আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ২০
==================================================
===============================
ইন্টারনেটের ষড়যন্ত্র এবং জিহাদ ও মুজাহিদীনের
হেফাযতের গুরুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক
জিহাদের দাঈদের খেদমতে কিছু কথা
হেফাযতের গুরুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক
জিহাদের দাঈদের খেদমতে কিছু কথা
আমরা আবার দাওয়াত বিষয়ে ফিরে আসি। জিহাদের দাওয়াত ও মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ভাইদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলবো ইনশা আল্লাহ। আশা করি এই কথাগুলো জিহাদি মানহাজের উন্নতি ও হেফাযতের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হবে।
১১. দ্বীনদার শ্রেণি, ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য মতবিরোধকারীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি মনে রাখতে হবে, তাদের ভালো কাজের প্রশংসা ও উৎসাহ দেয়া হবে এবং ভুলের সমালোচনা ও নছিহত করা হবে, গোপন ভুলের ক্ষেত্রে গোপনে নছিহত, প্রকাশ্য ভুলের ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে নছিহত। তাদের ভুলভ্রান্তি ও ত্রুটির কারণে তাদের ভালো কাজগুলোকে মোটেও অস্বীকার করা যাবে না। প্রত্যেক জিনিসকে তার আপন জায়গায় রাখা হলো ইনসাফ। মুজাহিদদের জন্য এই ইনসাফ রক্ষা করা অন্যদের চাইতে বেশি জরুরি। এভাবে কাজ করলে আমরা একদিকে যুলম থেকে বেঁচে গেলাম, অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হবে। অন্য দিকে তাদের ভালো কাজের প্রশংসা ও উৎসাহ দেয়ার দ্বারা সে গোড়ামির শিকার হবে না। আর ইনশাআল্লাহ হকের জন্য তার অন্তর খুলে যাবে।
১২. দাওয়াতের মধ্যে সর্বদা একথা বোঝানো যে, আমরা হেদায়াতের পথে আহবানকারী একটি দল। মানুষের সফলতা ও কামিয়াবির জন্য আমরা দাঁড়িয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো মানুষকে মানুষের গোলামি থেকে বের করে আল্লাহর আনুগত্যের ছায়ায় নিয়ে আসা। আমরা নিজেদের পরিচয় “কিছু শাস্তি বাস্তবায়ন চাই” দ্বারা করাবো না। অন্য কেউ করলে তাও গ্রহণ করবো না। এই শাস্তিগুলো আমরাও বাস্তবায়ন করবো, কারণ এগুলো শরীয়তের গুরত্বপূর্ণ বিষয় এবং এর অনেক বরকত আছে। কিন্তু শাস্তি বাস্তবায়ন করাই পূর্ণ শরিয়ত নয়। শরীয়তের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগ্রত রাখা, ইনসাফ-ন্যয়বিচার, পবিত্রতা-লজ্জার প্রসার, সাম্য, মানুষের সেবা, ইসলামি সমাজ, জীবনব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করা। ভালো কাজের প্রতি আহবান, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ করা। অসহায়-গরিব মানুষের জন্য যাকাতের ব্যবস্থা, আল্লাহর বিধান কার্যকর করাসহ আরও অনেক গুরত্বপূর্ণ বিষয় আছে। শাস্তি তো শুধু অপরাধীদের দেয়া হয়। আর একটি ইসলামি সমাজ যেখানে ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা চালু আছে সেখানে আর কী পরিমাণ অপরাধ হয়? অন্য দিকে ওই সমাজব্যবস্থা দ্বারা কত মানুষ উপকৃত হয়? স্পষ্টত এই উভয়টির মাঝে কোন মিলই নেই। একটি সমাজের লাখো মানুষের মাঝে কিছু মানুষের নিজেদের ভুলের কারণে যে বিধানের সম্মুখীন হয়, তা দিয়ে কি কোন শাসনব্যবস্থার পরিচয় করানো যায়? না, বরং যা অধিক ও প্রবল, তা দিয়ে পরিচয় করানো হয়। দ্বীন প্রতিষ্ঠার অগণিত ফায়দা। সর্বোচ্চ সৌন্দর্য, সীমাহীন বরকত এত ব্যাপক ও বেশি যে, এর দ্বারা সারা দুনিয়ার মানুষ উপকৃত হয়। তাই আমরা এগুলো দ্বারাই আমাদের পরিচয় দেব। বাতিল শাসনব্যবস্থায় কি কি শাস্তি নেই? তা দ্বারা কি তার আহবানকারীরা বাতিল শাসনব্যবস্থার পরিচয় করায়? না, বরং কথিত উপকারিতার কথা বর্ণনা করে?
১৩. দাওয়াতের মধ্যে ‘ধীরে চল’ এবং ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে কর’ নীতির অনুসরণ করা উচিৎ। বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রেখে তার থেকে কম গুরত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ার দ্বারা দাওয়াতের প্রভাব কমে যায়। অথবা সম্বোধিত ব্যক্তি ভুল বোঝে। যেমন সেনাবাহিনীর কারো সাথে আমাদের শত্রুতার কথা বললে প্রথমে তাদের বড় অপরাধ হিসেবে কুফুরি শাসন ব্যবস্থা ও কুফুরির লিডারদের রক্ষা করা উল্লেখ করা উচিৎ। আল্লাহকে ছেড়ে টাকা পয়সার গোলামি, সব ধরনের জুলমকে উল্লেখ করা উচিৎ। কিন্তু যদি সৈনিকদের বাদ্যের তালে নাচাকে প্রথম অপরাধ বলা হয়, তাহলে শ্রোতা মুজাহিদদের জিহাদের উদ্দেশ্য সৈনিকদের নাচাকেই মনে করবে। নাচ-গান সৈনিকদের দাড়ি কাটতে বাধ্য করার মতো গুনাহের আলোচনাও হওয়া উচিৎ তবে তার আপন জায়গায়। তেমনিভাবে একজন ব্যক্তি নামাজও পড়ে না, জিহাদও করে না, এক্ষেত্রে তাকে কোন বিষয় বলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? স্পষ্টত নামাজের কথা বলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্যও তো কবর, আখেরাতের জীবনের ফিকির তৈরি করা আরও বেশি জরুরি। কিন্তু যদি সব কিছু বাদ দিয়ে জিহাদের ফরযিয়ত ও জিহাদে বের না হলে কি ধমকি এসেছে, তার আলোচনা করলে ওই লোকের ওপর কি প্রভাব পড়বে?
১৪. আলোচনার সূচনা মতবিরোধপূর্ণ বিষয় দ্বারা করা যাবে না। জরুরি হলো একমতের বিষয় দ্বারা আলোচনা শুরু করা। সম্বোধিত ব্যক্তি যে বিষয়কে হক ও কল্যাণকর মনে করে, বিশেষ করে সে যে বিষয়ের প্রবক্তা, সে বিষয়ে তার সাথে একমত পোষণ করা এবং তাকে উৎসাহ দেয়া। সেই ঐক্যের বিষয়কে মূল বানিয়ে তারপর যে বিষয়ের দাওয়াত দিতে চায় তা পেশ করা। যদি প্রথমেই মতবিরোধের আলোচনা করা হয় বিশেষ করে নিজেদের লোকের কাছে, তাহলে সম্বোধিত ব্যক্তির জন্য কথা শোনা কষ্টকর হয়ে যাবে। তেমনিভাবে সব সংবেদনশীল বিষয় একই মজলিসে আলোচনা করবে না। মাদউকে আস্তে আস্তে দাওয়াত দেয়া হবে এবং তার মন মানসিকতা, হজম শক্তি অনুযায়ী তাকে বোঝাবে।
১৫. সম্বোধিত ব্যক্তির রূঢ় ব্যবহারে ধৈর্য ধারণ করবে এবং শরয়ী সীমারেখা রক্ষা করবে। তার খারাপ ব্যবহারের পর তার সাথে ভাল ব্যবহার করা তার সাথে ইহসান। যেই পরিমাণ দয়া ও তাকওয়ার সাথে তাকে দাওয়াত দেয়া হবে ওই পরিমাণ দাওয়াতের প্রভাব তার ওপর পড়বে। অন্যভাবে বললে, আপনার দাওয়াত ওই পরিমাণ দলিলের ময়দানে কার্যকর প্রমাণিত হবে।
১৬. জিহাদি মিডিয়ায় আমাদের দাওয়াত সাধারণ হওয়া উচিৎ। যেহেতু আমাদের সম্বোধিত ব্যক্তিদের অধিকাংশই সাধারণ শ্রেণির মানুষ। এজন্য আমাদের কথাও তাদের বুঝ অনুযায়ী হওয়া উচিৎ। তাদের বুঝের ঊর্ধ্বে যেন মোটেও না হয়। আমার কথার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, বিশেষ ব্যক্তিদের দাওয়াত দেয়া হবে না। তাদেরকে উদ্দেশ্য করেও কথা বলা হবে, তাদের রুচি অনুযায়ী বক্তব্য হবে, কিন্তু সাধারণ বক্তব্যে সাধারণ মানুষের প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি।
আরও পড়ুন