কাফিরদের প্রশংসা
আদনানির দাবি অনুযায়ী আল-ক্বা’ইদাহ্* গোমরাহ হয়ে যাবার আরেকটি প্রমাণ হলো কাফিররা আল-ক্বা’ইদাহ্*র প্রশংসা করে। “এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না” বক্তব্যে সে বলে, “প্রকৃত আল-ক্বা’ইদাহ্* তো সেটি নয়, যাকে নিয়ে জঘন্য লোকজন প্রশংসা করবে, যার ব্যাপারে পথভ্রষ্ট ও বিপথে যাওয়া ব্যক্তিরা ভালোবাসার কথা বলবে – তাওয়াগীত যার সাথে সময়ে সময়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।“
অথচ কাফিরদের প্রশংসা পাওয়া এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা উসামাহ্*র আল-ক্বা’ইদাহ্* এবং খোদ আইসিস, দুটোর মধ্যেই বিদ্যমান।
কত সুন্দর করেই না এ অভিযোগের খন্ডন ভাই আব্দুল হামিদ আল-মাক্কি করেছেন, আল্লাহ তার কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন – “কে প্রশংসা করলো আর কে নিন্দা করলো এগুলোর ভিত্তিতে কোন দল, ব্যাক্তি, বা কাজকে বিচার করা কখনো সঠিক পদ্ধতি না। আমরা কিসের উপর আছি, আমরা কি হাক্বের অনুসরণ করছি নাকি বাতিলের, তা পরিমাপের সঠিক পদ্ধতি এই না যে আমরা দেখবো কে আমাদের প্রশংসা করছে আর কে নিন্দা করছে।
বরং শারীয়াহ্*র পদ্ধতি হল ব্যাক্তিকে তার কথা ও কাজের ভিত্তিতে বিচার করা ক্বুর’আন ও সুন্নাহর মাপকাঠি অনুযায়ী। এটুকু করার পর যদি কে প্রশংসা করলো আর কে নিন্দা করলো তা বিবেচনা করা হয় তবে তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু শুধুমাত্র প্রশংসা ও নিন্দা, স্বতন্ত্রভাবে মানুষকে বিচার করার ক্ষেত্রে কোন গুরুত্ব বহন করে না।“
শত্রু দুটি কারনে প্রশংসা করতে পারেঃ
১। এটি তাদের কোনো চক্রান্তের অংশ। একটি কৌশল যার মাধ্যমে তারা মুজাহিদিনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কেননা তারা বুঝতে পেরেছে এ কৌশলের মাধ্যমে মুজাহিদিনের মধ্যে অনৈক্য তৈরি করা যেতে পারে। এবং তারা জানে এমন দল আছে যারা এধরনের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত হয়।[1]
২। এটা হতে পারে যে তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল-ক্বা’ইদাহ্*র দাওয়াহ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ইমান কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য সীমাবদ্ধ না। আল্লাহ যে কোন সময়, যে কাউকে ইমান দান করতে পারেন, এবং এটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য অসম্ভব না, বিশেষ করে যেহেতু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিয়াসাহ শারীয়াহর আলোকে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে বিভিন্ন ভাবে আচরণের দ্বারা তাদের অন্তরসমূহকে নরম করে তাদের সত্যের নিকটবর্তী করার নীতি আল-ক্বা’ইদাহ্* তাদের মিডিয়া প্রচারণাতে গ্রহন করেছে।[2]
উসামাহ্*র আল-ক্বা’ইদাহ্*র ব্যাপারে আইসিসের অফিসিয়াল ম্যাগাজিন দাবিক্বে-র ষষ্ঠ সংখ্যায় আবু জারির আল-শিমালি একটি আর্টিকেল লিখেছে। ‘ওয়াযিরিস্তানের আল-ক্বা’ইদাহ্*’ শিরোনামের এ লেখায়, ৪৩ নং পৃষ্ঠায় সে বলেছে-
‘অবশেষে ২০১০-র শেষের দিকে আমরা সবাই মুক্তি পেলাম, কিন্তু রাফিদ্বারা কিছু ভাইকে জেলে রেখে দিয়েছিলো। এর মধ্যে ছিলেন দুইজন ভাই যারা আল-ক্বা’ইদাহ্*কে বায়াহ্* দেয়নি, তাদের নাম আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, খালিদ আল-আরুরি ও সুহাইব আল-উরদুনি। আমার বিশ্বাস তাদের ছাড়া না পাবার কারণ ছিল (আল-ক্বা’ইদাহ্*) –এর প্রতি তাদের বাই’য়াহ্* না থাকা।’
সুতরাং এ ভাষ্যমতে ইরানি সরকার ঐ ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে উসামাহ্*র আল-ক্বা’ইদাহ্*র প্রতি বাই’য়াহ্* থাকাকে শর্ত হিসেবে আরোপ করেছিলো!! যদি এমনটাই হয় তবে এই আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্*র আর কী পার্থক্য রইলো, যে আল-ক্বা’ইদাহ্*কে নিয়ে আদনানি বলেছে – “প্রকৃত আল-ক্বা’ইদাহ্* তো সেটি নয়, যাকে নিয়ে জঘন্য লোকজন প্রশংসা করবে, যার ব্যাপারে পথভ্রষ্ট ও বিপথে যাওয়া ব্যক্তিরা ভালোবাসার কথা বলবে – তাওয়াগীত যার সাথে সময়ে সময়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।“
আমি বলি, যদি আদনানি এবং আইসিসের দাবিক্বের ম্যাগাযিনের যুক্তি এবং নীতি গ্রহন করা হয়, তাহলে উসামাহ্*র আল-ক্বা’ইদাহ্*কে আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্*র চেয়ে আরো বেশি গোমরাহ বলতে হয়! কারন উসামাহ্*র আল-ক্বা’ইদাহ্*র সময় ইরানি শাসকগোষ্ঠী জেল থেকে মুক্তি দেয়ার সময় আল-ক্বা’ইদাহ্*র প্রতি বাই’য়াহ থাকাকে শর্ত হিসেবে গ্রহন করেছিল। সে জায়গায় আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্*কে ক্ষেত্রে তারা তো নিছক প্রশংসা করেছে।
আর এ নীতি অনুযায়ী তাহলে আইসিসের ব্যাপারে আমাদের কি বলা উচিৎ যখন বা’থ পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইয্*যাত আল-দুরি ১২/৭/২০১৪ তে আইসিসের প্রশংসা করে তার বক্তব্যে বলেছিলে – ‘খোদা বিপ্লবী সেনাবাহিনি ও দলগুলোকে হেফাজত করুন। আর এদের মাঝে অগ্রবর্তী হলেন “দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহর” বীরসেনানীরা। আমার পক্ষ থেকে গর্ব, কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসাপূর্ণ আন্তরিক অভিনন্দন এবং সমাদরপূর্ণ অভিবাদন তাদের নেতাদের প্রতি!’
তাহলে আদনানি ও দাবিক্ব ম্যাগাযিনের নীতি অনুসরণ করে আমরা তাদেরকেই প্রশ্ন করছিঃ
আইসিস কি তাহলে গোমরাহ হয়ে গেছে? বা’থ পার্টির মুরতাদরা কিভাবে তোমাদের প্রশংসা করে?
এছাড়া গাদ্দাফির অধীনে লিবিয়া-মিশর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তত্তাবধায়ক, আহমেদ ক্বাদ্দাফ আদাম, “ড্রিম” নামক টিভি চ্যানেলে ১৭/১/২০১৫ তে প্রচারিত এক ইন্টারভিউতে বলেছিল – “আমি দাইশের (আইসিস) সাথে, এবং এর বিশুদ্ধ তারুণ্যের সাথে আছি।“
নুরি আল-মুরাদি কমিউনিস্ট পার্টির একজন সাবেক সদস্য এবং ‘আল্*হিওয়ার আল্* মুসামাদ্দিন’-এর লেখক (একটি সভ্য সংলাপ)[3] – যেটি কিছুদিন আগ পর্যন্ত তাগুত সাদ্দাম হুসাইনের প্রশংসা করতো। ‘আল ইতিজাহ আল্ মুয়াক্কিস’ নামক টিভি অনুষ্ঠানে ২৬/৫/২১০৫ তে, হাসান আদ-দাঘিমের সামনে যারা আইসিসকে সমর্থন করে, নুরি আল-মুরাদি তাদের অন্যতম।
সিরিয়ান আর্মির একজন কর্নেল মুহাম্মাদ বারাকাত ২০১৪ সালের মে মাসের ১৮ তারিখ তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে লিখেছে –
‘সিরিয়ান-আরব আর্মির নেতৃবৃন্দের নীতি সম্পর্কে যারা সমালোচনা করে, সম্ভবত তারা জানে না যে আইসিস সম্প্রতি আলেপ্পোতে দুই হাজার সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। এবং সিরিয়ান আর্মির নেতৃবৃন্দের নীতি সম্পর্কে যারা সমালোচনা করে তারা হয়তো জানে না যে, isis দেইর আয-যুরে আল-ক্বা’ইদাহ্*র শত শত ভাড়াটে সৈনিককে হত্যা করেছে। আল-ক্বা’ইদাহ্*র এই সেনারা আমাদের সাহসী সৈনিকদের বিরুদ্ধে সেখানে প্রচন্ড আক্রমণ করছিলো। তাই আমি বলতে চাই যদি যতক্ষন আমাদের কাজে লাগছে ততোক্ষন আইসিসের সাথে যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া, এমনকি প্রয়োজনে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করার যে নীতি সিরিয়ান আরব আর্মির (সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর আনুষ্ঠানিক নাম) নেতৃবৃন্দ গ্রহন করেছেন তা তাদের গভীর প্রজ্ঞা ও বিচক্ষনতার পরিচায়ক।
সুতরাং গোমরাহ ও বিচ্যুত হবার ব্যাপারে যে মানদন্ড আইসিস নির্ধারন করেছে সেটা অনুযায়ী উসামাহ্*র আল-ক্বা’ইদাহ্*, আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্* ও আইসিস- সবাই পথভ্রষ্ট! সুতরাং যে দোষে আপনারা নিজেরাই পতিত, সেই দোষে কীভাবে অন্যদের দোষারোপ করতে পারেন?
==============
রেফারেন্সঃ
[1] বেশ কিছু পশ্চিমা সাংবাদিক এ নোংরা খেলায় মেতেছে। এ ব্যাপারে দেখুন মিম্বার আত তাওহিদ ওয়াল জিহাদের শার’ঈ কাউন্সিলের সদস্য শায়খ আবু মুনদ্বির আশ-শানক্বিতীর লেখা, “তারা চায় সব জিহাদ আইসিসের মতো হোক…”
[2] ‘খুরাসানের বাই’য়াহর পরতি প্রতিক্রিয়া”, পৃষ্ঠা ২০
[3] ‘আল হিওয়ার আল মুসামাদ্দিন”-এর ওয়েবসাইটে এমন এক আধুনিক উদারনৈতিক গনতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতি আহবান করা হয়, যেখানে সকলের জন্য স্বাধীনতা, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা থাকবে। এ সাইটের শিরোনামেই এমনটা লেখা আছে, এবং অধিকাংশ প্রবন্ধেই এ আহবান জানানো হয়।
Results 1 to 6 of 6
-
07-25-2016 #1
- Join Date
- Sep 2015
- Posts
- 114
- جزاك الله خيرا
- 35
- 224 Times جزاك الله خيرا in 74 Posts
আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্*র মধ্যে মানহাজগত পার্থক্য – ৭ - কাফিরদের প্রশংসা
আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।
-
The Following 2 Users Say جزاك الله خيرا to Abu Anwar al Hindi For This Useful Post:
Zakaria Abdullah (07-25-2016)
-
07-25-2016 #2Umar Abdur RahmanGuest
ভাই। মাশা'আল্লাহ। আপনি সম্পূর্ণটা শেষ করে পিডিএফ তৈরি করে ফেলতে পারেন ইনশা'আল্লাহ... সাথে ওয়ার্ড ফাইলও দিতে পারেন যাতে ভাইয়েরা অনলাইনে স্প্রেড করতে পারেন...
-
The Following User Says جزاك الله خيرا to Umar Abdur Rahman For This Useful Post:
Zakaria Abdullah (07-25-2016)
-
07-25-2016 #3
- Join Date
- May 2016
- Posts
- 33
- جزاك الله خيرا
- 0
- 13 Times جزاك الله خيرا in 7 Posts
আল কায়েদা আমার প্রাণের সংগঠন। যতদিন দেহে প্রাণ আছে আল্লাহ যেন এই মানহাজের সাথেই যুক্ত রাখেন। কাফিরদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার তৌফিক দান করেন।আমিন।
-
07-25-2016 #4
- Join Date
- Sep 2015
- Posts
- 114
- جزاك الله خيرا
- 35
- 224 Times جزاك الله خيرا in 74 Posts
ইন শা আল্লাহ ভাই, কাজ চলছে।
আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।
-
07-25-2016 #5
- Join Date
- Jun 2016
- Location
- ভারতীয় উপমহাদেশ
- Posts
- 158
- جزاك الله خيرا
- 24
- 130 Times جزاك الله خيرا in 54 Posts
আল্লাহ তাআল আপনার মেহনতকে কবুল করুন।
-
07-25-2016 #6
- Join Date
- Apr 2016
- Location
- ভারতীয় উপমহাদেশ
- Posts
- 2,370
- جزاك الله خيرا
- 357
- 1,494 Times جزاك الله خيرا in 874 Posts
জাজাকাল্লাহ ! সম্পূর্নটার পিডিএফ এর অপেক্ষায় রইলাম।
ইয়া রাহমান ! বিশ্বের নির্য়াতিত মুসলিমদেরকে সাহায্য করুন। তাগুতদেরকে পরাজিত করুন। আমিন।
Similar Threads
-
ইসলাম ও গনতন্ত্রে মধ্যে পার্থক্য পিডিএফ মোবাইলে তৈরি
By আল জিহাদ in forum অডিও ও ভিডিওReplies: 3Last Post: 09-25-2016, 07:25 PM -
আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্*র মধ্যে মানহাজগত পার্থক্য – ৬ - মুবাহালা
By Abu Anwar al Hindi in forum মানহাযReplies: 2Last Post: 07-25-2016, 06:31 PM -
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাঃ পক্ষ থেকে আমী&
By Raghib Ansar in forum চিঠি ও বার্তাReplies: 1Last Post: 08-26-2015, 10:09 AM