আন নাসর মিডিয়া
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৭
==================================================
===============================
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৭
==================================================
===============================
নিরাপত্তা ও সতর্কতা
নিতান্ত পরিতাপের বিষয় হল: আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই। আমাদের নিজেদেরই গুনাহের কারণে এবং সে একই কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই, অনেক মুজাহিদ শহীদ হয়, অনেক মা-বোন জেলে যায়। এ সবের মূল কারণ হল: নিরাপত্তা মেনে না চলা, নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল না রাখা।
আমার ভাইয়েরা, খেয়াল করুন! আমরা কেন ভুলে যাই যে, আমরা জিহাদের ময়দানে আছি। আমরা এমন সাধারণ কোন দাওয়াতী কার্যক্রমে বের হইনি যে, আমরা (স্বাভাবিকভাবে) অবাধে চলতে পারব, ঘুরতে পারব। আমরা তো তাদেরকে হত্যা করতে বের হয়েছি। আর তারাও আমাদের হত্যা করতে আমাদের মাথার উপর ড্রোন উড়াচ্ছে। তাদের আর আমাদের মাঝে যুদ্ধ চলছে। তারা আমাদের আনসারদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। হেলিকপ্টারে করে ধরে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে মারছে আর বলছে যে, অমুককে তোমার ঘরে আশ্রয় দিয়েছো কেন? (দেখা গেল) আশ্রিত লোকটি এক বছর আগে শহীদ হয়েছে। কিন্তু এক বছর পরও তারা আশ্রয়দাতার বাড়ি গিয়ে তার ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তাদের বাচ্চাদের শহীদ করছে। আর বলছে- যে দু’একজন বেঁচে আছে, তারা কোথায়? তাদের নিয়ে আস। এভাবে আমাদের আনসারদের ঘর-বাড়ি সব ধ্বংস হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত হবে না যে, আমার মন খুশি আছে, তাই যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব, যে ঘরে ইচ্ছা সে ঘরে ঢুকব। যে এলাকায় ইচ্ছা ঘুরে বেড়াবো। আরে ভাই! এটা তো আমার শহর, আমার এলাকা বা আমার দেশ নয়। আমি তো এখানে জিহাদ করতে এসেছি। যে ব্যক্তি জিহাদের ময়দানে এসেছে, তার জন্য এটা সাহসিকতা নয় যে, যখন যুদ্ধ চলবে, শুধু তখনই নিরাপত্তা অবলম্বন করবে। আর যখন সে তার বাড়ী ফিরে যাবে, তখন নিরাপত্তা অবলম্বন করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় গিয়েও নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল রাখতেন। সাহাবাগণ যখন হিজরত করে মদিনায় চলে যান, তখনও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তরবারী খাপে প্রবেশ করাননি। ইহুদী তো তখনও ছিল, তাই সে সময় তারা নিরাপত্তা অবলম্বন করেছেন। এখনও ইহুদীরা আমাদের মাথায় ঝেঁকে বসে আছে। তাই এখনো আমাদেরকে আমাদের পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিরাপত্তা মেনে চলতে হবে।
নিরাপত্তা ও মনোকষ্ট
কেউ যদি আপনার সাথে নিরাপত্তা মেনে চলে। এর বিপরীতে আপনি তার সাথে তর্ক করেন বা তার বিরুদ্ধে কারো কাছে এ মর্মে অভিযোগ করেন যে, লোকটি নিরাপত্তা মেনে চলে, লোকটি আমাকে সম্মান দেয় না। আমি আপনাকে বলব- আল্লাহর কসম! যদি কেউ আমার সাথে নিরাপত্তা মেনে চলে, আর আমি তাকে সাহস যোগাই, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরে আমার মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা এমনি বানিয়েছেন মানুষের স্বভাব। যদি আপনি তার সাথে তর্ক করেন এবং তাকে বলেন, তুমি নিরাপত্তা মেনে চল কেন? তাহলে তার অন্তরে আপনার মান-মর্যাদা হ্রাস পাবে। আর যদি আপনি তাকে সাহস যোগান, তাহলে তার অন্তরে আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। এটা এই জন্যই আমি বলছি যে, যদি আপনি আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, আর আপনার নিরাপত্তায় যেন ব্যঘাত না ঘটে সে বিষয়ের প্রতি আমি খেয়াল রাখি, তাহলে আপনার অন্তরে আমার মর্যাদা কমবে না বরং বাড়বে।
কত বড় বড় ব্যক্তিত্বকে দেখেছি! যাদের নিরাপত্তা অনেক বেশী প্রয়োজন ছিল। তা সত্ত্বেও তারা নিজের চেয়ে তাদের সঙ্গীর নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশী সতর্ক থাকতেন।
সুতরাং নিরাপত্তা অবলম্বনকারী তো নিরাপত্তা অবলম্বন করবেনই। কিন্তু যিনি নিরাপত্তার করণে মনোকষ্ট পান, তিনি এ মনোকষ্টকে নেকী লাভের একটা সুযোগ মনে করতে পারেন। এছাড়াও তিনি এও মনে করতে পারেন যে, আল্লাহ তা‘আলা এই ধৈর্যের কারণে আমাকে নেকী দিবেন এবং এতে জিহাদেরই লাভ হবে।
আরেকটি বিষয়ের জন্য আপনি কখনো আপনার মন খারাপ করবেন না। সেটি হলো: আগত লোকটির মর্যাদাগত অবস্থান কেমন? তার পরিচয় কি? তিনি যদি শহীদ হন বা গ্রেফতার হন, তাহলে উম্মতের কি ক্ষতি হবে? ধরুন! উসামা বিন লাদেন রহ. এসেছেন। আমি সতর্ক হলাম যে, একজন বড় ব্যক্তি এসেছেন (অথচ অন্যদের ক্ষত্রে আমার মাঝে তেমন সতর্কতা দেখা যায় না)। তাই আমি বলি মূল বিষয় হলো: এই যুদ্ধে যত ক্ষতি হচ্ছে, সে ক্ষতি কার? সে ক্ষতি উসামা বিন লাদেন রহ., আমীরুল মু’মিনীন এবং তার পুরো কাফেলারই ক্ষতি। এটা একা কোন ভাইয়ের ক্ষতি না।
আমার ভাইয়েরা! যারা আমাদের আনসারদের ক্ষতি করে; যে আনসারগণ আমাদের ভাষা বুঝে না, আমাদের কোন লিখনি পড়তে পারে না, আমাদের কোন বিষয়াষয়ও জানে না। তারপরেও যখন তাদের উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মারপিট করা হয়, তাদের সন্তানদেরকে শহীদ করা হয়, তাদের ঘর-বাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং এক/দু’বছর পরপর তাদের নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়। আমি প্রশ্ন করি. এই ধরণের লোকদের ঘরে যে মুজাহিদ তৈরি হয় তিনি কে? তিনি কি উসামা বিন লাদেন রহ.? না, তিনি আমার আপনার মতই সাধারণ একজন মুজাহিদ ভাই।
ভাইয়েরা আমার! এ বাস্তবতা কেন আমরা ভুলে যাই?! আমেরিকানরা উম্মতের প্রত্যেক মুজাহিদকে ওসামা বিন লাদেন মনে করে। আমাকে আপনারা বলুন, আমাদের সামনে যে সাথীগণ বসে আছেন, তাদের গাড়িতে যে বোমা বর্ষণ করা হয়েছে এবং তাদের যে ৭জন সাথীকে শহীদ করা হয়েছে। আর অন্যদের আহত করা হয়েছে, এরা কি উসামা বিন লাদেন রহ.? (তাহলে কেন এদের উপর বোমা বর্ষণ করা হলো?) নিরাপত্তা অবলম্বন কি শুধু উসামা বিন লাদেন রহ. করবে? আমি আপনি কি নিরাপত্তা অবলম্বন করব না? এই যে সাথীদের উপর তিনটি মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে, তাদের গাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, কিছু সাথীকে আহত করা হয়েছে, আর অপর কিছু সাথীকে শহীদ করা হয়েছে। এরা কি সবাই উসামা বিন লাদেন রহ.?
আরও পড়ুন
Comment