Announcement

Collapse
No announcement yet.

মুকুটহীন সম্রাট : এক মহামনীষীর গল্প ।

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মুকুটহীন সম্রাট : এক মহামনীষীর গল্প ।

    মুকুটহীন সম্রাট : এক মহামনীষীর গল্প ।


    [b]الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على رسوله النبي الأمين وعلي آله وصحبه أجمعين أما بعد، فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم

    وَكًلًّا نَقُصُْ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فؤٰدَكَ وجاءك في هذه الحق وموعظة وذكري للمؤمنين(سورة الهود :١٢٠)

    لقد كان في قصصهم عبرة لأولي الألباب(سورة يوسف :١١١)

    وقال تعالی: فاقصص القصص لعلهم يتفكرون
    ( الأعراف :176[b]



    আত্মার ইসলাহ ও তারবিয়াতে ঘটনাবলীর বিরাট প্রভাব রয়েছে। আর এই কারণে আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মানুষের সামনে ঘটনাবলী বর্ণনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআন কারীমে ঘটনার বিভিন্ন উপকারিতাও বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন উপরোক্ত আয়াতসমূহে ছয়টি উপকার উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাবলীর একটি উপকার হলো মানুষ তা মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করে। এই কারণে আমরা আজ এক মহামনীষীর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরবো। সেই মনীষী হলেন, সর্বজন স্বীকৃত শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন সুলতানুল উলামা ঈজ্জুদ্দীন ইবনে আব্দিস সালাম রহিমাহুল্লাহু রহমাতান ওয়াসিআ। আমীন ।

    তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :

    তার নাম আব্দুল আযীয ইবনে আব্দিস সালাম। তিনি ইজ্জুদ্দীন ইবনে আব্দিস সালাম নামে পরিচিত। তিনি শাইখুল ইসলাম উপাধিতেও ভূষিত ছিলেন। তার প্রসিদ্ধ ছাত্র ইবনে দাক্বীকুল ঈদ তাকে সুলতানুল উলামা উপাধি দিয়েছিলেন।

    শাইখের যুগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি :

    শাইখ ৫৭৭ হিজরিতে দামেস্কে জন্ম গ্রহণ করেন। শাইখ কিছু দিন শামে অবস্থান করে মিশর চলে যান। সেখানে বনূ আইয়ুবের শাসন কাল পর্যন্ত অবস্থান করেন।
    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বনূ আইয়ুব এক মজবুত ইসলামী শাসন ছিল। যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহিঃ। কিন্তু পরবর্তী কালে তার শাসন ব্যবস্থা অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ তাদের মাঝে ক্ষমতার লোভ ঢুকে পড়ে। এবং তারা পরস্পরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি তারা একে অপরের বিরুদ্ধে ক্রসেডারদের সাহায্য গ্রহণ করে। ভাই ভাই, আত্মীয় আত্মীয় লড়াই করতে শুরু করে। অবশেষে পরিস্থিতি এ পর্যন্ত গড়ায় যে, তারা একজন মহিলাকে নিজেদের শাসক বানিয়ে নেয়। যা ছিল ইসলামী ইতিহাসে এই প্রথম মহিলা শাসক। এই মহিলার নাম ছিল " শাজারাতুত দার"। সে তার স্বামীর মৃত্যুর পর মানুষের কাছে তা গোপন করে এবং একজনকে নামে মাত্র তার স্থলাভিষিক্ত করে। আর মূল পরিচালনা ছিল তার হাতে। এভাবে সে তিন মাস ক্ষমতায় ছিল। অবশেষে মানুষের বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।
    শাইখের বয়স ৮৩ বছর ছিল। এরই মধ্যে অনেক রাজনৈতিক ঘটনা ঘটে যায়। ৫৮৩ হিজরিতে ক্রুসেডারদের থেকে সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহিঃ বাইতুল মাক্বদিস মুক্ত করে নিয়েছিলেন। এভাবে মিশর ও ফিলিস্তিনের উপর কিছু ক্রুসেড হামলা হয়েছিল। এভাবে তাতারীরা বাগদাদে ইসলামী খেলাফাতের উপর আঘাত হানে, বহু শহর ধ্বংস করে দেয়। তারপর মিশরের বাদশাহ সাইফুদ্দীন কুতুয রহিঃ আইনে জালুতে তাতারদের পরাজিত করেন। এভাবে সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবির মৃত্যুর পর তার সন্তানরা এই মজবুত শাসনকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নেয়। যেমন, মিশর একটি হুকুমত, দামেস্ক একটি হুকুমত, হালাব একটি হুকুমত ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে নেয়। আর প্রত্যেকে একে অপরের চরম শত্রু ছিলেন। একে অপরকে টার্গেট বানাতো। অথচ তাদের ধ্বংস করতে দুই বড় শত্রু ক্রুসেডার ও তাতার প্রস্তুত। এমনকি মিশরের বাদশাহ ইসমাইল আইয়ুবের বিরুদ্ধে ক্রুসেডারদের সাথে সন্ধি করে নেয়। এর বিবরণ সামনে বিস্তারিত আসছে।

    শাইখের বিশেষ গুণ:
    শাইখের বিশেষ একটি গুণ ছিল বীরত্ব ও বাহাদুরি। সাহসিকতা তার অনেক বড় গুণ ছিল। যার কারণে তিনি সত্যকথন, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী। তিনি স্পষ্ট ভাষায় অসৎকর্মের বর্ণনা করতেন। এবং শাসকদের অন্যায় কাজের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করতেন। ولا يخافون لومة لائم (তারা তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় করেনা) এর এক জীবন্ত উদাহরণ ছিলেন।

    অন্যায়-অপকর্মকে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করার কিছু উপকার :

    ১. আলেম যদি সুস্পষ্ট বিরোধিতা করে তাহলে তিনি আল্লাহর কাছে ওযর পেশ করতে পারবেন। কারণ তিনি বলেছেন কিন্তু মানুষ শুনেনি। আর যদি তিনি বর্ণনা না করেন তাহলে তাকে মানুষ চাটুকার মুনাফিক আখ্যা দিবে। এবং আল্লাহর কাছেও ওযর পেশ করতে পারবেন না।
    ২. এর কারণে হয়তো মানুষ অসৎকাজ থেকে বিরত থাকবে। যেমন কিছু সৎ বান্দা أصحاب السبت (শনিবার ওয়ালা) দের বারণ করেছিলেন আর বলেছিলেন, معذرة الي ربكم لعلهم ينتهون ( তোমাদের রবের কাছে ওযর পেশ করার জন্য, আর হয়তো তারা বিরত হবে)।
    ৩. যে সকল আলেম অসৎকাজের বিরোধিতা করেন তারা আল্লাহর নেক বান্দাদের অন্তরে প্রিয় হয়ে ওঠেন। আর দলে দলে মানুষ তাদের কাছে ভিড়তে থাকে। এবং আল্লাহ তা'আলা তাদের এই আয়াতের নমুনা বানিয়ে দেন, ما ينفع الناس فيمكث في الأرض (মানুষের উপকারী জিনিস গুলো যমীনে স্থায়ী হয়)।
    ৪. এতে করে তার দেখাদেখি অন্যরা অসৎকাজে বাঁধা প্রদানে সাহসী হয়ে ওঠে। আর যদি বিরোধিতা না করে তাহলে মানুষ বলতে থাকে, ওনি তো বড় আলেম, তিনি বিরোধিতা না করলে আমরা কেন করবো।
    ৫. এতে করে হক্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ আলেম যদি হক্ব স্পষ্ট না করে তাহলে কীভাবে হক্ব স্পষ্ট হবে। যেমন ইমাম আহমাদ রহিঃ বলেন, হক্ব কখন স্পষ্ট হবে?
    আর এই উপকারিতা বিবেচনা করেই ইমাম ইয ইবনে আব্দিস সালাম সত্যকথনে অগ্রগামী ছিলেন। আর এর জন্য তিনি বহু বিপদাপদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কেউ নিজেকে সত্যবাদী দাবি করবে, সৎকাজের আদেশদাতা ও অসৎকাজের নিষেধ কারী আখ্যা দিবে আর সে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে না এটা হতেই পারে না। যেমন কোনো মুজাহিদ বিপদাপদের মুখোমুখি না হয়ে মুজাহিদ হতে পারে না। তার জন্য সৈনিকের পোশাক উপযুক্ত নয়।

    শাইখের জীবনে সত্যকথনের কিছু দৃষ্টান্ত :
    বাদশাহ সালেহ ইসমাইলের সময়কার ঘটনা। যখন শাইখ দামেস্কে ছিলেন তখন সেখানে বনূ আইয়ুব থেকে সালেহ ইসমাইল বাদশাহ ছিলো। সে শাইখকে জামে বনূ উমাইয়্যার খতীব নিযুক্ত করে। কিছু দিন পরেই বাদশাহ ক্রুসেডারদের সাথে মুসলিমদের কয়েকটি শহরের বিনিময়ে ঐক্য গড়ে। আর এর বিনিময়ে ক্রুসেডাররা তাকে সালেহ আয়ুবের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে। (আইয়ুব ইসমাইলের ভাতিজা ছিলো) এই ঘটনা ৬৩৮ হিজরির যখন ক্রুসেডাররা দামেস্ক ঢুকে পড়ে। দ্বিতীয় কথা হলো, ইসমাইল মিশরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ক্রুসেডারদের দামেস্কে অস্ত্র ক্রয়ের অনুমতি দেয়। শাইখ রহিঃ মিন্বরে দাঁড়িয়ে এই চুক্তির কঠোর বিরোধিতা করেন এবং খোতবা শেষে শাইখ বাদশাহের জন্য নেক দোয়ার পরিবর্তে এই দোয়া করেন,
    اللهم أبرم لهذه الأمة أمراً رشداً يعزّ فيه وليك ويذل فيه عدوك ويؤمر فيه بالمعروف وينهي عن المنكر
    হে আল্লাহ তুমি এই উম্মাহকে সঠিক পথে অবিচল রাখো যাতে করে তোমার বন্ধু সম্মানিত হয় এবং তোমার শত্রু লাঞ্ছিত হয়। যাতে করে সৎকাজের আদেশ অসৎকাজের নিষেধ বাকি থাকে।
    শাইখ মিন্বরে থেকে নামলে বাদশাহ ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠে এবং খতীবের পদ থেকে বরখাস্ত করে জেলখানায় বন্দি করে। শাইখকে বন্দি করার ফলে মুসলিমরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মুসলিমদের বিরোধিতার মুখে শাইখকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু খতীবের পদ থেকে বরখাস্ত করে। শাইখকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, ফিরিঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি বৈধ কি? শাইখ বললেন, তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা হারাম; কারণ তোমাদের জানা আছে তারা এই অস্ত্র ক্রয় করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আরো অনেক উলামায়ে কেরাম বাদশাহ ইসমাইলের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, ইবনে হাজেব রহিঃ। তাকেও জেলখানায় বন্দি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে মুক্তি দেয় কিন্তু নযর বন্দি করে রাখে।( আল বিদায় ওয়ান নিহায়া ১৭:২৫১পৃঃ)
    কিছু দিন পরেই শাইখ বাইতুল মাকদিসের দিকে রওনা করেন। ঘটনাক্রমে বাদশাহ ইসমাইলও সেদিকে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে বাইতুল মাকদিসের কাছে এক খ্রিষ্টান নেতার সাথে সাক্ষাৎ। বাদশাহ তার এক খাস খাদেমকে এই বলে পাঠালেন, শাইখকে গিয়ে বিনয়ের সাথে বলবে, আপনি বাদশাহর কাছে গিয়ে ক্ষমা চান এবং নিজ দায়িত্ব ফিরিয়ে নিন। আর যদি তিনি অস্বীকৃতি জানান তাহলে আমার তাঁবুর পাশে আরেকটি তাঁবুতে তাকে বন্দি করে রাখো। খাদেম শাইখের কাছে এসে বলল, আপনার কাছে কিছু চাই না শুধু আপনি বাদশাহর কাছে চলুন এবং তার হাতে একটি চুমু খাবেন। আর নিজের কাজ শুরু করে দেন। শাইখ রহিঃ তার কথা শুনে মুচকি হেসে বললেন,
    والله ما أرضي أن يقبل الملك يدي فضلا عن أن أقبل يده
    আমি বাদশাহর হাতে চুমু খাবো দূরের কথা বাদশাহ আমার হাতে চুমু খাবে সেটাও আমি চাইনা।
    তিনি আরো বলেন,
    أنا في واد وأنت في واد آخر
    আমি এক উপত্যকায় আর তুমি আরেক উপত্যকায়।
    অর্থাৎ আমার চিন্তা একটি আর তোমার চিন্তা ভিন্নটি। তিনি আরো বলেন,
    الحمد لله الذي عافاني مما ابتلاكم به
    আল্লাহ তা'আলার প্রসংশা যিনি আমাকে সে অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেছেন যাতে তোমরা পতিত হয়েছো।
    অতঃপর সে শাইখকে বন্দি করে রাখে। শাইখ তাঁবুতে আল্লাহর যিকির, ইবাদাতে ও কুরআন তেলাওয়াতে মগ্ন ছিলেন। বাদশাহর তাঁবু থেকে শাইখের তেলাওয়াত শুনা যেত। একদিন এক খ্রিষ্টানের সাথে বাদশাহর সাক্ষাৎ ছিলো। তারা এমন স্থানে আলোচনা করতে বসে যেখান থেকে শাইখের তেলাওয়াত শুনা যেত। একবার বাদশাহ বলল, ঐ যে যার তেলাওয়াত শুনা যাচ্ছে সে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় আলেম। তাকে আমি এই কারণে বন্দি করেছি যে, মিশরের বিরুদ্ধে আমাদের সাথে তোমাদের চুক্তির বিরোধিতা করেছে সে, সে তোমাদের হাতে কিছু শহর হস্তান্তর করার বিরোধিতা করেছে। আমি তাকে খোতবার পদ থেকে বরখাস্ত করেছি। তার জবাবে খ্রিষ্টান বলে,
    لو كان هذا القسيس عندنا لغسلنا رجليه وشربنا مرقته
    যদি এই আলেম আমাদের কাছে থাকতো তাহলে আমরা তার পা ধুয়ে পানি পান করতাম। (তবকাতুশ শাফিয়্যাতুল কুবরা ৮: ২৪৩ পৃঃ)
    ফলে বাদশাহ অনেক লাঞ্ছিত হয়। পরবর্তীতে মিশরীয়রা হামলা তাদের উপর বিজয় লাভ করে। এবং শাইখও মুক্তি লাভ করেন।

    উপরোক্ত ঘটনা থেকে কিছু শিক্ষা :

    মুসলিমদের বিপক্ষে কাফেরদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া অনেক বড় গুনাহ। এর কঠোর বিরোধিতা করা উচিত, যেমন শাইখ ঈজ্জুদ্দীন ও ইবনে হাজেব রহিঃ করেছেন। বর্তমানে মুসলিম নামধারী শাসক গোষ্ঠী মুজাহিদদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে। এবং তারা এর উপর গর্ব করে চলছে।
    এখান থেকে এটাও শিক্ষা যে, এধরনের পরিস্থিতিতে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন বিপদাপদ সহ্য করে নিবেন। বন্দিজীবনকে সহাস্যবদনে বরণ করে নিবেন।
    এ থেকে ইহাও বুঝা যায় যে, যে সকল আলেম এই বালা মুসিবতের মুখোমুখি হন তাঁরা পরবর্তীদের মাঝে আদর্শ হয়ে থাকেন। যেমন শাইখ ঈজ্জুদ্দীনকে আজ শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হয়। (এটাই বাস্তবতা)
    এটাও বুঝে আসে যে, মুসলিম নামধারী শাসক গোষ্ঠী তাদের কুফ্ফার বন্ধুদের খুশি করতে কখনো সত্যবাদী আলেমদের হত্যা করবে, কখনো বন্দি করবে। যেমন শাইখ ঈজ্জুদ্দীনকে বাদশাহ ইসমাইল তার ফিরিঙ্গি বন্ধুদের খুশি করতে গ্রেফতার করে। আজ তো বাংলাদেশের বহু সত্যবাদী আলেম যালিমের জিন্দানখানায় বন্দি। পাকিস্তানে বহু আলেমকে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে।
    এ থেকে এও বুঝা যায় যে, কাফের ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে তাদের বড় বড় পাদ্রী, পোপ, পুরোহিতদের অনেক দাম। আর আমাদের মুসলিম নামধারী শাসক গোষ্ঠীর কাছে তাদের বড় আলেমদের কোনো কদর নেই। যেমনটি বুঝা যাচ্ছে ঐ খ্রিষ্টানের স্বীকৃতি থেকে।
    একবার শামের গভর্নর শাইখের উপর রাগান্বিত হয়ে শাইখের দরস বন্ধ করে দেয় এবং তাকে গৃহবন্দি করে রাখে। তখন সে যুগের একজন বড় ফক্বীহ হানাফী ইমাম জামালুদ্দীন আল হুসাইরী বাদশাহের কাছে গিয়ে বলেন,
    لو كان العز بن عبد السلام في الهند أو في أقصى الدنيا لكان جديرا بك أن تسعي أن يحضر إليك، فإنه شرف لك أن تملك أمة فيها مثل العز بن عبد السلام فينبغي أن تسترضيه

    ইয বিন আব্দিস সালাম যদি হিন্দ কিংবা পৃথিবীর শেষ প্রান্তে থাকতো তাহলে তোমার জন্য উচিত ছিলো তাকে তোমার নিকট আনতে চেষ্টা করা। কেননা তোমার জন্য অনেক বড় মর্যাদার বিষয় যে, তুমি এমন জাতির শাসক যাদের মাঝে রয়েছে ইয বিন আব্দিস সালামের মত ব্যক্তিত্ব রয়েছে। সুতরাং তোমার জন্য উচিত তাকে সন্তুষ্ট করা।
    অতঃপর সে শাইখকে মুক্তি দিয়ে এক সম্মানী পদে তাকে নিযুক্ত করে। এ থেকে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, সত্যবাদী এবং মিথ্যাবাদীদের চিন্তা চেতনার মাঝে বহুত তফাৎ। সত্যবাদী ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর দ্বীনের বিজয় কামনা করে। আল্লাহর দ্বীনের জন্য তারা দুনিয়ার পদমর্যাদা, মানুষের প্রশংসা ও পার্থিব সুখ্যাতি বিসর্জন দেন। বিপরীতে বাতিল পূজারীরা সৃষ্টিকে সন্তুষ্ট করতে, দুনিয়ার তুচ্ছ প্রশংসা কুড়াতে ব্যস্ত। শাইখ ঈজ্জুদ্দীন রহিঃ বলেছিলেন, أنا في واد وأنت في واد آخر( আমি এক মেরুতে আর তুমি অন্য মেরুতে)। اللهم عافني مما ابتلاكم بهএই বাক্যগুলো থেকে শাইখের দুনিয়া বিমুখতা ফুটে ওঠে।

    আরেকটি ঘটনা :

    মিশরের বাদশাহ আইয়ুবের ঘটনা। শাইখ মিশর গমন করলে বাদশাহ তাকে শুভ সংবর্ধনা জানায় এবং উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত করে। বাদশাহ আইয়ুব অত্যন্ত সৎ লোক ছিলেন। তবে তিনি অনেক কঠোর ছিলেন। তার সাথে কেউ কথা বলতে সাহস করতো না। একদা ঈদের দিন তিনি দলবদ্ধ হয়ে কায়রো প্রদক্ষিণ করছিলেন, আর রাস্তার চার পাশে পুলিশ তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, আর লোকজন তার সামনে জমীনে চুম্মন করছিলো। এটা একটা কুসংস্কার ছিলো। শাইখ আওয়াজ দিলেন,
    يا أيوب
    হে আইয়ুব!
    বাদশাহ হয়রান হয়ে গেলো কে আমাকে কোনো উপাধি ছাড়া ডাক দিলো?
    ما صحبتك عند الله عز وجل غدا إن قال لك ألم أبوؤك ملك مصر فأبحت الخمور
    কাল কিয়ামাতে আল্লাহর কাছে তোমার কী জবাব হবে? যখন তিনি জিজ্ঞেস করবেন আমি কি তোমাকে মিশরের রাজত্ব দেইনি আর তুমি সেখানে মদ বৈধ করোনি?
    তারপর বাদশাহ বললেন, বাস্তবেই মিশরে এমনটি রয়েছে? শাইখ বললেন, অমুক অমুক জায়গায় মদের দোকান রয়েছে। সেগুলোতে মদ বিক্রির পাশাপাশি আরো বিভিন্ন অপকর্ম সংঘটিত হয়। বাদশাহ বললেন, এগুলো তো আমি তৈরি করিনি, এগুলো আমার পিতার সময় থেকে। তখন শাইখ বললেন, তাহলে তো তুমি ঐ সব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যারা বলে,
    إنا وجدنا آبائنا على أمة وإنا علي آثارهم مهتدون
    আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের এমটিই পেয়েছি, আর আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। (সুরা যুখরুফ ২২)
    বাদশাহ আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। সাথে সাথে ঐ দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার আদেশ করলেন এবং মিশরে মদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন।
    শাইখের এক ছাত্র "বাজী" রহিঃ এই ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে শাইখ রহিঃ বলেন, এই বাদশাহের মধ্যে অনেক অহংকার কাজ করছিলো তাই তাকে একটু অপমানিত করলাম যাতে সে এই ঘটনার কারণে ধ্বংস না হয়ে যায়। ছাত্র জিজ্ঞেস করলো, আপনার ভয় লাগেনি? শাইখ উত্তরে বললেন,
    لا والله يا بني، استحضرت عظمة الله وهيبته فرأيت السلطان أمامي كالقط
    না হে বৎস, আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্বের কথা মনে করলে এই বাদশাহকে আমি আমার সামনে বিড়ালের মত দেখি।

    কিছু শিক্ষা :
    এখান থেকে শাইখের বীরত্বের প্রমাণ মিলে। শাইখ সাহসী না হলে এমন বাদশাহকে উপাধি বিহীন ডাক দিতে পারতেন না, যে কিনা অনেক কঠোর, যার সাথে কেউ কথা বলতে সাহস করতো।
    শাইখ এখানে দুইটি খারাপ কাজ প্রতিহত করেছেন, এক মদের দোকানগুলো, দুই বাদশাহর অহমিকা। সাথে সাথে বাদশাহের উপর দয়াও করেছেন যে, তিনি যেন আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন। সাথে সাথে নিজের শিষ্যকে বীরত্ব ও বাহাদুরি শিক্ষা দিয়েছেন ; কারণ যে শুধু দরস- তাদরীসে মগ্ন থাকে, আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে কোনো দরদ না থাকে এবং অন্যায় কাজ দেখে চেহারা পরিবর্তন হয়না, শুধু কিতাবের পাতা উল্টিয়ে ক্ষান্ত হয় তাহলে এই ইলম বিশেষ কোনো উপকারে আসবে না।

    লেখক
    শাইখ গুল মুহাম্মাদ হাফিঃ

    আল্লাহ তা'আলা যেন অধমকে এবং সমস্ত মুজাহিদদেরকে হকের পথে অটল অবিচল রাখেন। সকলের কাছে এই দোয়ার আশায়!

  • #2
    jazakallah.
    [ফোরামে শুধু জাযাকাল্লাহ/জাঝাকাল্লাহ খাইরান লিখে কমেন্ট করা নিষেধ। সামনে থেকে শুধু জাঝাকাল্লাহ খাইরান কমেন্ট এলাও করা হবে না ইনশা আল্লাহ... -মডারেটর]

    ফোরামের "জাঝাকাল্লাহ খাইরান" বাটন সম্পর্কে সম্মানিত মেম্বার ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে
    https://82.221.139.217/showthread.php?10515-
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 07-01-2021, 04:05 PM.

    Comment


    • #3
      আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ!

      মাশা আল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, শিক্ষণীয় চমৎকার একটি গল্প।
      আল্লাহ শাইখ রহ. এর আপন রহমতের বারি ধারা বর্ষণ করুন!
      লেখক-পাঠক ও পোস্টকারী ভাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন!
      “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

      Comment


      • #4
        আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন

        Comment


        • #5
          আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
          তারাই মোদের পূর্বসূরী*যাদের নিয়ে মোরা গর্ব করি।
          অনেক অনেক জাযাকাল্লাহ ...
          ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

          Comment


          • #6
            আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে তাদের জীবনী থেকে শিক্ষা নেয়ার তৌফিক দান করেন। আমীন

            Comment

            Working...
            X