Announcement

Collapse
No announcement yet.

মুমিনের বৈশিষ্ট্যই হলো তাওয়াক্কুল করা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মুমিনের বৈশিষ্ট্যই হলো তাওয়াক্কুল করা

    মুমিনের বৈশিষ্ট্যই হলো তাওয়াক্কুল করা

    প্রিয় যুবক ভাই!
    সংকটে আতংকে ভেঙ্গে পড়ো না কেননা অন্ধকারে থাকে আবে হায়াতের ঝর্ণা। বিপদে অস্থিরতা তোমার সাঁজে না কেননা রহমানের রয়েছে অসংখ্য করুণা। যুগের দুর্বিপাকে থেকো না বসে বিষন্ন মনে ধৈর্য বড় তিক্ত তবে পূর্ণ মিষ্ট রসে। আসন্ন বিপদের মুখোমুখি হয়ো না সেচ্ছায় তবে তার মাশুল দিতে পারবে না অনিচ্ছায়। প্রাগ্রসর চিন্তা একটুও ফলদান হবে না যদি না করো তাওয়াক্কুলের পূর্ণ আযকার।

    [রব আমাদের বলেছেন-
    আল্লাহ তাআলার ওপরই ভরসা রেখো যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও।][১]

    [অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
    আর আল্লাহ তাআলার ওপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিৎ।][২]

    প্রিয় যুবক ভাই!
    যুগে যুগে এই তাওয়াক্কুলের জোরে মুমিনরা এমন কিছু অর্জন করেছে যা স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসম্ভব, যুক্তি তর্কের অগম্য, বিজ্ঞানের সূত্র দিয়ে যা কোনোভাবেই বুঝানো সম্ভব না। বিজ্ঞান যা পারে তা হলো নাযিলকৃত আসমানীর ওহীর সামান্য তৎপরতা খোঁজে বের করা। অথচ সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগেই সমাধান করে দিয়েছেন আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সুতরাং তাদের আর্টিকেল পড়ে তাওয়াক্কুলের কুল-কিনারা বুঝা সম্ভব না।

    যেমন-মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ চলছে তৎকালীন সুপারপাওয়ার পারশিয়ান সাম্রাজ্যের। অবিশ্বাস্যভাবে টানা বেশ কিছু যুদ্ধে সুপার পাওয়াররা হার মেনেছে। আবারও পরাজয়ের আশঙ্কায় নাহরশীর থেকে মাদাইনে ছুটছে পারশিয়ানরা। পিছু ধাওয়া করছেন মুসলিম সেনাপতী সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহু আনহু। মুসলিম বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে পারশিয়ান বাহিনী পিছু হটতে গিয়ে পার হলো ট্রাইগ্রীস নদী। মুসলিম বাহিনী যখন নদীর তীরে উপস্থিত ততক্ষণে অগ্নি-উপাসকরা নদীর অপর তীরে চলে গিয়েছে।

    এদিকে মুসলিম বাহিনীর কোনো উপায় উপকরণ ছিলো না নদীর অপর পাড়ে যাবার। সব রকমের চেষ্টাই করা হলো, কোনো কিছুর ব্যবস্থা হলো না। শেষমেষ আল্লাহ আযযা ও জাল্লাজালুহুর ওপর ভরসা করে তাঁরা ঘোড়ার পিঠে চড়েই নদীতে নেমে গেলেন। মুসলিম বাহিনীর অনেকেই এত বড় নদী দেখা তো দূরের কথা আগে কখনো ছোট্ট খালও দেখেনি। এ অবস্থায় তাঁদের কাছে ট্রাইগ্রীস নদী ছিলো প্রশান্ত মহাসাগরের মতো।

    চিন্তা করুন একবার-ঐ মুহূর্তে তাঁদের অবস্থাটা। আপনাকে যদি বলা হয় ঘোড়ার পিঠে চড়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে, তখন আপনি তাকে কি বলবেন? পাগল, পাগল বলে চিল্লাবেন। অথচ তাঁরা আল্লাহ তাআলা ওপর তাওয়াক্কুল করে নদী পাড়ি দিতে গিয়ে ঘোড়াসহ পানিতে নেমে পড়লেন। তাওয়াক্কুলের প্রতিদান আল্লাহ দিলেন বিজ্ঞানের সকল সূত্রকে ভুল প্রমাণ করে।

    ঘোড়ার পিঠে বসেই সাদ রাদিআল্লাহু আনহুর বাহিনী নদী পার হলো। পারশিয়ান বাহিনী যখন দেখতে পারলো মুসলিম বাহিনী এভাবে নদী পার হয়ে যাচ্ছে তখন তারা ভাবতে লাগলো- এরা মানুষ না জ্বীন। ভয়ে তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলো। আর মুসলিম বাহিনী বিজয়ের স্বাধ আস্বাদন করলো। অথচ এ ঘটনা ছিলো তাঁদের কল্পনার বাহিরের অংশ। সুতরাং তাঁরা তাওয়াক্কুল করে সফলতা পেয়েছেন।

    আবার দেখুন- মূসা আলাইহিস সালাম সমুদ্রে লাঠি দিয়ে আঘাত করার বিষয়টি। আল্লাহ তাআলা বললেন-মূসা তুমি নিজ হাতের লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত করো আমি রাস্তা তৈরি করে দেবো। তিনি তাই করলেন, আল্লাহ তাআলাও তাঁদের জন্য সমুদ্রের ভিতর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে দিলেন। আল্লাহ কেন তাদের জন্য রাস্তা তৈরি করে দিলেন? অথবা তার হাতের লাঠিরইবা কি শক্তি আঘাত করে বিশাল সমুদ্রের কোনো কিছু করে ফেলবে? [৪]

    মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা সমুদ্রের পানিতে আঘাত করার নির্দেশ দিয়ে মানবজাতিকে এটা বুঝাতে চাইলেন। প্রথমে তুমি তোমার অংশের কাজটুকু করো বাকিটা আমি দেখছি। শুরুতেই আপনাকে সাধ্যমত সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সাফল্য দেয়ার মালিক আল্লাহ।

    যিনি মূসা আলাইহিস সালামকে সমুদ্রের বুকে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্য আগুনকে প্রশান্তিদায়ক করেছেন, ইউনুস আলাইহিস সালামকে মাছের পেট থেকে রক্ষা করেছেন, যে আল্লাহ মুহাম্মাদের জন্য চন্দ্রকে দিখন্ডিত করে দিয়েছেন সে আল্লাহ কি পারেন না আমাদের সকল সমস্যা নিরসন করে দিতে? সর্বমহলে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখতে?

    যুবক ভাই!
    আমরা আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুলই করি না অথবা পায়শ্চিত্তের কথা ভেবে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইনা দেখেই তার ফলাফল আমাদের ভাগ্যে জুটে না। সালমান ফারসি রা. একজন আরব বেদুঈন হয়েও তাঁর ভাগ্য কত ভালো? সত্য দ্বীনের খোঁজে মুহাম্মাদের উদ্দেশ্যে তাওয়াক্কুল করে বেরিয়ে পরলেন। দিন যায় রাত গড়ায় মুহাম্মাদের দেখা তো আর মেলেনা। এ বেদনা সহ্য করার মত না! কাকে বলবে তাঁর মনের এ দুঃখ যাতনার কথা! চারিদিকে শিরকের ঘুঘু অন্ধকার।

    ফলাফল কি দাঁড়ালো? তিনি এক ইহুদির ক্রীতদাস ছিলেন। তাঁকে মুক্ত করতে প্রিয় ব্যক্তি মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত শ্রম দিয়েছেন এবং অন্যান্য সাহাবীদের থেকে অর্থ নিয়েছেন। তাঁকে মুক্ত করলেন এবং ইমানের দৌওল দানে ধন্য করলেন। তাওয়াক্কুলের জন্য তাঁর ত্যাগের নাজরানা সত্যিই মর্মান্তিক কিন্তু বাকি কাজটা আল্লাহ তাআলা পূরণ করে দিয়েছেন। বান্দার ব্যাপারে যা শর্ত ছিলো তার ওয়াদা তিনি রক্ষা করেছেন।[৫]

    বেলাল রাদিআল্লাহু একজন হাবশি গোলাম। কিন্তু ইমান গ্রহণের পদক্ষেপে তাঁর তাওয়াক্কুল ছিলো চূড়ান্ত পর্যায়ের। তিনি জানতেন এর ভয়াবহ পরিণাম সহ্য করতে পারবেন না। তবুও মুহাম্মাদের কাছে গিয়ে শক্তহাতে মুঠ করে একত্ববাদের ঝান্ডা ধরছেন তো ধরছেনই। ছোঁটানোর কোনো উপায় ছিলো না। আবু-জাহেল শিকলের বারি আর অগ্নিসম উত্তাপ প্রখর রৌদ্র তাঁর তাওয়াক্কুলের কাছে ছোট্ট শব্দে হার মেনে নিলো। হে বেলাল! তোমার আহাদুন আহাদই সঠিক।

    ফলাফল কি দাঁড়ালো? আল্লাহ তার গলার স্বরকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিলেন। কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর এ স্বশব্দে আযানের ধ্বনি পৃথিবীর আনাচে কানাচে
    অনবরত চলতেই থাকবে। যতদিন এই কায়েনাত আছে ততদিন তাঁর তাওয়াক্কুলের ফলাফল আমরা ভোগ করে যাবো। তাঁর তাওয়াক্কুলের ত্যাগটা যেমন হয়েছে তার ফলনটা তারচে বেশি মিষ্টি হয়েছে। গোটা মুসলিম উম্মাহ তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। [৬]

    তুমি তাওয়াক্কুলের মজা বুঝবে কিরে? করলে তো? দেখো সাহাবীদের তাওয়াক্কুলের কারিশমা। আলী রা. হাতের একটানে চৌকাট সরিয়ে ফেললেন। যা কয়েকজন মিলে সরাতে হয়। সাথীরা কিছুটা আশ্চর্য হলো। কারণ এমন বিরল ঘটনা তাঁদের দ্বারা অহরঅহরই ঘটছে । আবু-দুজানা রা. যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর বাহিনীর ভিতর ঢুকে কয়েকজনকে হত্যা করে চলে আসলেন। ময়দানে উমর রা. কয়েকজন পালোয়ানকে দস্তাদস্তিতে ধরাশায়ী করে ফেললেন। অথচ তাঁদের কারোই মানুষ হিসেবে আলাদা কোনো শক্তি ছিলো না।

    মাদয়ানে মূসা আলাইহিস সালাম কূপের ঢাকনা সরিয়ে বকরিকে পানি পান করানোর কথা মনে আছে তো? যে ঢাকনা ঐ গ্রামের কয়েকজন রাখাল মিলে সরাতে হতো অথচ মূসা আলাইহিস সালাম তা অতিসহজেই সরিয়ে ফেললেন। কিছু তো একটা এখানে আছেই যা আপনাকে গবেষণা করে বের করতে হবে? এই কাজটুকুই রইলো যুবক ভাই তোমার ওপর।

    জলন্ত উদাহরণ-তাওয়াক্কুল করে খোরাসানের মাটিতে কিছু যুবক ভাই অস্ত্র হাতে জিহাদে নেমে পড়েছেন। এক কলসি রক্ত আর দশ-বারোটা জীবন নয় বরং হাজার হাজার তরতাজা প্রাণ আল্লাহর রাহে সপে দিয়েছেন। আর জীবিত মানুষগুলোর হৃদপিণ্ড দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে তবুও হাল ছাড়েনি। অবশেষে দীর্ঘ বিশ বছর পর তাওয়াক্কুলের স্বাধ আস্বাদন করলো।

    প্রিয় যুবক ভাই!
    আল্লাহ কসম! আল্লাহ কসম! শুধু আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে দ্বীনি যেকোনো কাজে উন্নতি করা সম্ভব। যেকোনো বদ আসক্তি, বদ নেশা, থেকে মুক্তি পাওয়া সময়ের ব্যাপারমাত্র। আপনি আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে চেষ্টা চালিয়ে যান। বিশ্বাস রাখুন-তিনি অন্ধকার দুনিয়ার রঙ, রুপ, রস, ও আলোতে ভরা পৃথিবীতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দিবেন। ইমানের জোর নেই, ইমানের খুঁটি দুর্বল, তাই এ বিধানগুলো পালন করতে পারছি না। এসব কথা যুবকদের মুখে একদম মানায় না। ইমানের জোর আর খুঁটিকে শক্তিশালী করার জন্যই তো তাওয়াক্কুলের এ নেয়ামত।

    যে পৃথিবীর সুপারপাওয়ারদের চোখে চোখ রেখে সাহাবীরা জীবন-যাপন করতেন সে পৃথিবী কেন তোমার জন্য এত ভয়ংকর? উত্তর একটাই-ঐযে বললাম, তাওয়াক্কুল করে সাধ্যকর চেষ্টা চালিয়ে না যাওয়া। এর জোরে এমন কিছু অর্জন তুমি যুবক করতে পারবে যা বিন কাসেম আর বিন লাদেন করেছেন। একজন হিন্দুস্তানে কালেমার পতাকা উড়িয়েছেন আরেকজন টুইনটাওয়ার থেকে তাগুতের দম্ভকে মাটিতে নিক্ষেপ করেছেন। দুটোই হলো আকাশচূড়া চেষ্টার পর তাওয়াক্কুলের চমক ফলাফল।

    তথ্যসূত্র-
    _________________
    ১.সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ২৩
    ২.সূরা তাওবাহ, আয়াত নং ৫১
    ৩.মুক্ত বাতাসের খোঁজে, পৃষ্ঠা ১৩৯
    ৪.মূসা আ. এর জীবনী থেকে সংগৃহীত
    ৫.এক আরব বেদুঈনের গল্প
    ৬.প্রিয় সাহাবীদের জীবনী

  • #2
    আল্লাহ তা'য়ালা ভাইকে উত্তম থেকে উত্তম বিনিময় দান করুন... ভাইকে সর্বদা সুস্থ সবল ও নিরাপদ রাখুন.. আমাদেরকে আল্লাহর উপর দৃঢ় তাওয়াক্কুল করার তাওফিক দান করুন,আল্লাহুম্মা আমিন।

    Comment


    • #3
      সুবহানআল্লাহ! বড় আশা জাগানিয়া ও ঈমানদীপ্ত লেখা। আল্লাহ আপনার কলমকে আরও ক্ষুরধার করে দিন। আমীন
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment

      Working...
      X