আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ১০ম পর্ব
===================
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ১০ম পর্ব
===================
০৬. মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা:
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ ﴿المائدة: ٥١﴾فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَن تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ فَعَسَى اللَّهُ أَن يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي أَنفُسِهِمْ نَادِمِينَ ﴿المائدة: ٥٢﴾ وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُوا أَهَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ إِنَّهُمْ لَمَعَكُمْ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَأَصْبَحُوا خَاسِرِينَ ﴿المائدة: ٥٣﴾
“হে মু’মিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে; সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদেরকে পথপ্রদর্শন করেন না। বস্তুত যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, আপনি তাদেরকে দেখবেন, দৌড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলে, আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হই। অতএব, সেদিন দূরে নয়, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দান করবেন অথবা নিজের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ দেবেন; ফলে তারা স্বীয় গোপন মনোভাবের জন্য অনুতপ্ত হবে। মু’মিনগণ বলবে, এরাই কি সে সব লোক, যারা আল্লাহর নামে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করত যে, আমরা তোমাদের সাথেই আছি? তাদের কৃতকর্মসমূহ নষ্ট হয়ে গেছে; ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে।” (সূরামায়িদা: ৫১-৫৩)
এ আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে ইমাম ত্ববারী রহ. বলেন-
والصواب من القول في ذلك عندنا أن يقال إن الله -تعالى ذكره- نهى المؤمنين جميعاً أن يتخذوا اليهود والنصارى أنصاراً وحلفاءً على أهل الإيمان بالله ورسوله، وأخبر أنه من اتخذهم نصيراً وحليفاً وولياً من دون الله ورسوله والمؤمنين فإنه منهم في التحزب على الله وعلى رسوله والمؤمنين، وأن الله ورسوله منه بريئان
.
.
“আমাদের মতে, এ ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত মু’মিনকে নিষেধ করেছেন, তারা যেন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়নকারীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ইয়াহুদী-নাসারাদেরকে সাহায্যকারী ও মিত্র না বানায়। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ, রাসূল ও মু’মিনদেরকে বাদ দিয়ে তাদেরকে মিত্র ও সাহায্যকারী বানাবে; সে আল্লাহ, রাসূল ও মু’মিনদের বিরোধী শিবিরের লোক। আর আল্লাহ ও রাসূল তার থেকে মুক্ত।” (তাফসীরে ত্ববারী, ৬/২৮৬)
ইবনে তাইমিয়া রহ. তাতারদের ব্যাপারে বলেন, যে সব সামরিক ব্যক্তিবর্গ তাদের সাথে যোগ দেবে, তারা তাদেরই বিধানের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইসলামী শরীয়াহ থেকে যতটুকু তারা ফিরে গেছে, এর মাধ্যমেই তাদের মাঝে ইসলামী শরীয়াহ থেকে রিদ্দাহ সাব্যস্ত হয়েছে। সালাফগণ যদি যাকাত অস্বীকারকারীদেরকে মুরতাদ ঘোষণা করতে পারেন; অথচ তারা রোজা রাখত, নামাজ পড়ত, মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করত না। তো যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রুদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুসলমানদেরকে হত্যা করে তাদেরকে কী বলা হবে??? (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, ৪/৩৩২)
ইবনে হাযম রহ. বলেন,
وقد علمنا أن من خرج عن دار الإسلام إلى دار الحرب فقد أبق عن الله تعالى وعن إمام المسلمين وجماعتهم، ويبين هذا حديثه صلى الله عليه وسلم أنه: "أَنَا بريء من كل مسلم يقيم بين أظهر المشركين"، وهو عليه السلام لا يبرأ إلا من كافر، قال الله تعالى: {والمؤمنون والمؤمنات بعضهم أولياء بعض{
‘আমরা জানি- যে ব্যক্তি দারুল ইসলাম ত্যাগ করে দারুল কুফরে চলে গেল, সে আল্লাহ তা‘আলা, মুসলমানদের আমীর ও তাদের জামাআত থেকে পালিয়ে গেল। এ হুকুমটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী থেকে প্রমাণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
أَنَا بَرِيءٌ مِنْ كُلِّ مُسْلِمٍ يُقِيمُ بَيْنَ أَظْهُرِ الْمُشْرِكِينَ.
“প্রত্যেক ঐ মুসলমান থেকে আমি মুক্ত-পবিত্র, যে মুশরিকদের সাথে বসবাস করে।” আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কাফের ছাড়া অন্য কারো ব্যাপারে দায়িত্ব মুক্ত নন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ… ﴿التوبة: ٧١﴾
“মু’মিন নর-নারীগণ একে অপরের বন্ধু।’ (সূরাতাওবা: ৭১)
আবু মুহাম্মাদ রহ. বলেন-
فصح بهذا أن من لحق بدار الكفر والحرب مختاراً محارباً لمن يليه من المسلمين فهو بهذا الفعل مرتد، له أحكام المرتد كلها من وجوب القتل عليه متى قدر عليه ومن إباحة ماله وانفساخ نكاحه وغير ذلك، لأن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يبرأ من مسلم.
وكذلك من سكن بأرض الهند والسند والصين والترك والسودان والروم من المسلمين، فإن كان لا يقدر على الخروج من هنالك لثقل ظهر أو لقلة مال أو لضعف جسم أو لامتناع طريق فهو معذور، فإن كان هناك محارباً للمسلمين معيناً للكفار بخدمة أو كتابة فهو كافر.
ولو أن كافراً مجاهداً غلب على دار من دور الإسلام، وأقر المسلمين بها على حالهم، إلا أنه هو المالك لها المنفرد بنفسه في ضبطها وهو معلن بدين غير دين الإسلام لكفربالبقاء معه كل من عاونه وأقام معه وإن ادعى أنه مسلم لما ذكرنا.
“সুতরাং এ কথা প্রমাণিত যে, যে ব্যক্তি নিকটবর্তী মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে স্বেচ্ছায় দারুল কুফরে যোদ্ধা হিসেবে চলে যায়, সে তার এই অপরাধের কারণে মুরতাদ হয়ে যায়। তার উপর মুরতাদের সব হুকুম প্রযোজ্য হবে। যেমন, গ্রেফতার করতে সক্ষম হলে তাকে হত্যা করা, তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, বিয়ে ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো মুসলমান থেকে দায়িত্ব মুক্তির ঘোষণা করেননি।
তেমনি যেসব মুসলমান ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, তুরস্ক, সুদান, ইতালি ইত্যাদি রাষ্ট্রে বসবাস করে, সে যদি বৃদ্ধ হওয়া বা দরিদ্র হওয়া বা অসুস্থতা বা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে চলে আসতে সক্ষম না হয়, তাকে মাযুর বা অক্ষম হিসেবে গণ্য করা হবে। সে যদি সেখানে কাফেরদেরকে খেদমত, লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে মদদ দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, সেও কাফের বলে গণ্য হবে।
কোনো প্রকাশ্য কাফের যদি দারুল ইসলামের কোনো এলাকা দখল করে নেয় এবং মুসলমানদেরকে তাদের আপন অবস্থায় বহাল রাখে, সে উক্ত এলাকার একচ্ছত্র অধিপতি বনে বসে এবং নিজেকে অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করে; তাহলে তাতে অবস্থানকারী যারাই তাকে সাহায্য করবে এবং তার সাথে থাকবে, সে কাফের হিসেবে গণ্য হবে; যদিও সে নিজকে মুসলমান দাবি করুক।” (আল-মুহাল্লাহ, ১১/১৯৯-২০০ পৃ.)
(মূল আরবিতে "كافراً مجاهداً" বলা হয়েছে। সম্ভবত লেখা বিকৃত হয়ে গেছে বা মুদ্রণ প্রমাদ ঘটেছে, আল্লাহু আলাম। এখানে "كافراً مجاهراً" ই শুদ্ধ।)
এবার চিন্তা করুন, ইরাকী মুসলমানদেরকে মারার জন্য আমেরিকা ও তার মিত্রদের জঙ্গীবিমান ও সামরিক বাহিনী মধ্যপ্রাচ্য দিয়ে চলাচল করে। এমনটা যদি ইমাম ত্ববারী, ইবনে হাযম ও ইবনে তাইমিয়া রহ. প্রত্যক্ষ করতেন; তবে তাঁরা এ ব্যাপারে কী ফতোয়া দিতেন?
তাঁরা যদি আমেরিকার সে সব জঙ্গীবিমান দেখতেন, যেগুলো আফগানিস্তানের মুসলমানদেরকে হত্যা করার জন্য পাকিস্তান থেকে উড়ে যায়; তবে তাঁরা কী ফতোয়া জারি করতেন?
তাঁরা যদি পশ্চিমা সে সব জাহাজ, রণতরী ও জঙ্গীবিমান দেখতেন, যা ইসরাইলকে নিরাপত্তা দিতে, জাযিরাতুল আরবে জবরদখল করতে এবং ইরাক অবরোধ করতে মধ্যপ্রাচ্য, ইয়েমেন ও মিশর হয়ে জ্বালানী, রসদ ও খনিজ লুট করে, এ ব্যাপারে তারা কী ফতোয়া দিতেন?
তাঁরা যদি দেখতেন, আমাদের শাসকগোষ্ঠীর পরম বন্ধু আমেরিকার অস্ত্রে ফিলিস্তিনী মুসলমানগণ সপরিবারে নিজ বাড়িতে নিহত হোন; তাহলে তারা কী বলতেন???
ইয়েমেনের সরকারি বাহিনীর সাথে মিলে মার্কিন জঙ্গীবিমানগুলির মুজাহিদদের উপর মুহুর্মুহু বিমান হামলা যদি তারা প্রত্যক্ষ করতেন, কী মূল্যায়ন করতেন? ভেবে দেখুন!
আরও পড়ুন
৯ম পর্ব-----------------------------------------------------------------------------------------------১১তম পর্ব
Comment