আন নাসর মিডিয়া
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৯
==================================================
===============================
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৯
==================================================
===============================
নিরাপত্তা অবলম্বনকারীদের জন্য কয়েকটি নীতিমালা
প্রথমত: মু’মিন ভাইদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা। এটি ওয়াজিব। এর আগে একটি মূলনীতির কথা বলব। তা হলো: নিজ সত্ত্বাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। আমি নিজেকে বাঁচাবো না বা রক্ষা করবো না, এটা নিজের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। কারণ, আপনিও এই উম্মাহর একটি অংশ। এমনিভাবে আপনার সত্ত্বাটিও জিহাদী আন্দোলনের একটি অংশ।
১. নিজেকে বাঁচানো ও নিরাপত্তা
এ ব্যাপারে প্রথম কথা হলো: নিজ সত্ত্বাকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে হবে, জিহাদকে বাঁচানো। যেহেতু জিহাদকে বাঁচানোর জন্য এবং জিহাদকে শক্তিশালী করার জন্য নিরাপত্তা অবলম্বন করা জরুরী। সেহেতু আপনার মন-মস্তিষ্কে এ কথা বদ্ধমূল থাকতে হবে যে, যদি আমি আমার নিজ সত্ত্বার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা অবলম্বন না করি, এতে শুধুমাত্র জিহাদেরই ক্ষতি হবে না। বরং আমার মা-বাবা, আমার ভাই-বোন, আমার আনসার ও তার সন্তানগণ এবং ইমারাতে ইসলামীয়া আফগানিস্তানের আমাদের যে সম্মানিত ভাইয়েরা আছেন, সবার ক্ষতি হবে।
লক্ষ্য করুন! শাহাদাত আমরা সবাই চাই। আমরা অন্তর থেকেই দুআ করি- আল্লাহ তা‘আলা যেন আমাদের কাউকে শাহাদাত থেকে বঞ্চিত না করেন এবং আমাদের সকলকে শাহাদাতের মৃত্যু দান করেন। কিন্তু এটা কি পরিতাপের বিষয় নয় যে, আমাদের অসতর্কতা হেতু আমেরিকান বাহিনী সাথীদের উপর আক্রমণ করার ফলে ইমারাতের কিছু সাথী শহীদ হয়ে গেল। যখন এমন হবে, তখন আমাদের অসতর্কতা ও অলসতার কারণে কি আমরা পাপী হব না? আমাদের কারণে ইমারাতের সাথীদের ক্ষতি হয়। আমি আবারও বলছি- আপনি লক্ষ্য করে দেখুন! যেখানে যেখানে ইমারতের সাথীগণ আমাদের ভাইদের সাথে শহীদ হয়েছেন এবং উপর থেকে ড্রোন এসে আক্রমণ করেছে ও ক্ষতি হয়েছে, সেই সাথী কি উসামা বিন লাদেন রহ. ছিলেন? না, বরং আমাদের একজন সাধারণ সাথীই ছিলেন।
যেহেতু তারা আমাদের সাধারণ সাথীদেরকেও আক্রমণ থেকে বাদ দেয় না। তাই আমাদের সাধারণ সাথীদের জন্যেও আবশ্যক হলো: জিহাদকে ক্ষতি থেকে বাচাঁনোর জন্য স্বীয় নিরাপত্তা অবলম্বন করা, নিজের ক্ষতির কথা চিন্তা করা।
আরেকটি মূলনীতি সবার স্মরণ রাখা উচিত। মূলনীতিটি হলো: আমাদের মধ্যে যদি কেউ যুদ্ধে যায় এবং যুদ্ধ পোশাক ফেলে দিয়ে একাকী শক্রর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে তা খুবই ভালো। আপনারা হয়তো সীরাত গ্রন্থে পেয়েছেন যে, এক সাহাবী স্বীয় যুদ্ধ পোশাক ফেলে দিয়ে সম্মুখ সমরে অগ্রসর হয়ে লড়াই শুরু করেন। স্পষ্টত: তা একেবারেই জায়েয। কিন্তু কেউ যদি এই বলে যুদ্ধ পোশাক ফেলে দেয় যে, আমি নিরাপত্তা অবলম্বন করবো না। কারণ, সাহাবাদের মধ্য থেকেও কোন এক সাহাবী এমনটি করেছেন। তা ঠিক হবে না। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ঘটনাটি কখনোই সাহাবা কর্তৃক নিরাপত্তা অবলম্বন না করার দলিল নয়। ট্যাংক আসছে, আর আপনি যুদ্ধ পোশাক খুলে ফেলে দিয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে ফায়ার শুরু করলেন, সেটা খুবই ভালো। তা দ্বারা মানুষের সাহস তৈরী হবে। আমার এই দেহ সত্ত্বার যিম্মাদার তো আমি। কিন্তু আমার দল, আমার আমীর, আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, আমার আনসার ভাইগণ এবং ইমারাতে ইসলামীয়ার তালেবান ভাইগণ, তাদের সবার যিম্মাদারও কি আমি? (না, কক্ষনো না।)
সবার পক্ষ থেকে আমার আপনার উপর এই যিম্মাদারী রয়েছে যে, আমরা নিরাপত্তা মেনে চলব। আর যখন আমি নিজেই এ ব্যাপারে অলসতা করি। যার ফলে আমার পুরো এলাকার মানুষ কষ্ট পায়। তো আল্লাহ না করুন! আল্লাহ না করুন!! এটা তখন অনেক বড় মারাত্মক বিষয় হবে যে, যখন আমরা আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হব, তখন আমাদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে। বলা হতে পারে, জিহাদে এসেছো, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তুমি خُذُوا حِذْرَكُم আয়াতের উপর আমল করনি কেন? তখন আল্লাহ তা‘আলাকে কি জবাব দিব?
তাহলে প্রথম কথা হলো: নিজের দেহ সত্ত্বাকে রক্ষার জন্য নয় বরং জিহাদী আন্দোলকে রক্ষার জন্য নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। ব্যক্তিগতভাবে আমার দুশমনের সামনে সরাসরি দাঁড়ানোর অনুমতি আছে। কিন্তু অন্যদের যে ক্ষতি এর সাথে জড়িয়ে আছে, সে জন্য আমরা এমনটি করবো না।
এ ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক আরেকটি কথা: আমাদের প্রতিটি ভাই যার শিকার, খোদ আমিও যার শিকার, তা হলো: শয়তানের ওয়াসওয়াসা। শয়তান আশ্চর্যজনক পন্থায় মানুষের মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে। শয়তানের ওয়াসওয়াসা বেশী পরিমাণে হওয়ায় অনেক সময় আমরাও যার শিকার হয়ে যাই। এই যে অনেক সময় আমরা বলি, আমরা শহীদ হয়ে যাব। শহীদ হওয়া অনেক খুশির কথা। কিন্তু স্মরণ রাখা উচিত যে, এই ভুখণ্ডে; এই উপমহাদেশে এমন একটা সময়ের আগমন ঘটছে, যখন আমাদের এই কাফেলার ছোট থেকে ছোট একজন ভাইয়েরও অনেক বড় অবদান থাকবে। একটা সময় এমন আসবে যখন আল্লাহ তা‘আলা আপনাদের দ্বারা তার দ্বীনের অনেক বড় খেদমত নিবেন। এই যে এত কড়াকড়ি, যা আমরা চতুর্দিক থেকে লক্ষ্য করছি। এর দ্বারা মনে হচ্ছে, কোন দিক থেকেই আশা জাগানিয়া কিছু পাচ্ছি না। যেমন হয়েছিলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে, সাহাবাদের সময়ে। তখন একটা সময় এমন অতিবাহিত হয়েছিল যে, বছরকে বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর শুধুমাত্র দু’তিন জন লোক ইসলামের ছায়াতলে এসেছে। এক দিকে নৈরাশ্যের কারণে সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলতো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কেন আমাদের জন্য দু’আ করছেন না? সাহাবাদের এসব কথা শুনা মাত্রই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা মোবারক ক্রোধান্বিত হয়ে যেত। ফলে তিনি বলতেন- ولكنكم تستاجرون “তোমরা তো দেখছি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করো।” অনেকের একটাই টার্গেট থাকে, সে শহীদ হবে। শাহাদাতের এই যে আকাঙ্খা ও তামান্না; যদি শাহাদাত না হয় (তো আল্লাহ না করুন!) যেন তার জিহাদই কবুল হয়নি! আমাদের প্রত্যেকের ধ্যানে এবং মনে সকাল-সন্ধ্যা সবসময় আল্লাহর কাছে কামনা করা উচিত যে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে শাহাদাত দান করুন। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে, মু’মিন যখন জিহাদে আসে, তখন তার উদ্দেশ্য থাকে দু’টো। (এক) ব্যক্তি হিসেবে। এ হিসেবে তার উদ্দেশ্য হবে, যা হাদীসে বলা হয়েছে-
لَوَدِدْتُ أنْ أغْزُوَ في سَبيلِ اللهِ ، فَأُقْتَلَ ، ثُمَّ أغْزُوَ فَأُقْتَلَ ، ثُمَّ أغْزُوَ فَأُقْتَلَ
“আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং নিহত হওয়া আমার কাছে অধিক প্রিয়। আমার কাছে এটা বেশী প্রিয় যে, পুনরায় জিহাদ করি এবং নিহত হই, আবার জিহাদ করি এবং নিহত হই।”(সহীহ মুসলিম)
এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা তিন বার বলেছেন। সর্বশেষেও فَأُقْتَلَ“আমি নিহত হই” বলেছেন। জীবিত হওয়ার কোন কথাই বলেননি। এর দ্বারা বুঝা গেলো শাহাদাতই ব্যক্তির একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। মালে গনীমত আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য শাহাদাতই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সুনিশ্চিতভাবেই কোন জিহাদি আন্দোলনের উদ্দেশ্য কখনোই নিহত হওয়া বা শাহাদাত নয়। তবে হ্যাঁ! একজন ব্যক্তির উদ্দেশ্য হতে পারে শাহাদাত। এ দৃষ্টিকোণ থেকে জিহাদী আন্দোলনের উদ্দেশ্য শাহাদাত, ঠিক আছে। যেহেতু এর মাধ্যমে মানুষের শাহাদাত লাভ হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে অকাট্যভাবেই জিহাদী আন্দোলনের উদ্দেশ্য হলো: শাহাদাত। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা জিহাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে উম্মাতে মুসলিমার জন্য যে উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছেন। তা হলো:
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ … ﴿البقرة: ١٩٣﴾
“আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়।”(সূরা বাকারাহ: ১৯৩)
হে উম্মাতে মুসলিমা! উঠে দাঁড়াও, ক্বিতাল কর। وَقَاتِلُوهُمْ এটা جمع এর সিগাহ্, যা বহুবচনের জন্য আসে। অর্থাৎ হে মুসলমানের জামাত! উঠে দাঁড়াও, ক্বিতাল কর। ক্বিতাল বা যুদ্ধের উদ্দেশ্য কি? জিহাদের উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য কি এটা যে, আস! শহীদ হয়ে যাও? না! সেটা উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো- حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ “যেন ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হয়।”
সুতরাং এই জিহাদী আন্দোলনের উদ্দেশ্য হলো: কাফিরদেরকে পরাজিত করা এবং আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা। এমনিভাবে আমাদের এই জামাতের উদ্দেশ্য হলো: ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানকে বিজয়ী করা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদী আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠিত করা। তারপর তাকে বিজয়ী করা। উম্মাতে মুসলিমার মাজলুমদের সাহায্য করা। আমাদের এ জিহাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। যেহেতু আমাদের এ জিহাদের উদ্দেশ্য অনেক মহৎ, তাই আমাদের উচিত- এ জিহাদী আন্দোলন নিয়ে একটু চিন্তা করা। আমি আশা করি এবং নিশ্চিত বিশ্বাস রাখি যে, এক সময় এই কাফেলাই বিজয় হবে। তাই এই কাফেলাকে কদর করুন, মূল্যায়ন করুন।
আল্লাহ তা‘আলার অনেক বড় সাহায্য যে, আপনারা আল্লাহর আশ্রিত জমিনে আছেন। দায়েশের মত এখানে না আমেরিকার ছত্রছায়া আছে, আর না অন্য কারো ছত্রছায়া। আলহামদুলিল্লাহ! শুধুমাত্র আল্লাহর আশ্রয়ে আছেন। আর যখন আল্লাহর আশ্রয়ে আছেন, তখন এ কথা মনে রাখবেন যে, আল্লাহ তা‘আলা আপনাদের এমন একটি সময়ের জন্য প্রস্তুত করছেন; যখন আপনাদের প্রতিটি সদস্য দ্বারা অনেক বড় খেদমত আঞ্জাম দিবেন এবং এই দ্বীনের সাহায্য করবেন। তাই আপনি নিজেকে নিজে হেফাজত করুন। যতটুকু সুযোগ আপনার হাতে আছে, ততটুকু সুযোগ কাজে লাগান। হোক না কামরার ভিতরে তাতে কি হয়েছে? তারপরও পরিকল্পনা গ্রহন করুন যে, কিভাবে আমি আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করতে পারি? কিভাবে দাওয়াতের কাজ করতে পারি? কিভাবে স্বীয় ঈমান ঠিক করতে পারি? কিভাবে আমার দোষ-ক্রটি, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার এবং আমার আনসারদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখতে পারি? তারপর যখন আমি বিভিন্ন কার্যক্রম আঞ্জাম দিতে যাব, তখন কিভাবে আঞ্জাম দিব? জিহাদের ই’দাদ বা প্রস্তুতি কিভাবে নিব? পাকিস্তানের ভিতর আমাদের যে সব লোকেরা আছেন, আমরা তাদের পর্যন্ত দাওয়াত কিভাবে পৌছাব? এ কাজগুলো তখন করব, যখন কামরায় থাকবো। আর যখন বাহিরে বের হওয়ার সুযোগ হবে, তখন তো বাহিরের কাজ করব। কিন্তু নিরাপত্তায় যেন কোন উদাসিনতা না আসে। এটা শেষ কথা ছিলো, আর প্রথম কথা ছিলো নিজ দেহ সত্ত্বা সম্পর্কে। তাই শুধু নিজের জন্য নিরাপত্তা নয়, বরং জিহাদী আন্দোলনের জন্য নিরাপত্তা অবলম্বন করতে হবে।
আরও পড়ুন
Comment