আল-হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
‘তুফানুল আকসা’ অভিযান এবং তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নোত্তর
|| শায়খ খালিদ বিন উমর বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ১ম পর্ব
===================
‘তুফানুল আকসা’ অভিযানের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান
প্রশ্ন: ‘তুফানুল আকসা’ অভিযানের ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী?
بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله.
আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।
‘তুফানুল আকসা’ অভিযানের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হল অভিনন্দন ও সমর্থন। আমাদের ‘কায়িদাতুল জিহাদ’ এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে এবং ‘কায়িদাতুল জিহাদ’ এর বিভিন্ন শাখার পক্ষ থেকে এই সম্পর্কে অভিনন্দন ও সমর্থনমূলক বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে।
সরাসরি অভিযান সম্পর্কে বলবো: এই অভিযানে আমরা সুচিন্তিত সূক্ষ্ম পরিকল্পনা এবং দক্ষতার যথার্থতা দেখতে পেয়েছি। সেই সাথে অভিযানের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার অনুগ্রহে সময়টি ছিল সুককোটের, যেটিকে ইহুদীরা উৎসবের দিন হিসেবে পালন করে। তাই এটি একটি সময়োপযোগী ক্ষণ ছিল।
বিশেষ করে এই অভিযানের পূর্বে গোপনীয়তাও ছিল আশ্চর্য রকমের। ইহুদী শত্রু হোক, আমেরিকান হোক, অন্যরা হোক, এমনকি মুসলিমদেরকে পর্যন্ত এই গোপনীয়তা বিস্মিত করে তুলেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার দয়ায় এ গোপনীয়তা অপারেশনের অবিশ্বাস্য সাফল্য লাভের পিছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।
এছাড়াও এই অপারেশনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো - আক্রমণের বৈচিত্র্য। স্থল, নৌ ও আকাশ - সব পথেই আক্রমণ হয়েছিল। অনেক অস্ত্র এই অপারেশনে ব্যবহৃত হয়েছে- যেমন আর্টিলারি ও রকেট। আক্রমণের এই সমস্ত বৈচিত্র্যের কারণে শত্রু উদ্ভ্রান্ত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারা ব্যর্থ হয়ে যায়। সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার দিক থেকে ইহুদীরা কেলেঙ্কারির মুখে পড়ে। ইহুদী সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা সকলের কাছে প্রকাশিত হয়ে যায়। অথচ তারা দাবি করতো, তাদেরকে কেউই পরাজিত করতে পারবে না।
বাস্তবতা হলো: তাদেরকে এমন কতক লোক পরাজিত করেছে, যাদেরকে আমরা সত্যনিষ্ঠ মনে করি। এই মহান ব্যক্তিরা শত্রু সেনাবাহিনী এবং এদের মত আরও অন্যান্য সেনাবাহিনীর ব্যাপারে বহু মানুষের পূর্বের ধারণা ভেঙে দিয়েছে। সবই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দয়ায় সম্ভবপর হয়েছে।
‘তুফানুল আকসা’ অভিযানের প্রভাব
শত্রুসেনাদের এত দ্রুত পতন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুগ্রহে খোদ তাদের উপর এবং মুসলিম উম্মাহর উপর বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করেছে। মুসলিম উম্মাহর উপর প্রভাব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: এই অভিযানের দ্বারা মুসলিম উম্মাহর মাঝে চেতনা জাগ্রত হয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় সকলেই বিস্মিত হয়ে পড়েছে। আল্লাহর অপার অনুগ্রহে এই হামলা সকলের জীবনে প্রশান্তি নামিয়ে এনেছে। কেউই এতে দুঃখিত হয়নি অথবা বলা যায়: এই অপারেশনের কারণে সকলেই আনন্দ অনুভব করেছে।
আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরা প্রার্থনা করি, যারা এই অপারেশন পরিচালনা করেছেন, আল্লাহ হাশরের ময়দানে দাঁড়িপাল্লায় এই আমলকে সৎকর্ম ও নেকি হিসেবে যুক্ত করে দিন। এই অভিযান বর্তমান প্রজন্ম এবং পরবর্তী বহু প্রজন্মের জন্য আলোর মিনার হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের পরে বহু প্রজন্ম এ অপারেশন সম্পর্কে আলোচনা করবে।
শুধু তাই নয়; বরং অচিরেই আমরা আমাদের সন্তান-সন্ততি এবং নাতি-নাতনিদের কাছে আল্লাহর অনুগ্রহে এই অভিযানের ঘটনা বর্ণনা করবো। এই ঘটনা এই উম্মাহর জন্য চেতনার মশাল হবে। এই অভিযান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে এতটাই সফল যে, বহু সেনাবাহিনী; ধোঁকাবাজ সৈন্যবাহিনী, তাগুতের সৈন্যবাহিনী— যারা অস্ত্র, সরঞ্জাম এবং প্রাচুর্যে দেশ বোঝাই করে রাখে, তারাও এমন একটি বরকমতময় অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হয়নি। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি- এই অভিযান পরিচালনাকারীদের নেকীর পাল্লায় যেন এই কাজ শামিল হয়ে যায়। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; সর্বাবস্থায়— সর্বক্ষণে।
ইহুদীদের প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা আক্রমণের ব্যাপারে মতামত
প্রশ্ন: ইহুদীদের প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা আক্রমণের ব্যাপারে আপনাদের মতামত কী?
ইহুদীদের প্রতিক্রিয়া: তাদের সাথে যখনই এমন হয়, বরকতময় হামলা যখন তাদের উপর পরিচালিত হয়, তখনই চিৎকার ও হাহাকার করেই তারা প্রতিক্রিয়া দেখায়। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্বেষ ও ক্ষোভ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কারণ তারা এমন কাজ দেখে বিস্মিত হয়, যা তাদের কল্পনার অতীত।
তারা মনে করেছিল, মুসলিম জাতি মরে গিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার অনুগ্রহে এই ঘটনা তাদের জন্য ছিল চপেটাঘাত। এই চপেটাঘাতে তাদের চেতনা ফিরে আসা মাত্রই সামনে তাকিয়ে দেখে কিছুই নেই। তাই আল্লাহর শত্রুরা অসহায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের উপর তাদের ক্রোধ ঢেলে দেয়। এটা তাদের যন্ত্রণার তীব্রতার কারণেই। যেমন বলা হয়: ব্যথা যত তীব্র, চিৎকার তত বড়।
আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহ ও দয়ায় এই অপারেশনে তারা যে বেদনা ভোগ করছে, ধৈর্যশীল গাজার অধিবাসীদের উপর সে বেদনারই প্রতিক্রিয়া তারা দেখাচ্ছে। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি- যেন তিনি গাজাবাসীকে সবর, ধৈর্য ও সান্ত্বনা দান করেন। শত্রুরা যা করছে, তা তাদের কাপুরুষতা ছাড়া আর কিছুই নয়। মুজাহিদিন তাদের বিরুদ্ধে যা কিছু করছেন, সেগুলোর কারণে দিন দিন তাদের হীনতা ও নীচতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিন দিন নিরস্ত্র মুসলিমদের সঙ্গে কৃত অপরাধের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।
যুদ্ধের সময় তারা কোথায়?! কোথায় তারা?! আমরা তাদেরকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি। আমরা মুজাহিদদের রিলিজগুলোতে তাদেরকে দেখেছি, তারা কীভাবে বাথরুমে লুকিয়ে ছিল। তারা যা দেখেছিল, তাতে আতঙ্ক ও বিস্ময় নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল। পরিস্থিতির মুখে পড়ে, ঘটনার আকস্মিকতায় কোনো দিকে না তাকিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো। আমরা তাদেরকে দলে দলে এবং একাকী অবস্থায় মুজাহিদদের অগ্রযাত্রা থেকে পলায়ন করতে দেখেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্য।
শত্রুর প্রতিক্রিয়া কি অপ্রত্যাশিত ছিল?
এত বড় কাজের কেমন প্রতিক্রিয়া তারা দেখাবে, সেটা ধারণার বাইরে ছিল না। তারা এখন যা কিছু করছে সেগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের কার্যকলাপের মতই। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম খাইবার অভিযান পরিচালনা করেন, তখন তারা কি করেছিল? এক দুর্গ থেকে আরেক দুর্গে! তারা এক দুর্গ থেকে আরেক দুর্গে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল! এভাবেই তাদের সকল দুর্গ পবিত্র হয়ে যায়। সবই আল্লাহর ইচ্ছায়।
ইনশা আল্লাহ, অচিরেই এমন দিন আসবে, যেদিন তারা পালাবারও সুযোগ পাবে না। তখন মুসলিম উম্মাহ প্রতিটি দরজা, প্রতিটি অলিগলি দিয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। সেদিন আসলেই তারা দিশেহারা হয়ে যাবে। তারা মনে করছে, এটা অনেক দূরে। তারা এটাকে দূরের মনে করলেও, আমরা এটাকে খুব কাছে দেখতে পাচ্ছি। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরা প্রার্থনা করি- তিনি যেন এই বিষয়ে নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এটাকে খুব নিকটেই দেখতে পাচ্ছি।
একইভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহীহ হাদীসে আমাদেরকে জানিয়েছেন:
"تقاتلون اليهود حتى ينطق الحجر والشجر، فيقول: يا مسلم يا عبد الله هذا يهودي خلفي تعال فاقتله. إلا الغرقد فإنه من شجر يهود."
“তোমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে এমনকি পাথর ও বৃক্ষ কথা বলতে শুরু করবে। তারা বলবে: হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই দেখো আমার পেছনে একটা ইহুদী। এসো তাকে হত্যা করো— শুধু গারকাদ বৃক্ষ ছাড়া, কারণ এটা ইহুদীদের বৃক্ষ।[1]
আরও পড়ুন
[1] হাদীসের ভাষ্যটি অন্যত্র বিশুদ্ধ সূত্রে এভাবে এসেছে- لا تَقُومُ السَّاعَةُ حتَّى يُقاتِلَ المُسْلِمُونَ اليَهُودَ، فَيَقْتُلُهُمُ المُسْلِمُونَ حتَّى يَخْتَبِئَ اليَهُودِيُّ مِن وراءِ الحَجَرِ والشَّجَرِ، فيَقولُ الحَجَرُ أوِ الشَّجَرُ: يا مُسْلِمُ يا عَبْدَ اللهِ هذا يَهُودِيٌّ خَلْفِي، فَتَعالَ فاقْتُلْهُ، إلَّا الغَرْقَدَ، فإنَّه مِن شَجَرِ اليَهُودِ “কিয়ামত সংগঠিত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত মুসলিমগণ ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের সাথে লড়াই না করবে। মুসলিমগণ তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে, হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইয়াহুদী আমার পশ্চাতে। এসো, তাকে হত্যা কর। কিন্তু ’গারকাদ’ গাছ এ কথা বলবে না। কারণ এ হচ্ছে ইয়াহুদীদের গাছ।” (সহীহ মুসলিম: ২৯২২) [সম্পাদক]
Comment