কথা শুরু করি ‘শাহপরীর দ্বীপ দিয়েই।
যেহেতু এইটে আরাকানের একেবারে লাগুয়া। ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে রক্তাক্ত নাফনদীটি অবিরাম বয়ে চলেছে এই দ্বীপের কোলঘেঁষেই।
তাছাড়া আরাকানিরা সর্বপ্রথম এখানেই আশ্রয় নেয়।
শাহপরীর দ্বীপের একটি বড়ো মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নযীর আহমদ সাহেব।
ওনার মাদরাসায় রাতে আমরা বেশ আরামেই অবস্থান করি। অনেক খাতির-যত্ন করেন আমাদের। রাতে পরামর্শ হলো, বাদফজর তিনি আমাদেরকে নিয়ে রাতে আসা নতুন মুহাজিরিনদের সঙ্গে সাক্ষাত করাতে নাফনদীর ঘাটগুলোতে বের হবেন। যাতে করে আমরা সরাসরি তাদের হাতে সহজে ত্রাণ পৌঁছাতে পারি। কিন্তু বাদফজর প্রিন্সিপাল সাহেব শারিরিক কিছুটা অসুস্থতা কারণে মাদরাসার হিফজ বিভাগের একজন শিক্ষক এবং কিতাব বিভাগের স্থানীয় আরেকজন প্রভাবশালী শিক্ষককে আমাদের জন্য রাহবার বানিয়ে দেন।
আমাদেরকে নিয়ে ওনারা সর্বপ্রথম নাফনদীর ঐ ঘাটে যান যেখানে এসে বেশিরভাগ আরাকানি মুসলমানদের নৌকাগুলো লাগতো। কেননা এটা বিজিপি চৌকি থেকে খানিকটা দূরে অবস্থিত।
সেখান থেকে দলেদলে আরাকানিরা শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন পাড়ায় আশ্রয় নিতো। রাহবরদ্বয় আমাদেরকে জানালেন, শাহপরীর দ্বীপের প্রতিটি বাড়িতেই কয়েকজন করে আরাকানি মুসলমান আশ্রয় নিতো! এতে তারা মোটেও বিরক্ত হতো না; বরং আনসার হিসেবে তাদেরকে বেশ আপ্যায়ন করতো।
পরর্বতীতে তারা চলে যেতে ক্যাম্পে।
আরও বিস্ময়নয়ণে ঐ ঘাটটি দেখতে লাগলাম, যখন রাহবর বললেন, এই ঘাটেই জালিমমাঝি কর্তৃক নৌকাডুবি আরাকানি মুসলমান নারী, পুরুষ আর বাচ্চাদের লাশের বহর এসে পাড়ে ঠেকতো। কারণ মিডিয়া আর সংবাদমাধ্যমগুলোতে উক্ত ঘাটের কথা বারবার আসে। তা এখন আমাদের দৃষ্টির কভারে।
আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো অধিকাংশ মাঝিগুলো ছিলো নির্দয়। এমনও হয়েছে ভাড়া না থাকার কারণে নৌকা থেকে ধাক্কা মেরে নাফনদীতে ফেলে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। লাশগুলো ভাসতে ভাসতে চলে আসতো শাহপরীর দ্বীপে। সকালে এসে শাহপরীর দ্বীপের লোকজন সেগুলো তুলে তুলে সুন্নত মোতাবেক দাফন করতো। হুজুর আমাকে বললেন, তিনি নিজেও একদিন একসঙ্গে ছোটোবড়ো মিলিয়ে চব্বিশটা লাশের জানাযা দিয়েছেন!
কিতাববিভাগের হুযুরের (রাহবার) সঙ্গে আমার একান্তে কিছু কথা হয় সেগুলো পরবর্তীতে লেখবো, ইংশাআল্লাহ!
এবার আসুন, শাহপরীর দ্বীপ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিই!
টেকনাফ থেকে ট্রলার বা স্পীডবোর্ডে যেতে হয় শাহপরীর দ্বীপে। আমরা ট্রলারে যখন উঠি তখন নদীতে ভাটা চলছিলো। ওখানে পৌঁছাতে আনুমানিক পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেগে যায়।
শাহপরীর দ্বীপ। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্বদক্ষিণের অংশ এটি। টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ড নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ গঠিত। এই দ্বীপের লোকসংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজারের মতো। এখানকার লোকদের আচার-আচরণ আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। দ্বীপের প্রায় সবাই মুসলমান। বেশ ধার্মিক। মাজারপূজা, গাজাপূজা, বাবাপূজা নেই বললেই চলে।
স্কুলড্রেসের সঙ্গে প্রতিটি বয়ের মাথায় টুপি, গার্লসের বোরকা পড়া বেশ দৃষ্টিনন্দন।
এদের প্রধান পেশা মাছধরা ও লবণ চাষ। এখানে হাট-বাজার স্কুল মাদরাসা,মসজিদ সবই আছে। শুধু নেই একটি বেড়ী বাঁধ।
এখান থেকে মোটামুটি স্পষ্ট দেখা যায় মায়ানমারের মংডু প্রদেশ। সেই সঙ্গে দেখা যায় আরকানের পাহাড়গুলো আর জনমানবহীন গ্রামে বার্মিজ সেনাচৌকিগুলো। একসময় ওসব গ্রামে প্রাণপ্রবাহ থাকলেও সম্প্রতি এখন তা নেই। ওখানকার বাড়ীঘরগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বহুসংখ্যক পুরুষদের হত্যা করা হয়েছে। বহু অভিজাত্য সুন্দরী যুবতী নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত সেখানের লক্ষলক্ষ মানুষ হিজরত করে চলে এসেছে বাংলাদেশে।
শাহপরীর দ্বীপের একটু সামনে রয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ।
শাহপরীর দ্বীপে একটু পরপরই বিজিবিচৌকি ও ওয়াচ টাওয়ার।
জেলেপাড়ায় ছোট ছোট কুঁড়েঘরে জেলেদের জীবন-যাপন আপনাকে যতটা না ভাবাবে তারচেয়ে বেশী প্রেরণা জোগাবে বেঁচে থাকার এবং সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার। চারদিকের সাগরকে বুকে নিয়ে বসবাসের কারণে লোকগুলোর কোনো ভয় নেই, শংকা নেই, টেনশন নেই। তাদের ছোট ছোট কুড়েঘর একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে অথচ তারাই কি-না প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে সাগরের সঙ্গে। সেই যুদ্ধে বেশীরভাগ সময়ই এই জীর্ণশীর্ণ লোকগুলোরই জয় হয়। তাদের জীবিকার প্রয়োজনের কাছে।
প্রতিদিনই জোয়ারের পানি রাস্তায় এসে ধাক্কা দেয়। আর রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো আধাআধি ডুবে যায় নোনাপানিতে।
জেলেপাড়ার পাশেই লবণক্ষেত। দিগন্তজোড়া লবণপ্রান্তর। দূরে বহুদূরে জলসীমার শেষপ্রান্তে শিল্পীর আঁকা তুলির আঁচড়ের মতো গ্রামগুলো যেন লেপ্টে আছে আকাশের গায়ে। তার ওপর চক চক করছে সমুদ্রের রূপালী আকাশ। এখানে নুনক্ষেতের পাশেই ছোট ছোট আঁকাবাঁকা নদী যেগুলো দিয়ে জোয়ারের সময় সমুদ্র থেকে উঠে আসে নোনাজল। আর সেখানে ছোট ছোট মাছ খোঁজার জন্য দলে দলে ভিড় করছে গাঙচিল, সারস কিংবা অতিথি পাখিরা…!
পরর্বতী পোস্টের অপেক্ষা-
নাফ নদীর এপাড়-ওপাড় (পর্ব-০২)
http://gazwah.net/2017/09/26/%e0%a6%...6%93%e0%a6%aa/
Results 1 to 2 of 2
-
09-27-2017 #1
- Join Date
- Apr 2017
- Posts
- 1,774
- جزاك الله خيرا
- 0
- 4,151 Times جزاك الله خيرا in 1,372 Posts
সফরকণিকা : নাফনদীর এপাড়-ওপাড় (পর্ব-০১)
-
The Following 2 Users Say جزاك الله خيرا to কালো পতাকা For This Useful Post:
ফুরসান৪৭ (09-27-2017),tawsif ahmad (09-27-2017)
-
09-27-2017 #2
- Join Date
- Sep 2017
- Posts
- 97
- جزاك الله خيرا
- 435
- 76 Times جزاك الله خيرا in 49 Posts
jazakallah
Similar Threads
-
এরা বড় পীর, বড় বুযুর্গ. নাকি ফাসেক এবং আহবার ও রুহবান ?
By tamim rayhan in forum মানহাযReplies: 5Last Post: 05-28-2019, 04:56 AM -
মুরতাদদের আস্ফালন, is এর তাড়াহুড়াঃ বিশ্লেষণ ও প্রস্তাবনা
By Abu Khubaib in forum মানহাযReplies: 20Last Post: 05-19-2017, 09:53 PM -
বাল্ক এ ১০ তালেবান যোদ্ধার ৮ ঘণ্টার লড়াইয়ে অন্তত ৫০০ সেনা নিহত ও আরও বহু আহত
By HIND_AQSA in forum খোরাসানReplies: 6Last Post: 05-02-2017, 09:49 AM -
১৪-ই সফর/ ১৫-ই নভেম্বর, আজ ১৩০ তম দিনে গড়ালো কাশ্মীরী মুসলিমদের দখলদার হিন্দুদের কবল থেকে আযাদী আন্দোলন।
By Abdullah Ibnu Usamah in forum উম্মাহ সংবাদReplies: 11Last Post: 11-15-2016, 05:14 PM -
৯-ই সফর/ ১০-ই নভেম্বর, আজ ১২৬ তম দিনে গড়ালো কাশ্মীরী মুসলিমদের দখলদার হিন্দুদের কবল থেকে আযাদী আন্দোলন।
By Abdullah Ibnu Usamah in forum উম্মাহ সংবাদReplies: 5Last Post: 11-10-2016, 08:06 AM