Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফি সাবিলিল্লাহ এবং জিহাদ: সংশয়ের নিরসন

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফি সাবিলিল্লাহ এবং জিহাদ: সংশয়ের নিরসন

    ফি সাবিলিল্লাহ এবং জিহাদ: সংশয়ের নিরসন

    এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

    من اغبرت قدماه في سبيل الله حرمه الله على النار. صحيح البخاري : 865
    যার পদযুগল ফি সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। -সহীহ বুখারি: ৮৬৫


    কোনো কোনো সাহাবি ফি সাবিলিল্লাহর এ ফজিলত জুমার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন।


    যেমন ইমাম বুখারি রহ. আবায়া বিন রিফায়া রহ. থেকে বর্ণনা করেন,

    أدركني أبو عبس وأنا أذهب إلى الجمعة فقال سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( من اغبرت قدماه في سبيل الله حرمه الله على النار ) .صحيح البخاري : 865
    আমি (পায়ে হেঁটে) জুমআয় যাচ্ছিলাম। তখন আবু আবস রাদি. এর সাথে সাক্ষাত হয়। (আমাকে হেঁটে চলতে দেখে) তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যার পদযুগল ফি সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। -সহীহ বুখারি: ৮৬৫

    কোনো কোনো সাহাবি ফি সাবিলিল্লাহর এ ফজিলত জিহাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। দেখুন সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৬০৪।


    এ ব্যাপারে আগেও একবার আলোচনা হয়েছিল। তাই এখন আর বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না।


    তাবলিগি ভাইদের বিভ্রান্তি

    তাবলিগি ভাইয়েরা এখান থেকে বের করেছেন যে, ফি সাবিলিল্লাহর ফজিলত যেহেতু জুমায় ব্যবহার করা গেছে তাই তা তাবলিগেও ব্যবহার করা যাবে।

    যদি তারা এতটুকুতে ক্ষান্ত থাকতেন তাও ভাল হতো, কিন্তু তারা আগে বেড়ে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ফজিলতও তাবলিগে ব্যবহার করে দিয়েছেন। বরং শেষে তো অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, জিহাদে কোনো ফজিলতই রয়নি, জিহাদ হারাম হয়ে গেছে আর তাবলিগ হয়ে গেছে ফরয এবং সকল ফজিলতের কেন্দ্রবিন্দু!!

    যাহোক, এদিকে যাচ্ছি না।


    জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ফজিলত কি তাবলিগে ব্যবহার করা যাবে?

    ‘ফি সাবিলিল্লাহ’র ফজিলত জুমায় ব্যবহার করা গেছে বলে ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’র ফজিলত তাবলিগে ব্যবহার করা যাবে কি?

    বিষয়টি বুঝতে হলে আপনাকে আগে ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ বুঝতে হবে।

    তবে সারকথায় বলে রাখি, ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ আর ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ এক নয়।


    ফি সাবিলিল্লাহর মর্ম

    ‘সাবিল’ (سبيل) শব্দটি আরবি, যার অর্থ পথ বা রাস্তা (way)।

    ‘আল্লাহ’ (الله) শব্দের দিকে ইজাফত করলে হয় ‘সাবিলুল্লাহ’ (سبيل الله) তথা আল্লাহর পথ বা আল্লাহর রাস্তা (The way of Allah)।

    এর শুরুতে ‘ফি’ (في) হারফে জার আনলে হয় ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ (في سبيل الله) তথা আল্লাহর পথে বা আল্লাহর রাস্তায় (In the way of Allah)।

    ‘সাবিলুল্লাহ’টি ‘সাবিলুশ শাইতান’ (শয়তানের পথ) বা ‘সাবিলুত তাগুত’ (তাগুতের পথ)-এর বিপরীত।



    আল্লাহ তাআলা আমাদের খালিক। আমাদের মালিক। আমরা সবাই তার সৃষ্টি। তিনি আমাদের পরীক্ষার জন্য এ দুনিয়াতে সাময়িক সময়ের জন্য পাঠিয়েছেন। আমরা মৃত্যুর পর আবার সবাই তাঁর সামনে হাজির হবো। হিসাব নিকাশ হবে। বিচারাচার হবে। যদি আমল আল্লাহর সন্তুষ্টি মুতাবেক হয় তাহলে জান্নাত, নইলে জাহান্নাম।


    এখন কোন পথে চললে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন, সেই পথ আল্লাহ তাআলা কিতাব নাযিল করে, নবী রাসূল প্রেরণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। সেই পথ এবং পন্থায়ই হলো ‘সাবিলুল্লাহ’ তথা আল্লাহর পথ (The way of Allah)।

    এর বাহিরে যা আছে সব হলো ‘সাবিলুশ শাইতান’ বা ‘সাবিলুত তাগুত’ তথা শয়তান বা তাগুতের পথ।



    তাহলে আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সাবিলুল্লাহ’র অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ‘আল্লাহর নির্দেশিত পথ, পন্থা ও জীবনব্যবস্থা’ যে মেনে চললে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন।

    এ হিসেবে সকল ‘قُرُبات’ তথা আল্লাহর নৈকট্য লাভের যত পন্থা ও নেক আমল শরীয়ত বাতলে দিয়েছে, সবগুলোকেই ‘সাবিলুল্লাহ’ বলা যায়।

    আরও সহজ করে বললে, গোটা দ্বীনকেই ‘সাবিলুল্লাহ’ বলা যায়। কারণ, আল্লাহ তাআলা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যেসব পথ দেখিয়েছেন সেগুলোর সমষ্টিই হচ্ছে দ্বীন। এগুলোই আল্লাহর পথ, আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ। এর বাহিরে যা আছে সব হচ্ছে তাগুত বা শয়তানের পথ।


    যেহেতু আল্লাহর পথে চললে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, তাই সাবিলুল্লাহ বলতে ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ’ বলা যায়।

    এ হিসেবে-
    - ‘ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ’ বলতে বুঝাবে ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান’।
    - ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ বলতে বুঝাবে ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জিহাদ’।



    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ‘সাবিলুল্লাহ’ নির্দিষ্ট কোনো আমলের নাম নয়, বরং সাবিলুল্লাহর মধ্যে আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সকল নেক আমলই অন্তর্ভুক্ত।


    সাধারণত সাবিলুল্লাহ বলতে জিহাদই বুঝায়

    আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাবিলুল্লাহ যদিও সব আমলকেই বুঝায়, তবে সাবিলুল্লাহ বলতে সাধারণত জিহাদই উদ্দেশ্য হয়।

    যেমন ধরুন, হাতেম তাই। তিনি সাহাবি আদি বিন হাতেম রাদি.র পিতা ছিলেন। কোনো ব্যক্তিকে হাতেম তাই বললে দানশীলতার চিত্রটিই ভেসে উঠে। যদিও তার আরও অনেক ভাল গুণ রয়েছে, কিন্তু হাতেম তাই পরিচয়ের লোকটির দানশীলতার চিত্রটিই ভেসে আসবে। আর কোনো ব্যক্তিকে তখনই হাতেম তাই বলা হবে, যখন তিনি দানশীলতার জগতে বে-নজির উপমায় পরিণত হবেন। এমন ব্যক্তির নাম অনেকে না জানলেও হাতেম তাই বললে সবাই তাকে চিনবে।

    এমনিভাবে ‘জিহাদ’ (যাকে বর্তমান দুনিয়া সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ নামে চিনে) এটি দ্বীনে ইসলামের পরিচয়।


    যেমন ধরুন আমেরিকা; সে কি কোনো দিন টুইন টাওয়ার ভুলতে পারবে?

    ফ্রান্স কি পারবে শার্লি এবদো ভুলতে?

    স্পেন কি ভুলতে পারবে তারেক বিন যিয়াদকে?

    রাশিয়া কি ভুলতে পারবে ইমাম শামিলকে?

    ভারত কি পারবে মুহাম্মাদ বিন কাসিম, সুলতান মাহমুদ গজনবি আর আহমাদ শাহ আবদালিকে ভুলতে?


    এই যে নাইন এলিভেন-টুইন টাওয়ার, এই যে শার্লি এবদো, এই যে সালাউদ্দীন আইয়্যুবি-নুরুদ্দীন জিংকি, এই যে কুতজ-বাইবার্স, এই যে ইবনে তাশাফিন-উমার মুখতার-খাত্তাবি, এই বারবারোসা-আলাব আরসালান-মুহাম্মাদ আলফাতিহ, এই যে গজনবি-সোমনাথ, এই যে বিন কাসিম-আবদালি, এই যে উসামা-মোল্লা উমার, এই যে আলকায়েদা-তালেবান: এগুলো হলো ইসলামের পরিচয়।


    ধরুন, আমেরিকার কোনো লেকচারার কিছু স্টুডেন্টসের সামনে ইসলাম ও মুসলিমদের পরিচয় করাতে চাচ্ছে, যারা কোনো দিন কোনো মুসলিমকে দেখেনি, মুসলিমদের আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কেও ধারণা রাখে না।

    তখন সবচেয়ে সহজে ও সুস্পষ্টভাবে যে পরিচয়টি দিয়ে সে মুসলিমদের পরিচয় করাতে পারবে, সেটি হলো নাইন এলিভেন। নাইন এলিভেনে যারা হামলা করেছিল তারাই হলো মুসলিম।


    অন্যথায় যদি বলে, মুসলিম হলো যারা নামায পড়ে, রোযা রাখে, যাকাত দেয়: তাহলে স্টুডেন্টরা পূর্ণ বুঝতে পারবে না। নামায, রোযা, যাকাত- এগুলো কি জিনিস!! এগুলো কিভাবে করে!! কারা এগুলো করে!! মুসলিমদের পরিচয় তারা এগুলো থেকে বুঝতে পারবে না।

    কিন্তু যখনই বলেছে, মুসলিম হলো যারা টুইন টাওয়ারে হামলা করেছিল। আর যে ধর্ম তাদের এ ধরনের হামলা শেখায় সেটাই হলো ইসলাম। তখন আশাকরি অনেক সহজে তারা ইসলাম ও মুসলিম চিনতে পারবে।


    সারা বিশ্বের সকল জাতিগোষ্ঠী ইসলাম ও মুসলিমকে চিনবে এই জিহাদের মাধ্যমে। মুসলিম শব্দটি মনে আসলেই তাদের মন মানসে তলোয়ারধারী একটি জাতির চিত্র ভেসে উঠবে। ভেসে উঠবে নাইন এলিভেন, শার্লি এবদো, গজনবি, আইয়্যুবি, মোল্লা উমার, উসামা।

    এজন্যই আমরা দেখতে পাই, বর্তমান দুনিয়ার সকল তাগুতি রাষ্ট্র সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসের ধর্ম বলতে একমাত্র এই ইসলাম ছাড়া আর কিছু বুঝে না। দ্বীনে ইসলামের সঠিক এ মর্মটি কাফেররা ঠিক অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে, যদিও মিডিয়ার প্রোপাগাণ্ডার কারণে অনেক মুসলিম এ থেকে উদাসীন।


    যাহোক, ‘সাবিলুল্লাহ’ যদিও আম; যদিও সকল নেক আমলকে ‘আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সাবিলুল্লাহ’ বলা যায়, তবে শরীয়তের পরিভাষায় সাধারণত ‘সাবিলুল্লাহ’ বলতে ‘জিহাদ’ই উদ্দেশ্য হয়। এ জিহাদই দ্বীনে ইসলাম তথা আল্লাহর দ্বীনের পরিচয়।


    আল্লামা আইনি রহ. (৮৫৫ হি.) বলেন,

    سبيل الله عبارة عن جميع القرب لكن عند الإطلاق يصرف إلى الجهاد. البناية شرح الهداية (3/ 454)
    ‘সাবিলুল্লাহ’তে সকল নেক কাজই শামিল। তবে সাধারণভাবে সাবিলুল্লাহ বললে জিহাদই বুঝায়। -বিনায়া ৩/৪৫৪


    জিহাদ ও সাবিলুল্লাহর পার্থক্য: ফিকহি মাসআলার আলোকে

    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাবিলুল্লাহ সাধারণত জিহাদ বুঝালেও তা থেকে অন্যান্য নেক আমল উদ্দেশ্য নেয়ার সুযোগও থাকে।

    পক্ষান্তরে যেখানে সাবিলুল্লাহর সাথে ‘জিহাদ’ বা ‘কিতাল’ শব্দটি যুক্ত থাকবে, সেখানে অন্য কিছু উদ্দেশ্য নেয়ার সুযোগ নেই। সেই ফজিলত অন্য কিছুর উপর ফিট করারও সুযোগ নেই।

    এমনিভাবে আশপাশের কারিনা-আলামাত দ্বারা যখন পরিষ্কার যে, এখানে সাবিলুল্লাহ দ্বারা জিহাদই উদ্দেশ্য, অন্য কিছু নয়; সেখানেও এ ফজিলত অন্য কোনো আমলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।


    ফিকহি একটি মাসআলার মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ।

    মাসআলা

    কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করে গেল, ‘আমি মারা গেলে আমার সমুদয় সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ তোমরা ফি সাবিলিল্লাহয় খরচ করবে’।

    কিংবা কোনো ব্যক্তি বললো যে, ‘আমার এ সম্পদ আমি ফি সাবিলিল্লাহয় দিয়ে দিলাম’।

    দেখুন, ব্যক্তি কিন্তু জিহাদে খরচ করার কথা বলেনি, বলেছে ‘ফি সাবিলিল্লাহ’তে খরচ করতে।

    যেহেতু এ দ্বারা সাধারণত জিহাদই উদ্দেশ্য হয়, তাই তা মুজাহিদদের দিয়ে দিবে, যারা এ মাল দিয়ে জিহাদ করবে- এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই উত্তম। তবে যেহেতু জিহাদের কথা পরিষ্কার উল্লেখ নেই, তাই ফি সাবিলিল্লাহ দ্বারা সাধারণ দানও উদ্দেশ্য হতে পারে। তাই এ মাল হাজিদের পেছনে খরচ করলে বা সাধারণ ফুকারাদের দিয়ে দিলেও ব্যক্তির অসিয়ত আদায় হবে। তবে মুজাহিদদের দেয়াই উত্তম, যেহেতু ফি সাবিলিল্লাহ দ্বারা সাধারণত জিহাদই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।


    শরহুস সিয়ারে বলা হয়েছে,

    قال محمد بن الحسن – رحمه الله تعالى – إذا قال الرجل في مرضه: ثلث مالي في سبيل الله، ثم توفي ... يعطي ثلثه ... أهل الحاجة ممن يغزو. لأن كل خير وطاعة وإن كان في سبيل الله، ولكن مطلقه يستعمل في الغزو والجهاد ... فكان قصد الميت من هذا أن يصرف ثلثه إلى جهة الغزو، فيصرف إلى ما نواه وقصده ... وإن أعطاها حاجا منقطعا على وجه الصدقة عليه فذلك جائز؛ لأن الصدقة على الحاج المنقطع في سبيل الله؛ لأنه طاعة الله، وقد ذكرنا أنه يدخل تحت هذا اللفظ كل خير وطاعة ... ولكن الأفضل أن يعطي المحتاج الذي يخرج في سبيل الله، لما بينا أن سبيل الله إذا أطلق يراد به الغزو والجهاد دون غيره، فكان صرفه إليه. –شرح السير الكبير (ص: 2076-2078)

    ইমাম মুহাম্মাদ বিন হাসান রহ. বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি মৃত্যু শয্যায় বলে, ‘আমার সমুদয় সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ আমি ফি সাবিলিল্লাহয় দিয়ে গেলাম’ এরপর লোকটি মারা যায়, … তাহলে তার এ সম্পদ গরীব মুজাহিদদের দেয়া হবে। কেননা, আল্লাহর আনুগত্যমূলক এবং সকল নেক কাজ যদিও সাবিলুল্লাহতে অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু সাবিলুল্লাহ বললে সাধারণত জিহাদ-কিতালই উদ্দেশ্য হয়। কাজেই মায়্যিতের উদ্দেশ্য এটা হওয়াই স্বাভাবিক যে, তার এ সম্পদ জিহাদে খরচ করা হবে। অতএব, তার নিয়ত ও উদ্দেশ্য মাফিক খরচ করা হবে। …

    যদি এ সম্পদ অর্থসংকটে পতিত কোনো হাজিকে সাদাকারূপে দিয়ে দেয়, তাহলেও জায়েয হবে। কারণ, অর্থসংকটে পতিত হাজিকে সাদাকা করাও সাবিলুল্লাহর মধ্যে পড়ে। কারণ, এটিও একটি নেক কাজ। আর শুরুতেই বলে এসেছি যে, সকল নেক ও কল্যাণমূলক কাজ সাবিলুল্লাহয় শামিল। …

    তবে উত্তম হলো, জিহাদে যাবে এমন কোনো গরীব ব্যক্তিকে দেয়া। কারণ, শুরুতেই বলে এসেছি যে, সাধারণত সাবিলুল্লাহ বলতে জিহাদ-কিতালই বুঝায়, অন্য কিছু বুঝায় না। কাজেই এ পথে খরচ করাই উত্তম। -শারহুস সিয়ারিল কাবির: ২০৭৬-২০৭৮



    আরও বলা হয়েছে,

    قال محمد - رحمه الله تعالى -: إذا أوصى الرجل فقال: ثلث مالي وصية في سبيل الله، ثم مات فثلث ماله في سبيل الله، كما أوصى ... ثم يعطى أهل الحاجة ممن يغزو في سبيل الله لما قلنا: إن عند الإطلاق في سبيل الله يراد به الجهاد، فيصرف إلى أهل الحاجة من الغزاة والمجاهدين ... وإن أعطاه المساكين ممن لا يغزو أجزأه ذلك. لأن الصدقة على المساكين الذين لا يغزون طاعة، وقد ذكرنا أن كل طاعة من سبيل الله. -شرح السير الكبير (ص: 2088، 2092)

    মুহাম্মাদ রহ. বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি অসিয়ত করে, ‘আমার সমুদয় সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ ফি সাবিলিল্লাহয় অসিয়ত করে গেলাম’ এরপর লোকটি মারা যায়, তাহলে তার অসিয়তমতো এ সম্পদ ফি সাবিলিল্লাহয় ব্যয় করা হবে। …

    দেয়ার ক্ষেত্রে কথা হলো, এ সম্পদ ফি সাবিলিল্লাহ জিহাদ করবে এমন কোনো গরীব ব্যক্তিকে দেয়া হবে। কারণ বলে এসেছি যে, ফি সাবিলিল্লাহ দ্বারা সাধারণত জিহাদই উদ্দেশ্য হয়। তাই গরীব গাজি ও মুজাহিদদের দেয়া হবে। …

    জিহাদ করবে না এমন গরীবদের দিয়ে দিলেও সহীহ হবে। কারণ, যেসব গরীব জিহাদ করবে না, তাদের দান করাও একটি নেক কাজ। আর বলে এসেছি যে, সকল নেক কাজই সাবিলুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত। -শারহুস সিয়ারিল কাবির: ২০৮৮, ২০৯২


    আরও বলা হয়েছে,

    وعن عاصم بن كليب الجرمي عن عطاء بن أبي رباح في رجل قال: ثلث مالي في سبيل الله. قال عطاء: طاعة الله كلها سبيله. ولكن لو كان سمي غزوا كان كما قال. –شرح السير الكبير (ص: 2081)

    আসিম বিন কুলাইব আলজারমি রহ. এর সূত্রে আতা বিন আবি রাবাহ রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি বলে, ‘আমার সমুদয় সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ ফি সাবিলিল্লাহয় দিয়ে দিলাম’; আতা বিন আবি রাবাহ রহ. বলেন, (তাহলে সকল নেক কাজেই তা ব্যয় করা যাবে, কারণ) সকল নেক কাজই সাবিলুল্লাহয় পড়ে। তবে যদি জিহাদের কথা পরিষ্কার বলে, তাহলে যেখানে বলেছে সেখানেই খরচ করতে হবে। -শারহুস সিয়ারিল কাবির: ২০৮১


    উপরোক্ত ইবারাতগুলো থেকে আশাকরি স্পষ্ট যে, যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে জিহাদ কিতালের কথা বলা আছে, সেখানে ভিন্ন কিছু উদ্দেশ্য নেয়া যাবে না, ভিন্ন অর্থও করা যাবে না, এ ফজিলত ভিন্ন কিছুতে লাগানোও যাবে না।

    আর যেখানে শুধু ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ এসেছে, কিন্তু সুস্পষ্টভাবে জিহাদের কথা বলা নেই, সেখানে জিহাদের পাশাপাশি ভিন্ন অর্থও উদ্দেশ্য নেয়া যেতে পারে। সে ফজিলত জিহাদের পাশাপাশি অন্যান্য নেক আমলেও লাগানো যেতে পারে।

    তবে যে আমল যত বেশি কষ্টসাধ্য হবে, যে আমলের ফায়েদা যত বেশি হবে, সে হিসেবে সওয়াবেও কম বেশ হবে।

    যেমন, আমরা শুরুতে যে হাদিসটি উল্লেখ করেছি,

    من اغبرت قدماه في سبيل الله حرمه الله على النار. -صحيح البخاري : 865
    যার পদযুগল ফি সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। -সহীহ বুখারি: ৮৬৫

    এখানে পরিষ্কার জিহাদের কথা নেই। তাই তা ব্যাপক অর্থবোধক হতে পারে। এ ফজিলত প্রথমত জিহাদের উপর ফিট হবে। পাশাপাশি অন্যান্য নেক আমলেও ফিট হবে। এ হিসেবেই সাহাবি এ হাদিস দিয়ে জুমার নামাযে হেঁটে যাওয়ার ফজিলত বর্ণনা করেছেন।

    তবে সব আমলের ক্ষেত্রে সওয়াব সমান হবে না।


    হাফেজ ইবনে হাজার রহ. (৮৫২হি.) বলেন,


    فإذا كان مجرد مس الغبار للقدم يحرم عليها النار فكيف بمن سعى وبذل جهده واستنفد وسعه؟. -فتح الباري لابن حجر (6/ 30)
    কেবল পায়ে ধূলা বালি লাগলেই যদি তা জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যায়, তাহলে যে ব্যক্তি দৌড় ঝাঁপ করবে, নিজের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দেবে, তার ফজিলত কত হবে?! –ফাতহুল বারি: ৬/৩০


    ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮হি.) বলেন,

    فهذا في الغبار الذي يصيب الوجه والرجل فكيف بما هو أشق منه؛ كالثلج والبرد والوحل. -مجموع الفتاوى (28/ 419)
    চেহারা ও কদমে লাগা ধূলা বালিরই যদি এ ফজিলত হয়, তাহলে বরফে চলা বা প্রচণ্ড শীত ও কাদা-কর্দমে চলার মতো কাজ, যেগুলো আরও অনেকগুণ কঠিন, সেগুলোর ফজিলত কত বেশি হবে?! –মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৪১৯


    সারকথা
    আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফি সাবিলিল্লাহ একটি ব্যাপক শব্দ। তবে সাধারণত তা থেকে জিহাদ উদ্দেশ্য হয়।

    জিহাদ উদ্দেশ্য হলেও অন্যান্য নেক আমলও উদ্দেশ্য হতে পারে।

    তাই যেসব আয়াত বা হাদিসে শুধু ফি সাবিলিল্লাহ এসেছে, সেগুলোতে জিহাদের পাশাপাশি কারিনা-আলামাতের ভিত্তিতে অন্যান্য নেক আমলও উদ্দেশ্য হতে পারে। সে ফজিলত জিহাদে যেমন ফিট হবে, অন্যান্য নেক আমলেও ফিট হতে পারে। অবশ্য আমলে আমলে সওয়াব বেশকম হবে। সব আমলের সওয়াব সমান হবে না।


    পক্ষান্তরে যেখানে জিহাদ কিতাল পরিষ্কার উল্লেখ আছে, সেখানে ভিন্ন কিছু উদ্দেশ্য হতে পারবে না। সে ফজিলত অন্য কোনো আমলে ফিট করা যাবে না। যেমন খাসভাবে নামাযের ফজিলতের ব্যাপারে সেসব আয়াত হাদিস এসেছে, সেগুলো জিহাদ বা অন্য কোনো আমলে লাগানো যায় না।


    এমনিভাবে কেউ যদি ফি সাবিলিল্লাহয় দান বা অসিয়ত করে, জিহাদ কিতালের কথা সুস্পষ্ট না বলে এবং কারিনা-আলামত দ্বারা পরিষ্কারও না হয় যে, সে জিহাদই উদ্দেশ্য নিয়েছে, অন্য কিছু নেয়নি; তাহলে এ সম্পদ জিহাদে যেমন ব্যয় করা যাবে, অন্যান্য নেক কাজেও ব্যয় করা যাবে।

    পক্ষান্তরে যেখানে সুস্পষ্টভাবে জিহাদ কিতালের কথা আছে বা কারিনা-আলামাত দ্বারা একমাত্র জিহাদ-কিতাল উদ্দেশ্য হওয়াই সুস্পষ্ট; সেক্ষেত্রে এ সম্পদ জিহাদ ব্যতীত অন্য কোথাও ব্যয় করা যাবে না। করলে অসিয়ত বা দান আদায় হবে না। ওয়াল্লাহু তাআলা আ’লাম।
    ***


  • #2
    আলহামদুলিল্লাহ!!
    খুবি সুন্দর আলোচনা। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা উম্মাহর কতিপয় ভাইদের বিভ্রান্তি দূর করে দিন। এবং সঠিক বুঝ ও সমঝ দান করুন। মহান রব পোষ্টকারী ভাইকে উত্তম থেকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
    আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তায়ালা আমাদের মুহতেরাম শাইখের ইলমে বারাকাহ দান করুন! আমিন।

      Comment


      • #4
        মা-শা-আল্লাহ!

        এক কথায় অসাধারণ।
        আপনার ইলমের প্রতি আমার লোভ হচ্ছে!

        جزاك الله خيرا তথা LIKE দেওয়ার জন্যই Log in করলাম সাথে Comment-ও করে ফেললাম।


        الله أكبر

        শুধু আল্লাহর জন্য আমি আপনাকে মহব্বত করি।
        আপনার নেক ছায়া উম্মাহর উপর দীর্ঘজীবী হউক।
        আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
        হে পরাক্রমশালী শক্তিধর! কৃপণতা আর কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় চাই সর্বক্ষণ।

        Comment


        • #5
          মাশা-আল্লাহ,, আল্লাহ আপনার ইলমে বারাকাহ দান , আমীন। ভাইজান, আমরা আশাকরি আপনি ফোরামে বেশি বেশি পোস্ট করুন।
          اللهم انی اسلک الهدی والتفی والعفافی والغناء

          Comment


          • #6
            অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।উপকৃত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা ভাইয়ের ইলমকে অনেকগুন বৃদ্ধি করে দিন।আমিন।

            Comment


            • #7
              আলহামদুলিল্লাহ খুব সুন্দর বিশ্লেষণ আল্লাহ তায়া’লা আপনাকে উভয় জগতে উত্তম বিনিময় দান করুন..আমাদের সকলকে এই পথে অটল অবিচল রাখুন,আমিন।

              Comment


              • #8
                সকল ভাইদের মনোযোগ দিয়ে বুঝে বুঝে পড়া উচিত!

                মা শা আল্লাহ, উপকৃত হওয়ার মত পোস্ট। আমাদের সবার উচিত-নিজে উপকৃত হওয়া ও অন্যকে উপকৃত করা!
                আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুহতারাম ভাইয়ের ইলমে-আমলে এবং ফাহমে ও ফিকিরে বারাকাহ নসীব করুন!
                “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

                Comment


                • #9
                  আলহামদুলিল্লাহ, অনেক উপকৃত হলাম। মুহতারাম ভাইয়ের ইলমী পোস্টগুলো হৃদয়কে পরিতৃপ্ত করে। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
                  ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                  Comment

                  Working...
                  X