Announcement

Collapse
No announcement yet.

গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (তৃতীয় পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (তৃতীয় পর্ব)

    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন
    (তৃতীয় পর্ব)
    ভোট, নির্বাচন, শুরা ও খিলাফাহ : বিশ্লেষণ ও বিধান
    ইসলাম ও গণতন্ত্রদুটি বিপরীতমুখী জীবনব্যবস্থা। দুটির অবস্থান দুই মেরুতে। এ দুটি জীবনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দুটি অনুষঙ্গ হলো, শুরাব্যবস্থা ও নির্বাচন। যার একটি ইমান ও হক এবং অপরটি কুফর ও বাতিল। ইসলামি শুরাব্যবস্থা হলো ইসলামি নিয়মে মুসলিম জাহানের খলিফা নির্ধারণের শরিয়া-নির্ধারিত একটি পদ্ধতি। আর গণতান্ত্রিক নির্বাচন হলো সার্বভৌমত্বের দাবিদার ও আইন প্রণয়নকারী জনপ্রতিনিধি নির্ধারণের একটি পদ্ধতি। একটি হলো শারিয়াহ-অনুমোদিত ইসলামি ব্যবস্থার অংশ, আর অন্যটি হলো মানবরচিত কুফরি ব্যবস্থার অনুষঙ্গ। একটি হলো আর-রহমানের পথ, আর অপরটি হলো বিতাড়িত শয়তানের পথ।

    সংজ্ঞা ও পরিচয় :
    নির্বাচন হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এমন একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জনগণ আইন প্রণয়ন ও প্রশাসনিক কাজের জন্য একজন প্রতিনিধিকে বেছে নেয়। ("Election (political science)" Encyclpoedia Britanica Online. Accessed August 18, 2009)
    অর্থাৎ রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন-যাপনের পদ্ধতি প্রণয়ন, তাদের সকল সংকট-সমস্যার বিচারকরণ, তাদেরকে পরিচালনার উদ্দেশ্যে শাসক নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনগণ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। প্রকৃত অর্থে নির্বাচন হলো, জনগণ নিজেদের জন্যে বিধানদাতা, জীবনব্যবস্থা প্রণেতা ও আনুগত্য করার জন্য কোনো উপাস্যকে বাছাই করার প্রক্রিয়া।

    নির্বাচনের সূচনা :
    নির্বাচন সম্পর্কে Encyclopedia man, myth's magic- এ বলা হয়েছে :
    Election, the word derived from the Greek word eloge (choice).The idea is basic to the traditional structure of Christian theology.
    অর্থাৎ নির্বাচনশব্দটি উৎসরিত হয়েছে গ্রীক শব্দ Eloge হতে, যার অর্থ হলো পছন্দ। নির্বাচনের ধারণা প্রাচীন খ্রিষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের ঐতিহ্যগত কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত।

    প্রাচীন কালে নির্বাচন :
    প্রাচীন কাল থেকেই গ্রিস ও রোমে নির্বাচন পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে এবং গোটা মধ্যযুগে রোমান সম্রাট ও পোপের মতো ধর্মীয় নেতা বাছাই করতেও নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করা হতো। ("Election (political science)," Encyclpoedia Britanica Online. Accessed August 18, 2009)
    প্রাচীন ভারতে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজারা তাদের রাজা নিযুক্ত করত। বাংলার মধ্যযুগের গোড়ার দিকে পাল রাজাদের মধ্যে গোপালকে রাজা নিযুক্ত করতে নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল। (History of Buddhism in India, Translation: A. Shiefner.)

    আধুনিক কালে নির্বাচন :
    সপ্তদশ শতাব্দির দিকে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের চিন্তাধারা শুরু হয়। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সংস্কৃতিতে প্রভাবশালী গোষ্ঠী ছিল পুরুষরাই। নির্বাচকমণ্ডলীতেও তাই এদেরই প্রাধান্য থাকত। অন্যান্য বহু দেশেও একই ধারা চলে আসছিল। গ্রেট ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতেও শুরুর দিকের নির্বাচনে জমিদার অথবা শাসক শ্রেণির পুরুষদের প্রাধান্য ছিল। ১৯২০ সাল পর্যন্ত অবশ্য পশ্চিম ইউরোপের সমস্ত দেশে এবং উত্তর আমেরিকায় শুধু পুরুষদেরই ভোটাধিকার চালু ছিল। এর পর থেকেই বিভিন্ন দেশে মহিলাদের ভোটাধিকার দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। ১৮৩২ সালে প্রথম সংস্কার আইনে সমস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ভোটাধিকার দেওয়া হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৮৬৭ সালে কারখানার শ্রমিকদের, ১৮৮৪ সালে কৃষি মজুরদের, ১৯১৮ সালে সীমিত সংখ্যক নারীদের এবং ১৯২৮ সালে সকল নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়।

    এ ব্যবস্থায় দীর্ঘকাল পর্যন্ত দরিদ্র মানুষ, দিনমজুর ও নারীদেরকে ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি। অথচ বর্তমানে একজনের নির্বাচন অধিকার না থাকা তাদের দৃষ্টিতেও নিন্দনীয়! এভাবে মানব মস্তিষ্ক থেকে নির্গত এসব ফয়সালা একসময় তারা নিজেরাই বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মানবরচিত আইন-কানুন অপূর্ণাঙ্গতার কারণে কিছু দিন পরপরই পাল্টায়। আর তাই এটা কখনো প্রকৃত জীবনব্যবস্থা হতে পারে না।

    গণতন্ত্র খ্রিষ্টানদের বানানো একটি তন্ত্র :
    গণতন্ত্র যে খ্রিষ্টানদের বানানো একটি জীবনব্যবস্থা, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। "Encyclopedia Man, Myth's magic" গ্রন্থে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে :
    ’’However that the doctrine of election found its most notable expression in Christianity.’’
    অর্থাৎ যাই হোক, নির্বাচনের এ মতবাদটির উল্লেখযোগ্য অভিব্যক্তি খ্রিষ্টানদের (বিকৃত) ধর্মতত্ত্বের মাঝে পাওয়া যায়।

    নির্বাচন ও শুরাব্যবস্থা কি এক?
    এটা স্বীকৃত ও সন্দেহাতীত বিষয় যে, ইসলাম ও গণতন্ত্র দুটি ভিন্ন জীবনব্যবস্থা, দুটি আলাদা দ্বীন। তেমনই ইসলামের শুরাব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতি দুটিও ভিন্ন। অনেকেই মনে করেন, শুরাব্যবস্থা মানে একজন মুসলিমের মতামত গ্রহণ। অতএব যদি কোনো মুসলিম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ভোট দেয় তাহলে তার এ ভোট প্রদান অনেকটা শুরাব্যবস্থারই অনুরূপ। কিন্তু মূলত ব্যাপারটি তা নয়। বোঝার সুবিধার্থে আমরা এখানে একটি উদাহরণ পেশ করছি।
    মনে করুন, কারও টেবিলের ওপর সুন্দর মলাটবদ্ধ দুটি বই আছে। এখন প্রথম বইটি খুলে দেখা গেলো, তা আল্লাহর তাআলার অবতীর্ণকৃত আল-কুরআন আর দ্বিতীয় বইটি খুলে দেখা গেল, তা কালমার্ক্সের রচিত দ্যা ক্যাপিটাল এখন কথা হচ্ছে, দুটি বই-ই সুন্দর মলাটে বাঁধাইকৃত, দুটি বই-ই কাগজের এবং দুটি বই-ই কালো কালিতে লেখা। এখন আংশিক এ সাদৃশ্যের কারণে কি বই দুটিকে একই মানের বলা যাবে? দুটিকে কি একই বা কাছাকাছি স্তরের বলার কোনো অবকাশ আছে। নাউযুবিল্লাহ! যে উভয়টিকে একই বা কাছাকাছি স্তরের বলে বিশ্বাস করবে, নিশ্চয়ই তার ইমান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। হয় সে ইসলাম ও কুফরের পার্থক্য সম্পর্কে অজ্ঞ, নয়তো সে দ্বীন ও শরিয়ত নিয়ে ঠাট্টাকারী।
    আবার অনেকেই গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে থাকেন। এজন্য তারা জনগণকে ইসলামি গণতন্ত্রের দাবিদার কোনো দলকে ভোটদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করে এবং ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। এবার আমরা আগের মতো আরেকটি বাস্তব উদাহরণ দেখি। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে ইসলামকে অন্যান্য বাতিল ধর্মের ওপর বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে। কুরআনের মাঝে দ্বীনকে বিজয়ী করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনীতেও রয়েছে এর প্রায়োগিক উদাহরণ। এখন আমরা উপরিউক্ত উদাহরণের মতোই এখানে আরেকটি প্রশ্ন করতে পারি যে, কালমার্ক্স রচিত দ্যা ক্যাপিটালও তো একটি জীবনব্যবস্থা। এখন কোনো দল যদি এটা দিয়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাহলে কি তা সম্ভব? উত্তর হবে, অবশ্যই না। তাহলে অহেতুক কেন আমরা কুরআনি নির্দেশনা ও নববি আদর্শের বাইরে গিয়ে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করছি, যা পুরোপুরিই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক? এটা কি আগুন ও পানিকে একসাথে রাখার মতো ব্যাপার নয়? নাকি আমরা প্রকারান্তরে এটা বলতে চাচ্ছি যে, ইসলাম আমাদেরকে এমন একটি অপূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা দিয়ে গিয়েছে, যেখানে কুফরি তন্ত্রের আশ্রয় নেওয়া ব্যতীত ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়? নাউজুবিল্লাহ!
    এটা ঠিক যে, ইসলামে বিশেষ অপারগ হালতে ও একান্ত নিরূপায় অবস্থায় ব্যক্তির জন্য কুফরি কথা উচ্চারণ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে পুরো মুসলিম উম্মাহকে কুফরি তন্ত্রের মডেলে চলতে হবে, এটা কেমন ওজর? এটা কি আদৌ বিশেষ অপারগ অবস্থায় কুফরি কথা বলার মতো ব্যাপার? কুরআনে বিশেষ যে অপারগ অবস্থায় কুফরি কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেটা একে তো একান্ত বাধ্য হয়ে নিরূপায় হলে, যেখানে প্রাণ বা অঙ্গহানির প্রবল আশঙ্কা থাকে, দ্বিতীয়ত এটা হলো সাময়িক, দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী কোনো অনুমোদন নয়, তৃতীয়ত তা কেবল একান্ত বাধ্য ও অপারগ ব্যক্তিবিশেষের জন্য, একসাথে সমগ্র উম্মাহর জন্য নয়, চতুর্থত এটা শুধু কথার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, এখানে কুফরি কাজের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়গুলো বিজ্ঞ আলিমদের অজানা নয়।
    এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই যে কুফরি সিস্টেমের অনুষঙ্গ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার ব্যর্থ প্রয়াস, এটা কি একান্ত নিরূপায় ও বাধ্য হয়ে করা হচ্ছে, যেখানে প্রাণ বা অঙ্গহানির প্রবল আশঙ্কা বিদ্যমান, নাকি নববি মানহাজের বিপরীতে হিকমাহ ও কৌশলের অজুহাতে কুফরি পদ্ধতির অনুগামী হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার দিবাস্বপ্ন এটা? দ্বিতীয়ত, যদি এটা মেনেও নেওয়া হয় যে, কুফরি সিস্টেমে যাওয়াটা ছিল একান্ত অপারগতা ও বাধ্যতার শিকার হয়ে, তাহলে প্রশ্ন হলো এটা কি সাময়িক নাকি যুগ যুগ ধরে চলে আসা দীর্ঘমেয়াদি কর্মপন্থা? প্রায় শত বছর হতে চলল এ ধারার মেহনত, কিন্তু আজ পর্যন্ত কি আল্লাহর জমিনের কোথাও ইসলাম প্রতিষ্ঠার নজির দেখানো গেছে? বস্তুত সহস্র বছর চলে গেলেও এ সিস্টেমে কোনোদিন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিক্ত এ সত্য মানুষ যত আগে বুঝবে, উম্মাহর জন্য ততই কল্যাণ। তৃতীয়ত, কুফরে লিপ্ত হওয়ার অপারগতা তো বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ দলের কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। এটা অসম্ভব যে, আল্লাহ তাআলা পুরো দুনিয়ার সকল মুসলিমকে এমন অপারগ অবস্থায় ফেলবেন যে, সমগ্র উম্মাহ যুগ যুগ ধরে শতাব্দিকাল পর্যন্ত কুফরে লিপ্ত থাকতে বাধ্য থাকবে। এটা মূলত অপারগতা নয়; বরং নিজেদের ওপর চাপিয়ে নেওয়া জুলুমের বোঝা। নয়তো যারা নববি মানহাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করছে তারা ঠিকই বিশ্ববাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, কুফরি ব্যবস্থার অংশ না হয়ে নববি মানহাজের ওপর চললে আজকের যুগেও ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। চতুর্থত, কুরআনে একান্ত নিরূপায় ও বিশেষ অপারগ অবস্থায় অন্তরে ইমান ঠিক রাখার শর্তে মুখে কেবল কুফরি কথা উচ্চারণের অনুমতি দিয়েছে, কুফরি কর্মের নয়। অথচ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মতো কুফরি পদ্ধতিতে শুধু কুফরি কথারই স্বীকৃতি দিতে হয় না; বরং অনেক কুফরি কর্মেরও অংশীদার হতে হয়। এছাড়াও এতে আরও অনেক শারয়ি সমস্যা ও আপত্তি রয়েছে, যা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলে কলেবর অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। এত এতে সমস্যা থাকার পরেও এটা কী করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার অনুমোদিত পন্থা হতে পারে? পূর্বের একদল আলিম তো এটাকে স্রেফ একটি অপারগতাবশত কর্মপন্থা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু বর্তমানে অনেকে এটাকে আর কর্মপন্থা হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নয়; বরং তারা এখন এটাকে নিজেদের আকিদার অংশ বানিয়ে নিয়েছে, যা তাদের বক্তব্য, আচার-আচরণ ও কর্মপন্থায় পরিষ্কারভাবেই পরিলক্ষিত হয়।

    ভোট কি শুরাব্যবস্থা?
    বর্তমানে একদল আলিম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভোট পদ্ধতিকে ইসলামি শুরাব্যবস্থার প্রতিরূপ বলে থাকেন। তারা সাধারণ মুসলিমদেরকে এ আয়াত থেকে দলিল দিয়ে থাকেন :
    إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا
    নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ তার হকদারদের নিকট পৌঁছে দাও। [সুরা আন-নিসা : ৫৮]
    এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তারা বলেন, ভোট যেহেতু একটি মতামত ও পরামর্শ, তাই এটিও একটি আমানত। আর তাই এ আমানত তার হকদার বা উপযুক্ত প্রাপকের নিকট পৌঁছে দিতে হবে। অর্থাৎ যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তাদেরকে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে আমানতকে যথাযথ স্থানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আসুন, আমরা নিম্নোক্ত আলোচনায় দেখার চেষ্টা করি, শরিয়তের আলোকে ভোট কি আদৌ সাধারণ মতামত নাকি ভিন্ন কিছু?

    ভোট ও শুরার মধ্যকার মৌলিক কিছু পার্থক্য :
    প্রথমত, ইসলামে শুরাব্যবস্থা হলো মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ, যা খলিফার জন্য মানা বা না মানা উভয়টির অবকাশ আছে। খলিফার জন্য এটাকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তরূপে গ্রহণ করা জরুরি নয়। এমনকি খলিফা ভালো ও কল্যাণকর মনে করলে শুরার অধিকাংশ সদস্যের পরামর্শের বিপরীতে ভিন্ন সিদ্ধান্তও দিতে পারেন। কিন্তু ভোটের ক্ষেত্রে অধিকাংশের রায়কে প্রত্যাখ্যান করা যায় না; বরং আইন অনুসারে বাধ্যতামূলকভাবে তা মেনে নিতে হয়।
    দ্বিতীয়ত, ইসলামে শুরার সদস্যদের ইলম, বুদ্ধিমত্তা, আমানতদারি, কল্যাণকামিতা ও তাকওয়াসহ বিশেষ গুণাবলির অধিকারী হতে হয়। পক্ষান্তরে গণতন্ত্রে প্রত্যেকেরই ভোট দেওয়ার অধিকার সমান। এমনকি গণতান্ত্রিক সিস্টেমে একজন দেশসেরা বিজ্ঞ লোকের মতামত ও দেশের সবচেয়ে অশিক্ষিত লোকের মতামতের মান বরাবর। একজন মুসলিমের ভোট ও একজন কাফিরের ভোট উভয়টির দাম সমান। কেননা, গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতিতে কেবল সংখ্যাই মুখ্য, ব্যক্তির যোগ্যতা বা বৈশিষ্ট্যের কোনো মূল্যায়ন নেই।
    তৃতীয়ত, শরিয়তের দৃষ্টিতে কাফিররা মুসলিমদের কোনো বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারে না। মুসলিমদের ওপর কাফিরদের কোনো কর্তৃত্ব চলতে পারে না। এটা কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। কিন্তু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভোটাধিকার কাফিরদেকে মুসলিমদের সমান সুযোগ করে দেয়। এ সিস্টেমে তাদেরকে বাদ দেওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। তাদেরকে বাদ দেওয়ার আইন করলে সেটা আর গণতন্ত্র থাকবে না। আর এমনটা করলে গণতন্ত্রের প্রভু ও পূজারীরা তা কোনোদিন বাস্তবায়িতও হতে দেবে না।

    ভোটকে শুরা বলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মুসলিমদের অবস্থা :
    প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী হবার সবচেয়ে সহজ কৌশল হলো, Divide & Rule (জাতিকে বিভক্ত করে দাও, অতঃপর নির্বিঘ্নে শাসনকার্য পরিচালনা করো) মূলনীতির প্রয়োগ। সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলেই পরিষ্কার বুঝা যায় যে, এ দেশের অল্পকিছু মানুষই ইসলামি দলগুলোর সমর্থক। অতঃপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের ফর্মুলায় এই অল্প সংখ্যক মানুষের ভোট আবার ভাগ হবে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত ইসলামি দলগুলোর মাঝে। একদল থেকে কোনো মাওলানা বা মুফতি দাঁড়াবে, অনুরূপ অপরদলেও দাঁড়াবে মাওলানা বা মুফতি। অতঃপর ইসলামি দলগুলোর সমর্থকদের মাঝে শুরু হবে নোংরা কাঁদা ছোড়াছুড়ি, গিবত, অপবাদ ও পরনিন্দার বৃষ্টিধারা। দূর থেকে সেক্যুলার-বামপন্থীরা মজা লুটবে। ওদিকে তারা তো দলীয়ভাবে শক্ত অবস্থান নিয়ে তাদের এ বিভেদের ফায়েদা পুরোটাই তুলে নেবে।
    আসলে গণতান্ত্রিক নির্বাচন এই উম্মাহর মাঝে বিভেদ ও অনৈক্যের বিষফোঁড়া রোপণ করে দিয়েছে, যার ফল আমরা আজ নিজ চোখেই দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দেশে বর্তমানে ইসলামি রাজনীতিক দলের সংখ্যা প্রায় বিশেরও অধিক, যারা প্রত্যেকেই নিজেদেরকে ভোট পাওয়ার হকদার বলে দাবি করছে। অনেকে তো ইসলামপ্রিয় জনগণের ভোট পাওয়ার আশায় ইসলাম ও কুরআন-সুন্নাহর বিকৃতি ঘটাতেও কোনো কার্পণ্য করে না। সুউচ্চ কণ্ঠে জোর গলায় দাবি করে যে, তাদের প্রতীকে ভোট দেওয়া মানে আল্লাহ ও রাসুলকে ভোট দেওয়া। নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক। এই হলো গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া দলের অবস্থা।

    নির্বাচনের মুলো ঝুলিয়ে মুসলিমদের ইমান ও শাসন চুরি :
    তৃতীয় বিশ্বের দুর্বল দেশগুলোর গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ভিনদেশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ একটি ওপেন সিক্রেট। এসব দেশের প্রতিটা ইলেকশনের পূর্বে বিভিন্ন নেতা-নেত্রীদের আঞ্চলিক পরাশক্তি বা বৈশ্বিক পরাশক্তি দেশগুলোর রাজধানী অভিমুখে দৌড়াদৌড়ি এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওইসব দেশ থেকেই নির্ধারন করা হয়ে থাকে, আগামী পাঁচ বছর কারা এদেশে তাদের গোলাম হিসেবে ও স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করবে।
    রাজনৈতিক দলগুলোর আসলে এক্ষেত্রে তেমন কিছুই করার থাকে না। আর গণতন্ত্রের তথাকথিত সকল ক্ষমতার উৎসজনগণের তো এক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। এমনকি প্রভাবশালী শক্তির বিপরীতে তাদের দুএকটি ফাঁকা বুলি উচ্চারণ করার সাহসও থাকে না।
    পরিশেষে, মুসলিম জনগণের সামনে নির্বাচনের মুলো ঝুলিয়ে প্রথমে তাদেরকে দুধের নামে ঘোল খাওয়ানো হয়। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, দূরের মরীচিকাকে সুমিষ্ট পানি বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। আর ইসলামি দলগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষকে নববি মানহাজের পথ পরিত্যাগ করে এ কুফরি ব্যবস্থার জালেই আটকা পড়ে আছে। উল্টো একদল মুর্খ আগ বাড়িয়ে নববি মানহাজকে সন্ত্রাসবাদ আখ্যা দিয়ে দুনিয়ার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ ফলাফল এটাই হয় যে, তারা না দুনিয়ার সরকারের সুনজর পায় আর না আরশের অধিপতির সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়। অতঃপর নির্বাচনের পরদিন দেখা যায়, গণতন্ত্রের প্রভুরা তাদেরই একজন বিশ্বস্ত গোলামকে সরকারপ্রধান করে বসিয়ে দেয়। ব্যস, এখন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মডারেট মুসলিম না ঘরকা আর ঘাটকা। না তারা আল্লাহর হতে পারে, আর না গণতান্ত্রিক প্রভুদের আস্থাভাজন হতে পারে।

    নববি দাওয়াত বনাম গণতন্ত্রের দাওয়াত :

    আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহএর মূলনীতি মানুষের অন্তরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করে দিয়েছিলেন। তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, আল্লাহ যা দেন সেটাই আইন। এটা বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়াটা হলো ইমান আর না মানাটা হলো কুফর। তাদেরকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, তোমাদের কাজ হলো আল্লাহর আইন ও তাঁর সার্বভৌমত্বকে মেনে যাওয়া। ভোটের মাধ্যমে, পরামর্শের মাধ্যমে, অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাইয়ের কোনো অধিকার তোমাদের নেই। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন :
    وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا.
    আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো বিষয়ে ফয়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের (ভিন্ন আরেকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের) কোনো অধিকার নেই। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হবে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। [সুরা আল-আহজাব : ৩৬]
    অন্যদিকে আজকের গণতন্ত্রবাদীরা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। তাদেরকে দাওয়াত দিচ্ছে যে, তোমাদের যাচাই-বাছাই করার সুযোগ আছে। হে জনগণ, তোমরাই সব এবং তোমরাই রব (প্রভু) সকল বিষয়ে তোমরা মুক্ত স্বাধীন। চাইলে যেকোনো কিছুকে তোমরা আইনে পরিণত করতে পারো। চাইলে তোমাদের যেকোনো সুবিধাকে অনুমোদিত ও বৈধ বানাতে পারো। তোমরা চাইলে শাহবাগীদের ভোট দিয়ে সমকামিতা বৈধ করতে পারো, আবার চাইলে ইসলামপন্থীদের ভোট দিয়ে মদ-যিনা সব নিষিদ্ধ করতে পারো। তোমরা যেটা চাইবে সেটাই হবে। দয়া করে ভোটটা আমাদের দাও; তাহলে আমরা অধিকাংশ মানুষের রায় নিয়ে সকল হারামকে নিষিদ্ধ করব এবং সকল হালালকে অনুমোদিত করব।
    এভাবেই আল্লাহর বিধান হোক বা শয়তানের আইন হোক, সবকিছুর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে অধিকাংশ মানুষের রায়ের ওপর। তারা যেটার পক্ষে ভোট দেবে, সেটাই ফাইনাল, সেটাই চূড়ান্ত। মোটকথা, আল্লাহ বিধান বাস্তবায়নের বিষয়টিও নির্ভর করছে জনগণ নামক প্রভুদের অনুমোদনের ওপর। ওহ! কত বড় স্পর্ধা!! কত বড় দুঃসাহস!!! আল্লাহর সৃষ্টজীব হয়ে আল্লাহর আইনের বাস্তবায়নের জন্য অধিকাংশের রায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে, এরচেয়ে বড় আল্লাহদ্রোহ এবং এর চেয়ে বড় কুফর আর কী হতে পারে? পাঠক, বিষয়টি কি চিন্তা করে দেখেছেন কখনো, কত জঘন্য এ ব্যবস্থা, যেখানে আল্লাহর বিধানকে তাঁরই গোলামরা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে? নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক। খারাপ লাগলেও বাস্তবতা এটাই যে, এসব তিক্ত সত্য ইসলামি দলগুলো তাদের সমর্থক ও সাধারণ জনগণকে জানায় না, জানাতে চায় না। উল্টো কেউ যদি এসব হাকিকত তুলে ধরে, ইসলামের মূল দর্শন ফুটিয়ে তোলে তখন দালিলিক খণ্ডন না করে উল্টো তারা তাকে শত্রু জ্ঞান করে; এমনকি কিছু মানুষ তার ক্ষতিসাধনেরও চেষ্টা করে। আল্লাহর কাছে আমরা এদের থেকে এবং এদের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই।

    ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন :
    নির্বাচন হচ্ছে একটি মাধ্যম। এটার বৈধতা-অবৈধতার বিধান নির্ভর করছে, এটা কীসের মাধ্যম এবং কী হতে উৎসারিত এই মাধ্যম, তা জানার ওপর। এটা যদি বৈধ ব্যবস্থার মাধ্যম হয় তাহলে তা বৈধ, যদি হারাম ব্যবস্থার মাধ্যম হয় তাহলে তা হারাম, আর যদি কুফরি ব্যবস্থার মাধ্যম হয় তাহলে তা কুফর।
    আমরা যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছি সেটা হলো, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অন্যতম শাখা, যা জনগণকে সিয়াদাহ তথা সার্বভৌম, কর্তৃত্ব, হুকুম, নিয়ন্ত্রণ, প্রভুত্ব, আধিপত্য ও বিধান নির্ধারণের অধিকার দান করে থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সিয়াদাহ হচ্ছে সর্বোচ্চ ও পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব। আর গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সিয়াদাহ সাব্যস্ত করা হয় এমন সব মানুষের জন্য, যারা নির্বাচিত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে যা খুশি তা-ই প্রণয়ন করতে পারে। অথচ যা-খুশি তার করার উপযুক্ত সিয়াদাহ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার অধিকার, এতে অন্য কারও অংশীদারত্ব নেই। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জনগণের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধিদের কাঁধে অর্পিত এই সিয়াদাহ হতেই উৎসারিত হয় আইন প্রণয়নের অধিকার। এর মাধ্যমেই তাদের হাতে চলে আসে আইন-কানুন পরিবর্তন-পরিমার্জনের কর্তৃত্ব, বিচারে-আচারের কর্তৃত্ব, অতঃপর তা কার্যে পরিণত করার কর্তৃত্ব। আর তারা বলে, এগুলো গণমানুষের ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। অধিকাংশ মানুষ যা চায় এবং সমর্থন করে তা-ই সবার জন্য অবশ্যপালনীয় আইন হিসেবে গৃহীত হবে।
    গণতন্ত্রের মূল বুনিয়াদ হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর নির্ভরশীলতা। সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদ যেটা বলবে, সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকার হচ্ছে শাসন করা, আইন প্রণয়ন করা, আইন কার্যকর করা এবং সিদ্ধান্তগুলো পরিচালনা করা। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূলভিত্তি। সুতরাং আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন মূলত সিয়াদাহএর অর্থকেই প্রতিনিধিত্ব করে। এ হিসেবে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হচ্ছে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন। প্রশ্ন হলো, কীভাবে মানুষের ইচ্ছা জানা যাবে? এ প্রশ্নের জবাবে তারা বলে, নির্বাচন এবং ভোটদানের মাধ্যমে।
    সুতরাং ভোটদান হচ্ছে মানুষের ইচ্ছার কথা জানানোর একটি মাধ্যম, যেখানে তাদের নিজেদের অধিকার থাকবে আইন প্রণয়নের। যে সংসদীয় ব্যবস্থায় বর্তমানে আমরা আছি, এই সংসদ এমন একটি কেন্দ্র, যেখান থেকে অনেক কিছুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে আইন প্রণয়ন। অন্য কথায় বলতে গেলে, আইন প্রণয়নের অর্থ কোনো কিছুকে হালাল মোড়ক দেওয়া অথবা কোনো কিছুর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া। আইন প্রণয়নের মানে কোনো কিছুকে হালাল ঘোষণা করা এবং তার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া অথবা কোনো কিছুকে হারাম ঘোষণা করা এবং তার অনুমতি ছিনিয়ে নেওয়া। অথচ এটা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তাআলার অধিকার। তাদের এই নীতি আল্লাহর তাআলার উলুহিয়্যাত ও প্রভুত্বের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আসমান-জমিনের সকল কিছুই যেহেতু আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট, সেহেতু সকল ক্ষেত্রে উলুহিয়্যাত ও সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সবকিছুতে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব একমাত্র রাব্বুল আলামিনেরই। আর যিনি ইলাহ, তিনিই একমাত্র আইন ও বিধান দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। কুরআনে এ সংক্রান্ত অনেক সুস্পষ্ট আয়াত রয়েছে।
    এখন আমরা যদি একটু চিন্তা করে দেখি তাহলে পরিষ্কার বুঝতে পারি যে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে মূলত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে আইন প্রণয়নের পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিয়ে দেওয়া হয়। এ হিসেবে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অর্থ হবে নিজেদের সাইয়িদনির্ধারণ করা। কোনো মুসলিমের এ ব্যাপারে ন্যূনতম সংশয় থাকার অবকাশ নেই যে, আল্লাহ তায়ালা হলেন প্রকৃত আস-সাইয়্যিদ (السيد) এবং প্রকৃত আল-মুতা (المطاع)আস-সাইয়্যিদহলো, যার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের ওপর কখনো প্রশ্ন তোলা যায় না। আর আল-মুতাহলো, যার আদেশ কখনো অমান্য করা যায় না।
    সুতরাং সার্বিক দিক বিবেচনায় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের অর্থ দাঁড়াচ্ছে- কোনো কিছুকে হালাল এবং হারাম ঘোষণার ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের জন্য আমার ইচ্ছার প্রতিফলনে একজন ব্যক্তিকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়ে তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা। আর এটা সুস্পষ্ট যে, তা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহএর প্রকৃত মর্মের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক এবং সেই মুসলিমের ইচ্ছার সাথেও সাংঘর্ষিক যে বলে, আমি নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যে উপস্থাপন করেছি। অন্য কথায়, আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কাউকে গ্রহণ করি না, আমি আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কাউকে আইনদাতা হিসেবে গ্রহণ করি না এবং আমি আল্লাহ তাআলার বিধিনিষেধের বিপরীতে আমার ওপর কোনো শাসকের বানানো বিধিনিষেধ গ্রহণ করি না। এ অর্থে গণতান্ত্রিক শাসক বলতে সে নয়, যে শাসন করে; বরং এখানে শাসক বলতে নির্দিষ্টভাবে তাকে বুঝানো হয়, যে সব ধরনের আইন প্রণয়নের অধিকার রাখে; যদিও তা শরিয়ার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক হোক। মোটকথা হাকিমিয়্যাহ বা কর্তৃত্ব কেবল নির্বাচিত শাসকের জন্যই সাব্যস্ত করা হয়, যা ছিল একমাত্র আল্লাহ তাআলার অধিকার। যে গুণটি একমাত্র আল্লাহর জন্যে নির্দিষ্ট, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সেটিকে কোনো মানুষের জন্যে সাব্যস্ত করে থাকে। সে হিসেবে বলা যায়, নির্বাচনের মাধ্যমে তারা আল্লাহর পরিবর্তে ভিন্ন সত্তাকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করছে। সুতরাং এটা শিরক বৈ অন্য কিছু নয়।

    নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বা ভোট প্রদানকারী কি কাফির?
    এক্ষেত্রে এক কথায় উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়; বরং বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এদেরকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
    প্রথমত, যারা সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্র ও তার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং ইসলাম ও শারিয়ার বিরুদ্ধে গেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়কেই চূড়ান্ত আইন বলে বিশ্বাস করে, এরা প্রকৃত অর্থেই কাফির; যদিও তাদের নাম মুসলিম হোক এবং তারা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করুক।
    দ্বিতীয়ত, যারা গণতন্ত্র ও ইসলামের মাঝে যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে, সে ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বা ভোট প্রদান করে, আর সামগ্রিক দিক বিবেচনায় তাদের অজ্ঞতা যদি শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয় তাহলে এরা কাফির হবে না।
    তৃতীয়ত, যারা বিভিন্ন আলিমের অনুসরণে কিংবা দাঈদের ভুল প্রচারণার শিকার হয়ে এতে অংশগ্রহণ করে, কিন্তু তাদের অন্তরে থাকে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইনকে প্রতিষ্ঠা করা; যদিও তা ভুল পদ্ধতিতে হোক, তাদের ক্ষেত্রেও এক ধরনের ওজর থাকায় এরা কাফির হবে না।
    চতুর্থত, গণতন্ত্রকে কুফরি ব্যবস্থা হিসেবে অন্তরে বিশ্বাস করে, কিন্তু এটাকে স্রেফ একটা মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে ক্ষমতায় গিয়ে গণতান্ত্রিক সিস্টেমকে উৎখাত করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এতে অংশগ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে তাবিলের আশ্রয় নেওয়ায় এরা কাফির হবে না।
    সারকথা হলো, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন হলো একটি কুফরি ব্যবস্থা। ইকরাহ বা বাধ্যবাধকতা পাওয়া না গেলে কারও জন্য কুফরি বাক্য উচ্চারণ করার অনুমতি নেই। আর ইকরাহ পাওয়া যাক বা না যাক, কুফরি কর্ম কখনোই করার অনুমতি নেই। এ ব্যাপারে আমরা অষ্টম পর্বে সবিস্তরে দলিল-প্রমাণ ও উসুলের আলোকে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। যাই হোক, এটা কুফরি ব্যবস্থা হলেও এতে অংশগ্রহণ করলেই তাকে তাকফির বা কাফির সাব্যস্ত করা যাবে না। কেননা, তাকফিরের জন্য কুফর পাওয়ার পাশাপাশি তাকফিরের প্রতিবন্ধকতাগুলোও না থাকা শর্ত। তাকফিরের প্রতিবন্ধকতাগুলো হলো-
    ১. সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শরিয়তের বিধান তার কাছে না পৌঁছা।
    ২. শরিয়তের কোনো নসের ভুল ব্যাখ্যা বা ভুল অনুধাবন।
    ৩. শরিয়তের ইলম পৌঁছেনি এমন দূর্গম অঞ্চলে বসবাস করা।
    ৪. নওমুসলিম হওয়া।
    ৫. অনিচ্ছাকৃত ভুল।
    ৬. ভুল ইজতিহাদ।
    সংক্ষেপে ছয়টি কারণ উল্লেখ করা হলো। এতে অনেক কথা ও ব্যাখ্যা আছে
    , যার বিশদ বিবরণ এখানে দেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়গুলো স্পর্শকাতর, তাই বিজ্ঞ আলিম ছাড়া এ ব্যাপারে অন্যদের মন্তব্য করার অনুমতি নেই।

    উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা এ ফলাফলে উপনীত হতে পারি যে, গণতন্ত্র ও তার অন্যতম অনুষঙ্গ নির্বাচন হলো কুফরি ব্যবস্থা। এটা কুফরি হওয়া নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। দলিল ও উসুলের আলোকে এটাই প্রমাণিত হয়। কিন্তু বর্তমানে যেসব ইসলামি দল গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের আহবানে জনগণ ভোট প্রদান করে, তাদের ক্ষেত্রে তাকফিরের কোনো না কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকায় তাদেরকে কাফির বলার সুযোগ নেই। অনেকে গণতন্ত্রকে কুফরি ব্যবস্থা জানামাত্রই এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গণহারে কাফির বলে থাকে। এটা মারাত্মক বিভ্রান্তিকর ও সম্পূর্ণরূপে ভুল ফতোয়া। গণহারে এমন তাকফির করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর নীতি নয়। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। আমরা শুধু গণতন্ত্র ও এর অন্যতম অনুসঙ্গ নির্বাচনের বিধান নিয়ে আলোচনা করছি। কারও ব্যাপারে বিস্তারিত জানা ব্যতীত শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে আমরা কাউকে কাফির বলি না। কেউ আমাদের বিরুদ্ধে এমনটা দাবি করে থাকলে সেটা সুস্পষ্ট অপবাদ ও আমাদের ব্যাপারে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল। তাই সকল অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকা চাই।

    খলিফা নির্ধারণ পদ্ধতি :
    আমরা যখন জানতে পারলাম যে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন একটি কুফরি ব্যবস্থার অংশ এবং এটা স্বয়ং শিরকের একটি মাধ্যম, তাহলে ইসলামে খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণের পথ কী? খলিফা নির্ধারণের তিনটি স্বীকৃত পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে উম্মাহর ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে। এটাকে বলা হয় খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহ। ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফা নিম্নোক্ত তিনটি পদ্ধতির যেকোনো একটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
    ক. ইখতিয়ার :
    ইখতিয়ার হলো, ‘আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদএর পক্ষ থেকে মনোনীত বা নির্বাচিত হওয়া। উদাহরণত, আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত। তাঁর খিলাফত সাকিফায়ে বনি সায়িদায় আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদএর মনোনয়ন ও নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর সকল সাহাবি তাঁর খিলাফতের পক্ষে ঐকমত্য পোষণ করেন, তাঁর হাতে বাইআত হন এবং তাঁর খিলাফতের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
    খ. ইসতিখলাফ :
    পূর্ববর্তী খলিফার নির্ধারণের মাধ্যমে পরবর্তী খলিফা নির্ধারণ করে যাওয়া। অর্থাৎ পূর্ববর্তী খলিফা সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে তাঁর পরবর্তী খলিফা হিসেবে নির্ধারণ করে দেবেন। যেমন, উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত। তাঁর খিলাফত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর নির্ধারণের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছিল।
    গ. শুরা :
    শুরা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পূর্ববর্তী খলিফা কর্তৃক আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ-কে দায়িত্ব দেওয়া। তাদের দায়িত্ব হবে, তাদের মধ্য থেকে কোনো একজনকে পরবর্তী খলিফা নির্ধারণ করা। যেমন, উসমান বিন আফফান রাযিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পরবর্তী খলিফা নির্ধারণ করার জন্য শীর্ষস্থানীয় ছয়জন সাহাবির সমন্বয়ে একটি শুরা কমিটি গঠন করেছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে আব্দুর রহমান বিন আওফ রাযিয়াল্লাহু আনহু মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করে যখন দেখলেন যে, বিজ্ঞ সাহাবি ও তাবিয়িরা উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে খলিফা হিসাবে চাচ্ছেন, তখন তিনিই প্রথম তাঁর হাতে বাইআত হন। এরপর ছয়জনের অবশিষ্ট সাহাবিগণও তাঁর হাতে বাইআত হন। এরপর মুহাজির ও আনসার সাহাবাসহ অন্য লোকেরা তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/১৪৫-১৪৭, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরূত]
    এ তিনটি শারয়ি পদ্ধতিই হলো খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহবাস্তবায়িত হওয়ার পদ্ধতি। এছাড়াও আরেকটি পদ্ধতি আছে, যার মাধ্যমে খিলাফায় অধিষ্ঠিত হওয়া যায়। তবে তা শারিয়াহ কর্তৃক অনুমোদিত পন্থা নয়। সেটি হলো, তাগাল্লুব তথা শক্তি ও আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে। কেউ এ রকম পদ্ধতিতে খিলাফায় অধিষ্ঠিত হয়ে গেলে তাকেও খলিফা বলে গণ্য করা হবে। তবে সেটি খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহহবে না।
    ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
    وَأَمَّا الطَّرِيقُ الثَّالِثُ، فَهُوَ الْقَهْرُ وَالِاسْتِيلَاءُ، فَإِذَا مَاتَ الْإِمَامُ، فَتَصَدَّى لِلْإِمَامَةِ مَنْ جَمَعَ شَرَائِطَهَا مِنْ غَيْرِ اسْتِخْلَافٍ وَلَا بَيْعَةٍ، وَقَهَرَ النَّاسَ بِشَوْكَتِهِ وَجُنُودِهِ، انْعَقَدَتْ خِلَافَتُهُ لِيَنْتَظِمَ شَمْلُ الْمُسْلِمِينَ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ جَامِعًا لِلشَّرَائِطِ بِأَنْ كَانَ فَاسِقًا، أَوْ جَاهِلًا، فَوَجْهَانِ، أَصَحُّهُمَا: انْعِقَادُهَا لِمَا ذَكَرْنَاهُ، وَإِنْ كَانَ عَاصِيًا بِفِعْلِهِ.
    তৃতীয় একটি পদ্ধতি হলো শক্তি ও আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে খলিফা হওয়া। সুতরাং খলিফা মারা যাওয়ার পর যদি খিলাফতের উপযুক্ত কেউ নিয়োগপ্রাপ্তি ও বাইআত গ্রহণ ছাড়াই ক্ষমতা ও সৈন্যবলে খিলাফতের দাবি করে এবং মানুষকে তা মেনে নিতে বাধ্য করে, তাহলে এতে তার খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে; যাতে মুসলিমদের শৃঙ্খলা ও ঐক্য বহাল থাকে। তবে সে যদি খিলাফতের উপযুক্ত না হয়ে থাকে; যেমন সে ফাসিক বা মূর্খ হয় তাহলে সে খলিফা হবে কি-না, এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। বিশুদ্ধতম মতানুযায়ী সে খলিফা বলে বিবেচিত হবে। এর কারণ আমরা যা পূর্বে উল্লেখ করেছি (অর্থাৎ যাতে মুসলিমদের শৃঙ্খলা ও ঐক্য বহাল থাকে) অবশ্য সে এর কারণে গুনাহগার হবে। [রাওজাতুত তালিবিন : ১০/৪৬, প্রকাশনী : আল মাকতাবুল ইসলামি, বৈরুত]
    এখান থেকে বর্তমান সময়ের মুসলিমদের করণীয় জানা যায়। সেটা হলো, বর্তমান যুগে যেহেতু খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহএর পদ্ধতিতে কোথাও খলিফা নেই, সেক্ষেত্রে দেখতে হবে যারা যেকোনো কৌশলে বা ক্ষমতার জোরে শাসক হয়ে গেছে, তারা কুফরে বাওয়াহ বা সুস্পষ্ট কুফরিতে লিপ্ত কি-না। যদি তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট কুফরি না পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে মুসলিমদের জন্য করণীয় হলো, তাকে মেনে নেওয়া এবং আদেশ-নিষেধ মেনে চলা; যতক্ষণ না তা শারিয়াহর আইনের বিরুদ্ধে যায়। সুতরাং শারিয়াহ-বিরুদ্ধ কোনো আদেশ-নিষেধ করলে সেক্ষেত্রে তাকে আর মান্য করা যাবে না। আর যদি তার মধ্যে কুফরে বাওয়াহ বা সুস্পষ্ট কুফরি পাওয়া যায় তাহলে ক্ষমতা ও শক্তি থাকলে তাকে উৎখাত করে ন্যায়পরায়ণ কোনো শাসক নিযুক্ত করার চেষ্টা করা, আর সে শক্তি-সামর্থ্য না থাকলে ধৈর্য ধারণ করা এবং নিরবচ্ছিন্ন দাওয়াহ ও ইদাদের কাজ চালিয়ে যাওয়া; যতদিন না শক্তি ও তামকিন অর্জিত হয়।
    সহিহ মুসলিমে উবাদা বিন সামিত রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন :
    دَعَانَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ، فَكَانَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا: أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا، وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا، وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ، قَالَ: إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيهِ بُرْهَانٌ
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (একবার) আমাদেরকে ডাকলেন। অতঃপর আমরা তার হাতে বাইআত হলাম। তিনি আমাদের থেকে যে সকল বিষয়ে প্রতিশ্রুতি নিলেন তা হলো, আমাদের পছন্দে ও অপছন্দে, আমাদের সংকটে ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আমাদের ওপর কাউকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও আমরা (শাসকের কথা) শুনব ও মানব। আর আমরা শাসকের সাথে কর্তৃত্ব নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হবো না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তবে হ্যাঁ, যদি তোমরা কুফরে বাওয়াহ বা সুস্পষ্ট কুফর দেখো, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ রয়েছে তাহলে ভিন্ন কথা। [সহিহু মুসলিম : ৩/১৪৭০, হাদিস নং ১৭০৯, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত]
    কুফরে বাওয়াহ হলো সুস্পষ্ট কুফর। তা এমন প্রকাশ্য কুফর, যা অন্য কোনো ব্যাখ্যা বা অর্থ পরির্বতনের সম্ভাবনা রাখে না এবং যে ব্যাপারে কুরআন এবং সুন্নাহতে সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে। হাদিসের মর্মার্থ হলো, যদি শাসকের মাঝে কুফরে মুহতামাল তথা সন্দেহপূর্ণ কুফর পাওয়া যায়, যা স্পষ্ট কুফরের পর্যায়ে পড়ে না, যার বাহ্যিক অর্থ ছাড়াও ভিন্ন কোনো অর্থ বা ব্যাখ্যা হতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে শাসককে কাফির বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করা যাবে না। কারণ, শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা তখনই উত্তোলন করা হবে, যখন সে সুস্পষ্ট কুফরে লিপ্ত হওয়ায় তাকে তাকফির করা আবশ্যক হয়ে পড়বে। আর তাকে তাকফিরের মাধ্যমে যখন কাফির সাব্যস্ত করা হবে তখন যথাযথ শক্তি-সামর্থ্য থাকলে সে মুরতাদ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাকে অপসারণ করা আবশ্যক হয়ে পড়বে।
    হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ বলেন :
    قَوْلُهُ عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ أَيْ نَصُّ آيَةٍ أَوْ خَبَرٌ صَحِيحٌ لَا يَحْتَمِلُ التَّأْوِيلَ وَمُقْتَضَاهُ أَنَّهُ لَا يَجُوزُ الْخُرُوجُ عَلَيْهِمْ مَا دَامَ فِعْلُهُمْ يَحْتَمِلُ التَّأْوِيلَ.
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ রয়েছে।এর ব্যাখ্যা হলো, সেটা কুফর হওয়ার ব্যাপারে এমন কোনো আয়াত বা সহিহ হাদিস থাকা, যা ভিন্ন কোনো ব্যাখ্যার সম্ভাবনা রাখে না। এ হাদিসের দাবি হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত শাসকদের কর্মকাণ্ড কুফর ভিন্ন অন্য ব্যাখ্যার সম্ভাবনা রাখবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বৈধ হবে না। [ফাতহুল বারি : ১৩/৮, প্রকাশনী : দারুল মারিফা, বৈরূত]

    গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভোটার ও আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ :
    গণতন্ত্রে ভোটাধিকারপ্রাপ্ত সকল লোকদের ভোটের মান সমান। এখানে মুর্খ ব্যক্তির ভোটের মান আর বড় বড় শিক্ষিত ও বিদ্বান লোকদের ভোটের মান একই। মানবরচিত এ সিস্টেমে সমাজের একজন মূর্খ ও সর্বশেষ্ঠ জ্ঞানীর ভোটের একই মূল্য। অনুরূপ মুসলিম ও কাফিরের ভোটের একই মান। এদের কারও ভোট বা মতামতের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, এখানে সবাই সমান। কিন্তু ইসলামে এ পদ্ধতিটি অগ্রহণযোগ্য। শুরাব্যবস্থায় আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদএর নির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য আছে। যে-কেউ চাইলেই আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদহতে পারে না। তাই ইসলামে সকল জনগণের ভোটা বা মতামত নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কেননা, ইসলাম মতে কেবল জ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরাই রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে থাকেন।
    আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদকারা?
    আল্লামা ইবনু নুজাইম মিসরি রাহিমাহুল্লাহ বলেন :
    أَهْل الْحَلِّ وَالْعَقْدِ مِنْ الْعُلَمَاءِ الْمُجْتَهِدِينَ وَالرُّؤَسَاءِ.
    আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ হলেন মুজতাহিদ (বিশেষজ্ঞ) উলামায়ে কিরাম ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। [বাহরুর রায়িক : ৬/২৯৯, প্রকাশনী : দারুল কিতাবিল ইসলামি, বৈরুত]
    ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ বলেন :
    أَهْل الْحَلِّ وَالْعَقْدِ مِنْ الْعُلَمَاءِ وَالرُّؤَسَاءِ وَوُجُوْهِ النَّاسِ.
    আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ হলেন উলামা, নেতৃত্বস্থানীয় ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। [মিনহাজুন তালিবিন : পৃ. ২৯২, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরুত]

    আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদএর বৈশিষ্ট্যাবলী :
    আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদহওয়ার জন্য তিনটি শর্ত থাকা আবশ্যক।
    ১. ন্যায়পরায়ণতা : ফুকাহায়ে কিরাম ন্যায়পরায়ণতার যে সকল শর্ত বর্ণনা করেছেন, সেগুলো তার মাঝে বিদ্যমান থাকা। যেমন, প্রকাশ্য সব ধরনের কবিরা গুনাহ, হারাম ও মাকরুহে তাহরিমি ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
    ২. খলিফা হওয়ার শর্তগুলো জানা থাকা : উক্ত ব্যক্তির এতটুকু ইলম থাকা আবশ্যক, যার ভিত্তিতে তিনি বুঝতে পারবেন যে, খিলাফতের শর্তগুলোর ওপর ভিত্তি করে কে খলিফা হওয়ার যোগ্য আর কে অযোগ্য।
    ৩. রায় ও হিকমাহ : প্রজ্ঞা ও সিদ্ধান্ত প্রদানের যোগ্যতা থাকা, যার মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি এমন একজন খলিফা নির্ধারণে সক্ষম হবেন, যিনি খিলাফতের সর্বাধিক যোগ্য এবং উম্মাহর কল্যাণে অধিক উপযুক্ত ও জ্ঞাত হবেন।
    আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদএর বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় আল্লামা মাওয়ারদি রাহিমাহুল্লাহ বলেন :
    فَأَمَّا أَهْلُ الِاخْتِيَارِ فَالشُّرُوطُ الْمُعْتَبَرَةُ فِيهِمْ ثَلَاثَةٌ: أَحَدُهَا: الْعَدَالَةُ الْجَامِعَةُ لِشُرُوطِهَا وَالثَّانِي: الْعِلْمُ الَّذِي يُتَوَصَّلُ بِهِ إلَى مَعْرِفَةِ مَنْ يَسْتَحِقُّ الْإِمَامَةَ عَلَى الشُّرُوطِ الْمُعْتَبَرَةِ فِيهَا.وَالثَّالِثُ: الرَّأْيُ وَالْحِكْمَةُ الْمُؤَدِّيَانِ إلَى اخْتِيَارِ مَنْ هُوَ لِلْإِمَامَةِ أَصْلَحُ، وَبِتَدْبِيرِ الْمَصَالِحِ أَقْوَمُ وَأَعْرَفُ
    আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ এর যোগ্য হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত, পূর্ণ ন্যায়পরায়ণতা। দ্বিতীয়ত, এতটুকু ইলম থাকা আবশ্যক, যদ্বারা তিনি বুঝতে পারবেন, খিলাফতের শর্তগুলোর ভিত্তিতে কে খলিফা হওয়ার যোগ্য। তৃতীয়ত, সিদ্ধান্ত প্রদানের যোগ্যতা ও প্রজ্ঞা থাকা, যার মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়, কে খলিফা হওয়ার উপযোগী এবং উম্মাহর কল্যাণ বিষয়ে অধিক উপযুক্ত ও সজাগ। [আল-আহকামুস সুলতানিয়্যা : পৃষ্ঠা নং ১৭-১৭, প্রকাশনী : দারুল হাদিস, কায়রো]

    গণতন্ত্রান্ত্রিক ভোট ও নির্বাচনে ভোটারদের মাঝে কোনোরূপ পার্থক্য করা হয় না। অনুরূপ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রেও ইসলামি নীতি-নৈতিকতা অনুসরণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এখানে সকলের মানই সমান। মানবরচিত এ ব্যবস্থায় মানুষ সামান্য টাকার লোভে পড়ে কিংবা প্রভাবশালী কোনো নেতার আদেশে কিংবা অস্ত্র ও হুমকির মুখে অধিকাংশ সময়ই একজন বখাটে, সন্ত্রাসী বা অযোগ্য কাউকে নিজেদের নেতা বানায়। অন্যদিকে ইসলামি ব্যবস্থায় মুত্তাকি উমারা ও যোগ্য উলামার পরামর্শে সার্বিক দিক বিবেচনায় সবচেয়ে যোগ্য যিনি, তিনিই খলিফা নির্বাচিত হন। এ দুটি ব্যবস্থার মাঝে যে বিশাল তফাৎ, তা জ্ঞানবান মাত্রই বুঝতে সক্ষম। যারা বলে, নির্বাচন ও শুরাব্যবস্থা একই জিনিস, তারা যেন শুরাসদস্য হওয়ার যোগ্য আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদএর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্যাবলী এবং ভোটাধিকারপ্রাপ্ত নাগরিকদের মাঝে তুলনা করে দেখেন। এ বিশাল তফাৎ থাকার পরও নিছক গোঁড়া ও অন্ধ হলেই কেবল সে বলতে পারে, নির্বাচন ও শুরাব্যবস্থা এক।
    আমাদের আলিমগণ; এমনকি সাধারণ মানুষেরাও এখন অকপটে এ কথা বলে বেড়ায় যে, ইহুদি-খ্রিষ্টানরা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে নীলনকশা করে এগুচ্ছে। তারা একশ বছর আগে একটি পরিকল্পনা করে। এরপর ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়নের পথে এগোতে থাকে। মুসলিমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ষড়যন্ত্র করার কথা বিশ্বাস করলেও তাদের অধিকাংশই যে আজ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রণীত সে নীলনকশায় পা দিয়ে ফেলেছে, সে ব্যাপারে তাদের অধিকাংশেরই কোনো খবরও নেই। বরং বেশিরভাগ মুসলিম তো অতিরিক্ত ঝামেলা এড়াতে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রণীত পদ্ধতিই আঁকড়ে ধরে নিজেদের জীবন পার করতে চাইছে। এমনকি অনেকে তো আগ বাড়িয়ে একে নেক ও পূণ্যের কাজ বলেও দাবি করছে। অনেকে ষড়যন্ত্র বলতে শুধু সাংস্কৃতিক ও চারিত্রিক অঙ্গনের বিপর্যয়ই বুঝে থাকে; অথচ আমল নষ্ট করার চাইতে আমাদের ঈমান-আকিদা নষ্ট করাই তাদের প্রধান টার্গেট। আমরা তাদের সাধারণ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত ও সচেতন হলেও তাদের প্রধান ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে এখনও অজ্ঞই রয়ে গেছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের ইমান-আকিদা রক্ষা করুন এবং কাফিরদের সব ধরনের ষড়যন্ত্র উপলব্ধি করে তা থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।

    চলবে ইনশাআল্লাহ...

    ✍️
    Collected‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬

    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

  • #2
    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (ভূমিকা পর্ব)
    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%8D%E0%A6%AC

    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (প্রথম পর্ব)
    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%8D%E0%A6%AC

    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (দ্বিতীয় পর্ব)
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      #মাশা-আল্লাহ,

      আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে "ইসলাম ও গণতন্ত্র --- যে দুটি বিপরীতমুখী জীবনব্যবস্থা" স্পষ্টভাবে বুঝার তাওফীক দান করুন ।

      গণতন্ত্র থেকে বের হয়ে ইসলামের আইনকে প্রতিষ্ঠিত করার তাওফীক দান করুন।

      পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় আমরা।

      যে ব্যক্তি তার নিজের ভুলগুলো দেখতে পায়না সে একটা বোকা।
      :::-ইয়াস বিন মুয়াবিয়াহ



      Comment


      • #4
        খলিফা নির্ধারণ পদ্ধতি :
        আমরা যখন জানতে পারলাম যে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন একটি কুফরি ব্যবস্থার অংশ এবং এটা স্বয়ং শিরকের একটি মাধ্যম, তাহলে ইসলামে খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণের পথ কী? খলিফা নির্ধারণের তিনটি স্বীকৃত পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে উম্মাহর ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে। এটাকে বলা হয় খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহ। ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফা নিম্নোক্ত তিনটি পদ্ধতির যেকোনো একটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
        ক. ইখতিয়ার :
        ইখতিয়ার হলো, ‘আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদএর পক্ষ থেকে মনোনীত বা নির্বাচিত হওয়া। উদাহরণত, আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত। তাঁর খিলাফত সাকিফায়ে বনি সায়িদায় আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদএর মনোনয়ন ও নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর সকল সাহাবি তাঁর খিলাফতের পক্ষে ঐকমত্য পোষণ করেন, তাঁর হাতে বাইআত হন এবং তাঁর খিলাফতের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
        খ. ইসতিখলাফ :
        পূর্ববর্তী খলিফার নির্ধারণের মাধ্যমে পরবর্তী খলিফা নির্ধারণ করে যাওয়া। অর্থাৎ পূর্ববর্তী খলিফা সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে তাঁর পরবর্তী খলিফা হিসেবে নির্ধারণ করে দেবেন। যেমন, উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত। তাঁর খিলাফত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর নির্ধারণের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছিল।
        গ. শুরা :
        শুরা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পূর্ববর্তী খলিফা কর্তৃক আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ-কে দায়িত্ব দেওয়া। তাদের দায়িত্ব হবে, তাদের মধ্য থেকে কোনো একজনকে পরবর্তী খলিফা নির্ধারণ করা। যেমন, উসমান বিন আফফান রাযিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পরবর্তী খলিফা নির্ধারণ করার জন্য শীর্ষস্থানীয় ছয়জন সাহাবির সমন্বয়ে একটি শুরা কমিটি গঠন করেছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে আব্দুর রহমান বিন আওফ রাযিয়াল্লাহু আনহু মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করে যখন দেখলেন যে, বিজ্ঞ সাহাবি ও তাবিয়িরা উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে খলিফা হিসাবে চাচ্ছেন, তখন তিনিই প্রথম তাঁর হাতে বাইআত হন। এরপর ছয়জনের অবশিষ্ট সাহাবিগণও তাঁর হাতে বাইআত হন। এরপর মুহাজির ও আনসার সাহাবাসহ অন্য লোকেরা তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন।


        খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতির মধ্যে (ক) ইখতিয়ার পদ্ধতিটি বুঝি নাই। কোনো মুহতারাম ভাই বুঝিয়ে দিলে উপকৃত হতাম।

        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment

        Working...
        X