীস)".

    দ্বিতীয় শ্রেণীঃ- এরা মধ্যম মানের শ্রেণী।এরা সব জানে,বুঝে।দ্বীনের খেদমতের জন্য এরা খুব আগ্রহী থাকে।কিন্তু দ্বীনের খেদমত করতে না পারার কারণে এরা সবসময় অনুতপ্ত থাকে।কোন না কোন পিছুটান ওদেরকে বাসায় আটকে রাখে।ওরা সব ছেড়ে বের হয়ে আসতে পারে না।তবে যারা সবকিছু ছেড়ে দ্বীনের খেদমতে বের হয়ে আসে এরা তাদেরকে মহব্বত করে।এদের সংখ্যা একটা জামাতে মোটামুটি থাকে।এদের দ্বারা জামাতের খুব বেশী ক্ষতি হয় না।এদেরকে যথাযথ গাইডলাইন দেওয়া গেলে এরা প্রথম শ্রেণীতে চলে আসে।

    তৃতীয় শ্রেণীঃ- এই দল হল যারা দাওয়াত পায়,জিহাদে আসে,কাজ করে।কিন্তু দুনিয়ার মহব্বত, নফসের চাহিদা,খাহেশাত এগুলো ছাড়তে পারে না।এরা কোন ইলম হাসিল করে না,কিন্তু দুঃখজনকভাবে এরাই ফতোয়া দেয় বেশি! এরা এদের খাহেশাত মত কোন আদেশ পেলে তার পূর্ণ আনূগত্য করে এবং যারা তার আণূগত্য করে না তাদের তীব্র নিন্দা করে।আবার কোন বিষয় তাদের খাহেশাতের বিরুদ্ধে গেলে এরা নিজে নিজে ইজতিহাদ করে সেটা নিজেদের খাহেশাতের সাথে মিলিয়ে নেয়।এরা কারও ইসলাহ বা নসীহা নেয় না।কিন্তু নিজেরা যখন যা মন চায় তখনই সেটা ইসলাহ বা নসীহা বলে প্রচার করে।এদের কারণেই সাধারণত তানজীমের বদনাম হয়,তানজিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এরাই হল তারা যা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,"(আয়াত) " আল্লাহ তায়ালা কোন এক সময় তাদের দোয়ার বরকতে বা তানজিমকে পরীক্ষায় ফেলার জন্য তাদেরকে তানজীমে নিয়ে আসেন।এরা হল তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,'"(হাদীস)" দুঃখজনক ব্যাপার হল, ভৌগোলিক কারণে বা দীর্ঘদিন এই ভূখণ্ডে ঝুকিপূর্ণ কোন কাজ না থাকার ফলে,ব্যাপক তাজকিয়া না থাকায় এদের সংখ্যায় আমাদের মাঝে বেশি।

    অথএব একজন দা'য়ী ভাইকে এই অবস্থা মেনে নিয়ে তানজীমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক মহান দায়িত্ব কাধেঁ তুলে নিতে হবে।তাকে এমন এক পাঠশালার শিক্ষক হতে হবে যেখানে অধিকাংশ ছাত্র ফেল করার আশংকা আছে।তাকে প্রত্যেককে পাশ করিয়ে প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষা করতে হবে।অথএব দায়ী ভাইকে এমন কিছু গুণ অর্জন করতে হবে যা তাকে এই মহাম দায়িত্ব পালনে সহায়তে করবে।


    দুইটি উদ্দেশ্যে দা'য়ী ভাইকে এই কাজ করতে হবে।(১) ঐ শ্রেনীর ক্ষতি থেকে তানজিমকে হেফাযত করতে।মনে রাখতে হবে,আমাদের নিজেদের ক্ষতির জন্য বেশীরভাগ সময় এরাই দায়ী হয়।পালিয়ে যাওয়া,সিকিউরিটি না মানা,ইতয়াতের খেলাফ করা ও নিজেদের মন মত দলিল বানিয়ে নিজেদের মত করে ফতোয়া দেওয়া এই শ্রেণীর বৈশিষ্ট্য। তাই ওদের থেকে দ্বীনকে হেফাযত করার জন্য দা'য়ী ভাইকে সর্বদা সজাহ,সচেতন ও বিচক্ষণ হতে হবে।৷ (২)এই তৃতীয় শ্রেণিকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে নিয়ে আসতেও দা'য়ী ভাইকে কাজ করতে হবে।দা'য়ী ভাইকে অবশ্যই এই শ্রেণীর ভাইদের ইলম,তাজকিয়া ও তারবিয়া দিয়ে সংশোধন করে যেতে হবে।


    আমার মূল আলোচনা মূলত এই দুইটি লক্ষ্যকে সামনে রাখেই।কেমন হবে দা'য়ী ভাই?? নিচে সংক্ষেপে কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ্য করা হল এবং তা সুন্নাহ এর কষ্টিপাথরে ঘষা হল যাতে তা আমরা আমল হিসেবে গ্রহন করতা পারি।

    (১) কার্যকরী যোগাযোগ রক্ষাঃ-
    নয়মিত যোগাযোগ এর মাধ্যমে ভাইদের সক্রিয় রাখা উচিত।নিয়মিত তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়া, তাদেরকে বিভিন্ন মাশায়েকদের রিসালাহ্ সংগ্রহ করে দেওয়া।তাদের মধ্যে যারা লেখা-পড়া কম করে তাদেরকে মাশায়েকদের রিসালাহ্ সমূহ সংক্ষেপ করে মূল বক্তব্যটা সংগ্রহ করা যাতে তারা পড়তে আগ্রহ পায়।নিয়মিত যোগাযোগ ছাড়া এই শ্রেণীর ভাইদের অবস্থার উন্নতি হবে না।রাসূল (সাঃ) কোন যুদ্ধে বা মসজিদে কেউ অনুপস্থিত থাকলে তার খোঁজ নিতেন।হাদীসে এসেছে, আসলাম গোত্রের এক যুবক রাসূল (সাঃ) বলল,হে আল্লাহর রাসুল! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি কিন্তু আমার কাছে প্রস্তুতির সারাঞ্জাম নেই।তিনি (সাঃ) বললেন, اءت فلانا فانه قد كان تجفر فمرض (অনুবাদ) তুমি অমুকের কাছে যাও,কেননা সে প্রস্তুতির পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে"।অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) ঐ ব্যক্তির প্রস্তুতির পর অসুস্থ হওয়ার খবর জানতেন।অন্য হাদীসে এসেছে,আসলাম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,একজন ইহুদি বালক নবী(সাঃ) এর খেদমত করত।হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।নবী সাঃ তার রোগ জিজ্ঞাসার জন্য তার নিকট গেলেন এবং তার মাথার নিকট বসলেন। অর্থাৎ একজন বালকের খবরও নবী (সাঃ) রাখতেন।নবী (সাঃ) যখন তাবূক যুদ্ধে পৌঁছালেন (যে যুদ্ধে কা'ব (রাঃ) অনুপস্থিত ছিলেন এবং ৩০ হাজার সাহাবী এই যুদ্ধে হাজির ছিলেন) তখন তিনি লোকদের মাঝে বসলেন এবং বললেন, ما فعل كعب بن مالك কা'ব বিন মালিকের কী হল?? "" হাজার হাজার সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও রাসূল (সাঃ) কা'ব বিন মালিককে ভুলে জাননি।


    মনযোগ দিয়ে শুনাঃ-- উপরেই আলোচনা করা হয়েছে যে,একটি জামাতের এই তৃতীয় শ্রেণির ভাইদেরই ফতোয়া দেওয়ার মানসিকতা সবচেয়ে বেশী।এরাই নিজেদের সুবিধার্থে নানন সময় নানন তা'বীল করে থাকে।এত সত্ত্বেও দা'য়ী ভাইদের জন্য এটা আবশ্যক যে এরা মা'দঊ এর কথা মনযোগ দিয়ে শুনবেন এরপর ধৈর্য্য ও হিকমাহ্'র সাথে তাদের মোকাবেলা করবেন।এদেরকে দ্বিতীয় কাতারে নিয়ে আসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।মনযোগ দিয়ে শুনার বিষয়টি নবী (সাঃ) থেকেও প্রমাণিত। সীরাতের কিতাবে এসেছে,মক্কার কাফেররা যখন বহুভাবে নবী (সাঃ) কে দাওয়াতের পথ থেকে সরানোর চেষ্টা করছিল এমন একদিন উতবাহ আল্লাহর রাসুল এর নিকট আসল এবং বলল, " انت خير ام عبد الله ؟ তুমি উত্তম নাকি আব্দুল্লাহ্?? "" তখন রাসূল (সাঃ) চুপ করে থাকলেন।সে আবার প্রশ্ন করল,انت خير ام عبد المطلب؟؟ তুমি উত্তম নাকি আব্দুল মুত্তলিব?? "" রাসূল (সাঃ) তখনও চুপ করে থাকলেন।অন্য হাদীসে এসেছে,হুনাইন এর যুদ্ধে খারেজি জুল খুয়াইছাড়া যখন নবী (সাঃ) কে বললেন, اتق الله ما عدلت يا محمد আল্লাহ্'কে ভয় কর, তুমি আদল করনি হে মুহাম্মদ "" এরপর ও রাসুল আল্লাহ চুপ করে ছিলেন।


    সাহসী হওয়াঃ-- এটি এমন একটি গুন যা প্রত্যেক দায়িত্বশীলদের অর্জন করা উচিত।দায়িত্বশীলই যেন সবার আগে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ কাজটি করে।হক্বের ঝান্ডাবাহী দায়িত্বশীল গণ,হাক্কানী ওলামা - তলাবা,আল্লাহ ওয়ালা গণ সবসময় ময়দানে সবার আগে থাকতেন।আল্লাহ তা'আলা বলেন "( قاتل معه..) এমন বহু নবী যুদ্ধ করেছেন আর তাদের সাথে ছিল আল্লাহ ওয়ালারা"। মূসা (আঃ) নিজে ফেরআউনের সামনে হক্ব কথা বলেছেন,(আয়াত), ইব্রাহিম (আঃ) নিজের হাতেই মূর্তি ভেঙেছেন (আয়াত)। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নিকে স্বয়ং যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।যেগুলোতে যেতে পারেননি সেগুলোতে যেতে তীব্র তামান্না করেছেন।আল্লাহর রাসূল যে কোন প্রয়োজনে নিজেই সবার আগে হাজির হতেন।আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন,রাসূল (সাঃ) ছিলেন সবচেয়ে সুন্দর সর্বাধিক দাতা এবং اشجع الناس সর্বাধিক সাহসী।এক রাতে মদিনাবাসী (এক বিকট শব্দে) অতন্ত্য ভীত-সন্ত্রস্ত হল।তখন তারা শব্দের দিকে ছুটে গেল। فاستقبلهم النبي صلى الله عليه و سلم قد سبق الناس الى الصوت নবী (সাঃ) তখন তাদের সামনে পড়ল।(অর্থাৎ নবীজি আগেই ওইদিকে ছুটে গিয়েছিলেন)।তিনি তাদের পূর্বেই শব্দের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি মদিনাবাসীদের বললেন, لن تراعوا لن تراعوا বিচলিত হইও না,বিচলিত হইও না"" সুবাহানাল্লাহ্ কত উত্তম নেতা,যিনি সবার আগে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ কাজ করেছেন।অথএব সাহসী হওন।এই গুন কর্মীদেরকে দায়িত্বশীলদের উপর আস্থা রাখতে সাহায্য করে।এটাই সালাফদের সুন্নাহ।


    নমনীয় হওয়াঃ-- কর্মীরা যতই ভুল করুক না কেন, তাদের সাথে রাগ না দেখানো।এই রাগের যে ভয়ংকর প্রভাব তার সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা'আলাই আয়াত নাজিল করেছেন।তিনি বলেন, لو كنت فظا غليظ القلب لانفضزوا من حولك فعف عنهم যদি তুমি রূঢ় ও কঠিন অন্তরের হতে তবে অবশ্যই তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত ،অথএব তাদের ক্ষমা করুন(আলে ইমরানঃ) তাই রেগে না গিয়ে কর্মী ভাইদের দোষ সমূহ ভালভাবে বিশ্লেষণ করুন।এরপর কিভাবে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া যায় তার গ্রহনযোগ্য প্ল্যান করুন,তাদের পাশে থাকুন,তাদেরকে সংশোধন হতে সাহায্য করুন।নবিজী (সাঃ) ওনার অধীনস্হদের ব্যাপারে ছিলেন সবচেয়ে কোমল।আনাস (রাঃ) বলেন,রাসূল (সাঃ) এর মদিনায় আগমনের দিন থেকে ওনার ওফাত পর্যন্ত আমি সফরে ও ঘরে অবিরাম ওনার সেবায় লেগে থাকি।তিনি কোনদিন আমার কোন কাজের জন্য বলেন নাই যে, لم صنعت هذا هكذا ؟ এমনটি কেন করেছ??" অথবা আমি কোন কাজ না করায় বলেন নাই যে, الا صنعت هذا هكذا ؟ এমনটি কেন কর নাই??" মুনাফিকদেরও তিনি ছাড় দিতেন,তিনি যখন তাবূক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন সময় একদিন যাদ্দ ইবনে কায়েসকে বললেন,হে যাদ্দ! তোমার কি বনুল আসফার(রোম) এর সাথে যুদ্ধের ইচ্ছা আছে?? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এখানেই থাকার অনুমতি দিন।আমাকে 'ফিতনায়' ফেলবেন না।রাসূল (সাঃ) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে বললেন," তোমাকে অনুমতি দিলাম"। এত বড় বেয়াদবি, মুনাফিকির পরও তিনি রেগে জাননি।


    শেখানোর যথাযথ পরিবেশ তৈরি করাঃ-- একজন দক্ষ শিক্ষকের তার ছাত্রের জন্য অবশ্যই উত্তম পরিবেশের ব্যবস্থা করা উচিত।যে কোন বিষয় শিখানোর জন্য ঐ বিষয়ের সাথে যায় এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত।তা না হলে মনযোগ নষ্ট হয়ে যায়।তাই দা'য়ী ভাইদের অবশ্যই মা'দঊ ভাই কোন কোন বিষয়ে দূর্বল তা খুঁজে বের করা উচিত,এবং সে সব বিষয় শিখানোর জন্য উত্তম পরিবেশে সৃষ্টি করতে হবে। রাসূল সাঃ সাহাবায়ে কেরামদের কোন বিষয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য সেই বিষয়ের সাথে যায় এমন উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতেন।হাদীসে আছে,আবু সাঈদ কুদরী (রাঃ) বলেন,এক মহিলা রাসূল সাঃ এর নিকট এসে বলল,হে আল্লাহর রাসুল! কেবলমাত্র পুরুষরাই আপনার হাদিস শুনার সৌভাগ্য লাভ করেছে, সুতরাং আপনি আমাদের জন্য ও একটি দিন নির্ধারণ করুন।আমরা সে দিন আপনার নিকট আসব।আপনি আমাদেরকে তা শিক্ষা দিবেন যা আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।তিনি (সাঃ) বললেন, "তোমরা অমুক অমুক দিন একত্রিত হও"। অতঃপর নবী (সাঃ) তাদের নিকট এসে তাদেরকে শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন (রিয়াদুস স্বলিহীন- ৯৬১) এখানে দেখা যাচ্ছে যে,নবী (সাঃ) তাদের জন্য বিশেষ দিন ঠিক করলেন,তারপর বিশেষ জায়গারও ব্যবস্থা করলেন, তারপর তাদের একত্রিত করলেন,তারপর শিক্ষা দিলেন।سنحان الله কত মহান এক শিক্ষক! যিনি ছাত্রদের তাদের চাহিদা মতই শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলেছেন! صلى عليه و سلم। তার উপর লাকো- কোটি দরূদ ও সালাম।


    না জেনে কাউকে দোষারোপ না করাঃ--- প্রিয় ভাই মিজাহিদীনদের ঐ শ্রেণীটির মাঝেই অন্যের দোষ প্রকাশ করে দেওয়া,গীবত,চোগলখোরির মানসিকতা বেশী।এই প্রবণতা স্বয়ং রাসূল(সাঃ) এর যুগেও ছিল।মনে রাখবেন ভাই,আপনার কাছে শুধুমাত্র ঐ ভাইয়েরই দোষ প্রকাশ করা হবে যার মধ্যে আসলেই গুণ রয়েছে।নষ্ট গাড়ির সাথে কে প্রতিযোগিতা করে?? তাই কারও কথা শুনেই অন্যের প্রতি কূ-ধারণা, অন্যকে দোষারোপ করা ইত্যাদি দা'য়ী ভাইদের জন্য একেবারেই অনুচিত।সিরাতের কিতাবে এসেছে,(তাবূক যুদ্ধের ঘটনা প্রসঙ্গে) রাসূল সাঃ যখন তাবূকে পৌঁছে লোকদের মাঝে বসলেন তখন বললেন, "ما فعل كعب بن مالك؟ কা'ব বিন মালিকের কী হয়েছে??" {কা'ব বিন মালিক (রাঃ) এই যুদ্ধে পিছনে থেকে গিয়েছিল} তখন বনূ সালামাহ্ গোত্রের এক লোক দাড়িয়ে বলল," হে আল্লাহর রাসূল! তার দুই চাদর ও দুই পাশ্ব দর্শন (অর্থাৎঃ ধন ও অহংকার) তাকে আটকে দিয়েছে"। এই কথা শুনে মু'য়াজ ইবনে জাবাল বললেন," بءس ما قلت،و الله يا رسول الله! ما علمنا عليه الا خيرا কত বাজে কথা বললে তুমি,আল্লাহর কসম হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তার ব্যাপারে ভাল ছাড়া অন্য কিছুই জানিনা" فسكت رسول الله صلي الله عليه و سلم তাদের কথা শুনে রাসূল সাঃ চুপ করে রইলেন।একই হাদীসের অন্য অংশে আছে,রাসূল যখন তাবূক থেকে মদিনাতে আসলেন তখন তিনি কা'ব বিন মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, ما خلفك؟ الم تكن قد ابتعت ظهرك؟ তুমি কেন জিহাদ থেকে পিছনে পরে রয়ে গেলে?? তুমি কী বাহন ক্রয় করনি?? "" سبحان الله! তিনি (সাঃ) তাবূকের ময়দানেই বলে বেড়াতে পারতেন, "কা'ব কেন আসেনি?? সে কি বাহন ক্রয় করেনি?? '' কিন্তু না,বরং তিনি সেখানে চুপ করেছিলেন এবং মদিনায় এসে সরাসরি কা'ব বিন মালিককেই জিজ্ঞেস করলেন। অতএব আমরা যেন এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি।


    উপসংহারঃ--- প্রিয় ভাই,আপনি এমন হয়ে যান যেন আপনি " একজন শিক্ষক "। মুজাহাদার এই পাঠশালায় আপনি এক মহান " শিক্ষাক"।এই পাঠশালাকে সমস্ত অপবাদ থেকে হেফাযত করতে হবে।একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক যেমন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রদের বিশেষ কেয়ার করে,তাদের দোষত্রুটিগুলো দেখেও না দেখার ভান করে, তাদেরকে নাম্বার বাড়িয়ে দিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ঠিক তেমনি দা'য়ী ভাইদেরও দাওয়াতী মজলিসের এই শ্রেণীর ভাইদের সাথে এমন আচরণ করতে হবে।এমনভাবে ওদের দিক্ষিত করবে যাতে তারা ফেল না করে দ্বিতীয় শ্রেনীর কাতারে চলে আসবে।রাসূল (সাঃ) কখনোই ওনার সাহাবাদের শিক্ষা দিতে বিরক্তবোধ করতেন না।যখন তারা কোন প্রশ্ন করত তিনি বড় মহব্বতের সাথে তার উত্তর দিতেন।তাই তারাও সারা জীবন ওই শিক্ষা,আচরণ, কথা হুবুহু মনে রেখেছেন।এক হাদীসে এসেছে, আবু যার (রা) বর্ণনা করেন,আমি নিবেদন করলাম হে আল্লাহ্'র রাসূল! কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি (সাঃ) বললেন," الايمان بالله و الجهاد في سبيل الله আআল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তার রাস্তায় জিহাদ করা (বুখারীঃ- ৮৪) অন্য হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন এমন অবস্থায় যে তিনি তখন সোওয়ারির উপর আরোহন করার জন্য পাদানে পা রাখছিলেন اي الجهاد افضل؟ কোন জিহাদ সর্বোত্তম?? তিনি বললেন, " كلمة حق عند سلطان جاءر জালেম বাদশাহ্/সরকারের সামনে হক্ব কথা বলা"


    এভাবেই নবিজী সাঃ যে অবস্থায় থাকুক না কেন,কখনোই শিক্ষা দিতে বিরক্তবোধ করেন নাই।বরং সর্বোত্তম পন্থায়, ধৈর্যের সাথে তার সাহাবাদের তরবিয়ত,তালীম দিয়েছেন।


    আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের সবাইকে হাউজে কাউসারে ওনার হাত থেকে পান করার তৌফিক দান কারুক,আমাদেরকে শাহাদাতের সুধা পান করিয়া হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালুবের সাথে মিলিত করুক।আমিন।


    و السلام

    و اخر دعونا ان الحمد لله رب العالمين

  • #2
    আঁখি অনেক উপকারী এক প্রবন্ধ। আল্লাহ তা'আলা মুহতারাম ভাইয়ের মেধা ও যোগ্যতায় আরো সমৃদ্ধি দান করুন। আমীন।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ আপনার ইলমে ও আমলে বারাকাহ দান করুন। আমিন
      এমন লেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহবান করছি............
      গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

      Comment


      • #4
        Originally posted by Ibrahim Al Hindi View Post
        আল্লাহ আপনার ইলমে ও আমলে বারাকাহ দান করুন। আমিন
        এমন লেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহবান করছি............
        সহমত ভাই আপনার সাথে...জাযাকাল্লাহ
        আমি সকল ভাইকে এটা পড়ার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment

        Working...
        X