দারুল ইরফান কর্তৃক প্রকাশিত
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-৫
================================================== ===============================
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-৫
================================================== ===============================
স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরম সহ্য করেছেন
আর আমি .....?
আর আমি .....?
তখনও কথোপকথন চলছিল, ইতোমধ্যে এক সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তিকে মরু প্রান্তর থেকে আসতে দেখা গেল। এ ব্যক্তি অনেক দূর থেকে আসছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দূর থেকে দেখেই বলেন, ‘এ আবু খাইছামা হবে।’
অতঃপর দেখা গেল, সে আবু খাইছামা আনসারী রাযি. ই ছিলেন। তিনি বাহিনী রওয়ানা হওয়ার পর চলা শুরু করেন। এবং একাকীই এসে উপস্থিত হন। তিনি মুনাফিকদের মাঝে থাকা পছন্দ করেননি। শয়তান এই মহান সাহাবীকে বাধা প্রদানের জন্যও অনেক চেষ্টা করেছে। ইবনে হাজার রহ. ফাতহুল বারীতে আবু খাইছামা রাযি. এর ঘটনা প্রসঙ্গে কোন কোন যুদ্ধাভিযান বিশারদের কথা বর্ণনা করেছেন যে, আবু খাইছামা রাযি. বর্ণনা করেনে, ‘আমি আমার গৃহে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, বিছানার উপর পানির সিঞ্চন করা হয়েছে।’
আপনারা ভাল করেই জানেন যে, গরমের মৌসুমে বিছানার উপর পানির বিচ্ছুরণ কেমন আরামদায়ক অনুভূত হয়।
তিনি (আবু খাইছামা রাযি.) বলেন, ‘আমি দেখলাম, বিছানায় পানির বিচ্ছুরণ রয়েছে, এরপর আমার স্ত্রীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম এবং বলে উঠলাম। আল্লাহর কসম! এটা কেমন ইনসাফ! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যের তাপ এবং গরম সহ্য করবেন আর আমি এখানে ছায়া ও আরাম আয়েশ ভোগ করব।’
ঈমানদারগণের প্রতি একটু লক্ষ্য করুন! দেখুন, তারা কি সঠিক আকীদা ও মজবুত বিশ্বাসের অধিকারী ছিলেন!
সুতরাং আবু খাইছামা রাযি. নিজের বাহন এবং অল্প কিছু খেজুর নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গিয়ে মিলিত হলেন।
লক্ষণীয় বিষয় হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি জন্য ঘর থেকে বের হয়ে ছিলেন? তিনি কি কালিমার সাহায্যের জন্য বের হননি? তাহলে আজকে আমাদের কি হয়ে গেল যে, আমরা ঐ কালিমার সাহায্য ছেড়ে পিছনে বসে রয়েছি। এবং ধারনা করছি যে, আমরা এই কালিমার সাহায্যের হক আদায় করে ফেলেছি। অথচ এই কালিমার শাসন আজ দুনিয়া থেকে মুছে গেছে।
তোমাকে কোন জিনিস পিছনে রেখেছে?
এখানে আমরা কা‘ব রাযি. এর হাদিসের কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ের উপর চিন্তা ফিকির করবো কেননা, এ মুহূর্তে হাদিসের সকল শিক্ষণীয় বিষয়ের উপর আলোচনা করা আমাদের জন্য সম্ভব নয়। ইমাম নববী রহ. ইবনে হাজার রহ. এবং অন্যান্য হাদিস ব্যাখ্যাকারগণ এই হাদিসের উপর পূর্বেই যথেষ্ট আলোচনা করেছেন।
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলেন তখন আমি অত্যন্ত দুঃখ ও প্রচণ্ড চিন্তায় পড়ে গেলাম এবং ভাবতে লাগলাম যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে কি বলবো? যখন আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলাম তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চেহারায় রাগ নিয়ে মুচকি হাসলেন।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কা‘ব রাযি. এর প্রতি রাগান্বিত ছিলেন। ইবনে হাজার রহ. কতিপয় যুদ্ধাভিযান বিশারদদের কথা বর্ণনা করেছেন যে, হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তখন আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার থেকে কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?
আল্লাহর কসম! আমি তো মুনাফিক নই, সন্দেহের মধ্যে পড়িনি এবং আমার অবস্থার মাঝেও কোন পরিবর্তন আসেনি।
দ্বীনের সাহায্যকে ছেড়ে দেওয়া কোন ছোট ব্যাপার ছিল না। হযরত কা‘ব রাযি. এর এ কথার উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কম্পন সৃষ্টিকারী একটি কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,? ماخلفك কোন জিনিস তোমাকে পিছিয়ে রেখেছে?
এ প্রশ্নটি আজও জিহাদ পরিত্যাগকারীদের করা চাই যে ‘তোমাদেরকে কোন জিনিস পিছনে বসিয়ে রেখেছে?’
আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি আমাদের আলেমদের বক্ষকে এই বিষয়টির জন্য উন্মুক্ত করে দিন। তারা যেন আমাদের আসলাফদের সীরাত থেকে সবক গ্রহণ করেন এবং উম্মাহকে জিহাদ ফরজে আইন হওয়ার ফতওয়া দেন!
উলামায়ে সালাফ সকলে এ বিষয়ে একমত যে, জিহাদ কোন কোন পরিস্থিতিতে ফরজে আইন হয়ে যায়। যার মধ্যে প্রথম পরিস্থিতি হল, শত্রুদের ইসলামী ভূখণ্ডে প্রবেশ করা। অথচ আজকে শত্রুরা ইসলামী ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে কয়েক দশক হয়ে গেছে, لا حولَ ولا قوَّةَ إلَّا باللهِ
দ্বীনের সাহায্য কে করবে? যদি আমরা প্রত্যেকেই ওজর পেশ করে বসে থাকি, তাহলে এ মহান দায়িত্ব কে আঞ্জাম দিবে? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দ্বীনের উপর কি এভাবেই হামলা হতে থাকবে আর আমরা হামলার জবাব না দিয়ে বসে থাকবো? আমাদের কর্তব্য হলো, নিজেদের ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে আমরা ফিরে আসবো এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অনুগ্রহে হককে প্রতিষ্ঠিত করেই তবে ক্ষান্ত হব।
ভুলের ক্ষেত্রে মুমিনের রীতি গোঁড়ামি বা অহেতুক বাক্য খরচ নয়, বরং ভুল স্বীকার করে নেয়া।
হযরত কা‘ব রাযি. এর স্বীয় ত্রুটি স্পষ্টভাবে স্বীকারোক্তির মাঝে জ্ঞানী লোকদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি যদি আপনার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবর্তে দুনিয়ার অন্য কোন ব্যক্তির সামনে বসতাম তাহলে আমি কোন ওজর পেশ করে তাঁর ক্রোধ থেকে বেচে যেতাম, কেননা, আমি বাকবিতণ্ডায় বেশ পটু।’
আজকেও অসংখ্য লোক দলীল-প্রমাণহীন আলোচনা করার অনেক দক্ষতা রাখে। কিতাবুল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহর স্পষ্ট ভাষ্যকে আসল ও সঠিক অর্থ থেকে সরিয়ে দেয়। আর বলে, এখনোও জিহাদের সময় আসেনি। আমি জিজ্ঞাসা করি, যদি এখনও সময় না আসে তাহলে কবে আসবে?
ইসলামী রাষ্ট্র স্পেন আমাদের হাত ছাড়া হওয়ার পাঁচ শতাব্দীর বেশী হয়েছে। তবুও কি তা উদ্ধার করার সময় আসেনি। মূলত এসব লোক সর্বদা স্পষ্ট আয়াত ও হাদিসকে অস্পষ্ট অর্থের দিকে ফিরিয়ে বলে, এখনো জিহাদের সময় আসেনি।
আরও পড়ুন
Comment