Announcement

Collapse
No announcement yet.

বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? ১০ম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? ১০ম পর্ব

    বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? ১০ম পর্ব

    প্রিয় বোন!
    আমরা আল্লাহ তাআলার এক সুদৃঢ় ও সুশৃংখল শাসন ব্যবস্থার অধীন। আমাদের মুখের প্রতিটি উচ্চারণ চোখের প্রতিটি পলক কানের প্রতিটি শ্রবণ এমনকি হৃদয়ের উদিত ঘনঘন আবেগ অনুভূতিও আল্লাহ তাআলার নিশ্ছিদ্র তত্বাবধানের অধীন। [ইরশাদ হয়েছে- মানুষ মুখে যাই উচ্চারণ করে তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটই রয়েছে।] ছুঁটে পালাবার সক্ষমতা কারো নেই। সবই মিযানের পাল্লায় মাপা হবে। হোক নারী তোমার ভালোর সক্ষমতা বা দুর্বলতার ফাঁদ।

    দিন শেষে চূড়ান্ত লড়াইটা তোমার নিজেরই করতে হবে। পুরুষরা হয়তো তোমার হাতে অর্থ সম্পদ তুলে দেবে। তোমার চ্যারিটি রক্ষার্থে সহায়তাও করবে। তুমি নারী দুর্বল ভেবে সহানুভূতিশীল দেখাবে। পানি আর ঘামে শরীর একাকার করে ফেলবে, শুধুই বোন তোমার জন্য। তুমি নারী সুখে থাকো। তোমার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টকুঁড়ি থেকে হেফাজত থাকুক। তুলার চেয়ে তুলতুলে নরম শরীরটা দাগবিহীন সতেজতায় ফোটে উঠুক। হৃদয়ের মনিকোঠায় জায়গা হোক, নারী তুমি দামী। হিরার চেয়ে! না বরং তুলনাহীন।

    পুরুষরা তোমাদের রক্ষক। তবে মুমিন পুরুষরা। তাঁরা তোমাদের সম্মানের মূর্তপ্রতীক। কিন্তু তুমি নারী কেন নিজেকে বানিয়ে রাখো ভক্ষক! কেন তুমি নিজেকে পরিচয় দাও আমি সৃষ্টির আলাদা প্রাণী! মানুষের মনোরঞ্জনের উপহার হিসেবে। তাদের খায়েশাতকে পূর্ণতা দেয়ার পেছনে। তাদের পার্থিব জীবন সুখকর করার জন্যে। কোনো ভুল নেই বোন তোমার ফিকিরে। তবে কী বিসর্জন কাকে আপন করে নিচ্ছো একটিবার ভেবে দেখেছো? এর হিসেব তো দিতেই হবে তাহলে কেন এত গড়িমসি?

    যাদের নিয়ে তুমি এত্ত কিছু ভাবছো! তারা তো তোমারই মত কোনো একজন নারীর ঔরসজাত সন্তান। তোমাদের নহর থেকেই তো তাদের জন্ম। তোমাদের বাগান থেকেই তাদের ফলন। তুমি থাকবে নহর হয়ে যার সূত্র কেউ খোঁজে পাবে না। দূর পাহাড়ের তলদেশে। ঝর্ণার শীতল মিষ্টি পানি ছলছল কলকল করে বয়ে যায় পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে। কেউ খোঁজে পায় না তার মূলতন্ত্র। সবাই ভাবে তার নলটা নলের জায়গাটা কতইনা সুন্দর! সত্যিই সুন্দর। এতেই সবাই বিমোহিত বিমুগ্ধ হয়। তার রহস্য উন্মোচনে ক্ষণিক ভাবনায় ডুবে পড়ে।

    তুমি নারী তারচেয়ে কোনো অংশে কম নও। দৃষ্টান্তহীন তোমার জগতভূমি। সবাই দেখবে আর রবের প্রশংসায় মত্ত হয়ে পড়বে। বলবে-নারী তুমি স্বার্থক! তুমিই পারো অগোছালো সত্তাকে গোছালো করে দিতে। প্রাণহীন জীবনগুলোকে রবের দরবারে ফুটিয়ে তুলতে। নিস্তব্ধ পথিককে পথের সঠিক দিশা দিতে। ধর্মের নেশাহীন যুবকগুলোকে নেশায় মাতিয়ে রাখতে। ফাঁসির খবর শুনেও হাসে শাহাদাতের বার্তা পেয়েও হাসে।
    তুমি নারীর অবদান কতটুকু চিন্তা করেছো?

    এমন পেট পিঠ প্রভু কিনে নিয়েছেন। শুধু জান্নাত দিয়ে নয় বরং প্রতিশ্রুত মর্যাদা দিয়ে। যাদের পুরষ্কার দেখে অন্যান্য নারীরা আফসোস করে করে মুখিয়ে যাবে। নেকের ভারি পাল্লা নিয়েও পরিতাপের অন্ত থাকবে না। কত সন্তান বুকে ধারণ করেছি কিন্তু এমন একজনও না। হায়! কি লাভ হলো আমার, রবের বিশেষ প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ইশ! এমন একটা সন্তানও যদি জন্ম দিতে পারতাম। পিপাসায় কাতর হয়ে যাবে। তবে পানি পাবে কিন্তু এই মর্যাদা পাবে না।

    নারী তাঁর নারীত্বের মর্যাদা বজায় রেখেই সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন ও রাখছেন। নারী ছাড়া অন্য কেউই মাতৃত্বের সেবা ও সহধর্মিণীর গঠনমূলক সহযোগী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নয়। নারীদের ত্যাগ ও ভালোবাসা ছাড়া মানবীয় প্রতিভার বিকাশ ও সমাজের স্থায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। নারীরাই সমাজের প্রধান ভিত্তি তথা পরিবারের প্রশান্তির উৎস। কিন্তু নারীত্বের উন্নয়ন সকল নারীদের সহজাত ধর্ম নয়। এটা অর্জন করতে হয়। এটা ইসলাম পাড়া হোক বা মনগড়া জিন্দেগীতে। কোনটাতেই চেষ্টা ছাড়া প্রমোশন নেই। যেকোনো জিনিসেরই পূর্ণতায় পৌঁছাতে অসাধ্যকর পরিশ্রমের প্রয়োজন।

    প্রিয় বোন! প্রত্যেকজন ব্যক্তিই বিক্রি হয়ে যায়। ভাগ্যবানরা তার রবের কাছে আর কপাল পোড়ারা দুনিয়ার কামনা বাসনার কাছে। তুমি যেহেতু সবকিছুর উৎস সুতরাং অতি সহজে তাকে কালের গর্ভে বিলীন হতে দিওনা। তুমি বিশ্বাস করো বা নাই করো। তুমি নারী ভাগ্যবান হয়েই জন্মেছো। জন্ম দিয়েছো এমন কিছু যুবক যারা আজন্ম হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। যাদের স্মৃতিচারণে হৃদপিণ্ড দুমড়ে মুচড়ে যায়। সস্তি পায় শিক্ষা পায় প্রজন্ম শ্রেণির কিছু যুবক কিছু কিশোর। যাদের রেখা টানের মানচিত্রে বসবাস করে হাজারো স্বপ্নবুনো মানুষ।

    তাছাড়া তোমাকে চারিদিকের কর্ণধার হিসেবে মেনে নেয় হাজারো ভবিষ্যত তনয়া। যাদের চোখে তোমার চলনই শরীয়তের মাপকাঠি। যাদের বুকে তোমার উদ্যোগই পথের দিশারি। তোমার ছোট্ট ছোট্ট পদক্ষেপ তাদের মনোবলকে দ্বীন পালনে চাঙা করে দেয়। আফিয়ার মত সত্যকথনের মনোভাব তৈরি করে দেয়। মনের ক্যানভাসে ছাপিয়ে তুলে তুমি নারী উম্মে আম্মা রা. এর মতই দুরন্তপনা। তুমি নারী সুমাইয়া রা. এর প্রতিচ্ছবি।

    আল্লাহর রাসূলের হিজরতের ঘটনাটি আজ বেশ মনে পড়ছে। চোখের কোণে জল এসে টলমল করছে। হাতের আঙুল দিয়ে মুছে নিতে চাইলেও
    হাত উপরে উঠতে চাচ্ছেনা। অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ভেসে যাক দু-গাল। মন তো শান্ত হবে! তাই করেছি। হিজরতের ঐ মুহূর্তায় প্রিয় নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহপাঠীদের সহযোগীতার কথা ভাবতেও অবাক লাগে। কেন মানুষগুলো তাঁর জন্য এত বিনয়ী অমায়িক ও ত্যাগী হয়েছে! উত্তর খোঁজার আগেই উত্তর দমনীতে চলে আসছে, বলার উপেক্ষা রাখেনা। তা হলো-আল্লাহর হাবিবের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। সুবহানাল্লাহ!

    এই মানুষগুলোর মাঝে আমি এমন একজন বিশেষ ব্যক্তিকে খোঁজে পেয়েছি। যিনি হিজরতের মূল্যবান সময়টাতে উত্তম পদে ভূষিত হয়েছেন। যাকে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাতুন-নিতাকাইন শব্দে সম্মোধন করেছেন। তিনি হলেন আসমা বিনতে আবু-বক্কর। যার বুদ্ধিমত্তার পরিচয়ে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হয়েছেন। খুশি করেছেন আসমা বিনতে আবু-বক্করকে।

    তিনি সফরের পাথেয় গুছাচ্ছিলেন। সঙ্গে যাবেন নিজ জন্মদাতা পিতা। এমনিতেই খুশি। তার উপর আবার বাবাকে নিয়ে সুসংবাদ। দারুণ এক ঐশী আনন্দ মুহূর্ত। দায়িত্ববোধ থেকেই চামড়ার থলের মুখখানা নিজ কোমর বন্ধনী দিয়ে আঁটসাঁট করে বেঁধে দিলেন। চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি আল্লাহর হাবিব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর । সাথে সাথেই আওয়াজ ভেসে আসলো-হে কোমর বন্ধনীওয়ালী! কত বড় ভাগ্যবান তুমি হে প্রিয়!

    প্রিয় বোন! ঐ সময় আসমা রা. এর বয়স ছিলো ২৭ বছর। যাত্রাপথে সম্ভাব্য প্রতিকূলতা মোকাবেলা এবং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিরাপত্তা বিধানে আবু-বক্কর তাঁর সকল অর্থ-কড়ি সাথে নিয়ে নিলেন। পরিবারের জন্য কানাকড়িও রইলো না। অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন মেয়ে আসমা রা.। তাঁর ছোট সহোদরদের দায়িত্ব রইলো তাঁর কাঁধে। অথচ তাঁর কাছে নেই কোনো অর্থ-কড়ি। তিনি এটাও জানতেন যে, তাঁর পিতার হিজরতের কথা ছড়িয়ে পড়লে কাফেরদের সব রাগ-ক্ষোভ এসে পড়বে তাঁর উপর। তবুও তাঁর সাহস আর দৃঢ় ঈমান অটুট ছিলো।

    এমন অবস্থায় পড়লে যে কোনো মেয়েই প্রশ্ন করতো, এ কেমন বাবা! যিনি নিজ সন্তানদের বিপদযুক্ত অবস্থায় রেখে চলে যাচ্ছেন? অথবা যে কোনো মেয়েই বাবার কাছে কিছু অর্থ-কড়ি হলেও রেখে যাওয়ার আবদার জানাতো! কিন্তু আসমা রা. এর পুরোই ব্যতিক্রম। চেহারায় ছিলোনা বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তার ছাপ। মনের দুআরে ছিলোনা শঙ্কার কোনো ভাঁজ বরং অবয়বে প্রতিফলিত হচ্ছিলো দৃঢ় ঈমান আর তাওয়াক্কুলের প্রভাব।

    হিজরতের সময় আসমা রা. এর অন্ধ-বৃদ্ধ দাদা আবু-কুহাফা তাঁর কাছে এলেন। তিনি শুনতে পেয়েছিলেন তার সকল অর্থ-কড়ি নিয়ে তার ছেলে হিজরত করেছেন। তিনি আসমাকে জিজ্ঞাসা করলেন- এটা কি সত্য যে, আবু-বক্কর* তাদের কপর্দকশুন্য রেখে তাদের ফেলে চলে গেছেন? তাঁর দাদা মুশরিক হওয়ায় বুঝতে পারেনি আসমা এবং তাঁর সহোদরদের জন্য আল্লাহর রাহে কুরবানি ছিলো সম্মানের বিষয়।

    আসমা রা. এর জবাব ছিলো। না, দাদা ভাই! কে বললো আপনাকে? আসলে তিনি আমাদের জন্য অনেক অর্থ সম্পদ রেখে গেছেন। তাঁর বাবা আবু-বক্কর তাঁদের জন্য অনেক সম্পদ রেখে গেছেন- এটা বুঝাতে আসমা রা. দিনারের মত দেখতে নুড়ি পাথর ভরে তা কাপড়ে মোড়ানো একটা পাত্রে নিয়ে আবু কুহাফার হাতে স্পর্শ করালেন। তাকে আশ্বস্ত করালেন যে পাত্রটি দিনারে পরিপূর্ণ। তাঁর দাদা আবু-কুহাফা আশ্বস্ত হলেন। তিনিও তৃপ্তির ঢেঁকুর ছুঁড়লেন।

    প্রিয় বোন!
    আমি তোমার ভাই তোমাকে যা বোঝাতে চেয়েছি নিশ্চয় তুমি তা বুঝতে পেরেছো! তা হলো- আসমা বিনতে আবু-বক্কর তাঁর বাবার অনুপস্থিতে কতটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তা বলাই বাহুল্য। আমাদের বাবারা ভাইরাও তো আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করছেন। তাদের মেয়েরা কি আসমা বিনতে আবু-বক্কর বনতে পেরেছেন? তাঁর নারীত্বের আঁচল কি নিজ নারীত্বে দেখতে পেয়েছেন? তাঁরা কি বলতে পারবে আমার বড় মেয়ে আয়েশা, ছোট মেয়ে ফাতেমা আল্লাহর বিশেষ দান?

    এই প্রতিশ্রুতি তুমি তোমার ভাইকে দিতে পারবে? আমি যদি তোমার জন্য দুআ করি! রবের কাছে কাকুতি মিনতি করে কান্না করি! তোমাকে যেন বর নিজ গরিমায় সম্মানিত করেন। তোমার আস্তিনে যেন বরকতের শিশির ঢেলে দেন। তোমাকে যেন রব শাহাদাতের অমিয় সুধা দান করেন। দ্বীনি সুখী মুচকি হাসি লেগে থাকুক তোমার মুখে। আসহাবে কাহফের সস্তি জারি হোক তোমাদের বাবা ভাইদের দেহখানাতে।

  • #2
    আলহামদুলিল্লাহ সিরিজের ১০ম পর্ব পেলাম বাকি পর্ব গুলোও পাবো ইনশাআল্লাহ.. আল্লাহ তা'য়ালা ভায়ের কাজ গুলো সহজ করে দিন..সর্বদা সুস্থ সবল ও নিরাপদ রাখুন..ভাইকে ও ভায়ের পরিবারের সকল কে ক্ষমা করে দিন.. জিহাদের পথে আমাদের সকল কে অটল অবিচল রেখে বরকতময় মৃত্যু শাহাদাতের মৃত্যু দিয়ে জান্নাতে একত্রিত করুন, আল্লাহুম্মা আমিন।

    Comment

    Working...
    X