Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলামে খলিফা নির্বাচনের ত্বরীকা- একটি সংশয় ও নিরসন!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলামে খলিফা নির্বাচনের ত্বরীকা- একটি সংশয় ও নিরসন!





    ইসলামে
    খলিফা নির্বাচনের ত্বরীকা-
    একটি সংশয় ও নিরসন!








    এক ভাই পোস্ট দিয়েছেন, ইসলামে খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে এক জনের সংশয় দেখা দিয়েছে। তার কাছে মনে হচ্ছে- আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কোন শূরা ছাড়াই নির্বাচন করা হয়েছে। আর উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজেই নির্বাচন করে গিয়েছেন, যা স্বৈরতন্ত্রের মতো দেখাচ্ছে।
    এই সংশয় নিরসন কল্পেই আমার এ লেখা।

    ইসলামে খলিফা নির্বাচনের ত্বরীকা
    ইসলামে খলিফা নির্বাচনের ত্বরীকা কি? এক কথায় এর উত্তর দিতে গেলে বলতে হবে- (উম্মাহর রেজা তথা সন্তুষ্টি)। উম্মাহ যাকে খলিফা নির্ধারণ করে নেবে তিনিই খলিফা হবেন, অন্য কেউ নন। তবে উম্মাহর পক্ষ থেকে খলিফা নির্বাচনের এই দায়িত্ব পালন করবেন উম্মাহর ‘আহলে হল্ ওয়াল আকদ’ ব্যক্তিগণ। ‘আহলে হল্ ওয়াল আকদ’ হচ্ছেন- উম্মাহর ঐসকল আলেম উলামা, আমীর-উমারা, গভর্নর, সৈন্যপ্রধান এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ও গণ্য-মান্য ব্যক্তিবর্গ, যাদেরকে উম্মাহ মেনে চলে। যাদের সন্তুষ্টি উম্মাহর সন্তুষ্টি বলে গণ্য হয়। যারা কাউকে খলিফা হিসেবে বাইয়াত দিলে উম্মাহর সকলে কিংবা অধিকাংশ ব্যক্তি তাকে খলিফা হিসেবে মেনে নেবে। যারা কাউকে খলিফা হিসেবে বাইয়াত দিলে উক্ত খলিফার এ পরিমাণ সমর্থক হয়ে যাবে এবং এ পরিমাণ শক্তি-সামর্থ্য অর্জন হয়ে যাবে যে, তখন উম্মাহর কোন একটা অংশ খলিফার বিরোধিতায় চলে গেলেও তারা খলিফাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে সমর্থ্য হবে না।


    মোটকথা- খলিফা হওয়ার জন্য এ পরিমাণ শক্তি সামর্থ্য লাগবে যে, তিনি তার বিরোধিদের দমন করতে পারবেন, হুদুদ-কেসাস কায়েম করতে পারবেন, চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসী ইত্যাদি বিশৃখলা ও নাশকতাকারীদের দমন করতে পারবেন, লোকদের মাঝে শরীয়তের বিধান কায়েম করতে পারবেন, কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারবেন; যারা সন্তুষ্ট চিত্তে শরীয়ত মানতে প্রস্তত নয় তাদেরকে শক্তি ও বল প্রয়োগে জোরপূর্বক শরীয়ত মানতে বাধ্য করতে পারবেন। খলিফা হওয়ার জন্য এ পরিমাণ শক্তি-সামর্থ্য, সমর্থক ও সৈন্যবাহিনী আবশ্যক। আর এই পরিমাণ সমর্থক, সামর্থ্য ও সৈন্যবাহিনী উম্মাহর যে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বাইয়াতের দ্বারা অর্জন হবে- তারাই হলেন আহলে হল ও ওয়াল আকদ। সাধারণভাবে বলতে গেলে এঁরা উম্মাহর- নেতৃত্বস্থানীয় আলেম উলামা, আমীর-উমারা, গভর্নর, সেনাপ্রধান এবং সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ও গণ্য-মান্য ব্যক্তিবর্গ যাদেরকে উম্মাহ মেনে চলে এবং তারা যে সিদ্ধান্ত দেন উম্মাহ তা মেনে নেয়।




    বি.দ্র.

    শুধু মুত্তাকী, পরহেযগার, বিশিষ্ট ও স্বনামধন্য আলেম হলেই বা গণ্য মান্য কেউ হলেই আহলে হল ওয়াল আকদের মধ্যে গণ্য হয়ে যাবেন না। আহলে হল ওয়াল আকদ হওয়ার জন্য এই বৈশিষ্ট্যটি অত্যাবশ্যক যে, উম্মাহ তার কথা মেনে চলে। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সমাজের লোক তা মেনে নেবে। তার বাইয়াতের দ্বারা বাইয়াতকৃত ব্যক্তির শক্তি ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
    এ রকম না হলে আহলে হল ওয়াল আকদ হবেন না।

    যদি এমন কতক ব্যক্তি বাইয়াত দেয়, যাদের বাইয়াতের দ্বারা বাইকৃত ব্যক্তির উল্লিখিত পরিমাণ সামর্থ্য ও সমর্থক সৃষ্টি হয়নি, তাহলে উক্ত ব্যক্তি খলিফা হবে না।


    দ্বিতীয়ত: আহলে হল ওয়াল আকদ ব্যক্তিবর্গের পরস্পরে মতবিরোধ দেখা দিলে তখন তাদের অধিকাংশ যাকে বাইয়াত দেবেন তিনিই খলিফা হবেন। বাকি সংখ্যক বিরোধিদের বিরোধিতার কারণে খলিফা হওয়াতে কোন সমস্যা হবে না। কেননা, তাদের অধিকাংশের বাইয়াতের দ্বারা এ পরিমাণ শক্তি সামর্থ্য অর্জন হয়ে যাবে যে, বাকিদের বিরোধিতায় তার ক্ষমতার মধ্যে কোন প্রভাব পড়বে না।



    শূরা আবশ্যক
    আহলে হল ওয়াল আকদ ব্যক্তিবর্গের অবশ্য কর্তব্য- কাউকে বাইয়াত দেয়ার আগে অন্যান্য আহলে হল ওয়াল আকদ ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করে নেয়া। পরামর্শের পর তাদের সকলে কিংবা অধিকাংশ যাকে বাইয়াত দেবেন তিনিই খলিফা হবেন। পরামর্শ ব্যতীত শুধু স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তি মিলে কাউকে বাইয়াত দেয়া জায়েয নয়। যদি কেউ এ ধরণের বাইয়াত দেয়, তাহলে শরীয়তে এই বাইয়াতের কোন মূল্য নেই। এ বাইয়াতের দ্বারা কেউ খলিফা হবে না, বরং বাইয়াত দেয়ার কারণে তাদেরকে শাস্তির সম্মুখিন করা হবে। বিশেষ পরিস্থিতি হলে তাদেরকে হত্যা পর্যন্ত করার বিধান আছে।




    খলিফার অসিয়ত
    বর্তমান খলিফা যদি তার পর কে খলিফা হবে- তার নাম ঘোষণা করে যান, তাহলে তার এ ঘোষণা একটা প্রস্তাবরূপে গৃহীত হবে। পরবর্তীতে উম্মাহ উক্ত ঘোষিত ব্যক্তিকে বাইয়াত দিলে তিনি খলিফা হবেন, অন্যথায় নয়।



    উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা আমার তিনটি বিষয় পরিষ্কার করা উদ্দেশ্য-
    ১. খলিফা নির্বাচন করবেন উম্মাহর আহলে হল ওয়াল আকদ ব্যক্তিবর্গ। সাধারণ ব্যক্তিদের রায় এখানে ধর্তব্য নয়।

    ২. আহলে হল্ ওয়াল আকদের জন্য আবশ্যক-বাইয়াতের আগে পরামর্শ করে নেয়া। পরামর্শ ব্যতীত কাউকে বাইয়াত দেয়া জায়েয নয় এবং এ বাইয়াতের কোন মূল্য নেই।

    ৩. খলিফার অসিয়ত একটা প্রস্তাবের মর্যাদার উর্ধ্বে কিছু নয়।

    ***





    সংশয়

    উপরোক্ত আলোচনাটি আমি করেছি ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য। ভাইয়ের প্রশ্ন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয়কে ঘিরে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে উভয়ের নির্বাচন পদ্ধতিটাই ঝামেলা মনে হচ্ছে । কারণ-
    আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ব্যাপক পরামর্শের ভিত্তিতে বাইয়াত দেয়া হয়নি। বরং তখন সাক্বিফায়ে বনি সায়িদাতে যে সকল সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুম উপস্থিত ছিলেন তারাই তাঁকে বাইয়াত দিয়েছেন প্রথমত। বাকি সাহাবী ও অন্যান্য মুসলমানের সাথে পরামর্শ করে তারপর বাইয়াত দেয়া হয়নি। কাজেই এখানে আপত্তি আসছে- শূরা ছাড়াই তাঁকে খলিফা নির্বাচন করা হল।

    আর হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে স্বয়ং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর ওফাতের পূর্বে নির্বাচন করে গেছেন। এখানে আপত্তি আসছে যে, তা স্বৈরতন্ত্রের মত হয়ে গেল।



    উত্তর:
    আসলে পূর্ণ ইতিহাস না জানা থাকার কারণে আপত্তি সৃষ্টি হয়েছে। উভয়ের নির্বাচনের বিস্তারিত ইতিহাস জানা থাকলে আর আপত্তি হতো না। আমি সংক্ষেপে বিষয়টা বুঝাতে চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ-



    আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাইয়াত
    সাহাবায়ে কেরামের কাছে সুস্পষ্ট ও স্বীকৃত ছিল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হবেন। তা বিভিন্ন কারণে:
    - রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিশেষ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব।
    - বিভিন্ন হাদিসের সুষ্পষ্ট ভাষ্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হবেন ।
    - বিভিন্ন হাদিসের ইশারা।
    - রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পূর্বে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দিয়ে নামাযের ইমামতি করানো।
    - নবীগণের পর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু।


    এসব কারণে সাহাবায়ে কেরামের নিকট স্পষ্ট ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহ আনহু খলিফা হবেন। কাজেই তারা তাকে খলিফা হিসেবে মেনে নিতে মানসকিভাবে আগে থেকে প্রস্তুত হয়েই ছিলেন।


    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর আনসারী সাহাবীগণ সাক্বিফায়ে বনি সায়িদাতে জড়ো পরামর্শের জন্য যে, এখন আমীর কে হবেন? খবর পেয়ে মুহাজির সাহাবাগণও সেখানে উপস্থিত হন।


    আনসারী সাহাবীদের জানা ছিল না যে, উম্মাহর খলিফা একাধিক হতে পারে না। তাই তারা প্রস্তাব করেন, আমরা আনসারদের থেকে একজন আমীর হোক আর আপনাদের– অর্থাৎ মুহাজিরদের- থেকে একজন আমীর হোক। আনসারগণ তাদের মধ্য থেকে হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আমীর নির্ধারণ করতে প্রস্তুত ছিলেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস বর্ণনা করে জানান যে, খলিফা একাধিক হতে পারে না এবং খলিফা কুরাইশি হওয়া শর্ত। আনসাররা যেহেতু কুরাইশি নন তাই তারা খলিফা হতে পারবেন না। তাই মুহাজিরদের থেকেই খলিফা বানাতে হবে।


    এমতাবস্থায় আশঙ্কা ছিল, যদি আনসারদের কিছু অবুঝ লোক হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বাইয়াত দিয়ে দেন, তাহলে পরবর্তীতে তাকে অপসারণ করে মুহাজিরদের কাউকে খলিফা নির্ধারণ করতে গেলে একটা ফিতনা দেখে দেবে। উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট হবে। এই আশঙ্কায় হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আগে বাগেই হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, আপনার হস্ত প্রসারিত করুন, আমরা আপনার হাতে বাইয়াত হব। এই বলে তিনি এক রকম জোর করেই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাইয়াত দিয়ে দেন। দেখাদেখি উপস্থিত বাকি সাহাবায়ে কেরামও তাকে বাইয়াত দিয়ে দেন। কারণ, আগেই বলে এসেছি- আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খলিফা বানাতে সাহাবায়ে কেরাম আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন।
    এই বাইয়াতের পরের দিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু মিম্বরে আরোহণ করেন। বিভিন্ন প্রদেশ থেকে নেতৃত্বস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম মদীনায় আগমন করেন। তারা তার হাতে বাইয়াত দেন। এভাবে তিনি খলিফা নির্বাচিত হন।



    সংশয়
    বাহ্যিকভাবে এখানে সংশয় সৃষ্টি হয়- উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সহ আরো যে ক’জন সাহাবী সর্বপ্রথম বাইয়াত দেন, তারা তো কোন পরামর্শ ছাড়াই বাইয়াত দিয়েছেন। অথচ আমি পূর্বে বলে এসেছি, পরামর্শ ছাড়া কাউকে বাইয়াত দিয়ে দেয়া জায়েয নয় এবং এ ধরণের বাইয়াতের দ্বারা কেউ খলিফাও হবে না। তাহলে এখানে-

    - উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কিভাবে বাইয়াত দিলেন?

    - এ বাইয়াতের দ্বারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা কিভাবে হলেন?



    নিরসন
    প্রথম কথা হল- উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আরো যারা প্রথমে বাইয়াত দিয়েছেন, তাদের এই বাইয়াতের দ্বারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হননি, বরং খলিফা হয়েছেন যখন সাকিফায়ে বনি সায়িদার বাকি সাহাবায়ে কেরাম এবং পরের দিন মিম্বরে নেতৃত্বস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম বাইয়াত দিয়েছেন- তখন। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
    أنه متى صار إماما، فذلك بمبايعة أهل القدرة له ... ولو قدر أن عمر وطائفة معه بايعوه، وامتنع سائر الصحابة عن البيعة، لم يصر إماما بذلك، وإنما صار إماما بمبايعة جمهور الصحابة، الذين هم أهل القدرة والشوكة. اهـ

    “তিনি কখন ইমাম হয়েছেন? তা হয়েছে যখন ক্ষমতাশীলগণ তাকে বাইয়াত দিয়েছেন। … যদি এমন হতো যে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং তার সাথে আরোও কতকে তাকে বাইয়াত দিয়েছেন, কিন্তু বাকি সাহাবায়ে কেরাম বাইয়াত থেকে বিরত থেকেছেন, তাহলে তিনি ইমাম হতেন না। জুমহুরে সাহাবা, যারা ক্ষমতা ও দাপটের অধিকারী, তাদের বাইয়াতের পরই কেবল তিনি ইমাম হয়েছেন।” (মিনহাজুস সুন্নাহ্: ১/৫৩০)


    দ্বিতীয়ত: উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যে পরামর্শ ছাড়াই বাইয়াত দিয়ে দিলেন তা কিভাবে জায়েয হল?

    এর উত্তর: প্রথমত সাহাবায়ে কেরাম আগে থেকেই জানতেন এবং তারা প্রস্তুত হয়েই ছিলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হবেন। এ কারণেই উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বাইয়াত দেয়ার পর কেউ তাতে আপত্তি জানাননি, বরং স্বতস্ফূর্তভাবে সকলে বাইয়াত দিয়ে দিয়েছেন।


    দ্বিতীয়ত: আনসারিদের কোন কোন অবুঝ লোক সা’দ ইবনে উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বাইয়াত দিয়ে দিলে একটা ফিতনা সংঘটিত হওয়ার এবং মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য তিনি আগে বাগে বাইয়াত দিয়ে দিয়েছেন। তার এ বাইয়াতের দ্বারা কোন ফিতনা তো হয়-ই-নি বরং ফিতনা আগমনের পূর্বেই তা দূর হয়েছে। তাই তা জায়েয হয়েছে। এমন বিশেষ পরিস্তিতিতে এ বাইয়াতই দরকার ছিল।


    এ থেকে এই ফলাফল বের করা যাবে না যে, পরামর্শ ছাড়াই যে কেউ যে কাউকে বাইয়াত দিয়ে দিতে পারবে এবং এই বাইয়াতের দ্বারা উক্ত ব্যক্তি খলিফা হয়ে যাবে- যেমনটা আবু বকর বাগদাদির বেলায় ঘটেছে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বয়ং নিজেই এ ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি শুনিয়ে গেছেন। এক ব্যক্তি বললো, উমরের ওফাতের পর আমি অমুকের হাতে বাইয়াত হয়ে যাবো। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এ কথা পৌঁছলে তিনি রাগান্বিত হয়ে গেলেন। মদীনায় এসে সাহাবায়ে কেরামকে ডেকে মিম্বরে আরোহণ করে বললেন-

    ((بلغني أن قائلا منكم يقول والله لو قد مات عمر بايعت فلانا فلا يغترن امرؤ أن يقول إنما كانت بيعة أبي بكر فلتة وتمت ألا وإنها قد كانت كذلك ولكن الله وقى شرها وليس منكم من تقطع الأعناق إليه مثل أبي بكر من بايع رجلا عن غير مشورة من المسلمين فلايبايع هو ولا الذي بايعه تغرة أن يقتلا))

    “আমার কাছে খবর পৌঁছেছে যে, তোমাদের এক ব্যক্তি বলছে- ‘আল্লাহর শপথ, উমর মারা গেলে আমি অমুকের হাতে বাইয়াত হয়ে যাব।’ সাবধান! কোন ব্যক্তি যেন ধোঁকায় পড়ে বলে না যে, ‘আবু বকরের বাইয়াত তো পরামর্শ ছাড়াই হয়েছিল, এরপর তা পূর্ণতায় পৌঁছেছে।’ শুনে রাখ! আবু বকরের বাইয়াত এমনভাবেই হয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার ফলে কোন অনিষ্ট সংঘটিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, মানুষ আবু বকরের আনুগত্যের দিকে যেভাবে ধাবিত হয়েছে, তার দিকেও তেমনই ধাবিত হবে। যে ব্যক্তি মুসলমানদের পরামর্শ ব্যতীত কারো হাতে বাইয়াত হবে, তাহলে তাকেও বাইয়াত দেয়া যাবে না, সে যার হাতে বাইয়াত দিয়েছে তাকেও না। কেননা, আশঙ্কা আছে, তাদের উভয়কে হত্যা করে দেয়া হবে।” (সহীহ বুখারি: ৬৮৩০)




    উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাইয়াত
    আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ওফাতের পূর্বে বিশিষ্ট সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন, তার ওফাতের পর কে খলিফা হতে পারে? তারা রায় দেন- উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খলিফা হবেন। তিনিই আপনার পর সবচেয়ে যোগ্য মানুষ। এভাবে ব্যাপকভাবে পরামর্শ করার পর তিনি অসিয়ত করে যান, তার ওফাতের পর যেন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খলিফা বানানো হয়।

    আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরাম উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাইয়াত হয়ে যান। এভাবে তিনি খলিফা হন।

    এখানে প্রশ্ন হল- তিনি কখন খলিফা হয়েছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর অসিয়তের দ্বারা? না’কি পরে যখন সাহাবায়ে কেরাম তার হাতে খেলাফতের বাইয়াত দিয়েছেন তখন?

    উত্তর: বাইয়াত দেয়ার পর। শুধু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাবের দ্বারা তিনি খলিফা হননি। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলন,
    وكذلك عمر لما عهد إليه أبو بكر، إنما صار إماما لما بايعوه وأطاعوه، ولو قدر أنهم لم ينفذوا عهد أبي بكر ولم يبايعوه لم يصر إماما. اهـ

    “তেমনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নির্বাচন করে গেলেন, তখন তিনি খলিফা হয়েছন যখন সাহাবায়ে কেরাম তার হাতে বাইয়াত হয়েছেন এবং তার আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছেন। যদি তারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর অসিয়ত বাস্তবায়ন না করতেন, তাহলে তিনি- উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু- ইমাম হতেন না।” (মিনহাজুস সুন্নাহ্: ১/৫৩০)


    এখানে স্বৈরতন্ত্রের কোন নাম গন্ধও নেই, বরং সাহাবায়ে কেরাম স্বেচ্ছায় উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খলিফা নির্বাচন করেছেন।




    আশাকরি বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সময় সুযোগ থাকলে কুরআন, হাদিস ও ইতিহাস থেকে বিস্তারিত আলোচনা করতাম। যতটুকু বলেছি- আশাকরি মূল কথাটুকু এসে গেছে। যদি কেউ বিস্তারিত আলোচনা করে দেন, তাহলে বড়ই ভাল হয়।



    এ ব্যাপারে আমি ভাইদের দু’টি কিতাব পড়ার নসীহত করবো-
    - الوجيز في فقه الخلافة (د\صلاح الصاوي)

    - مسائل في فقه الخلافة (الشيخ أبو الحسن رشيد البليدي)




    والله سبحانه وتعالى أعلم. وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه وسلم



    pdf: https://my.pcloud.com/publink/show?c...m7fsyD50LYpxHy





    Last edited by ইলম ও জিহাদ; 01-04-2018, 06:18 PM.

  • #2
    ইলম হলো আলো। আর এই আলো ছাড়া আমরা পথ চলতে গেলে জিহাদের এই পথে প্রতি পদে পদে হোচট খাবো।
    তাই আমাদের সকলের উচিত ইলম অর্জনে গাফিলতি না করা।

    যেমন আবু বকর আল বাগদাদির কথাই বলি। যখন তার বিষয়টা আমার সামনে আসে আমি তখন কোনো সিদ্ধান্তি নিতে পারছিলাম না। কিন্তু যখন শায়খ আসিম আল মাকদিসি থেকে তার ব্যপারে স্পষ্ট করে ইলমের আলো আমাদের নিকট পৌছে গেলো তখন আমার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হলো।

    তাই ভাইয়েরা ইলম অর্জনের ব্যাপারে কোনো গাফিলতি নয়। অনেকেই হয়তো আছেন। বেশি লম্বা জ্ঞান গর্ভ আলোচনা পড়তে ভালো লাগে না। তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, আলো ছাড়া পথ চলা সম্ভব নয়।

    Comment


    • #3
      জাজাকাল্লাহু খাইরান,আল্লাহ আপনাকে কবুল করুক,আমীন,আমার উত্তর পেয়েছি
      "সিদ্ধান্ত গ্রহণে একবার কাপুরুষতা ময়দানে পঞ্চাশবার কাপুরুষতার চেয়েও মারাত্মক" (মাকদিসী)

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ

        Comment


        • #5
          আখিঁ ফিল্লাহ, জাযাকাল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্ব দিয়েই পড়তে হয়। দেখা গেছে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলোতে না পড়ে ও না কমেন্ট করে গুরুত্বহীন করে ফেলি। আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

          Comment


          • #6
            জাযাকাল্লাহ আখি, আল্লাহ আপনার আরো বেশি করে ইলমি খিদমাত করার তাওফীক্ব দান করুন।

            Comment


            • #7
              জাযাকাল্লাহু খায়ের

              Comment


              • #8
                জাযাকাল্লাহ

                Comment


                • #9
                  জাযাকাল্লাহ।
                  ফিরে এসো দ্বীনের পথে।

                  Comment


                  • #10
                    মাশাআল্লাহ, বিস্তারিত, টু দি পয়েন্টে উত্তর।
                    আল্লাহ আপনার ইলমী শক্তি ও লিখার শক্তি আরো বাড়িয়ে উম্মাহ্র খেদমতে জারি রাখুন। আমীন।
                    কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

                    Comment


                    • #11
                      মাশা আল্লাহ, খুব সুন্দরভাবে উত্তর প্রদান করা হয়েছে।
                      আল্লাহ তা‘আলা আপনার ইলমী শক্তি ও লিখার শক্তি আরো বাড়িয়ে উম্মাহর খেদমতে নিয়োজিত রাখুন। আমীন।
                      “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

                      Comment


                      • #12
                        আলহামদুলিল্লাহ, পোস্টটি পড়ে উপকৃত হলাম। জাযাকাল্লাহ
                        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                        Comment

                        Working...
                        X