গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন
(চতুর্থ পর্ব)
ইসলামি গণতন্ত্র : একটি ভুল চিন্তার অপনোদন(চতুর্থ পর্ব)
ইসলামি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কিছু মানুষের ধারণা, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয় লাভ করার মাধ্যমে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যাবে। কেননা, গণতান্ত্রিক আইনে যেহেতু অধিকাংশ সাংসদের ভোটে আইন পাশ করার বিধান রয়েছে, বিধায় সে আইন অনুসারে প্রথমে অধিকাংশ সাংসদের রায় নিয়ে বিদ্যমান সকল অনৈসলামিক আইন বাতিল করা হবে। এরপর সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের ভোট নিয়ে সকল আইন ইসলামি শারিয়াহ অনুসারে তৈরি করা হবে। আর এভাবেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
বস্তুত এটা মারাত্মক একটি ভুল চিন্তা। আল্লাহর আইনের সুউচ্চ মর্যাদা ও তার প্রকৃত গুরুত্ব না বোঝার কারণেই মূলত এমন ভ্রান্তিমূলক চিন্তার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠই নয়; বরং সকল সাংসদ মিলেও যদি বিদ্যমান সিস্টেমে সকল আইন ইসলামি শারিয়াহ অনুসারে তৈরি করে তবুও তাকে ইসলাম প্রতিষ্ঠা বলা যাবে না। কারণ, এর মূলেই রয়েছে গলদ। তাই শাখা যতই ইসলামিকরণ হোক না কেন, সেটাকে কখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠা বলা হবে না। যেমন কোনো ড্রামের পানি নিষ্কাশনের জায়গায় পঁচা ইদুর থাকলে উপর থেকে যত ভালো ও বিশুদ্ধ পানিই ঢালা হোক না কেন, সব পঁচা ও নোংরা পানিই বের হবে। ঠিক তেমনই গণতান্ত্রিক সিস্টেম ঠিক রেখে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যতই শারয়ি আইন পাশ করিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলা হোক না কেন, তা কখনো ওই ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না, যে ইসলাম আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চান।
অনেকে হয়তো এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না যে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংসদে শারয়ি আইন পাশ করানো হলে কেন সেটাকে ইসলাম প্রতিষ্ঠা বলা হবে না। বাহ্যত তো এটাকে ইসলামের বিজয়ই বলার কথা। কেননা, আল্লাহ ও কিয়ামতে বিশ্বাসী সকল মুসলিমই চায় যে, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়িত হোক। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের ভোটের মাধ্যমে যখন দেশের বিদ্যমান সকল অনৈসলামিক আইন বাতিল হয়ে শারয়ি আইন পাশ হবে তখন তো এটাকে ইসলামের বিজয় ও ইসলাম প্রতিষ্ঠাই বলতে হবে। কিন্তু আমরা এটাকে কেন ইসলাম প্রতিষ্ঠা বলে স্বীকার করছি না? কেন এটাকে ওই ইসলাম বলে মানছি না, যে ইসলাম আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চান? যাদের মনে এমন প্রশ্ন ও সংশয় উঁকি মারছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি :
গণতান্ত্রিক সংবিধানের নিয়ম হলো, কোনো আইন পাশ করাতে হলে প্রথমে আইনের খসড়া তৈরি করে সংসদে প্রস্তাব পেশ করা হয়। এরপর সাংসদদের হ্যাঁ-না ভোট নেওয়া হয়। যে পক্ষে মত বেশি আসে সে পক্ষের রায়ই চূড়ান্ত হয়। অর্থাৎ প্রস্তাবিত আইনটি পাশ হওয়ার ক্ষেত্রে ফিফটি ফিফটি চান্স থাকে। চাইলে হ্যাঁ-ও বলা যায়, অনুরূপ চাইলে না-ও বলা যায়। এটাকে আমরা সহজে বলতে পারি, প্রস্তাবিত আইনটি আদৌ কার্যকর করার উপযুক্ত নাকি উপযুক্ত নয়, তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য সাংসদদের সামনে পেশ করা হয়। তারা এটাকে ভালো বা উপযাগী মনে করলে হ্যাঁ-ভোট দেয়, আর মন্দ বা অনুপযোগী মনে করলে না-ভোট দেয়। এরপর হিসাব করে দেখা হয়, কোন পক্ষে ভোট বেশি পড়েছে। যদি হ্যাঁ-ভোট বেশি পড়ে তাহলে আইনটি পাশ হয়ে যায়। আর যদি না-ভোট বেশি পড়ে তাহলে সেটাকে রিজেক্ট করে দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে আমাদের প্রথম কথা হলো, এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামপন্থী নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাওয়া, সেটাই তো এক ধূসর মরীরিকা। এটা এমন এক তিক্ত বাস্তবতা, কোনো দলের অন্ধ সাপোর্টার না হলে এ ব্যাপারে দ্বিমত করার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম যে, কোনোভাবে ইসলামপন্থীরা সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেল, কিন্তু সেক্ষেত্রে দুয়েকটি আইনে সামান্য পরিবর্তন করলেও মৌলিকভাবে কোনোকিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। নয়তো বৈশ্বিকভাবে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, যা মোকাবেলা করার মতো শক্তি বা সাহস কোনোটাই এসব গণতন্ত্রীদের নেই। সহজে বলা যায়, আমূল পরিবর্তন করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমরা পরবর্তী পর্বগুলোতে বিশদ আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এবার আসি তৃতীয় কথায়, কোনোভাবে ধরে নিলাম যে, ইসলামপন্থীরা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সংসদে গেল এবং তাদের জন্য আইন পরিবর্তনের সকল সুযোগও তৈরি হলো, সেক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়? আমরা বলব, এটাই আমাদের আজকের আলোচনার মূল পয়েন্ট। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই চলুন বিষয়টি একটু ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে বলি।
আপনি নিজের কল্পনার আয়নায় একটু চিন্তা করে দেখুন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামপন্থী সাংসদদের নিয়ে আপনি সংসদে প্রবেশ করলেন। আপনার আজকের উদ্দেশ্য চুরির জন্য হাত কাটার আইন পাশ করানো। প্রথমে নিয়মানুসারে এ আইনের ব্যাপারে সাংসদদের সামনে প্রস্তাব পেশ করা হলো। প্রস্তাব পেশ করার পর এটা আইন হিসেবে গৃহীত হওয়া ও না হওয়া নিয়ে ফিফটি ফিফটি চান্স সৃষ্টি হলো। অর্থাৎ এখন নিউট্রাল অবস্থায় আছে। সংবিধান অনুযায়ী এটা আইন হিসেবে গৃহীত হলেও ঠিক আছে, আবার কোনোভাবে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট না পড়ে তাহলে আইন না হলেও ঠিক আছে। সাংবিধানিক আইন এটাই বলে। এখন আপনি একজন মুসলিম হিসেবে গভীরভাবে চিন্তা করে বলুন তো, এটা কি আল্লাহর আইনের সুস্পষ্ট অবমাননা নয়? এটা কি আল্লাহর আইন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নয়?? এটা কি আল্লাহর আইনের চেয়ে মানুষের রায়কে অগ্রাধিকার দেওয়া নয়??? আল্লাহ হলেন পুরো জাহানের সৃষ্টিকর্তা। আর আমরা হলাম তাঁর আজ্ঞাবহ নগন্য দাস। সেই দাস হয়ে যদি আমরা মহান মনিবের হুকুমকে নির্দ্বিধায় না মেনে নিয়ে পর্যালোচনায় বসি যে, এটা মানা হবে নাকি প্রত্যাখ্যান করা হবে, তাহলে এর চেয়ে বড় আল্লাহদ্রোহ আর কী হতে পারে? অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا.
‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যখন কোনো বিষয়ে ফয়সালা করেন তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের ভিন্ন (আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার) কোনো অধিকার নেই। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হবে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।’ [সুরা আল-আহজাব : ৩৬]
একবার না বুঝলে উপরিউক্ত কথা এবং আয়াতটি কয়েকবার পড়ুন। চিন্তা করে দেখুন, কী ভয়ানক ব্যাপার! আমাদের এ অধিকার কে দিলো যে, আমরা আল্লাহর ফয়সালাকৃত বিধান নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা করে দেখব যে, তা বাস্তবায়িত করা হবে নাকি হবে না? আল্লাহর বিধানকে বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে না নিয়ে মানুষের মতামত নিয়ে তা যাচাই করতে যাওয়াটাই তো মারাত্মক পর্যায়ের কুফর। আপনার এ দুঃসাহস হলো কী করে যে, আপনি আল্লাহর বিধান নিয়ে মন্তব্য করবেন? তাঁর বিধান কার্যকর হবে কিনা, সেটার জন্য মানুষদের রায় নিতে হবে, সংখ্যাগরিষ্ঠের মত নিতে হবে, এ অনুমতি আপনাকে কে দিয়েছে? এটা কি সুস্পষ্ট আল্লাহদ্রোহ নয়? এটা কি পরিষ্কার কুফর নয়? পর্যালোচনা তো কেবল সেটারই করা হয়, যেটায় ভুল বা সঠিক উভয়টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আল্লাহর বিধান ও তাঁর ফয়সালাকৃত আইনে কি ভুল হওয়ার সামান্যতম চান্সও আছে? ভুল হওয়ার সামান্য সন্দেহ করলেই তো ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে যে সিস্টেম আল্লাহর আইনকে পর্যালোচনার স্থানে নিয়ে যায়, সেটা কখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হতে পারে না; বরং এটা হলো পরিষ্কার কুফরি সিস্টেম।‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যখন কোনো বিষয়ে ফয়সালা করেন তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের ভিন্ন (আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার) কোনো অধিকার নেই। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হবে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।’ [সুরা আল-আহজাব : ৩৬]
বস্তুত আল্লাহর ফয়সালাকৃত আইন যখন সংসদে পর্যালোচনার জন্য পেশ করা হলো, তখনই প্রমাণ হয়ে গেল যে, আল্লাহর ফয়সালাকৃত আইন বা তাঁর সিদ্ধান্তে আমরা সন্তুষ্ট নই; বরং এতে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি। আল্লাহর আইনই চূড়ান্ত নয়; বরং আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে যেটা পাশ করাব, সেটাই আইন। আল্লাহর আইন আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের মতের অনুকূলে হলেই কেবল আইন হবে, অন্যথায় সেটা কোনোদিনও আইনের মর্যাদা পাবে না। মোটকথা অধিকাংশের মতামত পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেটা আইন নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠের সাংসদের অনুমোদন পাওয়ার পরই সেটা আইন হচ্ছে। তাহলে এটাকে আল্লাহর আইন বলা হয় কীভাবে? এটা তো মানবরচিত আইনের অন্তর্গত। আল্লাহর আইন তো তখনই হবে, যখন তা বিনা বাক্যব্যয়ে আইন হিসেবে মেনে নেওয়া হবে; চাই কেউ এর পক্ষে থাকুক কিংবা না থাকুক। কিন্তু ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত নিয়ে যে আইন পাশ করা হবে, সেটা তো মানুষের মতের অনুগামী আইন হবে, সেটাকে প্রকৃতার্থে আল্লাহর আইন বলার সুযোগ নেই। আর কাফিররা তো এটাই চায় যে, মানুষের মতই চূড়ান্ত থাকুক, আল্লাহর আইন নয়।
এখন একটু চিন্তা করে বলুন তো, এটাকে কি কোনো সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মুসলিম ইসলাম প্রতিষ্ঠা বলার দুঃসাহস দেখাবে? এটা তো ইসলামের চূড়ান্ত অমর্যাদা! এটা তো আল্লাহর আইনের চরম অসম্মান!! আল্লাহর স্পষ্ট আইনকে মানুষের সামনে পর্যালোচনার জন্য পেশ করা তো পরিষ্কার কুফর। অথচ এ কুফরকেই আপনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা বলে প্রচার করছেন! আপনি যদি মনে করেন, গণতান্ত্রিক সিস্টেমে একবার সরকার হতে পারলেই কেল্লা ফতেহ; আপনি যদি ভেবে থাকেন ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধান পাল্টে ফেলবেন, সব কুফরি সিস্টেম পরিবর্তন করে ফেলবেন, তাহলে এখনও আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন! সামরিক শক্তি ও ভূ-রাজনৈতিক পরিপক্কতা অর্জন ছাড়া এ সিস্টেমের বিপরীতে গিয়ে আপনি একদিনও টিকতে পারবেন না। এটা কেন সম্ভব নয়, সে ব্যাপারে যৌক্তিক ও ঐতিহাসিক প্রমাণাদি আমরা সামনের পর্বগুলোতে উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং আপনি যখন গণতান্ত্রিক সিস্টেম ঠিক রেখে সংসদ চালাবেন, তখন তো প্রতিনিয়ত আপনি কুফরকে প্রমোট করবেন এবং আল্লাহর আইনের অবমাননা করে চলবেন। এভাবে দীর্ঘমেয়াদে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করার অনুমতি কি আপনাকে ইসলাম দেয়? এটা কোন জরুরত আর কোন ইকরাহ (বাধ্যবাধকতা), যার ভিত্তিতে আপনাকে এমনটা করার অনুমতি দেওয়া হবে? আর যদি সিস্টেম পাল্টাতে চান, কুফরি সিস্টেমকে পরিবর্তন করে পুরোপুরি ইসলামি নিয়ম জারি করতে যান, তাহলে গণতন্ত্রের প্রভুরা তো আপনাকে সিস্টেম পাল্টাতে দেবে না। সেক্ষেত্রে আপনার সামনে দুটি পথ খোলা থাকবে। হয় তাদের কথা মেনে নিয়ে আগের নিয়মেই সবকিছু চালাবেন, নয়তো তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন। ব্যাপারগুলো কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি, নাকি ক্ষমতায় যেতে হবে, সে চিন্তায় বিভোর হয়ে শরিয়তের সকল নীতি-উসুল লঙ্ঘন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি?
হে প্রিয় ভাই আমার, এ ব্যাপারে একটু চিন্তা করুন। দলের প্রেমে অন্ধ না হয়ে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন। আদৌ কি এটা ইসলাম প্রতিষ্ঠা নাকি ইসলাম অবমাননার পথ? সাধারণ মানুষের আবেগ ও ইসলামের প্রতি ভালোবাসাকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে ইসলামের অপমান বন্ধ করুন। আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করার পথ থেকে ফিরে এসে নববি মানহাজে চলুন। বাংলাদেশের সব মানুষ যদি আজ নামাজের পক্ষে চলে যায়, আর এ চাওয়ার ভিত্তিতেই সংসদে নামাজের আইন পাশ করা হয়, তবুও এটাকে কুফরেরই বিজয় বলতে হবে, ইসলামের বিজয় বলার ন্যূনতম কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এখানে আল্লাহর আইন ও তাঁর বিধান হিসেবে নয়; বরং অধিকাংশ মানুষের চাওয়ার ভিত্তিতে আইন পাশ হয়েছে। তাই আপনাকে বলছি, হে আমার দ্বীনের ভাই, ইসলামপ্রিয় সাধারণ মানুষকে আর বোকা বানাবেন না। তাদেরকে সত্যিটা জানান, জানার সুযোগ করে দিন। এমন কুফরি সিস্টেমের ইসলামকে বাইড্রেনরা পছন্দ করতে পারে, কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনোদিন এটাকে পছন্দ করবেন না।
গণতন্ত্রের নানা অসংগতি ও সমস্যার কথা অনেকেই আলোচনা করেন, কিন্তু খুব কম মানুষই এ মারাত্মক বিষয়টি তুলে ধরেন। বিষয়টি যদি ব্যাপকভাবে আলোচিত হতো, সবার কানে কানে যদি কথাগুলো পৌঁছে যেত তাহলে আমাদের ধারণা অধিকাংশ মুসলিম এ কুফরি মতবাদ ত্যাগ করে সে পথে প্রত্যাবর্তন করার চিন্তা করত, যে পথে চলেছেন রাসুল কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম, তাবিয়িন ও তৎপরবর্তী প্রত্যেক যুগের হকপন্থী জামাত। আজকের পর্বের মূল কথাগুলো যদি কোনো মুসলিম নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে হৃদয়ের জানালা খুলে দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে তাহলে তাকে আর পরবর্তী সময়ে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তাকে গণতন্ত্রের অসারতা আর নির্বাচনের মতো কুফরি ব্যবস্থার ব্যাখ্যা নতুন করে বুঝানো লাগবে না। আমাদের খুব ভালো করে মনে রাখা দরকার যে, নববি পথ ও পন্থা পরিত্যাগ করে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও কেউ সফল হয়নি, আর না ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ বাস্তব সত্য আমরা যত আগে বুঝতে পারব ততই আমাদের জন্য কল্যাণ।
শেষ করছি উমার বিন খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহুর সেই বিখ্যাত উক্তি দিয়ে, যার বাস্তবতা আজ পুরো মুসলিম উম্মাহ হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে, যার সত্যতা আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হতে দেখা যাচ্ছে। কথাটি খুব ভালোভাবে স্মরণ রাখা উচিত। কোনো এক ঘটনা প্রসঙ্গে উমার বিন খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু রাগান্বিত হয়ে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন :
إِنَّا كُنَّا أَذَلَّ قَوْمٍ فَأَعَزَّنَا اللَّهُ بِالْإِسْلَامِ فَمَهْمَا نَطْلُبُ الْعِزَّةَ بِغَيْرِ مَا أَعَزَّنَا اللَّهُ بِهِ أَذَلَّنَا اللَّهُ.
‘(মনে রেখো, ইসলামপূর্ব সময়ে) আমরা ছিলাম সবচেয়ে লাঞ্ছিত ও অসম্মানিত এক জাতি। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। অতএব যখনই আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে সম্মান তালাশ করব তখনই আল্লাহ আমাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন।’ [মুসতাদরাকুল হাকিম : ১/১৩০, হাদিস নং ২০৭, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত]
চলবে ইনশাআল্লাহ...
✍️
Collected
Comment