Announcement

Collapse
No announcement yet.

সিরিয়া মহাযুদ্ধের কাল - ১ম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সিরিয়া মহাযুদ্ধের কাল - ১ম পর্ব

    সিরিয়া মহাযুদ্ধের কাল - ১ম পর্ব
    জসিমউদদীন আহমাদ

    সিরিয়া প্রসঙ্গে খুদে ব্লগ টুইটারে জনৈক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘টুইট গণহত্যা বন্ধ করতে পারে’। ‘এনপিআর’-এর সাংবাদিক এন্ডি কারভিন পাল্টা প্রশ্ন রেখেছেন, ‘আসলে কি তা পারে?’ সামাজিক প্রচারমাধ্যম যদিও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়কশক্তি, কিন্তু সিরিয়ার মত দেশের ক্ষেত্রে এর প্রভাব খুব সামান্য। আরববসন্তের জেরে সৃষ্ট প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত সিরিয়া এখন উপ্তপ্ত আগ্নেয়গিরি। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত শক্তিগুলো সেখানে জাহান্নামের দরজা খুলে দিয়েছে। মহাপ্রলয়ের আগে সিরিয়া ও এর আশেপাশে কী কী ঘটতে পারে তা নিয়ে বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে নানা ধরনের মিথ চালু রয়েছে। বিশ্বনিয়ন্ত্রক ইঙ্গ-মার্কিন ইহুদিবাদ এবং নির্যাতিত মুসলিমদের নিকট সিরিয়া-ফিলিস্তিন ও এর সংলগ্ন অঞ্চল হাজারো বছর ধরে মনযোগের কেন্দ্রভূমি।
    প্রাচীনকালে এশিয়া-ইউরোপে স্থল-বাণিজ্যের প্রধান ও বিখ্যাত সিল্করোডটির উৎপত্তি সিরিয়ার আলেপ্পো নগরীতে। এই পথটি ভূ-মধ্যসাগরের ব্যবধানে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের
    সংযোগ ঘটিয়েছে। প্রায় ৪ হাজার মাইল দীর্ঘ পথটি দক্ষিণ ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করেছে সৌদিআরব, সোমালিয়া, মিসর, পারস্য, ভারত, বাংলাদেশ, জাভা এবং মিয়ানমার হয়ে চিনকেও। চিনা, ভারতীয়, ফার্সি, আরবি ও ইউরোপীয় সংস্কৃতি-সভ্যতার উন্নয়নে এই বাণিজ্যপথের প্রভাব ছিল অসামান্য। এশিয়া-ইউরোপের প্রধান প্রধান বাণিজ্যবহর এই পথটি ধরে ভূ-মধ্যসাগর হয়ে চলাচল করত। বিশ্বসাহিত্যের অনেক গল্প-উপন্যাস, আরব্যরজনীর কল্পকাহিনী এবং প্রাচীন পুরাণ ও লোককথায় সিল্ক রোডের উল্লেখ পাওয়া যায়।
    সিরিয়া হাজার হাজার নবি-রাসুলের পুণ্যভূমি। ইতিহাসের অনেক প্রখ্যাত মনীষী দেশটিতে জন্ম নিয়েছেন। রোম সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রাজধানী ছিল শাম। সে হিসেবে পারস্য ও রোমের পারস্পরিক শক্তিপরীক্ষার মূলকেন্দ্রও ছিল ‘বালাদে শাম’। শামে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পারস্য কোণঠাসা হয়ে পড়ে। একইভাবে রোমানদের নিকট থেকে শাম বিজয়ের মাধ্যমে মুসলিমবিশ্বে নবযুগের সূচনা ঘটে। দামেস্ককে কেন্দ্র করে বনু আব্বাসের খেলাফত বিশ্বের বিশাল অংশে দাপটের সঙ্গে সুদীর্ঘকাল প্রতিষ্ঠিত থাকে। আধুনিককালে আরববিশ্বে জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সমাজতান্ত্রিক বাথইজমের সূচনাও এই শাম তথা সিরিয়ার ভূমি থেকে।

    সিরিয়ার চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহের হাল-হকিকত জানার আগে আমরা দেখে নেই প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলো বিশেষ করে ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ ও ‘নিও টেস্টামেন্টে’ এই অঞ্চল সম্পর্কে কেয়ামতের আগে ঘটিতব্য ভবিষ্যত বাণীগুলোতে কী বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের আলাদা আলাদা কিন্তু প্রায় সমপর্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এখানে সংঘটিত লড়াইয়ের ব্যাপারে সবাই একমত এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বজাতির বিজয় নিয়ে প্রত্যেকের নিজস্ব অভিমত বা দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। বাইবেল ও তাওরাতের বর্ণনার পাশাপাশি ইহুদি প-িতদের রচনায় বিষয়টির আলাদা মাহাত্ম্য লক্ষ করা যায়।
    শাম নিয়ে মুসলমানদের আগ্রহ ইসলামের শুরুর যুগ থেকে। মক্কায় ইসলামের দাওয়াত এবং মদিনায় ইসলাম বিস্তারের ওই সময়ে পুরো এলাকাটি রোমানদের কব্জার মধ্যে ছিল। পরবর্তীতে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রা. শামে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। যাদের লক্ষ্য ছিল রোমানদের জুলুম-নির্যাতন থেকে ওই অঞ্চলের মানুষকে মুক্ত করে আল্লাহর পথে চালিত করা। প্রথম খলিফার আমলে মুসলমানরা বালাদে শামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে সমর্থ হননি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা.-এর আমলে পুরো অঞ্চলটি মুসলিম বাহিনীর করতলগত হয়।
    হাদিসে রাসুলে কেয়ামতের সন্ধিক্ষণে ইমাম মাহদি ও হজরত ঈসা আ.-এর
    আগমন এবং বালাদে শামে ইতিহাসের চূড়ান্ত ফয়সালাকারী লড়াই নিয়ে বিভিন্ন ভবিষ্যতবাণী দেখতে পাওয়া যায়। তবে মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বালাদে শামের ভৌগলিক অবস্থানটির দিকে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

    বালাদে শাম
    আরবি ভাষায় সিরিয়াকে বলা হয় ‘বালাদে শাম’। অবশ্য হাদিসের কিতাবে যাকে ‘বালাদে শাম’ বলা হয়েছে, আজকের সিরিয়া তার থেকে ভিন্ন। মূলত বর্তমানে ওই পরিভাষার মধ্যে পাঁচটি দেশের অন্তর্ভুক্তি দেখা যায়। দেশগুলো হচ্ছে, সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, মিসর ও ফিলিস্তিন। ভূ-মধ্যসাগরের তীরবর্তী এই দেশটির একদিকে রয়েছে ইরাক, তুরস্ক ও লেবানন এবং অন্যদিকে জর্দান ও ইসরঈল। এখানে আছে উর্বর সমভূমি, আছে উঁচু-নিচু পাহাড় এবং মরুভূমি। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি প্রাচীনকাল থেকে ভিন্নমতাবলম্বী নানা জাতি-গোষ্ঠীর বসবাসে সমৃদ্ধ। মুসলমান, শিয়া, কুর্দি, আর্মেনিয়, আসিরিয়, দ্রুজ ও খৃস্টানরা এখানে কয়েক শতাব্দীব্যাপী মিলেমিশে রয়েছে।
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ওসমানি খেলাফতের পরাজয়ের পর ব্রিটিশ ও ফরাসির যৌথপ্রযোজনায় ‘বালাদে শাম’কে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি পিটার ম্যান্সফিল্ড ‘দ্য আরবস’ বইয়ে লিখেছেন, ‘কায়রোর এক চায়ের টেবিলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল কলমের এক খোঁচায় জর্দান নামের একটি দেশের জন্ম দেন’। অথচ আরববিশ্বের ইতিহাস ঘেঁটে ওই নামে কোনো দেশ বা ভূখ-ের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ওই সময় বিশাল
    একটি দেশকে পরাশক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। ফিলিস্তিন অংশ ইহুদিদেরকে বসানো হয়। লেবাননে চালু হয় গোত্রভিত্তিক শাসন। সিরিয়ার বর্তমান ভূখ- ন্যস্ত হয় ফরাসি দখলদারির অধীনে এবং মিসরের নিয়ন্ত্রণভার থাকে ব্রিটিশের হাতে।
    অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সিরিয়া ১৯৪৬ সালে ফরাসি উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভে সমর্থ হয়। কিন্তু ভূখ-গত স্বাধীনতা মিললেও ফরাসির তৈরি সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বিরোধ দেশটিকে অস্থিতিশীল করে রাখে। সামাজিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ১৯৬৩ সালে সেক্যুলার ‘বাথ পার্টি’ রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নেয়। দলটি মূলত গঠিত ছিল ‘নুসাইরি’ শিয়াদের দিয়ে। যাদের একটি গোত্র হচ্ছে, ‘আলাওয়াইত’ গোত্র। ‘আলাওয়াইত’ শব্দের অপভ্রংশ হচ্ছে, ‘আলাভি’। বর্তমানে সিরিয়া-প্রশাসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে, আলাভি গোত্রের লোকজন। সেনাবাহিনীও পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে।

    বাকি অংশ নিচে........

  • #2
    ...........পরের অংশ
    শাম নিয়ে প্রচলিত মিথ
    বাইবেলে একটি চ্যাপ্টার আছে ‘দ্য ওয়ার অব দ্য আরমাগেদন’ বা শুভ-অশুভর চূড়ান্ত লড়াই। ওই অধ্যায়ে যিশু মসিহর পুনঃআগমন ও ওই সময় দুনিয়াব্যাপী শুভ-অশুভর লড়াই নিয়ে সবিস্তার আলোচনা রয়েছে। ‘আরমাগেদন’ ইতিহাসের এমন এক রণক্ষেত্র, খৃস্টীয় বিশ্বাস মতে, ‘যিশু’ যেখানে শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে সত্যের জয় ছিনিয়ে আনবেন। অন্যদিকে ইহুদিরা মনে করে, ‘মহাপ্রলয়ের আগে তাদের পূর্বপুরুষের (ডেভিড ও সলোমন) বসতি ‘ফিলিস্তিনে’ হাজার বছরের জন্য ইহুদি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এ সময়
    ইহুদিজাতির ত্রাণকর্তা (শান্তির বাদশাহ) ‘মালেকুস সালাম’ (একচোখ বিশিষ্ট দাজ্জাল) ‘বাবে লুদ’ (লুদ গেটে) আত্মপ্রকাশ করবে এবং ওই দাজ্জালের নেতৃত্বে দুনিয়াব্যাপী ইহুদিদের একচ্ছত্র রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।’
    একই বিষয়ে মুসলিম বিশ্বাস হচ্ছে, ‘কেয়ামতের আগে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যে নেতৃত্বশূন্য মুসলমানদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ‘ইমাম মাহদি’ আগমন করবেন। ইমাম মাহদির নেতৃত্বে মুসলমানরা ‘বালাদে শামে’ মহাযুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন। ওই যুদ্ধে মুসলমানদের চূড়ান্ত বিজয়ের সন্ধিক্ষণে আকাশ থেকে ফেরেস্তার ডানায় ভর করে হজরত ঈসা (আলায়হিস সালাম) নেমে আসবেন এবং তিনি ওই একচোখা দাজ্জালকে হত্যা করবেন।’
    এ হচ্ছে শাম নিয়ে তিন ধর্মের সারসংক্ষেপ মিথ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আজকের সিরিয়া হাদিসের কিতাবে যাকে ‘বালাদে শাম’ বলা হয়েছে, তা কি ইতিহাসের ‘আরমাগেদন’ হতে যাচ্ছে?

    আরমাগেদন : ধর্মগ্রন্থগুলো কী বলে?
    ‘আরমাগেদন’ নিয়ে পশ্চিমাদের আগ্রহে কমতি নেই। গোঁড়া ও চরমপন্থী খ্রিস্টানই শুধু নয়, বরং সাধারণ মানুষের মাঝেও এ নিয়ে বিস্তর আগ্রহ দেখা যায়। হলিউডের মত ফিল্মিদুনিয়া ‘আরমাগেদন’ নিয়ে বেশ কয়েকটি মুভিও তৈরি করেছে। ‘আরমাগেদন’ [অৎসধমবফফড়হ] শব্দটি ল্যাতিন ভাষা থেকে এসেছে। এটি মূলত হিব্রু ভাষার একটি শব্দ। হিব্রুতে একে বলা হয়, ‘হারমাগেদন’ [ঐধৎসধমবফōহ]। বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের বর্ণনা অনুযায়ী, কেয়ামতের আগে পৃথিবীব্যাপী সংগঠিত মহাযুদ্ধকে ‘আরমাগেদন’ বা ‘হারমাগেদন’ বলা হয়েছে। একটি বিশেষ সিম্বলিক লোকেশন বা অঞ্চলে ওই যুদ্ধের সূচনা হবে বলে জানা যায়। যেখানে বিশ্বের সবগুলো শক্তির সম্মিলন ঘটবে এবং বলা হয়েছে ওখানে শেষ দৃশ্যপট মঞ্চস্থ হবে [বাইবেলের বর্ণনানুযায়ী, গ্রিক নিও টেস্টামেন্ট, রেভেলশন- ১৬:১৬]।
    ‘আরমাগেদন’ বা ‘হারমাগেদন’ অর্থ হচ্ছে, গড়ঁহঃধরহ ড়ভ গবমরফফড় [হিব্রু ভাষায় ঞবষ গবমরফফড়] বা ‘ম্যাগিডিও পবর্ত’। বলা হচ্ছে, ‘ম্যাগিডিও’ বা ‘পাথুরে পর্বত’ আসলে বাস্তবের কোনো পর্বত নয়, বরং এটি একটি ‘রূপকবাক্য’। ‘বহু প্রজন্মের মানুষ কর্তৃক নির্মিত ও জীবনপ্রাপ্ত’ একটি স্থান এটি। ওই স্থানটি আসলে প্রাচীনকালে ‘ম্যারিস’ বা ‘বাণিজ্যপথ’ হিসেবে পরিগণিত ছিল। এটি প্রাচীন মিসরিয় সাম্রাজ্যের কোনো একটি অঞ্চল বলে জানা যায়। কিন্তু বির্তকের বিষয়
    হচ্ছে, অঞ্চলটির অবস্থান নিয়ে। কারণ স্থানটির বিস্তৃতি ঘটেছে মিসর, সিরিয়া, আনাতোলিয়া (তুর্কি) এবং মেসপটেমিয়া [ইরাক] জুড়ে। প্রাচীনকালের ওই ঃৎধফব ৎড়ঁঃব বা ‘বাণিজ্যপথের’ বর্তমান অবস্থান নির্ণয় সত্যি কঠিন।
    ‘ম্যাগিডিও’ এমন একটি স্থান যেখানে সুপ্রাচীনকাল থেকে বড়ো বড়ো যুদ্ধ ও সংঘাত সংঘটিত হয়েছে। যেমন খ্রিস্টপূর্ব ১৫শ‘ বছর অব্দে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৬০৯ অব্দে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আধুনিক ম্যাগিডিও বলা হচ্ছে, গ্যালিলি নদীর দক্ষিণ তীরের পূর্ব-দক্ষিণপূর্বের প্রায় ২৫ মাইল [৪০ কিমি] জুড়ে বিস্তৃত একটি অঞ্চলের কথা। স্থানটি ‘কৃসন’ নদীর তীরে অবস্থিত। এটি ইসরঈলের বন্দরনগরী হাইফার নিকটবর্তী একটি নদী। ইতিহাসে দেখা যায়, রোম-ইরান সংঘাত, খেলাফতে রাশেদার সময় মুসলমানগণ কর্তৃক শাম বিজয় এবং সালাহুদ্দীন আয়ুবি রহ. কর্তৃক খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ওই একই অঞ্চল থেকে পরিচালিত হয়।
    খ্রিস্টধর্মবিশ্বাসে জানা যায়, সহস্রাব্দের সূচনা ‘মিলেনিয়ামে’ যিশুমসিহ পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন এবং এন্টিখ্রাইস্ট (সমস্ত অখ্রিস্টানের) বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন। তিনি শয়তান এবং ডেভিলের [দাজ্জাল] বিরুদ্ধে ‘আরমাগেদনের’ যুদ্ধে অংশ নেবেন। সম-সাময়িককালে ইয়াজুজ-মাজুজের আর্বিভাব ঘটবে। ফলে আত্মরক্ষার্থে তিনি অনুসারীদের নিয়ে জেরুসালেমে আশ্রয় নেবেন। পরে স্বর্গ থেকে ঐশ্বরিক ঘূর্ণির মাধ্যমে ইয়াজুজ-মাজুজকে ধ্বংস করার পাশাপাশি শয়তানকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে দুনিয়া সকল অশুভ থেকে চিরকালের জন্য মুক্তি লাভ করবে।
    ইহূদি ধর্মগ্রন্থ ‘ওল্ড টেস্টামেন্টে’র বর্ণনানুযায়ী, ‘প্রাচীন ম্যাগিডিও’ বা ‘বাণিজ্যপথ’টি ‘জাজরিয়েল ভ্যালি’ [হিব্রু] আরবিতে যাকে বলা হয়, ‘মারজ ইবনে আমের’ গ্যালিলির নি¤œভূতিতে ইসরঈল অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে [হাইফার নিকটে] অবস্থিত। এর একপাশে আছে জর্দান উপত্যকা এবং অন্যপাশে ইসরঈলের জেনিন ও তুলকারেম শহর। এই জাজরিয়েল উপত্যকার মধ্যভাগ চিরে তীর চি‎েহ্নর মত যে পথটি বেরিয়ে গেছে, এটিই সুপ্রাচীন ‘ম্যাগিডিও’ বা ‘বাণিজ্যপথ’। ফিলিস্তিন, জর্দান, মিসর, সিরিয়া ও তুরস্কজুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি। ইসরঈলি প-িতরা মাউন্ট ম্যাগিডিওকে আদতে কোনো পর্বত বলে মনে করেন না। অধিকাংশ প-িত এ ধারণা পোষণ করে থাকেন। এদের মধ্যে- রাশধনি, সি সি
    টরেন, ক্লেইন ও জর্দান উল্লেখযোগ্য। তাদের ভাষায়, মাউন্ট ম্যাগিডিও মূলত কোনো পর্বত নয়, বরং সমভূমি বিশেষ। কেননা, ম্যাগিডিও শব্দটির উৎপত্তি হিব্রু মোয়েড [সড়বফ] শব্দ থেকে। মোয়েড অর্থ হচ্ছে, অংংবসনষু বা ‘সমাবেশ’। অংংবসনষু-র ল্যাতিনরূপ হচ্ছে, অৎসধমবফফড়হ। এ হিসেবে ‘মাউন্ট ম্যাগিডিও’ অর্থ হচ্ছে, গড়ঁহঃধরহ ড়ভ অংংবসনষু বা ‘সমাবেশস্থল’। এজন্য ইহূদি পরিভাষায়, গড়ঁহঃধরহং ড়ভ গবমরফফড়-কে বলা হয়, চষধরহং ড়ভ গবমরফফড় বা ‘সমভূমির সমাবেশ স্থল’। ওই প-িতদের আরো ধারণা, এই সমাবেশস্থলটি হচ্ছে, ‘মাউন্ট সিনাই’ বা সিনাই উপত্যকা, যার ইসরায়েলি নাম, ‘মাউন্ট জায়ন’ [গড়ঁহঃ তরড়হ]।
    ‘পেন্টাকস্ট’ [চবহঃবপড়ংঃ] নামে ইহূদিদের একটি বিশেষ আচার রয়েছে। ‘পেন্টাকস্ট’ অর্থ হচ্ছে, ‘পঞ্চভূজ’। ‘পেন্টাকস্ট’ এর অপভ্রংশ হচ্ছে, ‘পেন্টাকল’। এটি প্রাচীন ‘প্যাগান ধর্মের’ বিশেষ প্রতীক, যা দেখতে পঞ্চভূজ আকৃতির। [আমেরিকা-ইসরঈল বিষয়ে কাজ করেন এমন অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করে, ‘পেন্টাকস্ট’ থেকে ‘পেন্টাকল’ এবং ‘পেন্টাকল’ থেকে ‘পেন্টাগন’ নামের উৎপত্তি ঘটেছে। এছাড়া পেন্টাগনের নকশাটাও ‘পেন্টাকস্টের’ আদলে তৈরি করা হয়েছে। আগ্রহীরা গুগলম্যাপে দেখে নিতে পারেন।] ‘পেন্টাকস্টে’ আরমাগেদন বিষয়ে একটি ‘ক্যাম্পেইন’ বা ‘পোলেমস’ পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়েছে, ‘জেরুসালেমের দক্ষিণ গেটে [বাবে লুদ] ইহূদিদের রক্ষাকর্তা অবতরণ করবে। রক্ষাকর্তা (দাজ্জাল) ইহূদি জাতিকে নিয়ে আরমাগেদনে অশুভর বিরুদ্ধে লড়াই করে বিশ্বব্যাপী ইহূদি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবে’।
    পেন্টাকস্ট ৩৪০ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে, ‘ইশ্বরের আর্বিভাব দ্বারা এটা চূড়ান্ত পরিণতি প্রাপ্ত হবে। ঈশ্বর সেদিন ইহূদি জাতির পক্ষে ফয়সালা করবেন।’ [রিচার্ড সি ট্রেঞ্চ : নিও টেস্টামেন্ট, সিনোনিয়ামস, পৃষ্ঠা-৩০১-২, জোসেফ হেনরি থ্যায়ার : গ্রিক ইংলিশ লেক্সিকন অব নিও টেস্টামেন্ট, পৃষ্ঠা- ৫২৮। এছাড়া আরমাগেদন ক্যাম্পেইন নিয়ে দেখতে পারেন- মারভিন আর ভিনসেন্ট : ওয়ার্ড স্টাডিজ ইন দি নিও টেস্টামেন্ট, খ--২, পৃষ্ঠা ৫৪২]
    উল্লেখ্য, আমাকে একজন আরব বন্ধু বলেছেন, ইসরঈলের দক্ষিণ গেট বাবে লুদে বড় বড় হরফে লেখা রয়েছে, ‘এটি আমাদের শান্তির বাদশাহ [মালেকুস সালাম, ইসলামি পরিভাষায়- ‘দাজ্জাল’]-এর আর্বিভাব স্থান।’

    [চলবে]
    সুত্রঃ
    Last edited by titumir; 07-20-2015, 12:11 PM.

    Comment


    • #3
      মাশাঅাল্লাহ
      কাফেলা এগিয়ে চলছে আর কুকুরেরা ঘেঊ ঘেঊ করে চলছে...

      Comment


      • #4
        মাশাআল্লাহ । খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ।

        Comment

        Working...
        X