সিরিয়া মহাযুদ্ধের কাল - ১ম পর্ব
জসিমউদদীন আহমাদ
সিরিয়া প্রসঙ্গে খুদে ব্লগ টুইটারে জনৈক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘টুইট গণহত্যা বন্ধ করতে পারে’। ‘এনপিআর’-এর সাংবাদিক এন্ডি কারভিন পাল্টা প্রশ্ন রেখেছেন, ‘আসলে কি তা পারে?’ সামাজিক প্রচারমাধ্যম যদিও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়কশক্তি, কিন্তু সিরিয়ার মত দেশের ক্ষেত্রে এর প্রভাব খুব সামান্য। আরববসন্তের জেরে সৃষ্ট প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত সিরিয়া এখন উপ্তপ্ত আগ্নেয়গিরি। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত শক্তিগুলো সেখানে জাহান্নামের দরজা খুলে দিয়েছে। মহাপ্রলয়ের আগে সিরিয়া ও এর আশেপাশে কী কী ঘটতে পারে তা নিয়ে বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে নানা ধরনের মিথ চালু রয়েছে। বিশ্বনিয়ন্ত্রক ইঙ্গ-মার্কিন ইহুদিবাদ এবং নির্যাতিত মুসলিমদের নিকট সিরিয়া-ফিলিস্তিন ও এর সংলগ্ন অঞ্চল হাজারো বছর ধরে মনযোগের কেন্দ্রভূমি।
প্রাচীনকালে এশিয়া-ইউরোপে স্থল-বাণিজ্যের প্রধান ও বিখ্যাত সিল্করোডটির উৎপত্তি সিরিয়ার আলেপ্পো নগরীতে। এই পথটি ভূ-মধ্যসাগরের ব্যবধানে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের
সংযোগ ঘটিয়েছে। প্রায় ৪ হাজার মাইল দীর্ঘ পথটি দক্ষিণ ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করেছে সৌদিআরব, সোমালিয়া, মিসর, পারস্য, ভারত, বাংলাদেশ, জাভা এবং মিয়ানমার হয়ে চিনকেও। চিনা, ভারতীয়, ফার্সি, আরবি ও ইউরোপীয় সংস্কৃতি-সভ্যতার উন্নয়নে এই বাণিজ্যপথের প্রভাব ছিল অসামান্য। এশিয়া-ইউরোপের প্রধান প্রধান বাণিজ্যবহর এই পথটি ধরে ভূ-মধ্যসাগর হয়ে চলাচল করত। বিশ্বসাহিত্যের অনেক গল্প-উপন্যাস, আরব্যরজনীর কল্পকাহিনী এবং প্রাচীন পুরাণ ও লোককথায় সিল্ক রোডের উল্লেখ পাওয়া যায়।
সিরিয়া হাজার হাজার নবি-রাসুলের পুণ্যভূমি। ইতিহাসের অনেক প্রখ্যাত মনীষী দেশটিতে জন্ম নিয়েছেন। রোম সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রাজধানী ছিল শাম। সে হিসেবে পারস্য ও রোমের পারস্পরিক শক্তিপরীক্ষার মূলকেন্দ্রও ছিল ‘বালাদে শাম’। শামে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পারস্য কোণঠাসা হয়ে পড়ে। একইভাবে রোমানদের নিকট থেকে শাম বিজয়ের মাধ্যমে মুসলিমবিশ্বে নবযুগের সূচনা ঘটে। দামেস্ককে কেন্দ্র করে বনু আব্বাসের খেলাফত বিশ্বের বিশাল অংশে দাপটের সঙ্গে সুদীর্ঘকাল প্রতিষ্ঠিত থাকে। আধুনিককালে আরববিশ্বে জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সমাজতান্ত্রিক বাথইজমের সূচনাও এই শাম তথা সিরিয়ার ভূমি থেকে।
সিরিয়ার চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহের হাল-হকিকত জানার আগে আমরা দেখে নেই প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলো বিশেষ করে ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ ও ‘নিও টেস্টামেন্টে’ এই অঞ্চল সম্পর্কে কেয়ামতের আগে ঘটিতব্য ভবিষ্যত বাণীগুলোতে কী বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের আলাদা আলাদা কিন্তু প্রায় সমপর্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এখানে সংঘটিত লড়াইয়ের ব্যাপারে সবাই একমত এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বজাতির বিজয় নিয়ে প্রত্যেকের নিজস্ব অভিমত বা দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। বাইবেল ও তাওরাতের বর্ণনার পাশাপাশি ইহুদি প-িতদের রচনায় বিষয়টির আলাদা মাহাত্ম্য লক্ষ করা যায়।
শাম নিয়ে মুসলমানদের আগ্রহ ইসলামের শুরুর যুগ থেকে। মক্কায় ইসলামের দাওয়াত এবং মদিনায় ইসলাম বিস্তারের ওই সময়ে পুরো এলাকাটি রোমানদের কব্জার মধ্যে ছিল। পরবর্তীতে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রা. শামে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। যাদের লক্ষ্য ছিল রোমানদের জুলুম-নির্যাতন থেকে ওই অঞ্চলের মানুষকে মুক্ত করে আল্লাহর পথে চালিত করা। প্রথম খলিফার আমলে মুসলমানরা বালাদে শামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে সমর্থ হননি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা.-এর আমলে পুরো অঞ্চলটি মুসলিম বাহিনীর করতলগত হয়।
হাদিসে রাসুলে কেয়ামতের সন্ধিক্ষণে ইমাম মাহদি ও হজরত ঈসা আ.-এর
আগমন এবং বালাদে শামে ইতিহাসের চূড়ান্ত ফয়সালাকারী লড়াই নিয়ে বিভিন্ন ভবিষ্যতবাণী দেখতে পাওয়া যায়। তবে মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বালাদে শামের ভৌগলিক অবস্থানটির দিকে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
বালাদে শাম
আরবি ভাষায় সিরিয়াকে বলা হয় ‘বালাদে শাম’। অবশ্য হাদিসের কিতাবে যাকে ‘বালাদে শাম’ বলা হয়েছে, আজকের সিরিয়া তার থেকে ভিন্ন। মূলত বর্তমানে ওই পরিভাষার মধ্যে পাঁচটি দেশের অন্তর্ভুক্তি দেখা যায়। দেশগুলো হচ্ছে, সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, মিসর ও ফিলিস্তিন। ভূ-মধ্যসাগরের তীরবর্তী এই দেশটির একদিকে রয়েছে ইরাক, তুরস্ক ও লেবানন এবং অন্যদিকে জর্দান ও ইসরঈল। এখানে আছে উর্বর সমভূমি, আছে উঁচু-নিচু পাহাড় এবং মরুভূমি। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি প্রাচীনকাল থেকে ভিন্নমতাবলম্বী নানা জাতি-গোষ্ঠীর বসবাসে সমৃদ্ধ। মুসলমান, শিয়া, কুর্দি, আর্মেনিয়, আসিরিয়, দ্রুজ ও খৃস্টানরা এখানে কয়েক শতাব্দীব্যাপী মিলেমিশে রয়েছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ওসমানি খেলাফতের পরাজয়ের পর ব্রিটিশ ও ফরাসির যৌথপ্রযোজনায় ‘বালাদে শাম’কে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি পিটার ম্যান্সফিল্ড ‘দ্য আরবস’ বইয়ে লিখেছেন, ‘কায়রোর এক চায়ের টেবিলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল কলমের এক খোঁচায় জর্দান নামের একটি দেশের জন্ম দেন’। অথচ আরববিশ্বের ইতিহাস ঘেঁটে ওই নামে কোনো দেশ বা ভূখ-ের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ওই সময় বিশাল
একটি দেশকে পরাশক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। ফিলিস্তিন অংশ ইহুদিদেরকে বসানো হয়। লেবাননে চালু হয় গোত্রভিত্তিক শাসন। সিরিয়ার বর্তমান ভূখ- ন্যস্ত হয় ফরাসি দখলদারির অধীনে এবং মিসরের নিয়ন্ত্রণভার থাকে ব্রিটিশের হাতে।
অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সিরিয়া ১৯৪৬ সালে ফরাসি উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভে সমর্থ হয়। কিন্তু ভূখ-গত স্বাধীনতা মিললেও ফরাসির তৈরি সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বিরোধ দেশটিকে অস্থিতিশীল করে রাখে। সামাজিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ১৯৬৩ সালে সেক্যুলার ‘বাথ পার্টি’ রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নেয়। দলটি মূলত গঠিত ছিল ‘নুসাইরি’ শিয়াদের দিয়ে। যাদের একটি গোত্র হচ্ছে, ‘আলাওয়াইত’ গোত্র। ‘আলাওয়াইত’ শব্দের অপভ্রংশ হচ্ছে, ‘আলাভি’। বর্তমানে সিরিয়া-প্রশাসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে, আলাভি গোত্রের লোকজন। সেনাবাহিনীও পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে।
বাকি অংশ নিচে........
জসিমউদদীন আহমাদ
সিরিয়া প্রসঙ্গে খুদে ব্লগ টুইটারে জনৈক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘টুইট গণহত্যা বন্ধ করতে পারে’। ‘এনপিআর’-এর সাংবাদিক এন্ডি কারভিন পাল্টা প্রশ্ন রেখেছেন, ‘আসলে কি তা পারে?’ সামাজিক প্রচারমাধ্যম যদিও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়কশক্তি, কিন্তু সিরিয়ার মত দেশের ক্ষেত্রে এর প্রভাব খুব সামান্য। আরববসন্তের জেরে সৃষ্ট প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত সিরিয়া এখন উপ্তপ্ত আগ্নেয়গিরি। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত শক্তিগুলো সেখানে জাহান্নামের দরজা খুলে দিয়েছে। মহাপ্রলয়ের আগে সিরিয়া ও এর আশেপাশে কী কী ঘটতে পারে তা নিয়ে বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে নানা ধরনের মিথ চালু রয়েছে। বিশ্বনিয়ন্ত্রক ইঙ্গ-মার্কিন ইহুদিবাদ এবং নির্যাতিত মুসলিমদের নিকট সিরিয়া-ফিলিস্তিন ও এর সংলগ্ন অঞ্চল হাজারো বছর ধরে মনযোগের কেন্দ্রভূমি।
প্রাচীনকালে এশিয়া-ইউরোপে স্থল-বাণিজ্যের প্রধান ও বিখ্যাত সিল্করোডটির উৎপত্তি সিরিয়ার আলেপ্পো নগরীতে। এই পথটি ভূ-মধ্যসাগরের ব্যবধানে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের
সংযোগ ঘটিয়েছে। প্রায় ৪ হাজার মাইল দীর্ঘ পথটি দক্ষিণ ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করেছে সৌদিআরব, সোমালিয়া, মিসর, পারস্য, ভারত, বাংলাদেশ, জাভা এবং মিয়ানমার হয়ে চিনকেও। চিনা, ভারতীয়, ফার্সি, আরবি ও ইউরোপীয় সংস্কৃতি-সভ্যতার উন্নয়নে এই বাণিজ্যপথের প্রভাব ছিল অসামান্য। এশিয়া-ইউরোপের প্রধান প্রধান বাণিজ্যবহর এই পথটি ধরে ভূ-মধ্যসাগর হয়ে চলাচল করত। বিশ্বসাহিত্যের অনেক গল্প-উপন্যাস, আরব্যরজনীর কল্পকাহিনী এবং প্রাচীন পুরাণ ও লোককথায় সিল্ক রোডের উল্লেখ পাওয়া যায়।
সিরিয়া হাজার হাজার নবি-রাসুলের পুণ্যভূমি। ইতিহাসের অনেক প্রখ্যাত মনীষী দেশটিতে জন্ম নিয়েছেন। রোম সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রাজধানী ছিল শাম। সে হিসেবে পারস্য ও রোমের পারস্পরিক শক্তিপরীক্ষার মূলকেন্দ্রও ছিল ‘বালাদে শাম’। শামে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পারস্য কোণঠাসা হয়ে পড়ে। একইভাবে রোমানদের নিকট থেকে শাম বিজয়ের মাধ্যমে মুসলিমবিশ্বে নবযুগের সূচনা ঘটে। দামেস্ককে কেন্দ্র করে বনু আব্বাসের খেলাফত বিশ্বের বিশাল অংশে দাপটের সঙ্গে সুদীর্ঘকাল প্রতিষ্ঠিত থাকে। আধুনিককালে আরববিশ্বে জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সমাজতান্ত্রিক বাথইজমের সূচনাও এই শাম তথা সিরিয়ার ভূমি থেকে।
সিরিয়ার চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহের হাল-হকিকত জানার আগে আমরা দেখে নেই প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলো বিশেষ করে ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ ও ‘নিও টেস্টামেন্টে’ এই অঞ্চল সম্পর্কে কেয়ামতের আগে ঘটিতব্য ভবিষ্যত বাণীগুলোতে কী বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের আলাদা আলাদা কিন্তু প্রায় সমপর্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এখানে সংঘটিত লড়াইয়ের ব্যাপারে সবাই একমত এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বজাতির বিজয় নিয়ে প্রত্যেকের নিজস্ব অভিমত বা দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। বাইবেল ও তাওরাতের বর্ণনার পাশাপাশি ইহুদি প-িতদের রচনায় বিষয়টির আলাদা মাহাত্ম্য লক্ষ করা যায়।
শাম নিয়ে মুসলমানদের আগ্রহ ইসলামের শুরুর যুগ থেকে। মক্কায় ইসলামের দাওয়াত এবং মদিনায় ইসলাম বিস্তারের ওই সময়ে পুরো এলাকাটি রোমানদের কব্জার মধ্যে ছিল। পরবর্তীতে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রা. শামে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। যাদের লক্ষ্য ছিল রোমানদের জুলুম-নির্যাতন থেকে ওই অঞ্চলের মানুষকে মুক্ত করে আল্লাহর পথে চালিত করা। প্রথম খলিফার আমলে মুসলমানরা বালাদে শামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে সমর্থ হননি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা.-এর আমলে পুরো অঞ্চলটি মুসলিম বাহিনীর করতলগত হয়।
হাদিসে রাসুলে কেয়ামতের সন্ধিক্ষণে ইমাম মাহদি ও হজরত ঈসা আ.-এর
আগমন এবং বালাদে শামে ইতিহাসের চূড়ান্ত ফয়সালাকারী লড়াই নিয়ে বিভিন্ন ভবিষ্যতবাণী দেখতে পাওয়া যায়। তবে মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বালাদে শামের ভৌগলিক অবস্থানটির দিকে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
বালাদে শাম
আরবি ভাষায় সিরিয়াকে বলা হয় ‘বালাদে শাম’। অবশ্য হাদিসের কিতাবে যাকে ‘বালাদে শাম’ বলা হয়েছে, আজকের সিরিয়া তার থেকে ভিন্ন। মূলত বর্তমানে ওই পরিভাষার মধ্যে পাঁচটি দেশের অন্তর্ভুক্তি দেখা যায়। দেশগুলো হচ্ছে, সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, মিসর ও ফিলিস্তিন। ভূ-মধ্যসাগরের তীরবর্তী এই দেশটির একদিকে রয়েছে ইরাক, তুরস্ক ও লেবানন এবং অন্যদিকে জর্দান ও ইসরঈল। এখানে আছে উর্বর সমভূমি, আছে উঁচু-নিচু পাহাড় এবং মরুভূমি। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি প্রাচীনকাল থেকে ভিন্নমতাবলম্বী নানা জাতি-গোষ্ঠীর বসবাসে সমৃদ্ধ। মুসলমান, শিয়া, কুর্দি, আর্মেনিয়, আসিরিয়, দ্রুজ ও খৃস্টানরা এখানে কয়েক শতাব্দীব্যাপী মিলেমিশে রয়েছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ওসমানি খেলাফতের পরাজয়ের পর ব্রিটিশ ও ফরাসির যৌথপ্রযোজনায় ‘বালাদে শাম’কে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি পিটার ম্যান্সফিল্ড ‘দ্য আরবস’ বইয়ে লিখেছেন, ‘কায়রোর এক চায়ের টেবিলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল কলমের এক খোঁচায় জর্দান নামের একটি দেশের জন্ম দেন’। অথচ আরববিশ্বের ইতিহাস ঘেঁটে ওই নামে কোনো দেশ বা ভূখ-ের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ওই সময় বিশাল
একটি দেশকে পরাশক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। ফিলিস্তিন অংশ ইহুদিদেরকে বসানো হয়। লেবাননে চালু হয় গোত্রভিত্তিক শাসন। সিরিয়ার বর্তমান ভূখ- ন্যস্ত হয় ফরাসি দখলদারির অধীনে এবং মিসরের নিয়ন্ত্রণভার থাকে ব্রিটিশের হাতে।
অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সিরিয়া ১৯৪৬ সালে ফরাসি উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভে সমর্থ হয়। কিন্তু ভূখ-গত স্বাধীনতা মিললেও ফরাসির তৈরি সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বিরোধ দেশটিকে অস্থিতিশীল করে রাখে। সামাজিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ১৯৬৩ সালে সেক্যুলার ‘বাথ পার্টি’ রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নেয়। দলটি মূলত গঠিত ছিল ‘নুসাইরি’ শিয়াদের দিয়ে। যাদের একটি গোত্র হচ্ছে, ‘আলাওয়াইত’ গোত্র। ‘আলাওয়াইত’ শব্দের অপভ্রংশ হচ্ছে, ‘আলাভি’। বর্তমানে সিরিয়া-প্রশাসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে, আলাভি গোত্রের লোকজন। সেনাবাহিনীও পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে।
বাকি অংশ নিচে........
Comment