Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফুরসানের চুম্বকাংশ: গণতন্ত্র জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফুরসানের চুম্বকাংশ: গণতন্ত্র জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না

    গণতন্ত্র কি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে?


    গণতন্ত্রপন্থীরা জাতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস মনে করে তার নেতৃত্বের বিষয়টির প্রতি খুব গুরুত্বারোপের পর এক ধাপ পরেই একটু পিছিয়ে এসে বলে: গণতন্ত্র সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার সার্বভৌমত্ব প্রদান করে; পুরো জাতির নয়। তারপর দ্বিতীয় ধাপে আরো পিছিয়ে এসে বলে: গণতন্ত্র বা জনগণের শাসন ভোটের ভিত্তিতে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনের মাধ্যমে চর্চা করা হবে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের সার্বভৌমত্ব প্রদান করে; পুরো জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠের নয়। তারপর তৃতীয় ধাপে আরো পিছিয়ে এসে বলে: গণতন্ত্র শুধু ভোটারদের প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সার্বভৌমত্ব প্রদান করে।

    যখন আমাদের সামনে স্পষ্ট হল যে, গণতন্ত্র জাতির প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করে। তাহলে এখন প্রশ্ন হল, এরা (পার্লামেন্ট প্রতিনিধিরা) কি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে?

    আমরা যদি ভোটারদের মতকে প্রভাবিতকারী শক্তিশালী উপাদানগুলো- যেমন অর্থ, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক চাপ...ইত্যাদির বিবেচনা বাদ দিয়ে শুধু নির্বাচন ও ভোট প্রক্রিয়াটির প্রতি মনোযোগ দেই, তবে আমরা দেখতে পাই যে, নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের অনুপাত ১০০% এর কম হয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত: জাতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের হার নিবন্ধিত ভোটারের ৫০% এরও কম। এছাড়া সকলের ভোট দেওয়ার অধিকারও নেই। যাদের ভোট দেওয়ার অধিকার আছে, তারাই মোট আমেরিকায় বসবাসকারী জনসংখ্যা নয়। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরগুলো ব্যতিত কংগ্রেসের নির্বাচনগুলোতে এই হার ৩০% এর বেশি হয় না। এমনকি প্রাদেশিক নির্বাচনগুলোতে এর থেকেও কম হয়। তবে ইউরোপীয়ান রাষ্ট্রগুলোতে ৮০% এর অধিকে পৌঁছে যায়। কিন্তু জরিপ প্রমাণ করে, সত্তুরের দশক থেকে নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের হার দীর্ঘমাত্রায় হ্রাস পাচ্ছে । যেমন যুক্তরাজ্যে ১৯৯২ সালে নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণের হার ছিল নিবন্ধিতদের ৭৮%। আর ১৯৯৭ সালে তা কমে ৭১ পার্সেন্টে আসে। আর ২০০১ সালে ৫৯% এর কাছাকাছি চলে আসে। তারপর ২০০৫ সালে সামান্য একটু বেড়ে ৬১% এ উন্নীত হয়

    আর পার্লামেন্টের ভিতরে সভা গঠনের জন্য কাঙ্খিত পরিমাণ সাধারণত: অর্ধেকের উপর এক সংখ্যা বৃদ্ধির দ্বারাই হয়ে যায়। যেমন মার্কিন প্রতনিধি সভা ৪৩৫ জন প্রতিনিধির সমষ্টি থেকে ২১৮ জন প্রতিনিধির মাধ্যমেই হয়ে যায়। আর সিনেটের সভায় এই প্রত্যাশিত পরিমাণ পুরা হয়ে যায় ১০০ সদস্যের সমষ্টি থেকে ৫১ জন সদস্যের মাধ্যমেই

    আমরা যদি একটা কাল্পনিক চিত্র ধরে নেই, যার বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই এবং যা অনেকগুলো যৌগিক অসম্ভব বিষয়ের দ্বারা গঠিত, তারপর বলি: দেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদেরই ভোট দেওয়ার অধিকার আছে। আর যত লোকের ভোট দেওয়ার অধিকার আছে, সকলেই ভোটার তালিকায় নিজের নাম নিবন্ধিত করেছে। ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত সকলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, প্রত্যেকের ভোটই সঠিক ছিল; কোনটাই বাতিল করা হয়নি বা বাদ দেওয়া হয়নি, তাহলে এর অর্থ হল, নির্বাচনে বিজয়ীরা ১০০% জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। তারপর যখন তারা পার্লামেন্টে গেল, তখন তাদের মধ্যে ৫১ পার্সেন্টেরই আইন সভা গঠন করার অধিকার আছে। আর ওই সভায়ও ২৬% লোকই অধিকাংশ আইন পাস করে ফেলতে পারে। অর্থাৎ যারা জনগণের মাত্র ২৬% এর প্রতিনিধিত্ব করে, তারাই ৭৪% জনগণের জীবন, সম্পদ, কার্যকলাপ ও স্বাধীনতার ব্যাপারে নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারে এবং তাদের কর্তৃত্ব খাটাতে পারে। আর বিশেষ ব্যতিক্রমী আইনগুলোর জন্য দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের স্বীকৃতি লাগে। তাহলে ৩৩.৬৬% লোক তাদের ইচ্ছাকে ৬৭.৪৪% জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে পারে।

    এবার যদি আমরা একটি বাস্তবিক চিত্রের প্রতি লক্ষ্য করি এবং অংশগ্রহণকারীদের সর্বোচ্চ হার ধরে নিয়ে বলি: নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটারের ৮০% অংশগ্রহণ করেছে। আর সেখানে একটি দল ৬০% সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে জয় লাভ করেছে। (অর্থাৎ তারা নিবন্ধিত ভোটারদের সমষ্টির ৪৮%এর প্রতিনিধিত্ব করছে, পুরো জনগণের নয়।) অতঃপর যখন ৫১% প্রতিনিধির (অর্থাৎ যারা ৪০.৮% নিবন্ধিত ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করে) মাধ্যমে পার্লামেন্ট সভা গঠন করা হয়, তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলটির ৩০.৬% পার্সেন্ট প্রতিনিধি থাকে (অর্থাৎ যারা নিবন্ধিত ভোটারদের ২৪. ৪৮ %এর প্রতিনিধিত্ব করে)। আর অধিকাংশ আইনগুলো পাস করার জন্য শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতা হলেই চলে (অর্থাৎ যা নিবন্ধিত ভোটারদের সমষ্টির ২০.২% এর বেশি নয়)। অর্থাৎ অধিকাংশ আইনগুলোই নিবন্ধিত ভোটারদের সমষ্টির ২০. ৫ % এর প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যালঘু লোক নিবন্ধিত ভোটারদের সমষ্টির ৭৯.৫% এর উপর চাপিয়ে দেয়। এমনকি যে সকল ব্যতিক্রম অবস্থাগুলোতে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের প্রয়োজন হয়, তখন যারা ২৬.৯৩% লোকের প্রতিনিধিত্ব করে, তারা তাদের ইচ্ছাকে নিবন্ধিত ভোটারদের সমষ্টির ৭৩.০৭ % লোকের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার রাখে।
    উল্লেখিত উদাহরণে আমরা হিসাব করেছি অংশগ্রহণকারীদের সর্বোচ্চ হার ধরে, তথা নিবন্ধিত ভোটারদের ৮০%। এবার আমরা যদি এটাকে সর্বনিম্ন হার, তথা ৩০% ধরে হিসাব করি, তাহলে ফলাফল অত্যন্ত হাস্যকর হবে।

    আর যখন আপনি জানবেন যে, নিবন্ধিত ভোটারদের সমষ্টি ভোটাধিকার প্রাপ্তদের সংখ্যা থেকে কম আর যাদের ভোট দেওয়ার অধিকার আছে, তারাও দেশের সম্পূর্ণ জনসংখ্যা নয়, তখন আপনার নিকট একথার প্রতারণার মাত্রা স্পষ্ট হবে যে: গণতন্ত্র জনগণের শাসন বা এমনকি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের শাসন। এখান বাস্তব রিপোর্টের আলোকে আমরা বলতে পারি যে, আমি তাত্ত্বিকভাবে যেটাকে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রবৃত্তির সার্বভৌমত্ব’ নাম দিলাম, কার্যত সেটা সংখ্যালঘুর প্রবৃত্তির সার্বভৌমত্ব। একারণেই তারা অনেক সময় নিরব সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা বলে থাকে!!

    এটা একটি কাল্পনিক হিসাবে বলা হল। অর্থাৎ যেখানে রাজনৈতিক পরিবেশ স্বচ্ছ, বিশ্বস্ত এবং মিডিয়া, ভোগের ব্যবসা ও মূলধনের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে। পক্ষান্তরে আমরা যদি বাস্তব পরিবেশে নেমে আসি, তাহলে প্রতিটি চক্ষুস্মানের নিকটই স্পষ্ট হবে যে: পশ্চিমা গণতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালীদের সার্বভৌমত্ব। কোন অবস্থাতেই এটা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না।

    হ্যারল্ড লস্কি বলেন:

    “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কতগুলো বিষয়ের নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকদের মাঝে সমতা বাস্তবায়নের জন্য অনেক চেষ্টা করে। এছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনী আদেশগুলো নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধার পরিধি বৃদ্ধি করার পরিবর্তে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাগুলোর মালিকানা রক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করে। কিন্তু সমাজ ধীন-দরিদ্রে বিভক্ত হওয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় আদেশগুলো ধনীদের স্বার্থে কাজ করে। কারণ তাদের প্রভাব রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ও ক্ষমতাশীলদেরকে বাধ্য করে তাদের চাহিদা ও আকাঙ্খাগুলোকে প্রথম বিবেচনায় রাখতে।

    ফলে রাষ্ট্র ওই সকল লোকের আশা-আকাঙ্খার মুখপাত্র হয়ে যায়, যারা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে আইনী ব্যবস্থা হল একটি মুখোশ, যার পিছনে একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অভিলাস রাজনৈতিক প্রভাবের সুবিধা লাভের অপেক্ষায় থাকে। একারণে রাষ্ট্র তার ক্ষমতা চর্চার সময় জনসাধারণের প্রতি ইনসাফ বা জনস্বার্থের ভিত্তিতে চলে না, বরং সমাজের প্রভাবশালী শ্রেণীর সর্বোচ্চ স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে।

    মূলত আমরা যে স্বাধীনতা ও সাম্য লাভ করেছি, তা প্রথমদিকে ছিল। আর সবকিছুর পূর্বে এটা সম্পদশালীদের স্বাধীনতা ও সমতা। ”



    ১ Microsoft Encarta 2008, Election
    ২ ENCYCLOPEDIA BRITANNICA 2005 Delux Edition CD, election, Participation in elections
    ৩ Microsoft Encarta 2008, United Kingdom.
    ৪ Microsoft Encarta 2008, Congress of the United States, Congressional Glossary, Quorum.
    ৫ العلمانية نشأتها وتطورها ج: 1 ص: 205.

  • #2
    মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর হয়েছে ।
    মুসলিম হয়ে জন্মেছি আমি ইসলাম আমার ধর্ম
    লড়বো আমি খোদার পথে এটাই আমার গর্ব।

    Comment


    • #3
      গণতন্ত্র কি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে?
      কখনো না। বরং তা একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর নাজায়েজ চাহিদা ও আকাঙ্খাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে।
      ইয়া আল্লাহ! আপনি মুসলিম উম্মাহকে গণতন্ত্রের ধোঁকা থেকে হিফাযত করুন।
      সস্তা বুলির আড়ালে ঢাকা পড়া গণতন্ত্রের বিভৎস বাস্তবতাকে উন্মোচিত করে দিন।
      সকলকে হিদায়াতের পথে পরিচালিত করুন ও খিলাফাহ পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাওফীক দিান করুন। আমীন
      “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

      Comment


      • #4
        গনতন্ত্রের ধোঁকা থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন ৷ আমিন
        গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

        Comment


        • #5
          রাষ্ট্র তার ক্ষমতা চর্চার সময় জনসাধারণের প্রতি ইনসাফ বা জনস্বার্থের ভিত্তিতে চলে না, বরং সমাজের প্রভাবশালী শ্রেণীর সর্বোচ্চ স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে।
          ১০০% সঠিক কথা।
          আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন ও কুফুরী গণতন্ত্র থেকে হিফাযত করুন। আমীন
          ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

          Comment

          Working...
          X