আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৮ম পর্ব
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৮ম পর্ব
আমর বিল মারূফ, নাহি আনিল মুনকার এবং হকের দাওয়াত
ফিতনার জমানায় মুক্তির যে সব পথ শরীয়ত কর্তৃক বর্ণিত তা হচ্ছে, সৎপথের নসিহত, আমর বিল মা’রূফ, নাহি আনিল মুনকার। এসব আমল ব্যক্তি ও সমাজকে ফিতনার জমানায় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষ করার উপযুক্ত মাধ্যম। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ ۗوَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ﴿١١٦﴾
‘তাহলে তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে এমন সৎকর্মশীল কেন রইল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে বাধা দিত; তবে মুষ্টিমেয় লোক ছিল যাদেরকে আমি তাদের মধ্য হতে রক্ষা করেছি। আর পাপিষ্ঠরা তো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল যার সামগ্রী তাদেরকে যথেষ্ট দেয়া হয়েছিল। আসলে তারা ছিল মহাঅপরাধী।’ –(সূরা হুদ 11:১১৬)
আল্লাহর বাণী,
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ ۚأُولَـٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّـهُ ۗإِنَّ اللَّـهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴿٧١﴾
‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ -সূরা তাওবা 9:৭১
সুতরাং আল্লাহর রহমত ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের উপর বর্ষিত হয়। আর আমর বিল মা’রূফ, নাহি আনিল মুনকার অবশ্যই একটি সৎকর্ম।
আল্লাহ তা’আলার ইরশাদ,
وَاسْأَلْهُمْ عَنِ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَتْ حَاضِرَةَ الْبَحْرِ إِذْ يَعْدُونَ فِي السَّبْتِ إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَانُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ ۙلَا تَأْتِيهِمْ ۚكَذَٰلِكَ نَبْلُوهُم بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ﴿١٦٣﴾
وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا ۙاللَّـهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا ۖقَالُوا مَعْذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ﴿١٦٤﴾فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ﴿١٦٥﴾فَلَمَّا عَتَوْا عَن مَّا نُهُوا عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ﴿١٦٦﴾
وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا ۙاللَّـهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا ۖقَالُوا مَعْذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ﴿١٦٤﴾فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ﴿١٦٥﴾فَلَمَّا عَتَوْا عَن مَّا نُهُوا عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ﴿١٦٦﴾
‘আর তাদের কাছে সে জনপদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর যা ছিল নদীর তীরে অবস্থিত। যখন শনিবার দিনের নির্দেশের ব্যাপারে সীমাতিক্রম করতে লাগল, যখন আসতে লাগল মাছগুলো তাদের কাছে শনিবার দিন পানির উপর, আর যেদিন শনিবার হতো না, আসত না। এভাবে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। কারণ, তারা ছিল নাফরমান। আর যখন তাদের মধ্য থেকে এক সম্প্রদায় বলল, কেন সে লোকদের সদুপদেশ দিচ্ছেন, যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিতে চান কিংবা আযাব দিতে চান কঠিন আযাব? সে বলল, তোমাদের পালনকর্তার সামনে দোষ ফুরাবার জন্য এবং এ জন্য যেন তারা ভীত হয়। অতঃপর যখন তারা সেসব বিষয় ভুলে গেল, যা তাদেরকে বোঝানো হয়েছিল, তখন আমি সেসব লোককে মুক্তি দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম গুনাহগারদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের নাফরমানীর দরুন। তারপর যখন তারা এগিয়ে যেতে লাগল সে কর্মে যা থেকে তাদের বারণ করা হয়েছিল, তখন আমি নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।’ -সূরা আরাফ 7: ১৬৩-1৬৬
সায়্যিদ কুতুব রহ. এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে বলেন,
‘সুতরাং এটা হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব, আমরা তা আদায় করব। সৎ কাজের আদেশ করব, অসৎ কাজ থেকে বারণ করব; আল্লাহর বিধিবিধান লঙ্ঘন করার ভয় দেখাব। যাতে করে আল্লাহর কাছে আমরা ওযরখাহী করতে পারি। তিনি যেন জানেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পূরণ করেছি। তাহলে হতে পারে এসব কঠিন হৃদয়ে নসিহতগুলো কাজে লাগবে, তাকওয়ার উপলব্ধি আসবে।
শহরের লোকজন তিন শ্রেণী বা তিন জাতিতে বিভক্ত। ইসলামী পরিভাষায় সেসব মানুষের সমষ্টিকে উম্মত বলা হয়, যারা আকিদা ও চলন-বলনে এক ধর্মের, যাদের নেতৃত্বও এক। অতীত বা বর্তমান জাহেলী মতবাদ যে সংজ্ঞা উপস্থাপন করে সেভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। জাহেলী সংজ্ঞা হচ্ছে, মানুষের এমন সমষ্টি, যারা এক ভূখণ্ডে বাস করে, যাদেরকে এক সরকার শাসন করে। এটা এমন বুঝ যাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এটা অতীত বা বর্তমান কোনো জাহেলী পরিভাষা হবে। আবার কখনো এক গ্রামের অধিবাসীই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত থাকে। এক শ্রেণী আছে, যারা গুনাহগার প্রতারক। আরেক শ্রেণী আছে যারা অস্বীকৃত, ব্যাখ্যা, নসিহতের মাধ্যমে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গুনাহ ও প্রতারণার পথে চলে। তৃতীয় প্রকার হচ্ছে যারা মুনকার ও আহলে মুনকারকে ছেড়ে দিয়ে নেতিবাচক অস্বীকৃতির যায়গায় অবস্থান করে; কিন্তু তাকে ইতিবাচক আমলের মাধ্যমে দূর করে না। এগুলো কাল্পনিক অনেক পথ ও পদ্ধতি, যা তিন শ্রেণীকে তিন জাতিতে পরিণত করেছে। সুতরাং যখন সে উপদেশ খোঁজে পায় না, নসিহত তার কোনো কাজে আসে না এবং সে বিভ্রান্তির মাঝেই চলতে থাকে তখন আল্লাহর কালিমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয়, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত হয়। যারা অন্যায়কে বারণ করে তাদেরকে রক্ষা করা হয়, আর অবাধ্য কাফেরদেরকে কঠিন আযাব দ্বারা পাকড়াও করা হয়। অপর দিকে তৃতীয় প্রকার লোক বা জাতি যাদের ব্যাপারে কুরআনে কারিম নীরব- তাদের বিষয়টি হালকাভবে নিয়ে যদিও তাদেরকে আযাবের দ্বারা পাকড়াও করা হবে না; কারণ তারা ইতিবাচক অস্বীকৃতিকে উপেক্ষা করে নেতিবাচক অস্বীকৃতির সীমায় অবস্থান করেছে, তারপরও তারা অবহেলার উপযুক্ত, যদিও শাস্তি দেয়া হবে না।
فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ﴿١٦٥﴾فَلَمَّا عَتَوْا عَن مَّا نُهُوا عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ﴿١٦٦
‘অতঃপর যখন তারা সেসব বিষয় ভুলে গেল, যা তাদেরকে বুঝানো হয়েছিল, তখন আমি সেসব লোককে মুক্তি দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম গুনাহগারদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের নাফরমানীর দরুন। তারপর যখন তারা এগিয়ে যেতে লাগল সে কর্মে, যা থেকে তাদের বারণ করা হয়েছিল, তখন আমি নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।’ -সূরা আরাফ 7: 165-১৬৬
কুরআনী নস যে অবাধ্যতার কথা উল্লেখ করেছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য কুফর। যাকে কোনো সময় যুল্ম শব্দে কখনো ফিস্ক শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। যেমনিভাবে কুফর-শিরককে কুরআনের ভাষায় অধিকাংশ জায়গায় যুল্ম ও ফিস্ক শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এগুলো এমন কিছু শব্দ যা পরবর্তী ফিকহী পরিভাষার বিপরীত। কারণ, কুরআন যে অর্থটি উদ্দেশ্য করেছে তা পরবর্তীতে ফিকহী আন্দাজে প্রকাশিত অর্থের সাথে হুবহু মিল নেই। সুতরাং উল্লিখিত আয়াতে কঠিন শাস্তি যা ধূর্ত অবাধ্যদের উপর আরোপিত হয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানবাকৃতি থেকে বানরাকৃতিতে পরিণত হওয়া। যখন তারা মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে তখন মনুষ্যত্বও হারিয়েছে। তারা পশুর জগতে পারি জমিয়েছে যখন মানুষের গুণকে পদদলিত করেছে। তাদেরকে বলা হলো, তারা নিজেদের জন্য যেভাবে লাঞ্ছনা ও অবমাননার ইচ্ছা করছে সেভাবে যেন হয়ে যায়। সুতরাং কীভাবে তারা বানরে পরিণত হল? বানর হওয়ার পর তাদের কী হল? তারা কি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল যেভাবে প্রত্যেক বিকৃত জিনিস তার জাতি থেকে বেরিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়? নাকি বানর থাকা অবস্থায় তাদের বংশানুক্রম চলতে থাকে? ........ এসব বিষয়ে তাফসীরে অনেক বর্ণনা রয়েছে। এসব ব্যাপারে কুরআনুল কারিম নীরব। হাদিসে রাসূলেও এ ব্যাপারে কোনো কিছু বর্ণিত হয়নি। অতএব, এ জাতীয় ব্যাপার নিয়ে আমাদের তলিয়ে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই।’ - ফী যিলালিল্ কুরআন:৩/১৩৮৪
হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত:
عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ كُنَّا عِنْدَ عُمَرَ فَقَالَ أَيُّكُمْ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ الْفِتَنَ فَقَالَ قَوْمٌ نَحْنُ سَمِعْنَاهُ . فَقَالَ لَعَلَّكُمْ تَعْنُونَ فِتْنَةَ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَجَارِهِ قَالُوا أَجَلْ . قَالَ تِلْكَ تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ وَلَكِنْ أَيُّكُمْ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ الْفِتَنَ الَّتِي تَمُوجُ مَوْجَ الْبَحْرِ قَالَ حُذَيْفَةُ فَأَسْكَتَ الْقَوْمُ فَقُلْتُ أَنَا . قَالَ أَنْتَ لِلَّهِ أَبُوكَ . قَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا فَأَىُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ وَأَىُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلاَ تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ وَالآخَرُ أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلاَّ مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ " . قَالَ حُذَيْفَةُ وَحَدَّثْتُهُ أَنَّ بَيْنَكَ وَبَيْنَهَا بَابًا مُغْلَقًا يُوشِكُ أَنْ يُكْسَرَ . قَالَ عُمَرُ أَكَسْرًا لاَ أَبَا لَكَ فَلَوْ أَنَّهُ فُتِحَ لَعَلَّهُ كَانَ يُعَادُ . قُلْتُ لاَ بَلْ يُكْسَرُ . وَحَدَّثْتُهُ أَنَّ ذَلِكَ الْبَابَ رَجُلٌ يُقْتَلُ أَوْ يَمُوتُ . حَدِيثًا لَيْسَ بِالأَغَالِيطِ . قَالَ أَبُو خَالِدٍ فَقُلْتُ لِسَعْدٍ يَا أَبَا مَالِكٍ مَا أَسْوَدُ مُرْبَادًّا قَالَ شِدَّةُ الْبَيَاضِ فِي سَوَادٍ . قَالَ قُلْتُ فَمَا الْكُوزُ مُجَخِّيًا قَالَ مَنْكُوسًا .
অর্থ:হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদিন আমরা উমর রা. এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছ? উপস্থিত একদল বললেন, আমরা শুনেছি। উমর রা. বললেন, তোমরা হয়ত একজনের পরিবার ও প্রতিবেশীর ফিতনার কথা মনে করেছ। তারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই। তিনি বললেন, সালাত, রোযা ও সাদকার মাধ্যমে এগুলোর কাফফরা হয়ে যায়। উমর রা. বললেন, না! আমি জানতে চেয়েছি, তোমাদের কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সে বৃহৎ ফিতনার কথা আলোচনা করতে শুনেছে, যা সমুদ্র তরঙ্গের মত ধেয়ে আসবে? হুযাইফা রা. বলেন, প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। আমি বললাম, আমি শুনেছি। উমর রা. বললেন, তুমি শুনেছ, মা-শা আল্লাহ। হুযাইফা রা. বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, চাটাই বুননের মতো এক এক করে ফিতনা মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে যায়, তাতে একটি করে কালো দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান কবে, তাতে একটি করে শুভ্রোজ্জ্বল চিহ্ন পড়বে। এমনি করে দুটি অন্তর দু’ধরণের হয়ে যায়। একটি শ্বেত পাথরের মত; আসমান ও জমিন যতদিন থাকবে ততদিন কোনো ফিতনা তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর অপরটি হয়ে যায় উল্টানো কালো কলসির মত, প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা সেধে দিয়েছে তা ছাড়া ভাল-মন্দ বলতে সে কিছুই চিনে না। হুযাইফা রা. বলেন, উমর রা.-কে আরো বললাম, আপনি এবং সে ফিতনার মধ্যে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। অচিরেই সেটি ভেঙে ফেলা হবে। উমর রা. বললেন, সর্বনাশ! তবু ভেঙে ফেলা হবে? যদি ভেঙে ফেলা না হতো, তাহলে হয়ত পুনরায় বন্ধ করা যেত। হুযাইফা রা. উত্তর করলেন, না ভেঙে ফেলাই হবে। হযাইফা রা. বলেন, আমি উমর রা.-কে এ কথাও শুনিয়েছি, সে দরজাটি হলো একজন মানুষ; সে নিহত হবে কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবে। এটি কোনো গল্প নয় বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস বর্ণনাকারী আবু খালিদ বলেন, আমি সা’দকে জিজ্ঞেস করলাম, এর অর্থ কী? উত্তরে তিনি বললেন, ‘কালো-সাদায় মিশ্রিত রং’। আমি বললাম, এর অর্থ কী? তিনি বললেন, ‘উল্টানো কলসি’।’ - মুসলিম:১৪৪
নু’মান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত।
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَثَلُ الْقَائِمِ عَلَى حُدُودِ اللَّهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا كَمَثَلِ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا عَلَى سَفِينَةٍ، فَأَصَابَ بَعْضُهُمْ أَعْلاَهَا وَبَعْضُهُمْ أَسْفَلَهَا، فَكَانَ الَّذِينَ فِي أَسْفَلِهَا إِذَا اسْتَقَوْا مِنَ الْمَاءِ مَرُّوا عَلَى مَنْ فَوْقَهُمْ فَقَالُوا لَوْ أَنَّا خَرَقْنَا فِي نَصِيبِنَا خَرْقًا، وَلَمْ نُؤْذِ مَنْ فَوْقَنَا. فَإِنْ يَتْرُكُوهُمْ وَمَا أَرَادُوا هَلَكُوا جَمِيعًا، وَإِنْ أَخَذُوا عَلَى أَيْدِيهِمْ نَجَوْا وَنَجَوْا جَمِيعًا
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমায় প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে তাতে সীমালঙ্ঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মতো, যারা এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিলো। তাদের কেউ স্থান পেল উপর তলায় আর কেউ নীচ তলায় (পানির ব্যবস্থা ছিল উপর তলায়)। কাজেই নীচতলার লোকেরা পানি সংগ্রহকালে উপর তলার লোকদের ডিঙ্গিয়ে যেত। তখন নীচতলার লোকেরা বলল, উপর তলার লোকদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নেই (তবে ভালো হয়)। এমতাবস্থায় তারা যদি এদেরকে আপন মর্জির উপর ছেড়ে দেয় তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে রাখে তবে তারা এবং সকলেই রক্ষা পাবে।’ -বুখারী: ২৪৯৩
সুতরাং যখন ফিতনা ও অবাধ্যতা ছেয়ে যায় এবং সমাজে তার বিস্তৃতি ঘটে তখন ‘আমর বিল মা’রূফ, নাহি আ’নিল মুনকার’ একটি উপযুক্ত মুক্তির পথ ।