Announcement

Collapse
No announcement yet.

মুক্ত পরিকল্পনা যেন জীবন ধ্বংসের কারণ না হয়

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মুক্ত পরিকল্পনা যেন জীবন ধ্বংসের কারণ না হয়

    মুক্ত পরিকল্পনা যেন জীবন ধ্বংসের কারণ না হয়

    প্রিয় যুবক ভাই!
    মানুষ বড় বড় স্বপ্ন দেখে। তুমিও তাদের ন্যায় ইয়া বড় বড় স্বপ্ন বুনো। মানুষ কত শত পরিকল্পনা করে। তুমিও তাদের ন্যায় পরিকল্পনার বিশাল ছক আঁকো। মানুষের ফিকিরের সূত্র ধরে তুমিও সে পথে হাঁটো। হোক সে সূত্র ভুল অথবা নির্ভুল। চাই সে পথ মসৃণ অথবা কাঁটাযুক্ত। অদৃশ্য গৌন্তব্যের উদ্দেশে ছুটছো তো ছুটছোই।

    মনের আকাশ একটুও ফ্যাকাশে হয় না। চিন্তা-ভাবনার ভারি গর্জন! তাতো বহুদূর। সত্যের আলো নিভু নিভু করে জ্বললেও তা কখনো প্রজ্জ্বলিত শিখা হতে পারে না। হেদায়েতের নূর কাছে ভিড়তে চাইলেও গোনাহে ভরা যৌবনে স্থান পায় না। কিসের আশা আর কিসের ভরসা! সবকিছু মিলিয়ে তার শেষটুকু শুধুই হতাশা আর হতাশা।

    কেন যুবক ভাই বলুন তো? ইনসান তার জীবন কি এত বৈচিত্র্যময়? মুসলিম তার আদর্শ কি এত বে-শৈলীময়? যে তাতে শুধু দেওয়ার আবদার আছে পাওয়ার অবকাশ থাকতে পারে না? পাওনা মিটানোর সুযোগ আছে জীবন বিলানোর ময়দান আছে কিন্তু প্রতিদান পাওয়ার সুযোগ নেই? তা কিন্তু অবশ্যই না। রবের খাজানা সকল পাপিষ্ঠ নিকৃষ্ট আর বিশ্বাসীদের জন্য উন্মুক্ত।[১]

    রবকে ডাকো, কাছে পাবে। বিপদ-আপদ, সংশয়, ওয়াসওসা, দূর হবে। রিযিকে বরকতের হিড়িক পড়বে। আমলে ইমানী স্বাধ আস্বাদন করবে। চোখে মুখে হ্যাসোজ্জল নূরানী আভা ফোটে উঠবে। শরীয়ার রুপরেখায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পথ আঁকড়ে ধরো শুহাদা ও গুরাবাদের। সে পথের বাঁধাবিপত্তি দূর করতে প্রশিক্ষণ নাও নাবিয়্যিন ও সিদ্দিকীনদের। তখনই তো জীবনকে পাবে হিরার জ্যোতিতে।

    প্রিয় যুবক ভাই!
    আমি জানি, তোমার মনে বিরাট বিরাট আশা জাগে, আকাশ ছোঁয়া উচ্চাশার বিস্তার ঘটে। তুমি বড় হবে, দেশের মাথা হবে। সম্পদের পাহাড় গড়বে এবং ক্ষমতার মসনদে সওয়ার হবে। এভাবে তুমি সুখের নাগাল পাবে। শান্তির শীতল পরশে জীবন তোমার সুশীতল হবে। বুক টান করে দাঁড়িয়ে বলবে আমি অমুক, আমি তমুক অথচ তুমি যুবক আল্লাহর কাছে কিছুই না। কারণ তুচ্ছ নগন্য জিনিসকে তুমি বানিয়েছো জীবনের শ্রেষ্ঠ পাথেয় ।

    প্রিয় ভাই! আসল নুকসানটা তো এখানেই। মানুষ জানে না, জীবনের লাগাম তার এক ঊর্ধ্ব শক্তির হাতে, বিশ্বজগতের সবকিছু যার নিয়ন্ত্রণে। তাই তাকদীরের এক ঝাপটায় মানুষের সব তদবির মিসমার হয়ে যায়। তার সব কল্পনা, পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। তবু মানুষের হুঁশ হয় না। তবু গাফলতের ঘুম ভাঙ্গে না। ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করে না।

    ইরশাদ হয়েছে-
    اقترب للناس حسابهم وهم في غفلة معرضون
    মানুষের হিসেবে নিকেশের সময় আসন্ন। অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। [২]

    মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ তার কল্পনা জল্পনায় বিভোর থাকে। আশা ও উচ্ছাশায় মজে থাকে। মৃত্যু এসে যখন থাবা দেয় তখনই শুধু তার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়।
    মুমিনের জীবনে এমন তো আচমকা কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার কথা ছিলো না! সর্বনাশা এমন তো কোন কারবারী তার জীবনে ঠায় পাওয়ার কথা ছিলো না। সেটাই তো বলছি! কারণ তোমার চোখে দুনিয়ার রঙিন চশমা লাগানো আছে সুতরাং তুমি দেখবে কি করে সত্যের সফেদ পাথর?

    মানুষ কত বোকা!
    সে ভাবে জীবন নিয়ে সেই শুধু পরিকল্পনা করে। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লাও যে তার জীবন নিয়ে মার্জিত পরিকল্পনা করে একটিবারের জন্য নাদান ইনসান ভাবে না! জীবন যখন তোমার পরিকল্পনা মাফিক চলে না তখন হতাশ হবে না। জীবন তোমার পরিকল্পনার বাহিরে যেতে পারে কিন্তু তা সর্বদা আল্লাহর পরিকল্পনার ভিতরেই থাকে। সবকিছু তোমার ইচ্ছেমতো না হলেই ভেঙে পড়বে না।[৩]

    নিশ্চিত হও-তোমার ইচ্ছেমতো না হলেও, তা কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছেমতো ঠিকই হচ্ছে। আর যা আল্লাহর ইচ্ছে মাফিক হয় তাতে কোন অকল্যাণ থাকতে পারে না। এ বিশ্বাসটুকুন যার ভিতর আছে সে কি করে পারে দুনিয়ায় অবাধ বিচরণের সুযোগ খোঁজতে? মুক্তির এ আস্ফালন যার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়ায় সে কি করে পারে তাকে ফিরিয়ে দিতে? বিশ্বাসীদের বিশ্বাস ভঙ্গ হয় না। তবে মন খানিকটা মুচড় দিতে চায়। কিন্তু মুমিন লাগাম টেনে ধরে আর মুনাফিক হাওয়ায় ভাসতে থাকে।

    আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহিমাল্লাহ বলেন-
    তুমি কোনো জিনিসের পরিকল্পনা করতে গিয়ে আল্লাহর অবাধ্য হয়ো না কারণ তুমি যে জিনিস পেতে আল্লাহর অবাধ্য হচ্ছো তার নিয়ন্ত্রণ কিন্তু মহান আল্লাহরই হাতে।[৪]

    প্রিয় যুবক ভাই!
    আমাদের জীবনের পরিকল্পনাগুলো অনেকটা গণিতের মতো। শুরু থেকেই যদি ঠিকঠাকভাবে না আগাই, শেষে এসে যতই চেষ্টা করি, সঠিক উত্তর মিলবে না। ভালো মানুষ হবার চেষ্টা, ভালো দায়ী হবার চেষ্টা, ভালো আলেম, ভালো আবেদ, ভালো লেখক, ভালো আর্টিস্ট, ভালো গুণধর মুজাহিদ-
    সবকিছু মুখ থুবড়ে পড়বে যদি সূত্র ধরে না আগাই। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে যদি পাঁ হিসাব করে না বাড়াই।

    যুবক ভাই! প্রিয় সাহাবী মুসআব ইবনে উমায়ের রাদিআল্লাহু এর কথা অবশ্যই তুমি শুনেছো। তিনিও কিন্তু তোমার মত তাগড়া নওজোয়ান ছিলেন। ধনাঢ্য পরিবারে যার জন্ম। প্রতাপশালী স্লোগান যার পরিবারের অংশ। সৌন্দর্য রুপ লাবণ্যের প্রতিযোগিতায় প্রথম ক্যাটাগরির প্রতিযোগি। তাকে মন্ত্র বানিয়ে তিনি কত কিছুই না করতে পারতেন! একে সুযোগ মনে করে কত রূপবতীর মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারতেন! তা কিন্তু তিনি করেন নি।

    শক্ত হাতে ধরেছেন ইমানের ঝান্ডাকে। শক্ত মনে সহ্য করেছেন পাড়াপ্রতিবেশিদের নির্যাতনকে। মায়ের সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। পরিবারের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়েছেন। শরীরের শেষ সম্বল কাপড়টুকুও মা রেখে দিয়েছেন। পথ খোলা ছিলো মাত্র একটি- হয়তো মায়ের আশ্রয় গ্রহণ নয়তো ইমানের দৌলত। তিনি সালার চট গায়ে দিয়ে আল্লাহর হাবিব প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ডাক দিয়ে বললেন-ওগো আল্লাহর হাবিব! আমি ইমান গ্রহণ করায় আমার মা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ অবস্থা দেখে কেঁদেই দিলেন।[৫]

    প্রিয় ভাই আমার!
    এরাই তো আমার তোমার সতীর্থ হওয়ার পূর্ণ হকদার। এরাই তো আমার তোমার জীবন আদর্শ হওয়ার পূর্ণ পাওনাদার। অথচ তুমি যুবক আজেবাজে জিনিস নিয়ে পরিকল্পনা করছো! চারপাশের নোংরা মাঁছির চেয়ে তুচ্ছ বিষয়বস্তুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছো! যে ময়দান তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। যেখানে তুমি চিন্তায় পেরেশানে একাকার হয়ে যাবে। যে ময়দান তোমার শরীরকে ঝর্ঝরিত করে দিবে। শুধু একটু মুক্তির জন্য, শুধু একটু অসহ্য চিন্তা থেকে নিস্তারের জন্য, সে ময়দানের কথা না ভেবে তুমি দুনিয়ার মরিচীকা নিয়ে উঠেপড়ে লাগছো? যত্তসব উল্টাপাল্টা পরিকল্পনা করে দ্বীনের সীমারেখা থেকে বেরিয়ে পড়েছো?

    তাহলে মনে রেখো! সেদিন তুমিও পাড় পাবে না। বরং আমি আল্লাহ বান্দার কড়ায়গণ্ডায় হিসাব নিবো এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সরষে দানা পরিমাণ কর্মের হিসাব বুঝে নেয়া হবে। কারণ তুমি উসিলার সকল দরজায় মহর এটে দিয়েছো। রহমত আসার সকল জানালাগুলো বন্ধ করে দিয়েছো। বিনা ওসিলায় জান্নাত পাবার পথকে নিয়ে নানা কটুবাক্য উচ্চারণ করেছো। মরিচীকাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছো আর শাহাদাতকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়েছো।

    প্রিয় ভাই! মৃত্যুর আজাল ক্রমশ এগিয়ে আসছে, বিজলি চমকানোর চেয়েও দ্রুত গতিতে। সুতরাং তোমাকে এখন থেকেই প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হতে হবে-
    اني رجل اخاف الدوائر
    আমি এমন সতর্ক ব্যক্তি, যে সবসময় সময়ের ও অসার পরিকল্পনার ডিগবাজি সম্পর্কে চৌকান্ন থাকি।[৬]

    তথ্যসমূহ-
    ১.বাচ্চু কা ইসলাম, উর্দু ম্যাগাজিন
    ২.সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ০১
    ৩.বাচ্চু কা ইসলাম, উর্দু ম্যাগাজিন
    ৪.বাণী সমাহার
    ৫.আদর্শ যুবকের গল্প
    ৬.দুরুসুল বালাগাত

  • #2
    লক্ষ্য করুন-

    ইরশাদ হয়েছে-
    اقترب للناس حسابهم وهم في غفلة معرضون
    মানুষের হিসেবে নিকেশের সময় আসন্ন। অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। [২]
    মুহতারাম ভাই- আল-কুরআনের আয়াত লেখার সময় হারাকাতসহ লেখা উচিত।
    এক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিভিন্ন এ্যাপস বা সফটওয়্যারের সহযোগিতা নিতে পারেন।
    তো সামনে থেকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার বিনীত অনুরোধ করছি। শুকরান।
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      শ্রদ্ধেয় ভাইয়া, আপনার নামটি যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আপনার লেখাগুলোর আলাদা এক আবেদন আছে। যুবক-তরুণ-কিশোর যেকোনো পাঠক মোহিত হবে আপনার লেখা পড়ে। এখানে আসার পর অল্পসময়ের মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে আপনার লেখাগুলো। আল্লাহ আপনাকে আমাদের মাঝে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখুন, তাগুতের সকল ফাঁদ থেকে আপনাকে এবং সকল ভাইয়াকে হিফাজাত করুন।

      Comment


      • #4
        মুহতারাম ভাই! আমিও তাই ভাবছিলাম। শুকরান লাকা জাযিলাশ শুকর।

        Comment


        • #5
          এ মহব্বতটুকু শুধু দ্বীন কায়েমের জন্য। আল্লাহ তাআলা সকল মুহতারাম দায়ী ভাইদের নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিন।

          Comment


          • #6
            Originally posted by নুআইম আন-নাহহাম View Post
            এ মহব্বতটুকু শুধু দ্বীন কায়েমের জন্য। আল্লাহ তাআলা সকল মুহতারাম দায়ী ভাইদের নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিন।
            আল্লাহুম্মা আমিন,।
            প্রিয় ভাই বোন দের নিয়ে লেখা সিরিজটা কি শেষ হয়েছে? না আরো পর্ব আসবে?

            Comment


            • #7
              মুহতারাম ভাই! পরবর্তী আরো ৬ পর্ব ছিলো কিন্তু একটু ব্যস্ততা থাকায় দিতে পারছি না। কারণ নজরে সানি হয়নি।
              তাই আপনি কষ্ট করে ৯ পর্ব পর্যন্ত কপি করে ওয়ার্ড ফাইল করে দিতে পারেন। এবং আপনার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করুন।

              Comment


              • #8
                Originally posted by নুআইম আন-নাহহাম View Post
                মুহতারাম ভাই! পরবর্তী আরো ৬ পর্ব ছিলো কিন্তু একটু ব্যস্ততা থাকায় দিতে পারছি না। কারণ নজরে সানি হয়নি।
                তাই আপনি কষ্ট করে ৯ পর্ব পর্যন্ত কপি করে ওয়ার্ড ফাইল করে দিতে পারেন। এবং আপনার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করুন।
                ঠিকআছে মুহতারাম প্রিয় ভাই! আমরা বাকি ৬ পর্বের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করবো ইনশাআল্লাহ... আপনি ফ্রী হয়ে পোষ্ট করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়া'লা আপনাকে সহজ করে দিন, আমিন।

                Comment

                Working...
                X