আত্–তিবয়ান পাবলিকেশন্স কর্তৃক পরিবেশিত
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১১তম পর্ব
==================================================
=====
৪র্থ অধ্যায়ঃ খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
বর্তমান সময়ে আমরা কি এই ফাতওয়াটি পূর্ণভাবে পালন করতে পারি?
সব কিছু শোনার পর কেউ হয়তবা বলতে পারেঃ হ্যাঁ, ঠিক আছে। আমরা জানতে পারলাম যে, সলাত ও সিয়াম যেমন ব্যক্তিগতভাবে ফরয (ফারদ্) ঠিক তেমনি বর্তমানে জিহাদ করাও ফারদ্ আল-আ’ইন। এমন কি জিহাদের গুরুত্ব সলাত ও সিয়াম এর চাইতেও বেশি। যেমন ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম ফারদ্ কাজ হচ্ছে, মুসলিমদের ভূমি থেকে আগ্রাসী শত্রুদের বহিষ্কার করে দেয়া যারা দ্বীন এবং দুনিয়াবি বিষয়ের (Worldy affairs) উপর আক্রমণ করে।”
জিহাদের সময় সলাত দেরীতে পড়া যায়, একত্রে পড়া যায় অথবা রাকআত সংখ্যা পর্যন্ত কমে যায়। দুইটি সহীহ হাদীসে এসেছে, “আল্লাহ তাদের বাড়িঘর এবং কবর আগুনে পরিপূর্ণ করে দিক যারা আমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে যার কারণে আমরা মধ্যবর্তী সলাত আদায় করতে পারিনি এমনকি সূর্য ডুবে গেছে।”
এবং একজন মুজাহিদ সিয়াম ভঙ্গ করতে পারে জিহাদের সময়। যেমন মুসলিম থেকে বর্ণিত, “রসূল ﷺ ফাতহে মক্কার (মক্কা বিজয়ের) সময় সিয়াম ভেঙ্গে ছিলেন এবং বলেছিলেন যে, তোমরা সকালে শত্রুর মুখোমুখি হতে যাচ্ছ। সিয়াম ভঙ্গের মাধ্যমে শক্তিশালী হতে পারবে। সুতরাং সিয়াম ভঙ্গ কর।”
এটি আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়েছে যে, জিহাদ যখন ফারদ্-আল-আ’ইন হয়, তখন তা পালন করার জন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই। ঠিক যেমন সূর্যোদয়ের পূর্বের সলাত আদায়ের জন্য পিতা, শাইখ, মনিব এর কাছ থেকে অনুমতির প্রয়োজন হয়না।
একইভাবে ফার্দ জিহাদের ক্ষেত্রে কোন অনুমতির (permission) দরকার নেই। উদাহরণস্বরূপ: এক রাত্রে পিতা এবং পুত্র একত্রে কোন স্থানে ঘুমাচ্ছে। পুত্র ফজর এর সলাত পড়তে চাচ্ছে কিন্তু পিতা ঘুমাচ্ছে। কেউ কি উপদেশ দিবেন যে পুত্রকে অবশ্যই সলাত পড়ার জন্য অনুমতি নিতে হবে? শুধু তাই নয়, পিতা যদি কোন কারণবশত (যারা সলাত না পড়ে ঘুমাচ্ছে তাদের ঘুম যাতে না নষ্ট হয়) সলাত পড়তে মানা করে তবে কি পুত্র এই আদেশ মানবে? নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা উত্তরটি খুবই স্পষ্ট।
“আনুগত্য সৎকাজে” এবং
“স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই” এবং
“তার ক্ষেত্রে কোন আনুগত্য নেই যে আল্লাহর আনুগত্য করেনা”
জিহাদকে উপেক্ষা করা গুনাহ এর কাজ। এবং স্রষ্টার অবাধ্যতার ক্ষেত্রে সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই।
অনুমতি প্রসঙ্গে
অনুমতি নিতে হবে কিনা এই প্রশ্নোত্তরে আমরা আল্লাহর সাহায্যে বলতে চাই সাহাবারা (রদিআল্লাহু আনহু) কোন দিন অনুমতি চাননি, যখন জিহাদের পতাকা উত্তোলন হয়েছিল এবং উম্মাহকে জিহাদের জন্য আহবান করা হয়েছিল। বরং রসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে অনুমতি চাওয়া এবং পরামর্শ করতে শুধু সেই এসেছিল যে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জিহাদে যাওয়ার জন্য অথবা যে কোন জিহাদে যাওয়ার নাম লিখিয়েছিল। মুয়াউইয়া বিন জাহিমা আস সালমি থেকে বর্ণিত মুসনাদে আহমদ ও নাসাঈ কর্তৃক সংকলিত, জাহিমা রসূল ﷺ-এর কাছে আসল এবং বলল, “ইয়া রসূলুল্লাহ ﷺ! আমি একটি গাযওয়াতে (expedition) অংশ গ্রহণ করতে চাই এবং এ ব্যাপারে আপনার সাথে পরামর্শ করতে এসেছি। তিনি ﷺ বললেন মার সাথে থাক কারণ জান্নাত তার পায়ের নীচে।”
অন্য বর্ণনায় আছে, “অমুক এবং অমুক অপারেশন এর জন্য আমার নাম লিখানো হয়েছে” অর্থাৎ “আমি স্বাক্ষর দিয়েছি”।
এটি ছিল সেই সময়ের ঘটনা যখন জিহাদ ফার্দুল কিফায়া ছিল।
কিন্তু আহবান করার পর জিহাদ যখন ফার্দুল আ’ইন হয় তখন রসূলুল্লাহ ﷺ অনুমতি চাইতে আসা পরিষ্কার নিফাক্ব এর চিহ্ন। কারণ এই ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আয়াত নাযিল হয়েছে।
لا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ أَنْ يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ
إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ
“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী, তারা তাদের ধন ও প্রাণ দ্বারা যুদ্ধ করতে তোমার নিকট অব্যাহতি পাওয়ারপ্রার্থনা করে না, আল্লাহ সংযমীগণ (মুত্তাকীদের) সম্বন্ধে জ্ঞাত আছেন। যারাআল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না –তারাই কেবল তোমার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে, তাদের অন্তর সংশয়যুক্ত, ওরা স্বীয় সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।”
হিদায়াত প্রাপ্ত খলীফাগণ যেমনঃ আবুবকর, উমার, উসমান, আলী (রদিআল্লাহু আনহু) এর ব্যাপারে আমরা এমন কোন উদাহরণ পাইনা যে, তখনকার সময় সাহাবাগণ অথবা তাবেঈগণ অনুমতি চেয়েছেন। তখন প্রত্যেক ব্যক্তি (যে কেউ) যদি জিহাদ করতে চাইতো তবে তারা আবু বকর (রদিআল্লাহু আনহু) এর কাছে অনুমতির জন্য আসতো না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে জিহাদের পতাকা অবশ্যই তুলতে হবে এবং বাহিনী প্রেরণ করতে হবে। উপরন্তু, খলীফাদের পর আমীরুল মু’মিনীনদের নিকট থেকে ও এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না যে, যে ব্যক্তি জিহাদে অথবা রিবাতে অংশগ্রহণ করতে চাইতো তাকে অনুমতি নিতে হতো। এমনকি ইসলামের ইতিহাসে পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, কেউ অনুমতি ছাড়া জিহাদ অথবা গাযওয়াতে অংশগ্রহণ করার জন্য শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমীরুল জিহাদ এর কাছ থেকে অনুমতি নেয়া প্রয়োজন যাতে যুদ্ধে বিশৃঙ্খলা না হয়, পরিকল্পনা নষ্ট না হয়ে যায়।
ঈমান আউযায়ী (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, “শুধুমাত্র বেতনপ্রাপ্ত সৈনিকদের জন্য অনুমতি প্রয়োজন ইমামের নিকট থেকে।”
আর-রামলি (রহিমাহুল্লাহ) নিহায়াত আল মাহতাফ এর ৮/৬০ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন, “ইমাম অথবা তার সেকেন্ড ইন কমান্ড এর অনুমতি ছাড়া কোন অভিযানে অংশগ্রহণ করা মাকরুহ। তাও আবার তিন ক্ষেত্রে ছাড়াঃ
১. যদি অনুমতির কারণে জিহাদের লক্ষ্য নষ্ট হয়ে যায়।
২. ইমাম যদি কারণ ছাড়া (অথবা ভুল কারণে) অভিযান বন্ধ করে দেয়।
৩. কেউ যদি চিন্তা করে অনুমতি নিতে গেলে কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে তাকে প্রত্যাখ্যান করবে। এগুলোতে বালকিনী একমত পোষণ করেছেন।”
আমরা বলতে চাই এতসব কিছু বিবেচনার বিষয় তখন যখন জিহাদ ফার্দুল কিফায়া। কিন্তু জিহাদ যখন ফারদুল আ’ইন তখন কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। ইবন-আর-রুশদ বলেছেন, “ইমাম যদি যুলুমও করে তবুও তাকে অবশ্যই আনুগত্য করতে হবে। যতক্ষণ সে গুনাহের আদেশ না করে। ফার্দুল আ’ইন জিহাদ থেকে নিষেধ করা গুনাহ এর আদেশ।
এই বিষয়ে আরো পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করছিঃ অনুমতি শুধুমাত্র ফার্দুল কিফায়া এর ক্ষেত্রে প্রয়োজন। তাও আবার যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্য অংশগ্রহণ করার পর (যত সংখ্যক অংশ গ্রহণ করলে উক্ত ফারদ্ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব)। কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্য অংশ গ্রহণ করার পূর্বে এটি সবার কাঁধের উপর র্ফাদ দায়িত্ব হিসাবে থাকবে। ফার্দুল আ’ইন ও ফার্দুল কিফায়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই যথেষ্ট সংখ্যক অংশ গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত।
এতসব কিছু জানার পর একজন বলবেঃ
আমরা জানতে পারলাম জিহাদ হচ্ছে ফার্দুল আ’ইন। এবং কোন অনুমতির প্রয়োজন নাই। তারপরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায়।
১ম প্রশ্নঃ বর্তমানে আমরা কিভাবে একটি ‘সাধারণ অভিযান’-কে বাস্তবায়িত করতে পারি?
কিছু মানুষ বলে যে, ‘সাধারণ অভিযান’ যা ইসলামে আবশ্যকীয়, যেখানে মহিলা স্বামীর অনুমতি ব্যতীত, সন্তানরা পিতার অনুমতি ব্যতীত বের হতে পারে। কিছু কারণে এই অভিযানে বের হওয়া খুবই কঠিনঃ
যেখানে অভিযান করা হবে সেখানে হাজার হাজার মুসলিমদের মধ্য থেকে এক ভাগ মুসলিমদের জন্য জায়গা সংকুলান হবে না। এই অভিযানের কারণে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ইসলামী ভূমিগুলো থেকে মানুষ খালি হয়ে যাবে। সুতরাং প্রত্যেকে যদি জিহাদের জন্য আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনে চলে যায় তবে সমস্ত মুসলিম ভূমি খালি হয়ে যাবে ফলশ্রুতিতে কম্যুনিস্ট, বাথিষ্ট, জাতীয়তাবাদী, সেকুলারিষ্টরা ভূমিগুলো দখল করে ফেলবে।
উত্তরঃ যদি মুসলিম বিশ্ব আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফিলিস্তিনে এক সপ্তাহের জন্য ‘সাধারণ অভিযান’ পরিচালনা করত তবে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিন ইহুদী মুক্ত হয়ে যেত। একইভাবে আফগানিস্তানের সমস্যাও এতদিন থাকত না। অধিকন্তু, দা’য়ীগণ নিঃশেষ হতনা। বরং আমরা শুধু অপেক্ষা করছি ও কান্না করছি। আমাদের চোখের সামনে কাফিররা আমাদের দেশগুলি দখল করছে এবং এভাবে হয়ত সম্পূর্ণ মুসলিম বিশ্বকে তারা দখল করে ফেলবে পরিশেষে আমরা প্রচুর কাঁদব।
অপ্রত্যাশিতভাবে আমরা ইসলামকে নিয়ে চিন্তা করি জাতীয়তা ভিত্তিক। কাফিররা যে দেশের সীমানা একে দিয়েছে তার বাইরে আমরা চিন্তা করতে পারিনা।
উদাহরণ স্বরূপঃ জর্ডানের মধ্যে দু’টি এলাকা আছে। একটি হচ্ছে ‘আর-রামশাহ্’ যা সিরিয়ার সীমানার নিকটে অবস্থিত। অপরটি হচ্ছে ‘আকাবা’ যা ‘আর-রামশাহ্’ হতে ৬০০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। সিরিয়ার মধ্যে একটি এলাকা আছে যার নাম ‘দারা’ যা ‘আর-রামশাহ্’ হতে ১০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। ‘আর-রামশাহ্’-এর অধিবাসীরা ‘দারা’-এর অধিবাসীদের চাইতে আকাবার অধিবাসীদেরকে বেশি ঘনিষ্ঠ মনে করে। যদিও উভয় অধিবাসীরাই মুসলিম উপরন্তু ‘দারা’-র অধিবাসীরা ধার্মিক বেশি।
আরও পড়ুন
Comment