Announcement

Collapse
No announcement yet.

ওসমানি খেলাফতের শেষ সময়গুলো

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ওসমানি খেলাফতের শেষ সময়গুলো

    ওসমানি খেলাফতের শেষ সময়গুলো

    ইসলামপন্থী ও ইসলামবিরোধীদের এই দ্বন্দ্ব এই আজই শুরু হয়েছে এমন নয়; বরং বেশি পেছনে না গিয়ে হলেও বলা যায়, ওসমানি খেলাফতের শেষ সময়গুলোতে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিল । বিংশ শতাব্দীর শুরুটা ছিল ইসলামী বিশ্বের অসহায়ত্ব ও অধঃপতনের পরিসমাপ্তি । ইসলামী বিশ্বের পতনের পাশাপাশি মুসলমানদের মাঝে হতাশা, আত্নবিশ্বাস ও অনৈতিকতাও তুঙ্গে উঠে গিয়েছিল । এই সময়টাকে মুসলমানদের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার মোক্ষম সুযোগ মনে করল । তাঁদের হৃদয়মাঝে লুকিয়ে থাকা কপটতা, ইসলামবিদ্বেষ ও ইসলামবিরোধিতা দঃসাহসী হয়ে উঠল । ইসলাম বিরোধীতার আগুনকে শীতল করার জন্য তাঁদের কাছে বড় বড় দলীল ও অনেক অনেক কথা ছিল । তারা অতি আনায়াসে নিজের অযোগ্যতা, কাপুরুষতা ও আত্নমর্যাদাহীনতা ও বেইমানীর সব আবর্জনা ইসলাম ও ইসলামী রষ্ট্রব্যবস্থার মাথায় রাখল । ইউরোপ ও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ডিগ্রী নিয়ে আসা লোকেরা ইসলাম ও ইসলামী আইনের বিরুদ্ধে নতুন নতুন স্লোগান তুলতে ও প্রমান উপস্থাপন করতে শুরু করে দিল । এবং ইহুদীদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের বিকৃত ইসলামকে মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার মিশন নিয়ে মাঠে নামল । কিন্তু তাঁদের মোকাবেলায় ইসলামপন্থীদের প্রতিরোধ ছিল খুবই দূর্বল । সর্বোপরি ইসলামী বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি ছিল হতাশাজনক । ফলে ইসলামবিরোধীরা মনে করল, এবার মুসলিম বিশ্বে আমাদের উপস্থাপিত ইসলাম চলবে । এই ইসলামে মুক্তচিন্তা, স্বাধীনতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা ধারার শাসন বাস্তবায়িতে হবে । এর জন্য ইহুদীরা অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করল, যা কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামী বিশ্বের ইতিহাসের কপালে কলঙ্কতিলক হয়ে থাকবে । এই ধারার প্রধান পুরুষ ছিল আতার্তুক মোস্তাফা কামাল পাশা । ইসলামী বিশ্ব, বিশেষ করে তুরস্কে তখন গোপন ইহুদী আন্দোলন 'ফ্রিমেনস'- এর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ফলে আতার্তুকের সামনে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না ।

    গায়ের বলে, শক্তির জোরে ইসলামবিরোধীরা এই নতুন ইসলামকে পরিচিত করাতে চাইল, যা কিনা অধিকাংশেই ইহুদীদের বিকৃত ধর্মের সাথে মিল খায় । তাঁদের এই 'নতুন ইসলামের' ভিত্তি তৈরি করা হলো জৈবিক-কামনা বাসনার উপর । মনের চাহিদাগুলো তাঁদের জন্য দলিল, তাঁদের মন তাঁদের মুফতি, মদের নেশায় বুঁদ অবস্থায় তাঁদের মুখনিঃসৃত শব্দমালা তাঁদের জন্য শরীয়তের স্থান দখল করে নিয়েছিল ।

    এই তথাকথিত মধ্যপন্থী ও মুক্তমনা লোকগুলোর সহনশক্তি ও কট্টরপন্থার অবস্থা ছিল এই যে তাঁদের নামাজ সহ্য হলো না । তাঁদের কানগুলো আরবি ভাষায় আজান শোনা বরদাশত করতে পারল না । আরবিলিপি তাঁদের মনে আগুন ধরিয়ে দিল ।

    এই দ্বন্দ্ব সংঘাতের বয়স আজ একশ বছর হতে চলল । এখনো সেই স্লোগান, সেই ধরন, সেই একই ধারায় প্রমাণ উপস্থাপন । সবই আগের মতো । সেই ফেরাউনি চরিত্র । নিজের কথা মানানোর জন্য , নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য, সেই নিপীরড়ন, সেই জেল-জুলুম । যে তাঁদের বিরোধীতা করছে, কুরআন সুন্নাহর মাধ্যমে তাঁদের উত্তর দলিল পেশ করছে, তাকে আজীবনের জন্য গুম করে ফেলা হচ্ছে । নিজের থিওরি চাপিয়ে দিতে কারাগারে আটক করে এমন নির্যাতন চালানো হচ্ছে শয়তান নাচতে শুরু করে । এরা আজও মনে করে জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে নিজেদের গড়া 'নতুন ইসলাম' মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম হবে ।

    অবশ্য তখন ও এখনের মধ্যে কিছু পার্থক্যও আছে । ঊনবিংশ শতাব্দীর সূর্য অস্তমিত হলো তো ইসলামপন্থীদের মান-মর্যাদাও সঙ্গে করে নিয়ে ডুবল । তারপর যখন বিংশ শতাব্দীর সূর্য উদিত হলো, তখন সে ইসলামবিরোধীদের জয়ের সুবার্তা নিয়ে উদিত হলো । ইসলামপন্থীদের আশার ভোরের পথে দীর্ঘ একটা কালো রাত অন্তরায় হয়ে গেল, যা কিনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েই চলল ।

    কিন্তু একটি রাত যত দীর্ঘ হোক না কেন, একসময় তাকে পোহাতেই হয় এবং ভোরের আলো ফুটতেই হয় । বিংশ শতাব্দীর সূর্য যেভাবে ইসলামবিরোধী ও ইসলামের শত্রুদের জন্য নতুন একটা সকাল নিয়ে উদিত হয়েছিল, তেমনি একাবিংশ শতব্দীর সূর্য ইসলামপন্থীদের জন্য অনুরূপ একটি সকাল নিয়ে আত্নপ্রকাশ করল যে স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন লোকেরাও স্পষ্ট দেখল, আশার ভোর উদিত হয়ে গেছে । ঊনবিংশ শতাব্দীর তিরোহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের সর্বশেষ আশাটিও( ১৭৯৯ সালে টিপু সুলতান শহীদ (রহঃ) এর শাহাদাতের মাধ্যমে) নিজের সঙ্গে করে নিয়ে গেল । পক্ষান্তরে বিংশ শতাব্দীর অবসানের সঙ্গে সঙ্গে ইসলামবিরোধীদের (আফগান জিহাদ ও আফগানিস্তানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে) মুখে কুলুপ এঁটে গেল এবং এই উম্মতের অন্তরে আশার ভোরের নতুন কিরণ জেগে উঠল । একাবিংশ শতব্দী বিংশ শতাব্দী নয় । ওখানে একটা পরাজিত, পরিশ্রান্ত ও আশাহত জাতি ছিল । এখানে আছে বিজয়ী, তরতাজা ও নানা আশার সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া একটি জাতি । ওখানে ইসলামবিরোধীরা ও জাতির বিবেকহীন বিশ্বাসঘাতকরা যা চেয়েছিল, করেছিল । মুসলিম বিশ্বকে ইসলামের শত্রুদের কলোনীতে পরিণত করে দিয়েছিল এবং মুসলিম বিশ্বের মর্যাদা ও প্রতাপকে ইহুদী দাসীদের চুলের বেণিতে বেঁধে দিয়েছিল যে জিজ্ঞাস করার কেউ ছিল না । কিন্তু এখানে তেমন হতে পারছে না ।

    এখন যদি কোনো দিন আমাদের ঘরে চুলায় আগুন না জ্বলে, তাহলে রূটি ঘাতকদেরও কপালে জোটে না । শোকের মাতম যদি আমাদের ঘরগুলোতে হয়, তাহলে তাঁদের ঘরেও আমরা উতসব হতে দিই না । আমাদের বাড়িঘর যদি অগ্নিদগ্ধ হয়, তাহলে যারা আমাদের ঘরে অগ্নি সংযোগ ঘটায়, তাদেরও ঘর ভস্মীভূত হয় । আমরা যদি বিচলিত হই, বিমর্ষ হই, তাহলে তাদেরও শান্তিতে থাকতে দিই না । তুষারকবলিত রাতে আমরা যদি ঘুমোতে না পারি, তাহলে নিদ্রা তাদের থেকেও বহু দূরে অবস্থান করে । আমরা যদি বাস্তুহারা, ভিটেমাটি হারা হয়ে থাকি, তাহলে আপন ঘর-বাড়ি, স্ত্রী-সন্তানদের দর্শন তাদেরও নসিব হয় না । হিসাব এখন দুই তরফা চলছে । কখনো তারা আগে, আমরা পেছনে, কখনোবা আমরা আগে, তারা পেছনে । আর আমরা ইনশা আল্লহ তাঁদের ধাওয়া করতেই থাকব । অবশেষে আমরাই সফল হব । কারণ আমরা আমাদের রবের কাছে এমন শক্তি ও সাহায্যের আশা রাখি, যা কাফেরদের কপালে জুটবার মতো নয় ।

    পৃথিবীর পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি বোঝা জরুরি । ইসলামের শান ও মর্যাদার সূর্য উদিত হয়েছে । ভারত-আমেরিকার চামচিকাগুলো সূর্যকে মন্দ বলায় তাতে গ্রহন লাগবে না।

    সংগ্রহঃ বই- বড়দের স্মরণে, মাওলানা আসেম ওমর ।

  • #2
    যাযাকাল্লাহু খাইরান

    Comment

    Working...
    X