আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত”
।।ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ১ম পর্ব
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত”
।।ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ১ম পর্ব
শাইখের মুখতাসার পরিচিতি
শাইখ সামী আল উরাইদি ছিলেন জামাআত কায়িদাতুল জিহাদের বিলুপ্ত শাম শাখা ‘জাবহাতুন নুসরাহ’র প্রধান শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ, মুফতি এবং বর্তমান শাখা তানযিম হুররাস-আদ-দ্বীনেরও প্রধান মুফতি। ১৯৭৩ সালে জর্ডানের আম্মানে জন্মগ্রহণকারী এই আলেম জামেয়া জর্ডান থেকে হাদিসের উপর পড়াশোনা করেন এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে হাদিসের উপর পিএইচডি করেন। তিনি প্রখ্যাত সিরিয়ান জিহাদি সমরকৌশলবিদ শাইখ আবু মুসআব আস-সুরী দ্বারা খুবই অনুপ্রাণিত ছিলেন। আফগানিস্তানে আল কায়েদার প্রখ্যাত জিহাদি সমরকৌশলবিদদের সাথে থেকে তিনি জিহাদ করেছিলেন, অতঃপর আল কায়েদার হয়ে ইরাকে লড়াই করেন এবং জাবহাতুন নুসরাহর প্রধান ছয় প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে আন নুসরাহ ফ্রন্টের ২য় প্রধান নেতা ছিলেন। সিরিয়াতে আন নুসরাহ ফ্রন্টের শক্ত অবস্থানের পেছনে আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি জিহাদ ও মুজাহিদদের নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি লিখেছেন। আধুনিক জিহাদের কর্মকৌশল নিয়ে তাঁর কিতাব ও ভিডিও মজলিসগুলো বিশ্বব্যাপী মুজাহিদদের মাঝে প্রভাব ফেলেছিল।
শাইখ আইমান আযযাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহর ভূমিকা
بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وآله وصحبه ومن والاه
আমি শাইখ সামী আল-উরাইদী হাফিজাহুল্লাহ প্রণীত نصائح للمجاهد في زمن الفتن রিসালা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আল্লাহর তাওফিকে আমি একে ফিতনা-ফাসাদের জমানায় মুজাহিদ ভাইদের জন্য স্বল্প পরিসরে একটি উপকারী পাথেয় গ্রন্থ হিসেবে পেয়েছি।
ফিতনার জমানায় মুজাহিদদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার সঠিক পথকে উপলব্ধি করা। কারণ হাতিয়ার ধারণ করা, কিতাল করা, ন্যায় সঙ্গতভাবে তা দিয়ে রক্ত ঝরানো, সঠিকভাবে মাল উসুল করে যথাস্থানে স্থাপন করা- এসব তার দায়িত্ব। প্রয়োজনে সে শত্রুকে বন্দি করবে, কখনো ধ্বংস করবে, কখনো নিশ্চিহ্ন করে দিবে।
এই সবকটি কাজ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, যার পরিণাম অনেক কঠিন। এসব ক্ষেত্রে যদি শরীয়তের বিধান মেনে না চলে তাহলে উল্টো নিজে ধ্বংস হবে, জমিনেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বসবে।
একজন মুজাহিদ শুধু মুজাহিদ হওয়ার কারণে অন্যায়-অপরাধ, গুনাহ ও বিদআত থেকে নিষ্পাপ নয়। অতীত ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, খারেজী সম্প্রদায় কীভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল, কীভাবে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের উপর তরবারি চালাল! রাফেজী সম্প্রদায় কেমন করে রাসূলের সাহাবীদেরকে অস্বীকার করে বসল! আমরা আরো দেখতে পাই, জালিম শাসকগণ কীভাবে ইসলামের বিধি-বিধানকে বাতিল সাব্যস্ত করল, শত শত ব্যক্তিকে হত্যা করল। এমন কি তারা কা’বাকে পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিল!
বর্তমান সময়ে আফগান জিহাদের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, আফগানিস্তান থেকে রুশবাহিনী চলে যাওয়ার পর তা কীভাবে ক্ষমতা, লুণ্ঠন ও ছিনতাইয়ের লড়াইয়ে পরিণত হল। এমনকি খোদ মুজাহিদদের মাঝেই বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। পরিশেষে আল্লাহ তা’আলা তালেবান আন্দোলনকে নির্বাচন করে আফগানিস্তানে ইসলামিক ইমারাহ প্রতিষ্ঠা করলেন। এভাবে মুসলমানরা ‘আমর বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকার’, শরীয়তের হুকুম বাস্তবায়ন এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের মাধ্যমে জিহাদের উৎকৃষ্ট ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়; যে বিষয়গুলো ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের হাতে প্রায় বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
উত্তর আফ্রিকায় আমরা দেখতে পাই, সেখানে বিজয়ের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছার পরও নির্বোধ ও চরমপন্থীদের অবাধ্যতার ফলে জিহাদি কাজ কীভাবে দমে গেল। আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে জিহাদের মিশনকে সঠিক পথে পরিচালনাকারী মুজাহিদদের ইস্তেকামাত এবং সৎকর্মশীলদের দৃঢ়তা না থাকলে জিহাদ একেবারে নিঃশেষ হয়ে যেত।
বসনিয়ায় দেখেছি, মুসলমানদের ইজ্জত রক্ষার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ থেকে কীভাবে মুজাহিদরা ভিড় করে ছিল। কিন্তু অবশেষে তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদদের ছাড়ের ফলে অন্যায় ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ল।
ফিলিস্তিনে দেখেছি, রাজনীতিবিদরা মুসলিম যুবকদের কুরবানিকে ফিলিস্তিন বিক্রেতাদের বৈধতার স্বীকৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের ধাঁধাঁয় ফেলে কীভাবে নষ্ট করে দিল।
আবু মুসআব ও আবু হামযা রাহিমাহুল্লাহ এ দুই শাইখের শাহাদাতের পর ইরাকে দেখেছি, ক্ষমতাশীলদের এক দল কীভাবে মুজাহিদ ভাইদের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিলো। যার ফলে তারা তাকফির, কতল, ধোঁকা ও মিথ্যা বলাকে বৈধ মনে করতে লাগল।
মোটকথা হলো, একজন মুজাহিদ শুধুমাত্র মুজাহিদ হওয়ার কারণে ফিতনা থেকে নিরাপদ নয়, গুনাহ থেকে নিষ্পাপ নয়। এ জন্য তার উপর আবশ্যিক করণীয় দায়িত্ব হচ্ছে, ফিতনা ও গুনাহ থেকে সর্বাত্মক বেঁচে থাকা। সংক্ষিপ্ত রিসালাটি আশা করি এ ব্যাপারে মুজাহিদদের জন্য সহায়ক হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন লেখককে এবং এ রিসালার মাধ্যমে উপকার প্রদানকারী, উপকার গ্রহণকারী সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين ، وصلى الله على سيدنا محمد و آله وصحبه وسلم
Comment