Announcement

Collapse
No announcement yet.

কিতালের জন্য কি আমীর থাকা শর্ত? বিভ্রান্তি নিরসন

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কিতালের জন্য কি আমীর থাকা শর্ত? বিভ্রান্তি নিরসন

    কিতালের গুরুত্ব নামাজ রোজা বা অন্যান্য সমস্ত ইবাদতের চেয়ে অনেক বেশী। কিতাল হচ্ছে ইসলামের সর্ব্বোচ্চ চুড়া। এজন্যই আল্লাহ্ তায়ালা ক্বুরআনে সালাত, সওম থেকে জিহাদের আলোচনাই বেশী করেছেন। বরং কিতাল না থাকলে আল্লাহর জমিনে ইবাদতই থাকত না, নামাজ রোজা কিছুই থাকত না। কিতালের আমল করতে গিয়ে আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজ কাযা করেছেন, মক্কা অভিযানের দিনে নবীজী (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রদিয়াল্লহু আনহুম আজমাঈন) রমজানের ফরজ রোজা ছেড়েছেন তবু কিতালের ব্যাঘাত ঘটাননি। বদরের যুদ্ধে সাহবিরা যখন ময়দানে কাফিরদের মেকাবেলায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। তখন আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বার বার আল্লাহর দরবারে আহাজারি, রোনাজারি করছেন, আর দোয়া করে বলছেন- “হে আল্লাহ্ এই দলটি যদি আজ ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে দুনিয়ার বুকে তোমার ইবাদত বন্দেগী করার মত আর কেউই থাকবে না” (নবীজী (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমনটিই বলেছিলেন)। কিতাল না থাকলে ইবাদতের স্থানসমূহ, যেখানে বেশী বেশী আল্লাহর নাম স্বরণ করা হয় তা ধ্বসিয়ে দেয়া হত। পবিত্র কালামে মাজীদে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন- “আল্লাহ যদি মানুষদের এক দলের দ্বারা অন্য দলকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রীষ্টান সংসারত্যাগীদের উপাসনালয়, গির্জা ও ইয়াহূদীদের উপাসনার স্থান আর মাসজিদসমূহ যেখানে আল্লাহর নাম অধিকহারে স্মরণ করা হয়।”। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে কিতালের কত গুরুত্ব। তাহলে এত গুরুত্বপূর্ণ কিতাল থেকে আমরা গাফেল থাকছি আর বলছি কিতালের ঘোষণা তো কেউ দেয়নি, আমাদের তো কোন আমীর নেই। এ কথা বলে কি হাশরের দিন পার পেয়ে যেতে পারব? কক্ষনোই না! এবার আসুন দলিলের আলোকে দেখি কিতালের জন্য কোন আমির থাকা শর্ত কিনা!

    জিহাদ যখন ফরজে আঈন হয় তখন তা কোন ব্যক্তির উপর বা কোন আমীরের উপর নির্ভর করে না।

    দলিল ১: যারা বলে জিহাদের জন্য আমির বা খলিফা লাগবে, খলিফার ঘোষণা বা অনুমতি লাগবে, আসলে তারা কথাটি সঠিক বলে না, তাদের এমন কথার কোন দলিল নেই। মুসনাদে আহমাদের একটি হাদীসে বলা হচ্ছে, তোমাদের মাঝে নবুয়্যত যতদিন থাকার ততদিন থাকবে তারপর আল্লাহ্ নবুয়্যত উঠিয়ে নেবেন; এরপর খিলাফাহ আলা মিনহাজিহিন নবূয়্যাহ আসবে এবং সেটা যতদিন থাকার ততদিন থাকবে অতঃপর আল্লাহ্ তা উঠিয়ে নেবেন; এরপর আসবে জালিম বাদশাহ্ তারপর আসবে মিথ্যাবাদি, অত্যাচারি, সেচ্ছাচারি শাসক তারপর পুনঃরায় খিলাফাহ্ ‘আলা মিনহাজিন নবূয়্যাহ ফিরে আসবে। অর্থাৎ এই হাদীস থেকে বোঝা গেল আল্লাহ্ তায়ালা খিলাফত উঠিয়ে নেবেন, খিলাফত চিরকাল থাকবে না। আর খিলাফত উঠিয়ে নিলে খলিফাও থাকবে না। এবার আসুন বুখারি এবং মুসলিম শরিফের হাদীসে কী আছে দেখি, “কেয়ামত পর্যন্ত একটি দল হকের উপর থেকে কিতাল করতে থাকবে”। আর দ্বীন কায়েম থাকবে এই মুকাতিলদের ক্বিতালের উসিলায়। নবীজীর সময় থেকেই একটি দল হকের উপর কায়েম থেকে কিতাল চালিয়ে যাবে কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত। এক হাদীসে বলা হচ্ছে খিলাফাহ উঠিয়ে নেয়া হবে; অপর হাদীসে বলা হচ্ছে কিতাল চলবে কেয়ামত পর্যন্ত। তাহলে কী দাড়াল? যখন খিলাফাহ থাকবে না; মুসলমানদের কোন সাধারণ আমীর থাকবে না তখনও তো কিতাল চলবে। আমিরের ঘোষণার জন্য যদি অপেক্ষা করতে বলা হয় তাহলে হাদীসের এই নীতি বদলে যায়। সুতরাং আমীর থাকার শর্ত হচ্ছে একটি ভুল এবং নিজেদের মনগড়া আক্বীদা। কিতালকারী সেই দলটিতো দুনিয়াতে বিদ্যমান আছেই। চাইলে কেউ তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে অথবা যদি তাও সম্ভব না হয় তবে সে একাই কিতাল পরিচালনা করবে। এজন্য বাকি দলিলগুলো দেখি।

    দলিল ২: হাদীসে আসছে, নবীজী (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীগণ (রদিয়াল্লহু আনহুম আজমাঈন) থেকে বাইয়াত নিচ্ছেন, আমরা শুনব এবং মানব আমাদের সুখে, দুঃখে, ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায় যে, আমরা খলীফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না; অতঃপর তিনি (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কিন্তু যদি তোমরা খলিফার মাঝে স্পষ্ট কোন কুফর দেখ যার ব্যাপারে তোমাদের নিকট প্রমাণ থাকে তাহলে তোমরা খলিফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে”। অর্থাৎ কোন কাফির মুসলিমদের খলিফা বা ইমাম হতে পারে না। *মুসলমানদের খলিফার মাঝে কুফর প্রকাশ পেলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা তার আনুগত্য পরিত্যাগ করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হয়ে যায় এবং এটাই বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ মত। তাহলে যেখানে স্বয়ং খলীফার (যখন সে আর খলীফার যোগ্যতা রাখে না) বিরুদ্ধে কিতালের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে সেখানে আমীর বা খলীফার নেতৃত্ব আসবে কোত্থেকে? কতইনা হাস্যকর ওই সকল দরবারী আলিমদের দলিল!

    দলিল ৩: ক্বুরআনের অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, “আল্লাহ্*র পথে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজ সত্ত্বা ব্যতিত অন্য কোন বিষয়ের জিম্মাদার নন। আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন” (সূরা নিসা ৪:৮৪)। ক্বুরআনের এই আয়াতে স্পষ্ট করেই বলা হচ্ছে যদি কিতালের জন্য কোন আমীর বা নেতা বা আহবানকারী না পাওয়া যায় তাহলে একাই যুদ্ধ করতে হবে এবং সাথে সাথে অন্যদেরকেও উৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু কিতাল ফরজে আঈন হয়ে যাওয়ার পর আমিরের জন্য তা ত্যাগ করে বসে থাকা যাবে না যদি কেউ একাও হয়। যেমনিভাবে সালাতের সময় হয়ে গেলে সে যে অবস্থায়েই থাকুক তাকে সালাত আদায় করতেই হবে। মসজিদ পাওয়া যাক বা না যাক, আযান হোক বা না হোক, ইমাম থাকুক বা না থাকুক, ওজুর পানিও যদি না থাকে তবুও তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে হবে। কেয়ামত পর্যন্ত সালাতের হুকুম যেমন স্থায়ী এবং অবিচল ঠিক তেমনি কেয়ামত পর্যন্ত কিতালের হুকুমও স্থায়ী এবং অবিচল; কিতাল থেমে থাকবে না কিতাল চলবেই। কোন নেতা বা আমীরকে অগ্রাহ্য করে কিতাল চলতেই থাকবে। যখন কিতাল ফরজে আঈন হয়ে যায় আর তখন যদি কেউ একাও হয় তখন কোন নেতা কিতালের ডাক দিক বা না দিক ব্যক্তি উদ্যোগেই কিতালের আয়োজন করা, পরিকল্পনা করা, উপায় বের করা ফরজ হয়ে যায়, তখন সন্তানের প্রয়োজন হয় না মায়ের অনুমতি নেয়ার, চাকরের প্রয়োজন হয় না মনিবের অনুমতির, ঋণ গ্রহিতার প্রয়োজন হয় না ঋণ দাতার অনুমতি নেয়ার। কিতালের ওয়াক্ত হয়ে গেলে অর্থাৎ ফরজে আঈন হয়ে গেলে আর বসে থাকার কোন উপায় নেই, একাই কিতাল করতে হবে এবং কিতাল করতে করতে অন্যদেরকেও উৎসাহিত করতে হবে। যেমনিভাবে আয়াতে পাকে বলা হচ্ছে, “আপনি নিজ সত্তা ব্যতিত অন্য কারও জিম্মাদার নন। আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন”। এখন কিতালের ওয়াক্ত হয়েছে কি হয়নি সেটা আলোচনার প্রয়োজন মনে করছি না।

    দলিল ৪: সূরা আলি ইমরান এর ১৪৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “আর মুহাম্মাদ একজন রাসূল বৈ কিছু নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল গত হয়েছেন। তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন তাহলে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুত কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ আল্লাহ্ তাদেরকে পুরষ্কৃত করবেন।” কিতাল যে কোন ব্যক্তি বা নেতার উপর নির্ভর করে না এটি হতে পারে একটি অন্যতম দলিল। এই আয়াতটি সাহাবাদেরকে এই শিক্ষা দিতেই নাজিল হয়েছে যে, ফরজে আঈন ইবাদত নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে না এমনকি শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওপরও নির্ভর করে না। দ্বীন কেবল আল্লাহর অধিকারভুক্ত অন্য কারো নয়। সুতরাং আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল করতে হবে মুহাম্মাদ (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বা অন্য কারো উপর নয়। এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে উহুদ যুদ্ধের সময় যখন এক কুরাইশ রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে পাথর দিয়ে আঘাত করেছিল এবং ভেবেছিল সে তাঁকে হত্যা করেছে। সে তার লোকদের নিকট গিয়ে এটা প্রচার করে দিল। এই গুজব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে তা মুসলিমদের কানেও এলো যে, নবীজী (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেছেন। এ কারণে কিছু মুসলিম হতাশ হয়ে পড়লে আল্লাহ্ তায়ালা এই আয়াতটি নযিল করেন। এবং একথাই বুঝিয়ে দেন যে, তোমরা কি রাসূলের উপর নির্ভরশীল নাকি আল্লাহর উপর? এই খবর দ্বারা কিছু মুসলিম প্রভাবিত হয়েছিল আবার কিছু মুসলিমের উপর এর কোন প্রভাবই পড়েনি বরং তারা আরও গুরুত্বের সাথে জিহাদ চালিয়ে যান।
    আনসারদের মধ্য থেকে একজন মুসলিম বলেছিলেন, “যদি তিনি মারা গিয়েও থাকেন, তিনি তো তাঁর বার্তা পৌঁছেই গিয়েছেন। অতএব, তাঁর জন্য যুদ্ধ কর এবং তাঁর মত মৃত্যু বরণ করে নাও”। এই সাহাবী এ গুজবের কারণে ভেঙ্গে পড়ার বদলে রবং আরও শক্তিশালী ও দৃঢ় চিত্তের অধিকারী হয়েছিলেন। কেননা যে নেতার দোহাই দিয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে সে কেবল নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছিল।
    কিছু মুসলিম বলল, “চলো আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই এর কাছে যাই। তাকে কুরাইশদের নিকট আমাদের আত্মসমর্পণের মধ্যস্থতা করে দিতে বলি।” আনসারদের একজন আনাস বিন নাদ্*র (রদিয়াল্লহু আনহু) বলেছিলেন, “যদিওবা মুহাম্মাদ (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিহত হয়ে থাকেন, আল্লাহ্ তো নিহত হননি। অতএব, চল আল্লহ্*র দ্বীনের জন্য আমরা লড়াই করি।” তিনি কিছু মুসলিমকে যুদ্ধের ময়দানে বসে থাকতে দেখে তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “কি ব্যাপার তাঁরা কি করছে।” তাঁরা জবাব দিল- মুহাম্মাদ (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিহত হয়ে থাকেন তবে তোমরা উঠে দাড়াও, যুদ্ধ কর এবং তাঁর (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মতো তোমরাও নিহত হও”। সাহাবির কথা শুনে কিছু মুসলিম তাই করল এবং শহীদ হল।
    যারা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়েছিল তাদের ২টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়-
    ১। যারা রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মৃত্যুর সংবাদের কারণে অকৃতকার্য হয়েছিল, দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি, তারা শান্তি চেয়েছিল এবং মৃত্যু এড়াতে চেয়েছিল।
    ২। এরা এরচেয়েও খারাপ অবস্থানে ছিল। যারা কুফরের দিকে ফিরে গিয়েছিল।
    জিহাদ রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নির্ভলশীল নয়। যে, দুই শ্রেণির লোকেরা ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করেছিল, তাদের মতই আজকের অনেক মুসলিমদের অবস্থা। তারা মনে করছে জিহাদ করব, নেতা কই?
    যারা সঠিক পথ অবলম্বন করে তারা হযরত আনাস বিন নাদর (রদিয়াল্লহু আনহু) এর মতই; যিনি মানুষদের বলেছিলেন, তোমরা বসে আছ কেন? তারা বলেছিল কারণ মুহাম্মাদ (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিহত হয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, তাহলে তোমরা কিসের জন্য বেঁচে থাকবে? উঠে দাড়াও এবং তাঁর মত যুদ্ধ কর। বর্তমানে এ যুগেও সাহাবি হযরত আনাস বিন নাদর (রদিয়াল্লহু আনহু) এর মত মানুষেরাই সঠিক ধারণার অনুসরণ করে, এবং বলে যে, জিহাদ কোন ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল নয়, যদিও বা তিনি নবী হন।
    আর জিহাদের ফলাফলের উপর বিবেচনা করে জিহাদ হতে পারে না। জিহাদের ফলাফল আমাদের অধিকারভূক্ত নয় বরং একমাত্র আল্লাহর অধিকারভূক্ত। জিাহাদের ফলাফল সম্পূর্ণ আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া উচিৎ। আমরা আল্লাহর সৈন্য। আমাদের পরিণতির চিন্তা বাদ দিয়ে আল্লাহ্ যা আদেশ করেছেন তা করে যাওয়া উচিৎ।
    আর কেউ যদি পরিণামের ভিত্তিতে বিচার করে তবে তার বলার কথা যে উহুদ ছিল একটি ভয়াবহ ব্যর্থতা এবং রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর এখানে যুদ্ধ করা ঠিক হয়নি; নাউয়ুবিল্লাহ! কিন্তু এমন কথা কেউ বলে না। আমরা বলি রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঠিক কাজই করেছেন, কেননা তিনি কেবল আল্লাহর আদেশ পালন করেছিলেন।

    দলিল ৫: নবীজীর উপস্থিতিতে সাহাবীদের আমল থেকে দলিল দিচ্ছি। হুদাইবিয়ার সন্ধির একটি ধারা ছিল এরকম- মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে যে কোন লোক মক্কা থেকে মদীনায় গিয়ে আশ্রয় নিলে তাকে ফেরৎ দিতে হবে। তবে মদীনার কোন লোক মক্কায় এসে আশ্রয় নিলে তাকে ফেরৎ দেয়া হবে না। সন্ধির এই শর্তটি মুসলমানদের কাছে যতটা অপমানের এবং দুঃখের ছিল কাফিরদের জন্য ছিল তারচেয়ে বেশী আনন্দের। অথচ এটিই মুসলমানদের মুক্তির পথ খুলে দিয়েছিল। মুসলমানগন হুদায়বিয়া হতে মদীনায় পৌঁছা মাত্র আবু বসীর উত্*বা নামক একজন সাহাবী কুরাইশদের বন্দীখানা হতে পালিয়ে মক্কায় পৌঁছেন। সন্ধি’র শর্তানুযায়ী কুরাইশরা তাঁকে ফেরৎ নেয়ার জন্য রসূলুল্লাহ্*র (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট দূত পাঠায়। রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে সান্তনা দেন এবং সন্ধি’র শর্তানুযায়ী মক্কায় ফেরৎ যেতে বলে দেন। অগত্যা আবু বসীর (রদিয়াল্লহু আনহু) তাদের সাথে মক্কা দিকে যাত্রা করলেন। যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে পৌঁছে তারা বিশ্রাম এবং খানা খেতে বসল। হযরত আবু বসীর (রদিয়াল্লহু আনহু) মিস্টি আলাপ করতে করতে বাহানা দিয়ে তাদের একজনের তরবারি হাতে নেন। তরবারি হাতে নিয়েই তাদের একজনকে হত্যা করে ফেলেন। অপর লোকটি ভীত হয়ে মদীনার দিকে দৌড়াতে লাগল। মদীনায় সে রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হল। তার পিছনে পিছনে কোষমুক্ত তরাবারি হাতে হযরত আবু বসীর (রদিয়াল্লহু আনহু) ও উপস্থিত হলেন। তিনি নবীজীকে (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন যে, “আপনার দায়িত্ব পূর্ণ হয়েছে। আল্লাহ্ আপনাকে দয়িত্ব মুক্ত করেছেন। আপনি আমাকে সম্প্রদায়ের হাতে অর্পণ করেছেন। আমি আমাকে ধর্ম বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছি”। তখন রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন- “সর্বনাশ তাঁর সাথে আরও কয়েকজন থাকলে তো রীতিমত যুদ্ধই শুরু হয়ে যেত”।
    তারপর আবু বসীর সেখান থেকে আত্মগোপন করে সমুদ্র-উপকূলের ঈস নামক স্থানে চলে গেলেন। এদিকে মক্কায় কুরাইশদের হাতে আটক মুসলমানদের নিকট যখন এই সংবাদ পৌঁছাল যে, রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হযরত আবু বসীরকে লক্ষ করে বলেছেন যে, “তাঁর সাথে আরও কয়েকজন থাকলে তো রীতিমত যুদ্ধই শুরু হয়ে যেত” তখন তাঁরা হযরত আবু বসীর এর সাথে মিলিত হওয়ার উদ্দেশ্যে সুযোগ বুঝে ঈশ এর দিকে যেতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে প্রায় সত্তর জনের মত বা আরও বেশী লোক আবু বসীর এর কাফেলায় যুক্ত হলেন। তাঁরা ঠিকই কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেন। মক্কাবাসী বণিকেরা এই পথেই পণ্যদ্রব্য নিয়ে সিরিয়ার পথে যাতায়াত করত। হযরত আবু বসীরের কাফেলা ওই সকল বণিকদের উপর আক্রমন করে সমস্ত মালপত্র রেখে দিতেন। মক্কার কোন দলই হযরত আবু বসীর এর কাফেলার হাত থেকে রক্ষা পেত না। এভাবে মক্কাবাসীদের জীবিকা নির্বাহের মূল পথ বন্ধ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত কুরাইশরা উপায় না দেখে দূত এর মাধ্যমে রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট পত্র লিখল যে, তিনি যেন তাঁদেরকে (রদিয়াল্লহু আনহুম) নিজ আশ্রয়ে নিয়ে গিয়ে মক্কাবাসীকে রক্ষা করেন এবং সন্ধির এই সম্পর্কিত শর্তটিও বাতিল করেন। রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের আবেদন মঞ্জুর করলেন এবং হযরত আবু বসীর এর কাফেলাকে মদীনায় আসার জন্য পত্র পাঠালেন। নিঃসন্দেহে এই ঘটনা মুসলমানদের প্রকাশ্য বিজয়ের একটি ধাপ। আর হুদায়বিয়ার সন্ধির পরে স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালাই বিজয়ের ব্যাপারে সংবাদ দিয়ে আয়াত নাজিল করেন- “আমি আপনাকে প্রকাশ্য বিজয় দান করলাম” (আল ফাতহ্:১) ।
    এবার আসুন একটু বিশ্লেষণ করি। হযরত আবু বসীর যখন দুইজন দুত এর একজনকে হত্যা করে রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট আসল রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিন্তু তাঁকে তিরষ্কার করেনি রবং তিনি বুঝালেন যে তাঁর সাথে আরো কিছু লোক হলে যুদ্ধ হতে পারত। এরপর তাঁরা কুরাইশদের কাফেলাকে গুপ্ত আক্রমন করা শুরু করল এবং কুরাইশদেরকে তাদের সন্ধি হতে ফেরাতে বাধ্য করল। আর হযরত আবু বসীর এর এই কর্মকান্ডকে রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ কি বলেছে যে এটা বৈধ হয় নি। স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালাইতো এরকম প্রকাশ্য বিজয়ের ইঙ্গিত দিলেন। তাহলে কি বোঝা গেল? বোঝা গেল রাসূলের (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যামানায়ও স্বয়ং রাসূলের (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুমতি ছাড়াই জিহাদ চলেছে। আবু বসীর (রদিয়াল্লহু আনহু) এর দল মক্কার কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করেছেন। এবং আল্লহ্ তায়ালা বিজয় দান করছেন।

    দলিল ৬: খলিফাতাল্লহিল মাহদি (আলাইহিসসালাম) দাজ্জালকে পরাজিত করে খিলাফাহ কায়েম করবেন, অথচ যখন দাজ্জালের বিরুদ্ধে মাহদির বাহিনী জিহাদ করবে তখন তো কোনো খলিফা থাকবে না। যদি বলা হয় খলিফা ছাড়া জিহাদ হবে না, তাহলে কি দাজ্জালের বিরুদ্ধে জিহাদ করা যাবেনা? যদি বলেন তা'ইফা বা জামা'আতের আমির তো থাকবেন মাহদি (আলাইহিসসালাম)। আমরা বলবো আলহামদুলিল্লাহ্*! প্রতিটা মুজাহিদ জামা'আতের আমির এখনো আছে, আপনি চাইলে তাদের সাথে অংশ নিতে পারেন।

    দলিল ৭: ক্বুরআনে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ দ্বীন থেকে ফিরে যায় তাহলে আল্লাহ্ তায়ালা এমন একটি দল বা কওম নিয়ে আসবেন যারা আল্লাহ্ কে ভালবাসবেন আল্লাহ্ তাদেরকে ভালবাসবেন। তারা হবে মুমিনদের প্রতি সদয় এবং কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না।” কেউ কি বলতে পারবে যে, “এখন সেই সময় নয় যে, আল্লাহর কিছু বান্দা দ্বীন থেকে ফিরে যাচ্ছে”। আর আল্লাহ্ তায়ালা কি তাহলে সেই কওমকে নিয়ে আসেন নি যাদি আল্লাহর কালাম সত্য হয়ে থাকে? অবশ্যই আল্লাহর কালাম সত্য এবং আমীর ঘোষণা দিক বা না দিক আল্লাহ্ তায়ালাও অবশ্যই সেই কওমকে নিয়ে এসেছেন যারা মুমিনদের প্রতি সদয়, কাফিরদের প্রতি কঠোর, যারা আল্লাহর রাস্তায় কিতাল করতে যেয়ে কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না। কে জঙ্গি বলে, কে সন্ত্রাস বলে, কে বলে যে আমীর ছাড়া জিহাদ করা যাবে না, এ সবের কোন তোয়াক্বা সে করে না।

    উপসংহারঃ দলিল আরও অনেক আছে। লিখলে লেখা বড় হয়ে যাবে। সাহাবিদের যামানা থেকে একটা উদাহরণ দেই। হযরত হুসাইন (রদিয়াল্লহু আনহু); জান্নাতের যুবকদের সরদার, রসূল (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাতি তিনি হযরত ইয়াজিদ ইবনু মুয়াউইয়া (রদিয়াল্লহু আনহু) এর বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। তিনি কি তখন খলিফাতুল মুসলিমীন ছিলেন? ছিলেন না। তারপর হযরত ইবনে তাইমিয়ার যুগে দেখি। তাঁর সময়ে মুসলিমদের কোন খলিফা ছিল না। অথচ সে সময়ে মুসলমানেরা তাতারিদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছে এবং তাতারিদেরকে পরাজিত করেছে। তখনাকর আলেমগন তো একথা বলে নি যে, “আমাদের তো জিহাদ করা বৈধ নয় আমাদের তো আমির নেই”। উনবিংশ শতাব্দির আশির দশকে সেভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগানের জিহাদকে আরব, আজম সহ সারা দুনিয়ার আলেম সমাজ জিহাদ বলেই আখ্যায়িত করেছেন। সবাই এই জিহাদে অংশগ্রহনের ব্যাপারে উদ্ভুদ্ব করেছেন। অথচ তখন কোন আমীরুল মু-মিনীন ছিলনা, খোদ আফগানেই কোন আমীর ছিলনা যার একক নেতৃত্বে জিহাদ হবে। বরং সেখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নামের ছোট ছোট দল যার যার আমিরের নেতৃত্বে জিহাদ পরিচালনা করেছে। তখন এই সকল দরবারি উলামাগণ কোথায় ছিল যারা এখন বলে যে, আমির ছাড়া জিহাদ নেই!

    ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর একটি ফতোয়া দিয়ে লেখা শেষ করছি। প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে কোন ধরনের শর্ত নেই। কিতাবুল জিহাদে ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেন- “আর প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ হচ্ছে মুসলমানদের সম্মান ও দ্বীন রক্ষার জন্য আগ্রাসীকে প্রতিহত করার সবচেয়ে কঠিন প্রকার। এটা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। সুতরাং ঈমানের পর দ্বীন ও দুনিয়া ধ্বংসকারী আগ্রাসী শত্রুকে প্রতিহত করার চেয় বড় ফরজ কিছু নেই। এর জন্য কোন শর্ত নেই। বরং সামর্থ অনুযায়ী প্রতিরোধ করতে হবে”।
    Last edited by thr3q; 04-18-2020, 01:37 AM.
    দুনিয়া ব্যাপি দ্বীন ও মুসলিম উম্মাহর উপর আঘাতকারী আগ্রাসি শত্রুর বিরুদ্ধে কিতাল করা ঈমান আনার পরে সবচেয়ে বড় ফরজ

  • #2
    সায়েখ সালিহ আল উসাইমিন বলেনঃ জিহাদ পরিচালনা না করলে কোন শাসক, শাসক হতে পারবে না। সুতরাং বুঝা গেল জিহাদ আমির এরও অগ্রবর্তী।

    Comment


    • #3
      জাঝাকাল্লাহ। উত্তম পোষ্ট। আল্লাহ আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুন।

      Comment


      • #4
        আখি হাজারো শুকরিয়া, খুবি গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যপূর্ণ পোস্ট। আখি ফেইজবুক আইডি থাকলে সেখানেও পোস্ট করতে পারেন, কারণ এই অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অনেক বিজ্ঞ আলেমরাও জানে না।

        Comment


        • #5
          Originally posted by ibnmasud2016 View Post
          জাঝাকাল্লাহ। উত্তম পোষ্ট। আল্লাহ আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুন।
          অামিন ছুম্মা অামিন......

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ, এটি একটি সুন্দর সংকলন।

            আসলে তারা মিথ্যাবাদি তাদের এমন কথার কোন দলিল নেই।
            সুতরাং আমীর থাকার শর্ত হচ্ছে একটি ভুল এবং শয়তানি আক্বীদা।
            কতইনা হাস্যকর মুনাফিকদের দলিল!
            তখন এই সকল “মুনাফিকেরা” কোথায় ছিল যারা এখন বলে যে, আমির ছাড়া জিহাদ নেই!
            ভাই, মুজাহিদ আলেমরা এইভাবে লিখেন না। এইভাবে বলেন না। মুজাহিদ উলামাদের কথা বলার / লিখার ধরন এ রকম না। আমরা আমাদের উলামাদেরকে অনুসরণ করতে পারি ইনশাআল্লাহ।

            যারা জিহাদে এই রকম শর্ত জুড়ে দেয় তারা সবাই যে মিথ্যাবাদী কিংবা মুনাফিক কিংবা শয়তানি আক্বীদায় বিশ্বাসী এমন না। অনেকের অজানা থাকতে পারে, কেউ ভুল বুঝতে পারে। আরো অনেক কিছু হতে পারে।

            আশা করি ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ আমাদের জন্য উত্তম আখলাক অবলম্বন করার তৌফিক দিন।
            কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

            Comment


            • #7
              মাশাআল্লাহ।উওম পোস্ট।
              দাওয়াত এসেছে নয়া যমানার,ভাঙ্গা কেল্লায় ওড়ে নিশান।

              Comment


              • #8
                জাঝাকাল্লাহ। উত্তম পোষ্ট। আল্লাহ আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুন।
                তাওহীদ ও জিহাদের বাণী প্রচারই আমাদের লক্ষ্য ।

                Comment


                • #9
                  উত্তম পরামর্শ; যাঝাকাল্লাহু খইর; আপনি সঠিক বলেছেন। আমি সংশোধন করে নেব।
                  দুনিয়া ব্যাপি দ্বীন ও মুসলিম উম্মাহর উপর আঘাতকারী আগ্রাসি শত্রুর বিরুদ্ধে কিতাল করা ঈমান আনার পরে সবচেয়ে বড় ফরজ

                  Comment


                  • #10
                    জাযাকাল্লাহু খাইরান। আপনার কথা সঠিক। আামি সংশোধন করেছি।
                    দুনিয়া ব্যাপি দ্বীন ও মুসলিম উম্মাহর উপর আঘাতকারী আগ্রাসি শত্রুর বিরুদ্ধে কিতাল করা ঈমান আনার পরে সবচেয়ে বড় ফরজ

                    Comment

                    Working...
                    X