Announcement

Collapse
No announcement yet.

মুজাহিদের আখলাক: সবর এবং অবিচলতা (অবশিষ্ট অংশ)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মুজাহিদের আখলাক: সবর এবং অবিচলতা (অবশিষ্ট অংশ)

    মুজাহিদের আখলাক:৬
    সবর এবং অবিচলতা (অবশিষ্ট অংশ)

    ব্যক্তির জন্য ধৈর্য ধারণ, এবং বালা-মসীবতের মোকাবেলা করা এবং দুঃখ-কষ্ট সহ্য করা তখনি সহজ হবে যখন সে জানবে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির উপর বালা-মসীবত আসে এবং তার ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়া হয়, তার দ্বীন ও ঈমানের শক্তি এবং মজবুতির ভিত্তিতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো:

    أَيُّ النَّاسِ*أَشَدُّ بَلَاءً*؟ قَالَ : " الْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ، فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ، وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَمَا يَبْرَحُ الْبَلَاءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الْأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ ".*

    "হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন কারা হয়েছেন?
    তিনি বললেন: নবীগণ, অতঃপর তাঁদের পরে যাঁরা আল্লাহ্ তায়ালার অধিক প্রিয় তাঁরা, এভাবে উত্তমের পর উত্তম ব্যক্তিকে তাঁর দ্বীন ও ঈমানের দৃঢ়তা এবং মজবুতির ভিত্তিতে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। যদি সে তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে কঠোর হয় এবং তাঁর ঈমান শক্তিশালী হয় তাহলে তাঁর পরীক্ষা ও কঠিন হয়। আর যদি সে তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে শিথিল হয় তাহলে তাঁর দ্বীন ও ঈমানের অবস্থার ভিত্তিতে পরীক্ষা করা হয়। হ্যাঁ ঈমানদার ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হবে এবং সে মসীবতের সম্মুখীন হতে থাকবে, যা তাঁকে এমন করে ছাড়বে যে সে জমীনে বিচরণ করবে কিন্তু তাঁর কোন গুনাহ থাকবে না।( সুনানে তিরমিজী, আবওয়াবুজ্-জুহদ, হাদীস নং ২৩৯৮)

    পরীক্ষা কখনো দারিদ্র্য এবং অভাব অনটন দিয়ে করা হয়।
    হাদীসে পাকের মধ্যে এরশাদ হয়েছে: "পূর্ববর্তী আম্বিয়া এবং সালেহীন বান্দাদের অনেকেই করুন দারিদ্র্য অবস্থার দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই ছিলেন যাঁদের কাটা ছিঁড়া তালিযুক্ত ঢিলেঢালা আবা ছাড়া পরনের জন্য আর কিছুই জটেনি। তাঁদের কেউ তো আবার পরীক্ষিত হয়েছেন উকুন দ্বারা যা তাঁকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে। আর কসম আল্লাহর! তাঁদের অনেকেই তো এমন ছিলেন যে, তোমরা বখশিশ পেলে যতটা খুশি হও তার চেয়ে অধিক খুশি হত তাঁরা বিপদের সম্মুখীন হলে!।" (সহীহুল জামে', হাদীস নং ৯৯৫, সহীহ)

    সবরকারী যখন এ বিশ্বাস করবে যে, সবর তার গুনাহের বুঝাকে দূর করবে, সে তখন আল্লাহ্ তায়ালার রহমতের প্রতি খুব বেশি আশাবাদী হয়ে উঠবে। এবং আল্লাহর ফায়সালার উপর অনেক বেশি সন্তুষ্ট থাকবে।
    অনেক মানুষ আছেন যাঁদের তেমন কোন নেক আমল নেই কিন্তু তাঁরা ধৈর্য এবং সবরের মাধ্যমে মর্যাদার এমন সুউচ্চ আসনে পৌঁছে যান, যা অন্যরা অনেক নেক আমলের দ্বারাও অর্জন করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: " এক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্ তায়ালার নিকট বড় কোন সম্মানিত স্থান রয়েছে কিন্তু সে নেক আমলের দ্বারা সেখানে পৌঁছতে পারছে না ফলে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে এমন জিনিস দ্বারা আক্রান্ত করেন যা তার পছন্দ নয়, (আর সে তখন সবর এখতিয়ার) এভাবে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে তাঁর মর্যাদার স্থানে পৌঁছে দেন।"(সহীহুল জামে', হাদীস নং ১৬২৫ হাসান)

    কিয়ামতের দিন সবরকারীদের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন দেখে দুনিয়াতে যারা স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করছে তারা আফসোস করবে আর বলবে: "হায়! যদি দুনিয়াতে আমাদের চর্মগুলোকে কাঁচি দিয়ে কর্তন করা হত!

    সবরকারীদের জন্য এছাড়াও আরো যে সব বড় পুরস্কার প্রদানের ওয়াদা আল্লাহ্ তায়ালা করেছেন, তা হলো আল্লাহ্ তায়ালা তাদের সঙ্গী হবেন। যেমনটি তিনি বলেন:

    "তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।"(আনফাল:৪৬)

    দ্বিতীয়ত সবরকারীদের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা যত ওয়াদা করেছেন সে সব ওয়াদা অবশ্যই তিনি পুরা করবেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ......
    "তুমি ধৈর্য ধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।"(রূম:৬০, গাফির:৫৫)

    সবর এবং ধৈর্যের গুণ অর্জন করতে আরো সহজ হবে যখন তুমি বান্দাদের সাথে আল্লাহ্ তায়ালার দয়া ও ক্ষমার আচরণ নিয়ে একটু ভাববে। বান্দারা আল্লাহ্ তায়ালার সাথে কতইনা অনুপযুক্ত এবং দুঃখজনক আচরণ করে থাকে তথাপিও তিনি তাদেরকে দয়া করছেন তাদেরকে রিজিক দিচ্ছেন, এবং তওবা করলে ক্ষমাও করছেন!!
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
    *" مَا*أَحَدٌ أَصْبَرَ*عَلَى أَذًى يَسْمَعُهُ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى ؛ إِنَّهُمْ يَجْعَلُونَ لَهُ نِدًّا، وَيَجْعَلُونَ لَهُ وَلَدًا، وَهُوَ مَعَ ذَلِكَ يَرْزُقُهُمْ وَيُعَافِيهِمْ وَيُعْطِيهِمْ ".
    "আল্লাহ্ তায়ালা অপেক্ষা আর কে অধিক ধৈর্যশীল আছে? কটু কথা শুনার ব্যাপারে!!(কেউ নেই)
    লোকেরা তাঁর জন্য শরীক নির্ধারণ করে, আবার কেউ তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, (অথচ তিনি এ সবের থেকে পবিত্র ও মহান) এতদসত্ত্বেও তিনি তাদেরকে রিজিক দেন, তাদেরকে ক্ষমা করেন এবং তাদেরকে নানা প্রকারের নেয়ামত দান করেন।(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮০৪)

    সায়্যিদ কুতুব (রহ বলেনঃ বাতিলের অনুসারীরা যদি তাদের বাতিলের উপর ধৈর্য ধরে, অনড় এবং অবিচল থাকতে পারে, তাহলে তো হকের অনুসারীগণের জন্য আরও অধিক যুক্তিযুক্ত যে, তাঁরা হকের জন্য আরও বেশি অনড়, এবং দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী হবে, এবং হকের পথে চলতে আরও বেশি দৃঢ়পদ এবং ধৈর্যশীল হবে!!(জিলালুল-কুরআন,১/৫৪৬, আলে ইমরানের শেষ আয়াতের আলোচনায়)
    এজন্য আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদেরকে আদেশ করেছেন:
    ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ﴾
    "হে মুমিনগণ! তোমরা সবর এবং সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন।"(বাকারাহ:৫৩)

    সবরের আরেকটি ক্ষেত্র হলো রোগ ব্যাধির অবস্থা। আল্লাহ্ তায়ালা কখনো তাঁর বান্দাকে রোগ ব্যাধি দিয়ে পরীক্ষা করেন। এজন্য অসুস্থ অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করাটাও জরুরী, চাই তা যে কোন ধরনের রোগ হোক না কেন?

    মানুষ কখনো শত্রুর দ্বারা পরীক্ষিত হয়। কোন কোন মানুষ এমন আছে যার চতুর্দিকে শত্রু বেষ্টিত। তারা সর্বদা তার ক্ষতির এবং মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকে। তার কোন মঙ্গল তাদের সহ্য হয়না। মানব সমাজে এ ধরনের শত্রুতা হয়াটা একটি স্বাভাবিক বিষয়, বিশেষ করে আমাদের এই সময়ে, যখন না কি মানুষের জন্য দুনিয়াকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে এবং দুনিয়ার জন্য তারা পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কারণ দুনিয়া অর্জনের প্রতিযোগিতা মানুষের মাঝে কামভাবকে জাগিয়ে তোলে। যার ফলে মানুষে মানুষে হিংসা বিদ্বেষ এবং শত্রুতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর দিকে ইশারা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: " তোমরা আমার পরে মানুষের মধ্যে প্রচন্ডরুপে স্বার্থপরতা দেখতে পাবে। যদি তোমরা তা পেয়ে যাও তাহলে ধৈর্যের উপর থাকবে।( সহীহ বুখারী, ফরজুল খুমুছ, অধ্যায়:১৯, হাদীস নং ৩১৪৭)

    সবর এবং ধৈর্যের সর্বাধিকক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি হলো, যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মুখোমুখি হয়ে লড়াই করার অবস্থা।
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
    *" أَيُّهَا النَّاسُ،*لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ*الْعَدُوِّ، وَسَلُوا اللَّهَ الْعَافِيَةَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاصْبِرُوا، وَاعْلَمُوا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ ".*
    "হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হতে চেয়ো না, বরং আল্লাহ তাআলার কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা কর। আর যদি শত্রুর মুখোমুখি হয়ে যাও তাহলে ধৈর্য ধারণ কর এবং অবিচল থাক।"(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৬৫, ২৯৬৬)
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের ময়দানে অবিচল থাকার এবং ময়দান থেকে পালায়ন না করার অঙ্গীকারের উপর সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে বায়'আত নিতেন।(সহীহ বুখারী, জিহাদ, অধ্যায়:১১০, হাদীস নং ২৯৫৮)

    ইলমে দ্বীন অর্জন করতেও ধৈর্যের প্রয়োজন। মূসা আঃ যখন আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশে দ্বীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে একজন নেককার বান্দার সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং বললেন:
    ﴿قَالَ لَهُۥ مُوسَىٰ هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَىٰٓ أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا﴾
    "আমি কি এ শর্তে আপনার অনুসরণ করতে পারি যে, সত্যপথের যে জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দেবেন?
    (সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত:৬৬)

    উত্তরে অব্দে সালেহ বললেন:
    قَالَ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِىَ صَبْرًا
    "আপনি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য্যধারণ করে থাকতে পারবেন না।"(সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত:৬৭)
    وَكَيْفَ تَصْبِرُ عَلَىٰ مَا لَمْ تُحِطْ به خبرا
    "যে বিষয় আপনার আয়ত্তাধীন নয়, তা দেখে আপনি ধৈর্য্যধারণ করবেন কেমন করে?"
    (সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত:৬৮)
    মূসা আঃ বললেনঃ
    قَالَ سَتَجِدُنِىٓ إِن شَآءَ ٱللَّهُ صَابِرًا وَلَآ أَعْصِى لَكَ أَمْرًا
    "আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না।"
    (সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত:৬৯)
    তাঁরা সফর শুরু করলেন, যাত্রা পথে যখন অব্দে সালেহ কিছু অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড প্রকাশ করা শুরু করলেন, তখন মূসা আঃ প্রশ্ন তোলা শুরু করলেন। উত্তরে অব্দে সালেহ বললেনঃ
    ﴿قَالَ أَلَمْ أَقُلْ لَكَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا﴾
    "আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবেন না।"
    (সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত: ৭৫)

    মূসা আঃ বললেনঃ

    قَالَ إِن سَأَلْتُكَ عَن شَىْءٍۭ بَعْدَهَا فَلَا تُصَٰحِبْنِى قَدْ بَلَغْتَ مِن لَّدُنِّى عُذْرًا

    "এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে আপনি আমাকে সাথে রাখবেন না। আপনি আমার পক্ষ থেকে অভিযোগ মুক্ত হয়ে গেছেন।"
    (সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত: ৭৬)

    অতঃপর তারা চলতে লাগল, অবশেষে যখন একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌছে তাদের কাছে খাবার চাইল, তখন তারা তাদের অতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। অতঃপর তারা সেখানে একটি পতনোম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন, সেটি তিনি সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। মূসা বললেনঃ আপনি ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে এর পারিশ্রমিক আদায় করতে পারতেন।

    উত্তরে অব্দে সালেহ বললেনঃ
    قَالَ هَٰذَا فِرَاقُ بَيْنِى وَبَيْنِكَ سَأُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا
    "এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল। এখন যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য্য ধরতে পারেননি, আমি তার তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।"
    (সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত: ৭৮)

    এর পর তাঁরা পৃথক হয়ে যান। হাদীসে পাকের মধ্যে এরশাদ হয়েছে:
    "لو صبر لرأى العجب"
    "যদি নবী মূসা (প্রশ্ন না করে) সবর করতেন, তাহলে আশ্চর্যের আরো অনেক কিছু দেখতেন।" (সহীহ মুসলিম, আলফাজায়েল, অধ্যায়:৪৬, হাদীস নং ১৭২/২৩৮০, শরহুন-নববী:৮/১৫৩)

    সুতরাং ইলম হাসিলের জন্য এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের রহস্য উদঘাটনের জন্য কঠিন পরিশ্রমী এবং ধৈর্যশীল হতে হবে, এবং গন্তব্যে পৌঁছা পর্যন্ত ইলমের কঠিন সাধনার পথে অবিচল থাকতে হবে। কেননা ইলম তার রহস্যের ভান্ডার কেবলমাত্র ধৈর্যশীলদেরি জন্য উন্মুক্ত করে।

    সন্তানাদির লালন পালন এবং তরবিয়তের ক্ষেত্রেও ধৈর্য অপরিহার্য, বিশেষভাবে কন্যা সন্তানদের ক্ষেত্রে আরও বেশি জরুরি। ধৈর্য সহ্যের সাথে যারা সন্তান পালন করবে এবং তাদেরকে দ্বীন ও ঈমানের আদর্শের উপর বড় করে তুলবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানা এবং জান্নাতের মহা পুরস্কার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
    مَنْ كَانَ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ*فَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ، وَأَطْعَمَهُنَّ وَسَقَاهُنَّ، وَكَسَاهُنَّ مِنْ جِدَتِهِ، كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ".
    "যে ব্যক্তির তিন জন কন্যা সন্তান আছে, যাদেরকে সে ধৈর্যের সাথে নিজের পরিশ্রম থেকে খাওয়ালো পান করালো এবং পরালো, কিয়ামতের দিন এই কন্যা সন্তানগণ তার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে যাবে।" (ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৩৬৬৯)
    পরিবার পরিজনের ব্যপারে ধৈর্য ধারণ এবং তাদেরকে দ্বীনী তরবিয়ত দানের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে আদেশ করেছেন:
    ﴿وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى ﴾
    সূরা ত্বোয়া-হা (طه), আয়াত: ১৩২
    অর্থঃ আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোন রিযিক চাই না। আমি আপনাকে রিযিক দেই এবং আল্লাহ ভীরুতার পরিণাম শুভ।

    মানুষের মাঝে অবস্থান করে তাদের অবাঞ্চনীয় আচার-আচরণের উপর ধৈর্য ধারণ করা অধিক উত্তম:

    মুমিন স্বভাবজাত ভাবে বন্ধু এবং মিত্র প্রিয় হয় থাকে।
    মানুষের সাথে সৎভাব এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখা তার নৈতিক গুণ। এজন্য তাকে মানুষের ভুল ত্রুটির ব্যাপারে ধৈর্যশীল হতে হবে, তবেই সে মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারবে এবং তাদের বিচ্যুতিপুর্ণ বিষয়গুলোকে সহজে সমাধান করতে পারবে। হাদীসে পাকের মধ্যে এমন গুণের মুমিনদের জন্য প্রশংসা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
    *"*الْمُؤْمِنُ الَّذِي يُخَالِطُ النَّاسَ، وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ أَعْظَمُ أَجْرًا مِنَ الْمُؤْمِنِ الَّذِي لَا يُخَالِطُ النَّاسَ، وَلَا يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ ".
    "যে মুমিন মানুষের সাথে মিশে এবং তাদের কষ্টপুর্ণ আচরণের উপর ধৈর্য ধারণ করে সে পুরস্কার মর্যাদায় অধিক বড় এমন মুমিনের তুলনায় যে মানুষের সাথে মিশে না এবং তাদের কটু কথা এবং আচরণে ধৈর্য ধারণ করে না।" (ইবনে মাজাহ হাদীস নং৪০৩২)

    হাদীসে পাকের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ্ তায়ালা তিন জন ব্যক্তিকে ভালো বাসেন; তাদের একজন হলো ঐ ব্যক্তি যে এমন এক প্রতিবেশীর সাথে বাস করে যে তাকে কষ্ট দেয়, আর সে তার জুলুম অন্যায়ের উপর ধৈর্য ধারণ করে যে যাবত না মৃত্যু অথবা প্রস্থান তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়।(মুসনাদে আহমাদ ৫/১৫১)

    সবর হলো জিহাদের পাথেয়ঃ
    একজন মুজাহিদ যার জীবনের সংগ্রাম-সাধনা হলো জমীনের বুকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার পুনঃর্জীবিত করা এবং ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার পুনঃর্গঠন করা; তাকে অবশ্যই তার এই দ্বীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সবরের পাথেয় গ্রহণ করতে হবে।
    তাকে সবর করতে হবে নিজ সাথী ভাইদের দুর্বলতার উপর, ধৈর্য ধারণ করতে হবে সকল বিপদ আপদ এবং উদ্বেগ উৎকণ্ঠার উপর, এবং তাকে ধৈর্যশীল হতে হবে সব ধরনের দুঃখ কষ্ট ও যন্ত্রণার উপর। তাকে আরও বেশি ধৈর্যশীল হতে হবে জুলুম অন্যায়ের প্রতিবাদে জালেমদেরকে প্রতিহত করার লড়াইয়ে। তবেই তো সে ঈমানের মজা এবং মিষ্টান্নতার স্বর্গীয় সুধা পান করতে সক্ষম হবে। হাদীসে পাকের মধ্যে এরশাদ হয়েছে:
    "أفضل الايمان الصبر و السماحة"
    "সর্বোত্তম ঈমান হলো ধৈর্য এবং মহানুভবতা।" ( সহীহ আলজামে', হাদীস নং ১০৯৭, সহীহ)

    দাওয়াত ও জিহাদের এই দুর্গম পথের একমাত্র পাথেয়ই হলো ধৈর্য এবং অবিচলতা। এই পথে চলার জন্য প্রয়োজন হলো অসীম ধৈর্য্য এবং পরম সাহসিকতার।
    এপথের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো নিজের নফস এবং তার প্ররোচনা। এজন্য জিহাদের মোবারক পথে অগ্রগামী হতে চায়লে প্রথমে নিজের নফস এবং প্রবৃত্তির তাড়না এবং কামনা বাসনা নিয়ন্ত্রণ রাখতে ধৈর্যশীল হতে হবে। এবং ধৈর্যশীল হতে হবে লোভ লালসা, ত্রুটি বিচ্যুতি, বিরক্তি অস্থিরতা এবং রাগ বিরাগ ও তাড়াহুড়া ইত্যাদির মত নফসের যাবতীয় প্রবঞ্চনার উপর।

    মুজাহিদকে আরও ধৈর্যশীল হতে হবে অপর মানুষের চাওয়া পাওয়ার উপর, এবং তাদের কামনা বাসনার উপর, এবং তাদের দুর্বলতা ও ত্রুটি বিচ্যুতির উপর, এবং ধৈর্যশীল হতে হবে তাদের জাহালাত ও মুর্খতার উপর, এবং তাদের মন্দ ধারণা ও বিকৃত স্বভাব প্রকৃতির উপর।
    একজন মুজাহিদকে ধৈর্যশীল হতে হবে মানুষের স্বার্থপরতামুলক আচরণের উপর, এবং তাদের হিংসা বিদ্বেষ ও অহংকার পূর্ণ কার্যকলাপ এবং ব্যবহারের উপর, এবং সবর করতে হবে তাদের গোরামী ও বক্র স্বভাব চরিত্রের উপর। এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে তাদের তাড়াহুড়ো স্বভাব প্রকৃতির উপর। আরো সবর করতে হবে বাতিলের দাম্ভিক আচরণের উপর, এবং সীমা লঙ্ঘনকারীদের ধৃষ্টতার উপর, এবং ধৈর্যশীল হতে হবে বাতিলের মিথ্যা চাকচিক্য এবং কারুকার্যের উপর, এবং বাতিলের সাময়িক প্রবলতার উপর এবং তাদের দম্ভভরে অহংকারের সাথে ভ্রূ-কুচকানির উপর।
    সেই সাথে আরও অধিক ধৈর্যশীল হতে হবে সাহয্যকারীদের স্বল্পতার এবং বিরোধিতাকারীদের আধিক্যের উপরে। এবং সবর করতে হবে সঙ্গী সাথী এবং সহযোগীর দুর্বলতার উপর। এবং পথ ও গন্তব্যের প্রলম্বিতার উপর। এবং বিশেষ ভাবে ধৈর্য ধারণ করতে হবে বিপদ এবং শংকার মুহূর্তে শয়তানের কু মন্ত্রণার এবং ওসওয়াসার উপরে।

    এবং আরও ধৈর্য ধারণ করতে হবে জিহাদের তিক্ত অবস্থাসমূহের উপর, সেই সাথে ধৈর্য ধারণ করতে হবে নফসের মধ্যে সৃষ্ট বিভিন্ন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার উপর, যেমন ব্যথা, বেদনা, রাগ, বিরাগ, বিরক্তি, অস্থিরতা দুঃখ, কষ্ট, সংকীর্ণতা, এবং মানবিক দুর্বল স্বভাব থেকে সৃষ্ট ফলাফলের ব্যাপারে আশা-নিরাশা, আস্থা এবং হতাশার মধ্যকার দুদল্যতা, ক্লান্তি, অস্বস্তি, বিরক্তি বিতৃষ্ণা, অপছন্দ, নিস্পৃহার মত ইত্যাদি বিষয়াদির উপর।

    একজন মুজাহিদকে আরও অধিক বেশি ধৈর্যশীল হতে হবে যখন সাহায্য এবং বিজয় আসবে তখন, এবং যখন সে প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি লাভ করবে তখন। বিজয় এবং সাহায্যের সময়টি হলো নিজেদের শক্তি ও দাপট প্রদর্শনীর সময়, তাই স্বাভাবিকতই এ সময়ে দাম্ভিক এবং অহংকারী হয়ে উঠতে পারে, এজন্য একজন মুমিন মুজাহিদের জন্য এসময়ে নিজের নফসের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে কঠিন মুজাহাদা করতে হবে, এবং প্রবৃত্তির অনুসরণের ব্যপারে অনেক সচেতন এবং ধৈর্যশীল হতে হবে। এবং বিজয় ও প্রাচুর্যের সময়টাকে অহংকার এবং দাম্ভিকতা পরিহার করে কৃতজ্ঞতা, বিনয়ী এবং মহানুভবতার সাথে স্বাগত জানাতে হবে। শত্রুর উপর প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সত্য ও যথাযথ হক বদলা এবং কিসাস নেয়ার ক্ষেত্রেও কোন রকমের সীমালঙ্ঘন করা যাবে না।

    আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর সালেহীন এবং স্বাবিরীন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। এবং তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করুন যাঁরা বলেনঃ

    " رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ "
    আমীন।
Working...
X