Announcement

Collapse
No announcement yet.

‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৮ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৮ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত:
    পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি


    রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং মুসলমানদের ইতিহাসে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ ও ভাবনা

    (প্রথম খণ্ড)

    -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    মূল প্রকাশনায়:

    আস-সাহাব মিডিয়া (উপমহাদেশ)

    সফর ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০২১ ঈসায়ী

    খ - শিক্ষা
    লেবানন ও লেভান্টে জেসুইটরা বেশ কিছু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেইসাথে তারা প্রতিষ্ঠা করেছিল সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়:
    (১) স্কুল ও বিদ্যালয়সমূহ

    (ক) জেসুইট স্কুল প্রতিষ্ঠা:
    জেসুইটরা ১৭৩৪ সালে মাউন্ট লেবাননে কেসরুয়ান জেলার আইন তোরায় প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠা করে[1] এরপর তারা লেভান্ট থেকে বহিষ্কৃত হওয়াতে ১৮৩১ সালে সেখানে ফিরে আসে। তারা ১৮৪৩ সালে মাউন্ট লেবাননে কেসরুয়ানের গাজিরে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। এরপর তাদের স্কুলগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে যেখানে আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্টরা বসতি স্থাপন করত, সে জায়গাগুলোতে। তাদের লক্ষ্য ছিল, লুই শেখো আমেরিকান মিশনারিদের সম্পর্কে যেমনটা বলেছিলেন: তারা স্কুল খোলার জন্য চেষ্টায় কোন ত্রুটি করত না; বিশেষ করে বৈরুত ও আবায়েহে। এ পথে তারা কিছু সাফল্যও লাভ করেছিল। যদি তারা সেগুলোতে ক্যাথলিক ধর্মমত ও শিক্ষার বিরোধিতা না করতো, তবে যুবকদের অন্তরে তাদের কার্যক্রমের দরুন ধর্মীয় সহনশীলতার আভা ছড়িয়ে যেত।[2]
    জেসুইটরা শিক্ষা প্রয়াসের জন্য গাজির শহরটি বেছে নিয়েছিল। এদিকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা একই উদ্দেশ্যে 'আবায়েহ' শহর বেছে নিয়েছিল। আমেরিকানরা যখন বৈরুতে চলে যায়, তখন - জেসুইটদের মতে - গাজিরের আর ক্যাথলিক কেন্দ্র হবার সেই মর্যাদা অবশিষ্ট থাকেনি, যেখানে অবস্থান করে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষাঙ্গনে ক্যাথলিক মতবাদকে রক্ষা করা যায়। তাই তখন তারাও বৈরুতে চলে যাবার সংকল্প করে ফেলে, যেখানে তারা তাদের কলেজ স্থানান্তরিত করে নিয়েছিল।[3]
    যে কারণে এসবের প্রতি তাদের অনুপ্রেরণা এমন চাঙ্গা ছিল, তা হল, প্রোটেস্ট্যান্টদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। লুই শেখো এ সম্পর্কে বলেছেন: আমেরিকান কলেজের মালিকদের সাফল্য ক্যাথলিকদের জন্য প্রণোদনা ছিল; ক্যাথলিকদের স্বজাতীয় শিশুদেরকে প্রোটেস্ট্যান্ট বিভ্রান্তি (!) থেকে রক্ষা করার জন্য প্রোটেস্ট্যান্টদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামার প্রণোদনা। জেসুইটরাই প্রথম ক্যাথলিকদের বিরোধিতার মাঠে নেমেছিল। তাই তারা গাজির, বৈরুত ও সাইদাতে তাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে শক্তিশালী করে। তারপরে তারা বৈরুতে আমেরিকান কলেজের সাথে প্রতিযোগিতা করার মত এবং প্রাচ্যের বাচ্চাদের জন্য সকল প্রকার পঙ্কিলতা মুক্ত বিশুদ্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারা উপহার দেবার মত একটা কলেজ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাটি অবলম্বন করে। চার বছর পর আমাদের ক্যাথলিক কলেজের ভবনগুলো পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং ১৮৭৫ সালে গাজিরের স্কুলটি সেসব ভবনে স্থানান্তর করা হয়।[4]
    এমনিভাবে জেসুইটরা বালিকা স্কুল চালুর ব্যাপারেও আগ্রহী ছিল। তাদের প্রচেষ্টায় ১৮৪৫ সালে সিস্টারস অফ সেন্ট জোসেফ, তারপর ১৮৪৭ সালে 'সিস্টারস অফ লাভ' গঠিত হয়। অতঃপর ১৮৫৩ সালে তারা মরিয়ম নান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করে, তারপরে আসে সোসাইটি অফ দ্য হার্ট অফ যীশু। তারপর সিস্টার্স অফ হার্ট অফ যীশু এন্ড মেরি নামে সংস্থা দুটি একীভূত হয়ে যায়। এই সংস্থার সিস্টাররা বিশেষভাবে অবহেলিত গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে যায়।
    এমনিভাবে নাসরতের সিস্টাররাও লেভান্টে ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা বৈরুত, একর, হাইফা, নাসরত ও শাফাআমরের বালিকা বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করে।[5]
    ***

    (খ) এসব স্কুলের পাঠ্যক্রম ও নিয়ম কানুন
    আমি আগেই উল্লেখ করেছি, পোপ ষোড়শ গ্রেগরি জেসুইটদের সিরিয়ায় কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং ১৮৮১ সালে পোপ ত্রয়োদশ লিও তাদের সিরিয়ায় সব ধরনের সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকার দিয়েছিলেন। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, শিক্ষার মাধ্যমে জেসুইট ধর্মমত প্রচার একটি পোপ প্রকল্প। আর শিক্ষার পেছনে জেসুইট মিশনারিসহ অন্যদের একটাই লক্ষ্য, তা হল, ছাত্রদেরকে খ্রিস্টান সমমনা বানানো।[6]
    জেসুইটরা - প্রথমত - ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। কারণ তারা বিশ্বাস করত, যদি তারা খ্রিস্টান পাদ্রীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাদেরই বিদ্যালয়ে তাদেরকে প্রস্তুত করে তোলে, তাহলে তারা সমস্ত খ্রিস্টান গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। জেসুইট শিক্ষায় উপনিবেশবাদের উপস্থিতি ছিল পুরোপুরি দৃশ্যমান; লুকোনো ছিল না মোটেও, যেমনটা ছিল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর বেলায়।
    এ কারণেই তারা ১৮৬৪ সাল থেকে মৌলিকভাবে তাদের কারিকুলাম ফ্রান্সের কারিকুলামের আদলে তৈরি করে নেয় সেসঙ্গে তারা আরবি ভাষা শিক্ষা যোগ করে।
    এসবের পেছনে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষাদানের পাশাপাশি নিজেদের খ্রিস্টান ছাত্রদের মনে ফ্রান্সের ভালোবাসা ও ফরাসি ভাবধারা গেঁথে দেয়া।
    ঊনবিংশ শতাব্দীতে জেসুইটরা এমন সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করেছিল, যা আমেরিকানদের জন্য উপলব্ধ ছিল না। কারণ ফরাসি ম্যান্ডেট যদিও আমেরিকানদের ক্রিয়াকলাপের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছিল এবং তাদের ধর্মীয় কার্যকলাপে তাদেরকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়েছিল; কিন্তু একই সাথে জেসুইটদের সেবায় সেনাবাহিনী ও নিজের লোকদেরকে নিয়োজিত করে রেখেছিল।
    ধর্মপ্রচারক হেনরি জেসুপ তার বইতে (Les Jesuites en syrie) (পৃষ্ঠা নং: ১০:৫৬) জেসুইটদের সম্পর্কে বলেছেন: শুরুতে জেসুইট মিশনারিরা (সিরিয়ার ওপর ফরাসি ম্যান্ডেটের আগে) ড্রুজ পর্বতমালায় স্কুল প্রতিষ্ঠা করত এবং তা পরিচালনা করতে গিয়ে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হলে সেটা বন্ধ করে দিত। কিন্তু (মিশনারি) শিক্ষা আজ অর্থাৎ ম্যান্ডেটের পরে বিশেষ করে ড্রুজ পর্বতমালায় মিশনারি এবং সরকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।[7]
    ফরাসি স্কুল, ফ্রিয়ার (ব্রাদারহুড) খ্রিস্টান স্কুল, জেসুইট স্কুল এবং এতদসংশ্লিষ্ট সিস্টার স্কুল সহ আরো যা কিছু রয়েছে, সবগুলোর এমন একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, যা প্রাচ্যে গড়ে ওঠা আমেরিকান ও ব্রিটিশ স্কুলগুলোর ছিল না। সে বৈশিষ্ট্যের মূল কথা হলো, এতদঞ্চলের যে সমস্ত শিক্ষার্থী রয়েছে, তারা যেন ফ্রান্সের সন্তানদের মতো করেই গড়ে ওঠে এবং নিজেদের দেশ সম্পর্কে তারা যতটা জানে, তার চেয়ে বেশি যেন তারা ফ্রান্স সম্পর্কে জানতে পারে, সে লক্ষ্যে এক বিশেষ অনুশীলন।[8]
    জেসুইটরা এটুকুতেই ক্ষান্ত দেয়নি, বরং তাদের পাঠ্যসূচিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বানোয়াট কথাবার্তা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, বৈরুত এবং অন্যান্য জায়গায় সেন্ট জোসেফ স্কুল ফর গার্লস-এ একটা বই পড়ানো হতো ফ্রান্সের ইতিহাস সম্পর্কে। ওই বইয়ের ৮০ ও ৮১ নং পৃষ্ঠা দুটোতে নিম্নোক্ত কথাগুলো রয়েছে:
    মুসলিম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদেরকে বিশ্বজয়ের এবং সকল ধর্মকে তাঁর নিজের ধর্মে রূপান্তরিত করার আদেশ দিয়েছিলেন।
    এই পৌত্তলিক গোষ্ঠীর সঙ্গে খ্রিস্টানদের কত বড় পার্থক্য! এই আরবরা তাদের ধর্ম জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে এবং মানুষকে বলেছে: "ইসলামে ধর্মান্তরিত হও, নইলে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও", অথচ খ্রিস্টের অনুসারীরা তাদের ধার্মিকতা এবং দানশীলতার দ্বারা মানুষের মন জয় করে।
    আরবরা আমাদের ওপর বিজয়ী হলে পৃথিবীর অবস্থা কী হতো? তখন আলজেরীয় ও মরক্কানদের মতো আজ আমাদের মুসলমান থাকতে হতো।[9]
    শাইখ মুহাম্মদ রশিদ রেযা রহিমাহুল্লাহ জেসুইট স্কুলগুলিতে মুসলিম ছাত্র সম্পর্কে লিখতে গিয়ে এ বিষয়টা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন: জেসুইট স্কুলে তারা তাকে (মুসলিম ছাত্রকে) এমন যেকোনো কিছু করতে বাধা দিত, যা তাকে নিজ ধর্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। এমনকি তারা মুসলমানদের যে সমস্ত বই-পুস্তক মুদ্রণ করত, সেগুলোতে বিকৃতি প্রবেশ করাত। সেগুলোতে থাকা আল্লাহর বাণীকে তারা অজ্ঞাত মানুষের কথা বলে চালিয়ে দিত। তেমনিভাবে রাসূল আলাইহিস সালামের বাণী নিয়েও তারা অনুরূপ কাজ করত। তারা ইতিহাস বর্ণনায় ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করত; ছাত্রদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর জন্য[10]
    শাইখ রহিমাহুল্লাহ আরো লিখেছেন: নিজেদের ধর্মের ব্যাপারে তারা এই যে বিষয়টার ভয় পায়, তা ক্যাথলিক অর্থোডক্স এবং বিশেষ করে জেসুইট স্কুলগুলোর অবস্থা থেকে আলাদা নয়। কারণ এমন বিভিন্ন সূত্রে আমাদের কাছে সংবাদ এসেছে, যেগুলো পরোক্ষভাবে ধারাপরম্পরাগত সন্দেহাতীত বিষয় বলা যায়। আমরা জানতে পেরেছি তারা মুসলিম শিশুদেরকে তাদের সকল ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতে বাধ্য করে; এমনকি ছবি ও মূর্তির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং উভয় পুণ্যাত্মার নাম ডেকে সাহায্য প্রার্থনা পর্যন্ত তারা করতে বাধ্য করে, অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এমন কাজ শিরক। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই আচার ও রীতি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং তার সহযোগী রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের কয়েক শতাব্দি পরে খ্রিস্টধর্মে এসেছে।[11]

    ***

    (২) সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়:
    আমি আগে উল্লেখ করেছি যে, জেসুইটরা ১৮৭৫ সালে তাদের স্কুল বৈরুতের গাজিরে স্থানান্তরিত করেছিল সেন্ট জোসেফ কলেজ হিসাবে।
    এর সমর্থনে পোপ নবম পিয়াস এটিকে ১৮৭৪ সালে একটি কলেজের নাম দেন এবং তাঁর পরে ১৮৮১ সালে তাঁর উত্তরসূরি ত্রয়োদশ লিও এ প্রতিষ্ঠানে আরো কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করেন, যেমন এর ছাত্রদেরকে ধর্মতত্ত্ব, আইনি অধিকার ও দর্শন শাস্ত্রে সার্টিফিকেট দেয়া।
    ফরাসি সরকারও এ প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করেছিল। তাই এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের সার্টিফিকেটকে ফ্রান্সের স্কুল ছাত্রদের সার্টিফিকেটের সমমান দেয়া হয়। তারপর এটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের একটি মেডিকেল সেকশন যুক্ত করতে বলা হয়। তখন তারা ব্যবস্থা করে ফেলে এবং ওই ডিপার্টমেন্টে ১৮৮৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়ানো আরম্ভ করা হয়।[12]
    এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিশেষভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকলাপ এবং সাধারণভাবে জেসুইট কার্যকলাপ ফরাসি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি পোপ প্রকল্প। এর লক্ষ্য মূলত মুসলমানদের মাঝে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করা এবং ফরাসি উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথ উন্মুক্ত করা।
    বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দর্শন, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিজ্ঞান কলেজ, প্রাচ্য সাহিত্য ইনস্টিটিউট, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আল-মাশরিক ম্যাগাজিন আরবি ভাষায় এবং বিভিন্ন শাস্ত্রীয় পত্র-পত্রিকা ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত হতো।[13]
    ১৯০২ সালে এই ইউনিভার্সিটিতে প্রাচ্য সাহিত্য ইনস্টিটিউট যুক্ত করা হয় প্রাচ্যবিদদের জন্য মধ্যপ্রাচ্য এবং এ বিষয়ক নিবিড় গবেষণার প্রয়োজনকে সামনে রেখে।[14]
    এই ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ছিল স্থানীয় খ্রিস্টানদের মাধ্যমে লেভান্টকে প্রভাবিত করার জন্য পশ্চিমা শক্তির অন্যতম মাধ্যম।[15]
    আর ফ্রান্সই ছিল লেভান্টে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচার মিশনে সবচেয়ে সক্রিয় ইউরোপীয় রাষ্ট্র।
    আর যে ফ্রান্স ক্যাথলিক ধর্মমত এবং বিশেষভাবে জেসুইট ধর্ম প্রচার মিশনে মুক্ত হস্তে খরচ করত, সেই ফ্রান্সই নিজ ভূমি থেকে পাদ্রীদেরকে বিতাড়িত করত দেশের বাইরে তাদেরকে ব্যবহারের জন্য। উদাহরণস্বরূপ, সেন্ট জোসেফ জেসুইট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও ফার্মেসি অনুষদের সভাপতি ও অধ্যাপকরা ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বেতন নিতেন।
    ফ্রান্স খেয়াল করেছিল, ভাষা সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে, তাই সে ফরাসি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং জেসুইটরা এই সুযোগে ফরাসি সংস্কৃতির প্রচারকল্পে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে।
    যে ছাত্র আল-ইসাবিয়া স্কুলে এবং তারপরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করত, সে তার পড়াশোনা, কাজ ও উচ্চ স্বীকৃতির জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেত।
    তারা ক্যাথলিক মতবাদকে পুঁজি করে লেভান্টের বিবদমান গোষ্ঠীগুলোর কাছে ফ্রান্সকে আপন করাতে চেয়েছিল।[16] ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে নিসিয়া কাউন্সিলে ট্রিনিটির সমর্থকদের সাথে কনস্টানটাইনের জোট গঠনের প্রকৃতি ও মূল উদ্দেশ্য এটাই ছিল। সামনে আমাদের সে আলোচনা আসবে, ইনশা আল্লাহ!

    ***
    গ - অটোমান সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য আরব জাতীয়তাবাদী আহ্বানকে উৎসাহিত করা
    উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য আরবদের প্ররোচিত করার ক্ষেত্রে লেভান্টের খ্রিস্টানদের বড় ভূমিকা ছিল। তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে আরব সাহিত্য প্রচারের মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ বড় আকারে উপস্থাপন করাকে তাদের পরিকল্পনার মাধ্যম বানিয়েছিল। খ্রিস্টান মিশনারিগুলোর; বিশেষ করে এগুলোর ভেতর লেবাননের জেসুইট পাদ্রিদের এতে ভূমিকা ছিল। আরবি সাহিত্যে আগ্রহী সাহিত্যিক সমাজকে উস্কানি দেয়া তাদেরই পরিকল্পনার অংশ ছিল। নাসিফ আল-ইয়াজজি, তার পুত্র ইব্রাহিম ও বুট্রোস আল-বুস্তানির জীবনী এবং লেভান্টে আমেরিকান মিশনারির আলোচনার সময় কিছুটা বিশদ আকারে আমি এ বিষয়টা উল্লেখ করব, ইনশা আল্লাহ। এরা সকলেই খ্রিস্টান বাইবেলকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করতে অবদান রাখে, যা আমাদেরকে দেখিয়ে দেয়, মিশনারি লক্ষ্যগুলোর সাথে রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলোর কিরূপ গভীর সম্পর্ক। এতে করে আমরা আরও বুঝতে পারি, খ্রিস্টানদের পবিত্র বাইবেল অনুবাদ করা সহ অন্যান্য মিশনারি কার্যক্রম নিখাদ ধর্মীয় কর্মযজ্ঞ নয়।
    ***
    ঘ - জনকল্যাণমূলক সামাজিক কার্যক্রম
    জেসুইটরা নিজেদের মতবাদ প্রচারের একটি উপায় হিসাবে সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমকে অবলম্বন করতে আগ্রহী ছিল। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন পন্থা গ্রহণ করেছিল। ভ্যাটিকান তাদেরকে বস্তুগত ও নৈতিকভাবে সহায়তা দিয়েছিল, আর ফ্রান্স তাদেরকে রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিল।
    চিকিৎসা সেবা দেয়া ছিল তাদের ক্রিয়াকলাপের অন্যতম। এ কারণেই তারা চেয়েছিল, লেভান্টে তাদের ধর্মপ্রচার মিশনের কেন্দ্রগুলো যেন চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশে থাকে। তারা প্রাথমিকভাবে সিনিয়র কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যুক্ত হবার গুরুত্ব অনুধাবন করেছিল, যাদেরকে তারা তাদের ধর্ম প্রচার মিশনের স্বার্থে কাজে লাগাতো।[17]
    এছাড়াও তাদের উপায়গুলোর অন্যতম হলো, যুব ক্লাব। খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক জেসব প্রণীত লেস জেসুইটস এন সিরিয়া (৫:২৩) গ্রন্থে এসেছে: লেবাননের জেসুইটরা এই ক্লাবগুলোকে 'খ্রিস্টান ক্রুসেড' বলে গণ্য করত এবং এ ক্লাবগুলোর যুবকেরা সাধারণ যুবকদেরকে ক্যাথলিক ক্লাবগুলোর জন্য সংগঠিত করত।[18]
    এছাড়াও বিনামূল্যে শিক্ষাদান তাদের কৌশলী উপায়সমূহের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ধর্ম প্রচারক জেসব 'লেস জেসুয়েটস এন সিরিয়া' (৭:৭) গ্রন্থে তাদের সম্পর্কে উদ্ধৃত করেছেন: তারা মনে করত, প্রতিটি উচ্চ ব্যয় খাতসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে একটি ছোট বিনামূল্যে শিক্ষাদান কেন্দ্র চালু করা জরুরী। কারণ, তাদের দৃষ্টিতে দরিদ্ররা ধনীদের অপেক্ষা অধিক আনুগত্যপ্রবণ।[19]

    ***
    ঙ - রচনা ও প্রকাশনা
    এ বিষয়ক আলোচনা আমি কয়েক ভাগে বিভক্ত করেছি:
    ১. গ্রন্থাবলী
    ২. সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন
    ৩. ক্যাথলিক প্রিন্টিং প্রেস

    ***

    ১. গ্রন্থাবলী
    লেবাননের জেসুইট পাদ্রীরা অনেক পুস্তক পুস্তিকা ও গ্রন্থ মুদ্রণ ও প্রকাশ করেছিল। আমি উদাহরণস্বরূপ তাদের কিছু প্রকাশনা; সেই সঙ্গে তাদের কিছু গ্রন্থের কথাও উল্লেখ করবো, ইনশা আল্লাহ!
    সেসব গ্রন্থের অধিকাংশই ছিল ধর্মীয়। খ্রিস্টান ধর্মপ্রচার ও প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদ খণ্ডনে সেগুলো প্রকাশিত হতো। তাদের স্কুলগুলোর পাঠ্য বইয়ের চাহিদা মেটাতে প্রকাশিত হতো কিছু বই। সেই সঙ্গে তারা আরো প্রকাশ করত আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন বই।[20] এ সাহিত্য বিষয়ক প্রকাশনার মৌলিক দুটো উদ্দেশ্য ছিল, যা সামনে রেখে লেভান্টের কতক খ্রিস্টান সাহিত্যিক এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল-
    প্রথমটি হলো: অটোমান সাম্রাজ্যের ইসলামিক ভার্সিটির মোকাবেলায় আরব্য জাতীয়তাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করা। এটা ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংস সাধন এবং এর বিরুদ্ধে আরবদেরকে উস্কানি প্রচেষ্টা।
    দ্বিতীয়টি হলো: অনুবাদ পরিষেবা প্রদান এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রাচ্যবিদ, ধর্মপ্রচারক ও অনুবাদকদেরকে আরবি শেখানো।
    জেসুইটদের কতক রচনায় সাহিত্যিক ঐতিহ্য ও ধারা পরম্পরাগত গ্রন্থাবলীর উদ্ধৃতিতে অবিশ্বস্ততার প্রমাণ লক্ষ করা গেছে। সামনে আমি এ বিষয়ে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ! লেবাননের জেসুইট পাদ্রিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার মধ্যে রয়েছেঃ পাদটীকা সহকারে খ্রিস্টান বাইবেল। টীকাগুলো তারা ফরাসি সংস্করণ থেকে উদ্ধৃত করেছে।
    ইনশা আল্লাহ, পাঠক দেখতে পাবেন, সেসব পাদটীকায় তারা খ্রিস্টান বাইবেলের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার সামনে পশ্চাদপসরণ করেছে এবং এতে পরস্পর বিরোধিতার উপস্থিতি স্বীকার করেছে।
    এছাড়াও লেখক, অনুলিপিকারী ও অনুবাদকদের অজ্ঞতা এবং তাদের কাজের মাঝে ভুল-ত্রুটি থাকার কথাও তারা অস্বীকার করতে পারেনি।
    তবুও তারা জোর দিয়ে বলে যে, তারা যেটাকে বাইবেল বলে, তা আল্লাহর সংরক্ষিত বাণী। প্রোটেস্ট্যান্টরা খ্রিস্টানদের পবিত্র বাইবেলের আরবি অনুবাদ যখন প্রকাশ করে, তখন তারাও এর জবাবে আরবি যে সংস্করণ প্রকাশ করেছে, সেটা নিয়ে তারা গর্ব করে।
    বাইবেলের আরবি অনুবাদ সম্পর্কে জেসুইট লুই শেখো লিখেছেন: সেই সময়ে আমাদের প্রেস থেকে অনেক ধর্মীয় ও শাস্ত্রীয় প্রকাশনা প্রকাশিত হয়েছিল। সেগুলোর মাঝে অক্ষর বিন্যাস ও মুদ্রণ বিচারে সবচেয়ে উত্তম ও নিখুত ছিল বাইবেল (১৮৭৬১৮৮২). ৩ খণ্ডে ছবি ও নকশা সজ্জিত ছিল সেটি। মূল হিব্রু ও গ্রীক ভাষা থেকে আরবিতে ভাষান্তরিত করতে মিশনারির ফাদাররা চেষ্টা অবশিষ্ট রাখেননি। সবটুকু উজাড় করে দিয়ে তারা কাজটা করেছিলেন। অনূদিত কপির বাক্য সংশোধন, সম্পাদনা ও পরিমার্জনে প্রয়াত ভাষাবিদ শেখ ইব্রাহিম আল-ইয়াযজী অনুবাদকদেরকে সহায়তা করেছিলেন[21] এই নতুন অনুবাদটি দেখে জেরুজালেমের ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্ক মনসুর ব্র্যাকো আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। প্রাচ্যের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সমস্ত ফাদার, বিশপ ও পাদ্রীদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল এই সংস্করণ।[22]"
    প্রোটেস্ট্যান্ট অনূদিত সংস্করণের মোকাবেলায় তাদের সংস্করণ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন:
    ঐ অনুবাদটি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপরই ইব্রাহিম আল-ইয়াযজীর সাহায্যে জেসুইট ফাদারদের অনুবাদ আসে। জেসুইট সংস্করণটি ছিল সবচেয়ে নিখুঁত ভাষান্তর, বিষয়বস্তু বিচারে সর্বব্যাপী, ভাষা অলঙ্কারযুক্ত এবং উৎকৃষ্ট মানে মুদ্রিত। উক্ত সংস্করণটি গোটা আরব ক্যাথলিক গোষ্ঠীর অফিসিয়ালি অনূদিত গ্রন্থ বলে বিবেচিত হতে আরম্ভ করে।”[23]
    ক্যাথলিক সম্প্রদায় কর্তৃক প্রটেস্ট্যান্ট সংস্করণের বিরোধিতা হিসেবে রোম থেকে ১৮৯৭ সালে পোপ একটি আদেশ জারি করেছিলেন। তাতে বলা হয়, ক্যাথলিক সম্প্রদায় কর্তৃক প্রকাশিত নয় বাইবেলের এমন কোন সংস্করণ পাঠ করা, এমন কোন সংস্করণকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদানের জন্য রাখা কোন ক্যাথলিক সদস্যের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ নয়, যতক্ষণ না ধর্মজ্ঞ প্রধান ব্যক্তিদের স্বাক্ষর তাতে পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয় বরং ক্যাথলিক যে কারো জন্য গির্জার অনুমোদন ব্যতিরেকে প্রার্থনা, ধর্মীয় শিক্ষা বা আধ্যাত্মিক শিষ্টাচারের কোন বই মুদ্রণ করা নিষিদ্ধ।[24]

    ***

    ২. সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন
    লেবাননের জেসুইট পাদ্রিদল সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন প্রকাশকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তন্মধ্যে আমি তিনটার কথা সংক্ষেপে উল্লেখ করবো:
    (ক) ভ্যাটিকান কাউন্সিলের জার্নাল
    (খ) আল-বাশির পত্রিকা
    (গ) আল-মাশরিক ম্যাগাজিন
    ***


    (ক) ভ্যাটিকান কাউন্সিলের জার্নাল
    ১৮৭০ সালের আগ দিয়ে বৈরুতে আমেরিকান মিশনারিরা একটি ধর্মীয় পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করে, যাকে তারা (মাসিক বুলেটিন) বলত। এরপর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে ওটাকে সাপ্তাহিক বুলেটিনে রূপান্তরিত করে। ১৮৬০ সালে শুরু হওয়া (বৈশ্বিক)[25] ভ্যাটিকান ইকুমেনিকাল কাউন্সিলের খবরের রিপোর্ট করার জন্য একই বছরের শুরুতে জেসুইট ফাদারদগণ কর্তৃক একটি ক্যাথলিক সংবাদপত্র প্রকাশ লাভের পেছনে পূর্বোক্ত প্রোটেস্ট্যান্ট প্রকাশনাই দায়ী ছিল।[26]

    ***


    (খ) আল-বাশির পত্রিকা
    লেবাননের জেসুইটরা ১৮৭০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রোটেস্ট্যান্টদের প্রকাশিত সাপ্তাহিক বুলেটিনের মোকাবেলায় আল-বশির পত্রিকা প্রকাশ করে। এরই ভেতর এটি কয়েক ধাপে উন্নীত হয়ে সপ্তাহে তিনবার প্রকাশিত হতে আরম্ভ করে।[27] জেসুইট লুই শেখো তা এভাবে বর্ণনা করেছিলেন: "আর আজ ৫০ বছরের বেশি কেটে গেছে, এখনো তা বীরের মতো ধর্মের পক্ষে লড়ে যাচ্ছে। ফলে এটি ক্যাথলিক ধর্মের মুখপাত্র হয়ে উঠেছে। ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের নেতারা সকলেই একে উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছে।[28]
    আল-বাশিরের সম্পাদক প্রকাশকেরা ফরাসি সুরক্ষা উপভোগ করত। নিজেদের দিক থেকেও তাই তারা ফ্রান্সকে উত্তম বিনিময় দিত। ফ্রান্সকে তো তারা এই বলে বিবেচনা করত: গির্জার কুমারী কন্যা!
    এ থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, জেসুইটরা (সাধারণভাবে ক্যাথলিক সম্প্রদায়) এবং প্রোটেস্ট্যান্টরা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে একমত প্রতিদ্বন্দ্বী দুটো পক্ষ ছিল। আল-বাশির ছিল মৌলিকভাবে একটি ধর্মীয় সংবাদপত্র। এটা প্রধানত রোম ও ভ্যাটিকানের সংবাদ পরিবেশন করত এবং পোপ ও ক্যাথলিক বিশ্বাসের শত্রুদেরকে ক্রমাগত খণ্ডন করত।[29]
    এর সম্পাদকদের এটাই উদ্দেশ্য ছিল। উদাহরণ স্বরূপ, আল-বাশিরের প্রথম সম্পাদক গের্গেস জওয়াইন (আররদ্দু আলা মিখাইল মাশাকা আল লাঈম) নামে একটি বই লিখেছিলেন, যেখানে তিনি ক্যাথলিক থেকে প্রোটেস্ট্যান্ট মতান্তরিত মিখাইল মাচাকা কর্তৃক ক্যাথলিক গির্জার বিরুদ্ধে আনীত অপবাদের জবাব দিয়েছেন।[30]

    ***


    (গ) আল-মাশরিক ম্যাগাজিন
    এই ম্যাগাজিনটি ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের[31] শুরুতে রোমের পোপের অনুমোদন নেওয়ার পর প্রকাশিত হয়েছিল। বৈরুতের সেন্ট জোসেফ কলেজের ফাদারদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হতো এ ম্যাগাজিন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে এ প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। এটি দ্বি-মাসিক ছিল। এরপর লুই শেখো যখন দেখলেন, মাসিক আকারে আরো বড় কলেবরে এটি প্রকাশ করতে আরম্ভ করলে আরও দীর্ঘ বিশ্লেষণমূলক লেখা ও প্রবন্ধ রচনার সুযোগ তৈরি হবে, যা আরো বিরাট সাফল্য এনে দেবে, তখন ম্যাগাজিনটি মাসিক হয়ে ওঠে।
    ম্যাগাজিনটি বিভিন্ন আয়াত হাদিস এবং সালফে সালেহীন ও মুসলিম জাতির উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন উক্তি অবলম্বন করে দলিল-প্রমাণ প্রদানের মধ্য দিয়ে তার যাত্রা আরম্ভ করেছিল। ক্রমে ক্রমে তার আসল চেহারা বের হয়ে আসে।[32] অতঃপর ম্যাগাজিনটা ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক লেখালেখি আরম্ভ করে। সামনে সে বিষয়ে আলোচনা আসবে, ইনশা আল্লাহ!
    এই ম্যাগাজিন প্রকাশের তিনটি লক্ষ্য রয়েছে: প্রোটেস্ট্যান্ট কার্যক্রমের মোকাবেলা, ফ্রান্সের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন এবং আরব ও মুসলিম প্রাচ্যে ভ্যাটিকান রাজনীতি বাস্তবায়ন।[33]
    এ ম্যাগাজিন যাত্রা আরম্ভ করেছিল অটোমান সাম্রাজ্যের ক্ষমতার সময়। তখন বিভিন্ন গল্প ও সাহিত্যিক আলাপনের মাধ্যমে স্বরূপ ঢেকে রেখেছিল। অতঃপর যখন অটোমান সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে যায়, এমনকি একপর্যায়ে খেলাফত ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন এই ম্যাগাজিনের লোকদের আসল চেহারা বের হয়ে আসে। তখন তারা প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক লেখালেখি আরম্ভ করে।
    উদাহরণস্বরূপ আমি এখানে সে ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কিছু কথা তুলে ধরছি:
    • মুসলিম দেশগুলোতে বিদেশি আগ্রাসনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান
    এই আল-মাশরিক ম্যাগাজিন ছিল বিশেষভাবে ফরাসি দখলদারিত্ব এবং সাধারণভাবে বিদেশী আগ্রাসনের প্রতি জেসুইট আনুগত্যের অভিব্যক্তি প্রকাশের একটি মাধ্যম।
    ১৮৯৭ সালে আল-মাআসির আলজুগরাফিয়্যাহশিরোনামের একটি নিবন্ধে (আল-মাশরিক: খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৬০) মেজর (দানিস) -এর নেতৃত্বে সুদানে মাহদির বিরুদ্ধে পরিচালিত এবং ব্যর্থ হওয়া লড়াইয়ের ব্যাপারে প্রবন্ধকার আলোচনা করছিলেন। সে লড়াইয়ে নিহত লোকদের ভেতর আনোয়ার নামে তাদের একজন অফিসার ছিল। তার সম্পর্কে লেখক বলেন: তিনি আমাদের কলেজের একজন ছাত্র, যাকে আমাদের প্রিয় পাঠকদের অনেকেই চেনেন। আলহামদু লিল্লাহ, পরবর্তীতে এই ফেতনা অনেকাংশেই দমন করা হয়েছে। তখন বিদ্রোহীদের আক্রান্ত হয়েছে এবং তাদের ঐক্য খান খান হয়ে গিয়েছে।
    এভাবেই তারা এ নিয়েও গর্বিত যে, দামেস্কের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য জেনারেল গৌরডের সামরিক প্রস্তুতি ও কার্যক্রম লুকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তাদের ফার্মের সহায়তা ছিল। তারা এ কথা লেখে: আমাদের মাতৃভূমিতে ফ্রান্সের উপস্থিতি ব্যতিরেকে এখানে আমরা আমাদের উপযুক্ত মর্যাদা লাভের কথা চিন্তাও করতে পারি না।[34]
    হাজিরুল আলামিল ইসলামি: নাজরুন ইনকিয়াদীবা ইসলামী বিশ্বের বর্তমান, একটি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিশিরোনামের একটি নিবন্ধে (আল-মাশরিক: খণ্ড: ৩২ পৃষ্ঠা: ১৪৭) ফাদার নোফাল লিখেছেন: দেশাত্মবোধ রয়েছে আমাদের মাঝে। যদি আমাদেরই মাঝে শিক্ষক হয়ে কিংবা মেহমান বা নেতা হয়ে কোন বিদেশি শক্তি চলে আসে, তবে আমাদের দায়িত্ব হল, সরকারের পরিস্থিতি বিচারে সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে এবং বৃহত্তর অনিষ্ঠ দমনের স্বার্থে বিদেশী শক্তির সঙ্গে আপোষ করে নেয়া। এমনটা করা দেশ প্রেমের পরিপন্থী নয়; বরং তা যুক্তির বিচারে এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও জরুরী।অতঃপর তিনি তার এমন অবস্থানের পক্ষে দলিল হিসেবে সাইয়াদিনা ঈসা আলাইহিস সালামের নামে একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছেন: কায়সারের (রাজার) অংশ কায়সারকে দিয়ে দাওএমনিভাবে তিনি সাইয়্যিদিনা উমর ইবনুল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে দেশ ও নাগরিকদের অধিকার রক্ষার্থে জেরুজালেমের প্যাট্রিয়ার্ক স্যাফ্রোনিয়াসের চুক্তির কথাও উল্লেখ করেছেন।[35]
    • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে এই ম্যাগাজিনের অবস্থান
    ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ব্যাপারে ম্যাগাজিনটির অবস্থান ছিল আক্রমণাত্মক। (আল-মাশরিক: খণ্ড: ৩২, পৃষ্ঠা: ১৫৪). কারণ তারা দাবি করেছে যে ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় তলোয়ার ও অস্ত্রের ধার ব্যবহার করতে এসেছে, যেমনটা ইসলাম সবসময় করে থাকে। কিন্তু উদ্ভব ও প্রচারের জন্য খ্রিস্টান ধর্মের অস্ত্র ও সংস্কৃতি চর্চা ইত্যাকার মানব অবলম্বনীয় বিষয়াবলীর প্রয়োজন হয় না। প্রবন্ধকার লিখেছেন: "এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার যোগ্য।"
    যারা ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রচার করে তাদেরকে আখ্যায়িত করা হয়েছে উগ্রপন্থী বলে। সত্যের বাণী প্রচারের জন্য নাকি এসব বিষয়ের কোন প্রয়োজন নেই! সত্য সত্যাগতভাবে ই শক্তির চেয়েও উপরে! ঐশ্বরিক সাহায্য সহায়তা থাকে সত্যের সঙ্গে। নয়তো এমন ধর্মের কি মর্যাদা রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হলো তরবারি!?[36]
    তাদের কথা শুনে মনে হয়, জেসুইটরা যেন পোপের যুদ্ধের হাতিয়ার নয়, তারা যেন পোপের ষড়যন্ত্র চক্রান্তের অংশীদার নয়! তারা কি এত এত ক্রুসেড যুদ্ধের কথা ভুলে গেছে?! তারা কি ফরাসি ম্যান্ডেটের কথা ভুলে গেছে, যার সৈন্য হয়ে তারা কাজ করে?
    • আরবি ভাষান্তরকারী 'দায়েরাতু মাআরিফিল আলামিল ইসলামীর ব্যাপারে অবস্থান
    আল-মাশরিক (খণ্ড: ৩২ পৃষ্ঠা: ৫৯) এক সংখ্যায় পত্রিকাটি এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লিখেছে। অথচ মুসলিম উলামায়ে কেরামের অনেকেই তাদের অনুবাদ কর্মের কতক প্রবন্ধের ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন। কারণ, সে সমস্ত প্রবন্ধে কিছু মিথ্যাচার সন্নিবেশিত হয়েছিল। কিন্তু আল-মাশরিক ম্যাগাজিন এ প্রতিষ্ঠানের কাজকে উত্তম কাজ বলে অভিহিত করেছে। তাদের কাজের ভেতর তারা যে সমস্ত তথ্য পরিবেশন করেছে, মূল আরবি পাণ্ডুলিপিতে থাকা সেগুলোর উৎস উদ্ধৃত করার কোন প্রয়োজন নেই বলে ম্যাগাজিন মত প্রকাশ করেছে। এর কারণ হলো, মূল আরবি সংস্করণে সেই উৎসগুলো হয় বানোয়াট কিংবা ইসলামবিদ্বেষী কোন মহল বা ব্যক্তি।[37]
    • লেবাননের ফেনিসিয়ার আমন্ত্রণ
    মাদফানু বাইরুত আলফিনিকিবা ফিনিসিয়ান বৈরুত সমাধি (আল-মাশরিক: খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৯২) শিরোনামের একটি নিবন্ধে লেখক উল্লেখ করেছেন: "এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে এটি ফিনিশিয়ান বৈরুত।[38]"
    • তাদের দাবী ইসলাম তরবারির মাধ্যমে প্রচার হয়েছে
    ম্যাগাজিন (আল-মাশরিক: খণ্ড: ১২ পৃষ্ঠা: ২০৬, ২০৭) দাবি করেছে যে, ইসলাম তরবারির মাধ্যমে ছড়িয়েছে। অথচ খ্রিস্টান ধর্ম তার বিপরীত। তাই তাদের নিবন্ধে এসেছেধর্মের ক্ষেত্রে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে খ্রিস্টান ধর্ম এ দৃষ্টিভঙ্গির উপর পরিচালিত হয়েছে। কারণ, এ ধরনের উৎপত্তি ও প্রচার যার হাত ধরে, তিনি তরবারির মাধ্যমে মানুষকে এ ধর্মের পথে আনেননি। সৈন্যবাহিনী দিয়ে দেশে আগ্রাসন চালিয়ে তিনি ধর্ম প্রচার করেননি। বরং তিনি অনেক নেকড়ের মাঝে নিরীহ মেষের মতো ধর্ম প্রচার করেছেন।[39]
    • সালমান আল-ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ
    সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে একট প্রবন্ধে (আল-মাশরিক: খণ্ড: ৩২ পৃষ্ঠা: ১৪১, ১৪২) বলা হয়েছে: অনেক প্রাচ্যবিদ সালমান এবং তাঁর বংশ পরিচয় নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। অধ্যাপক (মা সিনিয়ন) বিপুল তথ্যপূর্ণ একটি লেকচার আমাদের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ উপস্থিত করেছেন যে, বাস্তবেই সালমানের অস্তিত্ব ছিল।[40]
    • হাদিস এবং তার সংকলন প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ তৈরি
    একটা প্রবন্ধে বলা হয়েছে (আল-মাশরিক: খণ্ড: ৩২ পৃষ্ঠা: ৯): ইসলামের প্রথম শতাব্দী ছিল সম্প্রসারণ ও বিজয়ের যুগ। মুসলিম বাহিনী এবং তাদের শক্তি মনোযোগ ও সক্রিয়তা সবকিছুই ছিল তখন বহির্বিশ্ব নিয়ে। অতএব, আমরা এ কথা ভাবতে পারি না যে, খালিদ বিন ওয়ালিদ, আমার ইবনুল আস, জিয়াদ ইবনে আবীহ অথবা হাজ্জাজ সে সময়টাতে দার্শনিক তর্কালাপ অথবা হাদিস সংকলন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন![41]
    • সালাহউদ্দিন আইয়ুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা
    এক প্রবন্ধে এসেছে (আল-মাশরিক: খণ্ড: ৩২, পৃষ্ঠা: ৯): সালাহউদ্দিন আইয়ুবী রাহিমাহুল্লাহু খ্রিস্টানদের কবরে হামলা করতেন। তিনি কুমারী মাতা মরিয়ম আলাইহাস সালামের সমাধি গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং তার ওপর নিজের নামে মাদ্রাসা স্থাপন করেছিলেন।[42]

    *****

    (চলবে, ইন শা আল্লাহ)
    [1] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ১১১

    [2] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৫১

    [3] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ১১২

    [4] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৩০

    [5] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৯

    [6] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ৭৭

    [7] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ১১১, ১১২

    [8] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ১১৩, ১১৪

    [9] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ৭৫

    [10] আল মানার ম্যাগাজিন, সংখ্যা: ১৬ রজব ১৩২১ হিজর, ৭ ই অক্টোবর ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দ- খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ৫৬৬

    [11] আল মানার ম্যাগাজিন, সংখ্যা: মুহাররম ১৩২৭ হিজর, ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ- খণ্ড: ১২, পৃষ্ঠা: ১৮

    [12] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৯১

    [13] الموسوعة العربية الميسرة- حرف الجيم- جامعة القديس يوسف ج: 3 ص: 1142. (সহজ আরবি বিশ্বকোষ: জীম হরফ, সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১১৪২

    [14] নাজীব আল আকীকী রচিত আল-মুসতাশরিকুন (প্রাচ্যবিদ), পৃষ্ঠা: ১০৬০

    [15] Microsoft Encarta 2009, Beirut, V. EDUCATION AND CULTURE.

    [16] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ১৭০, ১৭১

    [17] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ৬১

    [18] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ২০৯

    [19] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ২০৯, ২১০

    [20] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৩১

    [21] শীঘ্রই তার জীবনী আসছে, ইনশা আল্লাহ

    [22] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৩১

    [23] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৮০

    [24] التنصير الأمريكي في بلاد الشام - পৃষ্ঠা: ২১২

    [25] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৩১

    [26] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৩২

    [27] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৭৪

    [28] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৩১

    [29] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ২১৩, ২১৪

    [30] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৭৩

    [31] تاريخ الآداب العربية - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৯৩

    [32] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ৮৭

    [33] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ৮৭

    [34] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ৯৬

    [35] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ১০১

    [36] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ৯৯

    [37] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي- পৃষ্ঠা: ৯৩

    [38] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ১০০

    [39] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ১০৩

    [40] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ১০৪

    [41] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ১০৪

    [42] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي - পৃষ্ঠা: ১০৫



    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 11-19-2022, 10:39 AM.
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

  • #2
    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। ভূমিকা পর্ব ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-১ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-২ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৩ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9


    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৪ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৫ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৬ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৭ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      ইসলামযে অন্যান্য ধর্মের উপর প্রভাব বিস্তার করে এটা কোন দোষের কিছু নয় কারণ আমরা অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থানের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই যা অত্যন্ত জঘন্য। তাই ইসলাম অন্যান্য ধর্মের উপর প্রভাব বিস্তার করা স্বাভাবিক।
      পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

      Comment


      • #4
        পোস্ট আপডেট করা হয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment

        Working...
        X