আত্–তিবয়ান পাবলিকেশন্স কর্তৃক পরিবেশিত
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১২তম পর্ব
==================================================
=====
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১২তম পর্ব
==================================================
=====
এতসব কিছু জানার পর একজন বলবেঃ
আমরা জানতে পারলাম জিহাদ হচ্ছে ফার্দুল আ’ইন। এবং কোন অনুমতির প্রয়োজন নাই। তারপরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায়।
২য় প্রশ্নঃ আমরা কি একজন ইমাম ব্যতীত জিহাদ করতে পারি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, আমরা ইমাম ব্যতীত জিহাদ করেছি। কোন আলিম আজ পর্যন্ত বলেননি যে, “একজন ইমামের অধীনে পরিচালিত আল-জামাআ’র অনুপস্থিতিতে ফার্দ জিহাদের হুকুম বাতিল হয়ে যায়। বরং আমরা দেখি যে, ক্রুসেড এবং তাতারিদের আগ্রাসনের সময় বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন আমীরের অধীনে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। হালাব (সিরিয়া)-এ একজন আমীর ছিলেন, দামেস্কে ছিলেন একজন আমীর, মিশরে একাধিক আমীর ছিল।
কোন একজন আলিম বলেননি যে, উক্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে জিহাদের হুকুম রহিত হয়ে যায় (মুসলিমদের ভূমি রক্ষার জন্য জিহাদ করা) । বরং জিহাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। এই ঘটনা ঘটেছিল আন্দালুস-এ।
কবি বলেছেনঃ
“তারা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দলে বিভক্ত ছিল প্রত্যেক স্থানে ১জন আমীর ছিল, যিনি ছিলেন দায়ী।”
অন্যজন লিখেছেন,
“যা আমাকে আন্দালুসিয়ার ব্যাপারে দুঃখিত করে, তা হচ্ছে সেখানে রাজারা অনেক বড় বড় উপাধি ধারণ করেছে যার যোগ্য তারা নয়, ঠিক যেমন বিড়াল সিংহের মত গর্জন দিয়ে উঠে।”
কোন একজন আলিম বলেননি যে, উক্ত অবস্থায় জিহাদ করা যাবেনা, বরং আলিমরাই আন্দালুস-এর জিহাদে সামনের কাতারে ছিলেন।
ইমামের নিয়োগকৃত কমান্ডার যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে পারেন। যা ঘটেছিল মু’তার দিবসে। খালিদ বিন-আল ওয়ালীদ পতাকা উত্তোলন করলেন এবং তিনি রসূল ﷺ-এর নিয়োগকৃত ছিলেন।
ইমাম অথবা আমীরুল মু’মিনীন এর অনুপস্থিতি জিহাদ আদ-দিফায়ী (মুসলিমদের ভূমি রক্ষার জিহাদ)-কে বন্ধ করে দেয়না। খিলাফাত প্রতিষ্ঠা হবে এই কথা বলে আমরা বসে থাকতে পারিনা। কিন্তু খিলাফাত কখনো প্রতিষ্ঠা হবেনা শুধুমাত্র কঠিন তত্ত্ব, অনেক জ্ঞান ও অধ্যয়ন দ্বারা। বরং জিহাদ-ই একমাত্র সঠিক পথ যার মাধ্যমে বিভক্ত নেতৃত্বকে একত্র করা যাবে যাতে খিলাফাত প্রতিষ্ঠা হয়।
মুজাহিদরাই তাদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর নিযুক্ত করবে। এই আমীর’ই মুজাহিদদেরকে সংগঠিত করবে। তাদের চেষ্টাগুলোকে একত্র করবে এবং দূর্বলকে সাহায্য করবে। একটি সহীহ হাদীস এ বর্ণিত হয়েছে যা উকবা বিন আমের থেকে বর্ণিত (যিনি নিম্ন লিখিত দলের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন) যে, “রসূল ﷺ ১টি বাহিনীকে পাঠালেন এবং একজনকে কমান্ডার নিযুক্ত করে দিলেন। যখন সে ফেরত আসল তখন বলল, ‘রসূল ﷺ আমাদেরকে দোষারোপ করলেন যেরকম করতে আমি আগে দেখিনি।’ তিনি ﷺ বললেন, “আমি যখন কোন ব্যক্তিকে প্রেরণ করি এবং সে আমার আদেশ পালন করতে অসমর্থ হয় তখন তোমরা তাকে পরিবর্তন করে এমন কাউকে নিয়োগ করতে পারলে না যে আমার আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারে।”
যদিও রসূল ﷺ তাঁর পবিত্র হাতে একজনকে যুদ্ধের পতাকা তুলে দিয়েছেন তারপরও তিনি তাকে পরিবর্তন করতে উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু যদি শুরুতেই কোন আমীর না থাকে সেক্ষেত্রে আমীর নিয়োগ করা কত গুরুত্বপূর্ণ? সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় যদি যুদ্ধের সময় আমীর না থাকে। ইবন আল কুদামা (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “ইমামের অনুপস্থিতি জিহাদকে বন্ধ করে দেয়না কারণ জিহাদ বন্ধ হলে অনেক বড় ক্ষতি হবে।”
যদি মুসলিমরা একজনকে আমীর নির্বাচিত করে তাকে অবশ্যই মানতে হবে। ফাতহ-আল-আলী-আল-মালিক শাইখ মিয়ারা বলেছেন, “যদি কোন জায়গায় আমীর অনুপস্থিত থাকে এবং জনগণ একজনকে আমীর নির্বাচিত করে তাদের কাজগুলিকে সহজ করার জন্য, দূর্বলকে শক্তিশালী করার জন্য এবং উক্ত আমীর যদি এগুলো অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো জায়েজ নয়, যা দলীল থেকে প্রমাণিত। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য, জামাআ’ত কে বিভক্ত করার জন্য, ইসলামের অবাধ্যতার জন্য তার বিরুদ্ধতা করে তার ব্যাপারে রসূল ﷺ-এর বাণী হচ্ছে, “…তখন যে ব্যক্তি ইহা বিভক্ত করতে চাবে, তাকে হত্যা কর সে যেই হোক কেন।”
এবং “যখন তোমরা এক ব্যক্তির অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছো তখন যদি কেউ তোমাদের জামাআ’তকে বিভক্ত করতে চায় তাকে হত্যা কর”।
৩য় প্রশ্নঃ আমরা কি আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে পারি যেখানে বিভিন্ন বিভক্ত আমীরের অধীনে যুদ্ধ হচ্ছে?
আফগানিস্তানে জিহাদ করা ফার্দ যদিও সেখানে ভিন্ন ভিন্ন নেতার অধীনে জিহাদ পরিচালিত হচ্ছে। কারণ এখানে আগ্রাসী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে মুসলিম ভূমি রক্ষার জন্য জিহাদ হচ্ছে । একাধিক মুসলিম দলগুলো কাফির ও নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করছে। কারণ আমরা মনে করি প্রত্যেকটি দলের আমীর হচ্ছে উক্ত মুজাহিদ বাহিনীর একজন আমীর।
৪র্থ প্রশ্নঃ সবাই যদি বসে থাকে তাহলে কেউ একা কি যুদ্ধ করতে পারে?
একজন একা যুদ্ধ করবে কারণ সর্ব শক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর রসূলকে বলেছেন,
فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لا تُكَلَّفُ إِلا نَفْسَكَ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَاللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنْكِيلًا
“অতএব (হে নাবী), তুমি আল্লাহ্তা’আলার পথে লড়াই করো, (কেননা) তোমাকে শুধু তোমার কাজকর্মের জন্যেই দায়ীকরা হবে এবং তুমি মু’মিনদের (আল্লাহ্ তা’আলার পথে জিহাদ করতে) উদ্বুদ্ধকরতে থাকো…।”
এই আয়াতটিতে আল্লাহ তাঁর রসূলকে দু’টি দায়িত্ব দিয়েছেন।
১) যুদ্ধ কর যদিও একাই করতে হয়।
২) মু’মিনদেরকে উদ্ধুদ্ধ কর।
মহিমান্বিত রব ক্বিতালের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। এই ক্বিতালের উদ্দেশ্য হচ্ছে কাফিরদের অপশক্তি দমন করা কারণ আমরা যদি ক্বিতাল না করি তারা আমাদেরকে কখনো ভয় পাবে নাঃ
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
“এবং ক্বিতাল করতে থাক যতক্ষণ পর্যন্ত ফিতনা দূর না হয় এবং দ্বীন পূর্ণাঙ্গভাবে একমাত্র আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।”
ক্বিতাল কে উপেক্ষা করলে শির্ক (সবচেয়ে বড় ফিতনা) ছড়িয়ে যায় এবং কুফর প্রতিষ্ঠিত হয়। সাহাবীগণ উক্ত আয়াতের অর্থ সাধারণভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন।
আবী ইসহাক বলেছেন: “যখন কোন ব্যক্তি নিজেকে যুদ্ধের ময়দানে মুশরিকদের মধ্যে নিক্ষেপ করে তবে কি সে নিজেকে নিজের হাতে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়?” তিনি বললেন, “না, কারণ আল্লাহ্ তাঁর রসূলকে ﷺ পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে ক্বিতাল কর, (হে মুহাম্মাদ ﷺ) তুমি অন্য কারও ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে না…।’ তুমি যা উল্লেখ করলে তা হচ্ছে মাল খরচের ব্যাপারে।”
ইবন-আল-আরাবী: “এমন পরিস্থিতিও আসতে পারে যখন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জিহাদের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া ফার্দ। যে জিহাদকে বলা হয় ফার্দুল আ’ইন। যখন শত্রুরা আমাদের যে কোন দেশকে আক্রমণ করে অথবা ঘেরাও দেয়। যদি তারা অগ্রসর না হয় তবে তারা গুনাহগার। যদি শত্রুরা মুসলিমদের বন্দী করে ফেলে, দেশ দখল করে তবে সেক্ষেত্রে সকলের উপর অগ্রসর হওয়া ফার্দ। হালকা, ভারী, যানবাহনে চড়ে অথবা পায়ে হেটে, দাস অথবা স্বাধীন ব্যক্তি সকলকেই বের হতে হবে। যার পিতা বর্তমান আছে তার অনুমতি নিতে হবেনা। যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী না হয়, মুসলিম ভূমি রক্ষা না হয়, শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত না করা হয় এবং বন্দীদের মুক্ত করা না হয়। এই ব্যাপারে কোন ইখতিলাফ নেই।
কিন্তু একজন কি করবে যদি সবাই বসে থাকে? সে বন্দী খুঁজবে এবং মুক্তিপণ পরিশোধ করবে। তার সামর্থ্য থাকলে নিজেই আক্রমণ করবে যদি তাও না পারে তবে একজন মুজাহিদকে তৈরি করবে।”
একা যুদ্ধ করা আল্লাহ পছন্দ করেন। রসূল ﷺ বলেছেনঃ “আমাদের রব এক ব্যক্তিকে দেখে অত্যন্ত খুশী হন যে আল্লাহর পথে আক্রমণ করে যদিও তার সাথীরা মার খেয়ে পালিয়ে যায় এবং সে জানে তার উপর কি বিপদ আসতে পারে তারপরও যুদ্ধ চালিয়ে যায় যতক্ষণ না তার রক্ত ঝরানো হয় এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর ফিরিশতাদেরকে বলেনঃ “দেখ আমার বান্দা আমার কাছে যা আছে তা পাওয়ার আশায় এবং আমার কাছে যে শাস্তি আছে তার ভয়ে ফেরত এসেছে যতক্ষণ না তার রক্ত ঝরানো হয়।”
আরও পড়ুন
১১তম পর্ব ------------------------------------------------------------------------------------------- ১৩ তম পর্ব