Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩১ || “ফিতনার যুগে মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।। ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ || ২য় পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩১ || “ফিতনার যুগে মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।। ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ || ২য় পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত

    ফিতনার যুগে
    মুজাহিদদের প্রতি নসিহত
    ।। ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||

    এর থেকে২য় পর্ব
    ভূমিকা

    الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على عبده و رسوله محمد و على الأنبياء و الرسل اجمعين، رب اشرح لي صدري و يسر لي أمري واحلل عقدة من لساني يفقهوا قولي ، وبعد :



    আল্লাহ তা’আলা বান্দাদেরকে ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক করে তার থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ ফিতনা এমন এক জিনিস, বান্দার জন্য আল্লাহর পথে চলার ক্ষেত্রে যার খারাপ প্রভাব রয়েছে। বান্দাকে সরল পথ থেকে সরিয়ে ফেলে অথবা তাকে বর্তমান সময়ের দাবি অনুযায়ী বৃহৎ উদ্দেশ্যের পরিবর্তে অন্য কাজে ব্যস্ত করে তোলেবৃহৎ উদ্দেশ্যটি হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর হুকুম বাস্তবায়ন।

    সুতরাং আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের মধ্য হতে যাকে নির্বাচন করেন, বৃহৎ উদ্দেশ্যটি উপলব্ধি করার ক্ষমতা যাকে দান করেন, যার মাধ্যমে বর্তমান সময়ে তা বাস্তবায়ন করার কাজ নেন সে এ বৃহৎ উদ্দেশ্য ও চূড়ান্ত লক্ষ্য থেকে ছোটখাটো কোনো উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের কারণে সরে আসতে পারে না, যা তাকে বৃহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কাজে সহায়ক হতে সক্ষম নয়। যদিও ছোটখাটো বিষয়গুলো মূলগতভাবে মুবাহের পর্যায়ভুক্ত। সময় সীমিত, দায়িত্ব অনেক বড়। অবশ্যই এটি আল্লাহর দীনের জন্য নুসরত। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন,

    قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّـهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّـهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ ﴿٢٤



    ‘বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।’ (সূরা তওবা ৯:২৪)

    যে দীনের নুসরত ও ইসলামী বিধান বাস্তবায়নের পথের পথিক তার জন্য আবশ্যক সব ধরণের প্রতিবন্ধকতা থেকে বেঁচে থাকা, যা তাকে শরীয়তের বিধান বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ফিতনা। এ জন্য ফিতনা যাকে পেয়ে বসে তাকে শুধু শরীয়ত বাস্তবায়নের পথেই বাধা দেয় না, বরং তাকে শরীয়তের এ মহান বিধানকে ধ্বংস করার মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলে। অনেক লোককেই ফিতনা পেয়ে বসেছে বর্তমান সময়ের বহু প্রেক্ষাপট এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সরল সঠিক পথ ও দৃঢ়তা দান করুন।

    লোকদেরকে সিরাতে মুসতাকিম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ফিতনা একটি ভয়াবহ বিষয় হওয়ার কারণে জামেয়ার অধিকাংশ কিতাবের অবস্থা হলো এই, যেগুলোর একটি বা একাধিক অধ্যায়ে শুধু ফিতনা ও তদসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আমরা যুগে যুগে প্রত্যেক শহরের আলেমদেরকে দেখেছি, তাঁরা এ বিষয়ে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন।

    সুতরাং বর্তমান সময়ে এ সুদৃঢ় পথের পথিক ও সুমহান দায়িত্বের ধারক-বাহকের উপর আবশ্যক হলো ফিতনা ও তার উপকরণ থেকে বেঁচে থাকা, এ পথের অন্যান্য ভাইদেরকেও ফিতনা থেকে সতর্ক করে দেয়া এবং ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা ও সতর্কতার জন্য পরস্পরে উপদেশমূলক আলোচনা করা। আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন,

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّـهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّـهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ ﴿٢٤ وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَّا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ﴿٢٥



    ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদেরকে সে কাজের প্রতি আহ্বান করা হয় যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। জেনে রেখো, আল্লাহ মানুষের এবং তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। বস্তুতঃ তোমরা সবাই তাঁরই নিকট সমবেত হবেআর তোমরা এমন ফাসাদ থেকে বেঁচে থাক, যা বিশেষতঃ শুধু তাদের উপরই পতিত হবে না যারা তোমাদের মধ্যে জালিম। জেনে রেখো, আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠিন।’ (সূরা আনফাল 8׃ ২৪-২৫)

    আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন,

    وَالْعَصْرِ ﴿١ إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ ﴿٢ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ﴿٣



    ‘কসম যুগের! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরে সদুপদেশ দেয় সত্যের, উপদেশ দেয় সবরের।’ (সূরা আসর ১০৩׃ -৩)

    ইমাম মুসলিম রহ. থেকে বর্ণিত, আব্দুর রহমান ইবনে আবদে রব্বে কা’ব রহ. বলেন, ‘আমি মসজিদে হারামে প্রবেশ করলাম, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. কা’বার ছায়ায় বসা ছিলেনআর লোকেরা তাঁর কাছে জমায়েত হলআমিও তাদের সাথে বসে গেলাম। তিনি বলতে লাগলেন, ‘আমরা এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। পথে আমরা এক জায়গায় অবস্থান করি। সেখানে আমাদের কেউ তাঁবু ঠিক করছিল, কেউ তীর প্রতিযোগিতা করছিল, কেউ তাদের গোত্রের সাথে অবস্থান করছিলএমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষক ঘোষণা দিতে লাগল, নামাজের সময় হয়ে গেছে। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে হাজির হলাম। তিনি বললেন, ‘আমার পূর্বে প্রত্যেক নবীর উপর দায়িত্ব ছিল তিনি যা ভালো কিছু জানতেন তা উম্মতের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া এবং মন্দ বিষয়ের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা। আর এ জাতির প্রথম অংশকে ফিতনা মুক্ত রাখা হয়েছে। এ জাতির শেষ ভাগে এমন মসিবত এবং মন্দ বিষয় আত্মপ্রকাশ করবে যা তোমরা অপছন্দ করে থাক, এমন ফিতনা আসবে যা পরস্পরে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। যখন ফিতনার আগমন ঘটবে তখন মুমিন বলবে, এ ফিতনা আমার ধ্বংসের কারণ। অতঃপর ফিতনা থেকে মুক্তি লাভ করবেআরেক ফিতনা আসবে তখনও মুমিন এই সেই বলতে থাকবেসুতরাং যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে চায়, জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়- তার কাছে যেন আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান থাকা অবস্থায় মৃত্যু এসে যায়। এবং সে যেন এমন লোকের কাছে চলে আসে যার কাছে আসা পছন্দনীয়। যে ব্যক্তি কোনো ইমামের হাতে বাইআত গ্রহণ করল, অতঃপর তাকে তার হাত ও অন্তরের খোরাকী দান করল- সে যেন যতটুকু সম্ভব তার অনুসরণ করে। যদি অন্য কেউ তার বিরুদ্ধাচরণ করতে আসে তাহলে তোমরা ভিন্ন লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেবে।’

    যয়নাব বিনতে জাহাশ রা. এর সূত্রে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,

    أَنَّ زَيْنَبَ بِنْتَ جَحْشٍ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا فَزِعًا مُحْمَرًّا وَجْهُهُ يَقُولُ ‏"‏ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذِهِ ‏"‏ ‏.‏ وَحَلَّقَ بِإِصْبَعِهِ الإِبْهَامِ وَالَّتِي تَلِيهَا ‏.‏ قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ قَالَ ‏"‏ نَعَمْ إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ ‏"‏.



    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী যাইনাব বিনতু জাহ্শ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

    তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বের হলেন। তখন তাঁর বরকতময় চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করলো। তিনি বলছিলেন, ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। আরব বিশ্বের আগত অকল্যাণের দরুন বড়ই পরিতাপ যা প্রায় ঘনিয়ে আসছে। আজ ইয়া’জূজ মা’জূজ এর প্রাচীর এতটুকু পরিমাণ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এ সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি ও শাহাদাত আঙ্গুলির দ্বারা বেড় বানালেন।

    আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মাঝে অনেক সৎ লোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপাচার অধিক পরিমাণে বেড়ে যাবে। (ই.ফা. ৬৯৭৩, ই.সে. ৭০৩১)

    উসামা ইবনে যায়েদ রা. এর সূত্রে বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,

    عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْد ٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ أَشْرَفَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى أُطُمٍ مِنْ آطَامِ الْمَدِينَةِ فَقَالَ ‏"‏ هَلْ تَرَوْنَ مَا أَرَى ‏"‏‏.‏ قَالُوا لاَ‏.‏ قَالَ ‏"‏ فَإِنِّي لأَرَى الْفِتَنَ تَقَعُ خِلاَلَ بُيُوتِكُمْ كَوَقْعِ الْقَطْرِ ‏"‏‏.‏



    উসামা ইবনে যায়েদ রা. বলেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার টিলাসমুহের একটির উপর উঠে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাও? উত্তরে সাহাবা-ই-কিরাম বললেন, না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিঃসন্দেহে আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ফিতনা বৃষ্টিধারার মতো নিপতিত হচ্ছে। (বুখারী-৬৫৮২)


    বিষয়টি যখন এমনই, তাই আমি বর্তমান সময়ে খোদা প্রদত্ত শরীয়ত ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট বন্ধু-বান্ধবদের সামনে উল্লিখিত আলোচ্য বিষয়ে এ নসিহতটি উপস্থাপন করলাম।






    আরও পড়ুন
    ১ম পর্ব ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------ ৩য় পর্ব


    Last edited by tahsin muhammad; 2 days ago.

  • #2
    মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে কিন্তু ফিতনা থেকে বাঁচার উপায় গুলো বললে ভালো হত আরকি।

    Comment


    • #3
      উসামা ইবনে যায়েদ রা. বলেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার টিলাসমুহের একটির উপর উঠে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাও? উত্তরে সাহাবা-ই-কিরাম বললেন, না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিঃসন্দেহে আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ফিতনা বৃষ্টিধারার মতো নিপতিত হচ্ছে। (বুখারী-৬৫৮২)
      ইয়া রব্বাল 'আ-লামী-ন! আপনি দয়া করে আমাদেরকে ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাইখেন। আমীন।
      হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

      Comment

      Working...
      X