আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“আজ
কি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য
জিহাদ ফরয নয় ???
।।মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ১ম পর্ব
“আজ
কি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য
জিহাদ ফরয নয় ???
।।মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ১ম পর্ব
بسم اللّٰه الرّحمٰن الرّحيم
الحمد للہ رب العالمین، والصلاۃ والسلام علی سید الأنبیاء والمرسلین وعلی آلہ وصحبہ أجمعین ومن تبعھم بإحسان إلی یوم الدین، أما بعد.
হিজরী-পনেরতম শতাব্দীর চাঁদ আমাদের উপর এমন সময় উদিত হয়েছে যখন ভূপৃষ্ঠের কোথাও ইসলাম বিজয়ী নয়। এটা সেই ইসলাম যাকে আল্লাহ তায়ালা যমীনে প্রেরণ করেছেনই বিজয়ী রাখার জন্য। তিনি তাঁর নবী-রাসূলদের দ্বারা ইসলামকে বিজয়ী রেখেছেন এবং এর অনুসারীদেরকেও সে ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার বলেন-
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَ دِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلٰى الدِّيْنِ كُلِّه وَ لَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
“তিনি (আল্লাহ) সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যেন তিনি সেটাকে অন্য সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করতে পারেন। যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।” (সূরা আত তাওবাহ ৯:৩৩)
এটা সেই ইসলাম ছিল যার অনুসারীরা তের শতাব্দী যাবত তার মাথা সামান্যতম নত হতে দেয়নি। মুসলমানদের এক হাত যদি ইসলামের ঝান্ডা রক্ষা করতে অপারগ হয়ে যেত তাহলে অপর হাত আগ বাড়িয়ে তা তুলে নিত। যে মূল্যবান সম্পদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁর সাহাবীগণ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন, পরবর্তী প্রজন্ম সেটাকে আরো আগে বাড়িয়ে নিয়েছেন। উমাইয়্যা এবং আব্বাসী খলীফারা তা বিজয়ী রেখেছেন। কখনো ‘সেলজুক’[1] ও ‘মুরাবিত’[2] সম্রাটরা তার পতাকা সমুন্নত রেখেছেন। কখনো জঙ্গিরা[3], কখনো আইয়ূবীরা[4] ইসলামের বিরুদ্ধে কামানের গোলা প্রতিরোধ করেছেন। কখনো বা মামলুক[5] শাসকেরা আল্লাহর কালেমা সমুন্নত রেখেছেন । অবশেষে ইসলাম এবং আল্লাহর কালিমার মাথা উঁচু করার দায়িত্বভার তুর্কীরা[6] নিজেদের কাঁধে নেয়। ছয় শতাব্দী অবধি তারা অবিরাম আল্লাহর কালিমা সমুন্নত রাখার ফরয বিধানের দায়িত্ব পালন করেছে।
সাইবেরিয়ার বরফাঞ্চল থেকে আফ্রিকার মরুঞ্চল পর্যন্ত, মধ্য এশিয়ার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ইন্দোনেশিয়ার দীপাঞ্চল পর্যন্ত এমনকি ইউরোপেরও বেশ বড় অঞ্চলে ইসলামের বিজয়ী ঝান্ডা তাঁরা উড্ডয়ন করেছেন। আজো পর্যন্ত ইউরোপের অধিবাসীদের ইয়ালদরমের[7] আক্রমণসমুহ এবং বারবারুসার[8] সামুদ্রিক অভিযানসমুহের কথা স্মরণ আছে।
এ পুরো ইতিহাস এ কথার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, মুসলমান এ কথা খুব ভাল করে জানত যে, স্বীয় ধর্মের সাথে সম্পর্কের দাবি নিজের সত্তার উপর এমনকি পুরো জগতের উপর বিজয়ী করতে হবে। তারা খুব ভাল করেই জানত যে, তাদের ধর্ম শুধু ঘর এবং মসজিদ-মাদ্রাসার চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। বরং অর্থ, সমাজ, সংবিধান এবং ক্ষমতা সর্বক্ষেত্রে অগ্রে থাকে। তারা আরো জানত যে, এ ধর্ম অন্য সকল ধর্মের উপর বিজয়ী হওয়ার জন্য এসেছে এবং মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে বের করে এক ‘লা-শারীকালাহ’ আল্লাহর গোলামী ও ইবাদতের দিকে নিয়ে যেতে এসেছে। তারা এ কথাও জানত যে, (ইসলামের) এই বিজয় অর্জিত হবে একমাত্র শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কাফেরদের সাথে মোকাবেলা করা, জিহাদ ও কিতাল করা এবং কাফেরদের ক্ষতিসাধন করার মাধ্যমে। তাদের আইন-কানুনের অধীনে জীবন যাপন করার মাধ্যমে হবে না। আল্লাহ তায়ালার কিতাব এবং তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে এর অনেক দৃষ্টান্ত আছে।
আল্লাহ তায়ালা বদরের ময়দানে এক ব্যবসায়ী কাফেলার বিপরীতে সহায়-সম্বলহীন ফসল আবাদকারী সৈন্যদের দ্বারা মোকাবেলা করার মাধ্যমে এ কথা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে, এ দ্বীনের বিজয় এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠাকরণ এ পথ ভিন্ন অন্য কোন পথে সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফালের শুরুর দিকে বলেন,
وَ اِذْ يَعِدُكُمُ اللّٰهُ اِحْدَى الطَّآىِٕفَتَيْنِ اَنَّهَا لَكُمْ وَ تَوَدُّوْنَ اَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُوْنُ لَكُمْ وَ يُرِيْدُ اللّٰهُ اَنْ يُّحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمٰتِهٖ وَ يَقْطَعَ دَابِرَ الْكٰفِرِيْنَۙ لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَ يُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَۚ
“আর স্মরণ কর যখন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দুদলের একটিকে ওয়াদা দিয়েছিলেন যে, নিশ্চয় তা তোমাদের জন্য হবে। এবং তোমরা চাচ্ছিলে যে, অস্ত্রহীন দলটি তোমাদের অধীনে চলে আসুক। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা চাচ্ছিলেন যে, তিনি তাঁর বাণী দ্বারা সত্যকে সত্য প্রমাণ করবেন। যদিও অপরাধীরা বিষয়টি অপছন্দ করছিল।” (সুরা আনফাল, ৮:৭-৮)
আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতের মাধ্যমে বলে দিয়েছেন যে, لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖ – আয়াতে দ্বীনের যে বিজয়ের কথা বলা হয়েছে তা জিহাদ ও কিতালের শক্তির মাধ্যমে কাফেরদের শক্তির মোকাবেলা করার দ্বারা অর্জন হবে। তখনই কাফেরদের দাপট হ্রাস পাবে এবং মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আর ইসলামের শক্তির দর্শনের এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বলে গেছেন– যে হাদিসটিকে বিভিন্ন শব্দে প্রায় তের জন সাহাবী – রাযিআল্লাহু আনহুম – বর্ণনা করেছেন।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَيُؤْمِنُوا بِيوَبِمَا جِئْتُ بِهِ فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ. (رواہجماعۃ واللفظ لمسلم)
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতক্ষণ না লোকসকল এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতিত কোন মাবুদ নেই এবং আমার উপর এবং আমি যে দ্বীন নিয়ে এসেছি তার উপর ঈমান না আনে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে তাদের সাথে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং যখন তারা ঈমান আনবে তখন তাদের জান, মাল আমার থেকে নিরাপদ হয়ে যাবে।”
[1] সেলজুক আরবীতে যাকে السلاجقة বলে। সুন্নী মুসলিম সাম্রাজ্য, যারা এগারো শতাব্দী থেকে চৌদ্দ শতাব্দী পর্যন্ত মধ্য এশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্য শাসন করে। শায়েখ আবু আলী আল-হাসান আল তুসি নিযাম উল-মুলক (১০১৮-১০৯২), যিনি খাজা নিযামুল মুলক নামে অধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন পারস্যের আলিম এবং সেলজুক সাম্রাজ্যের উজির। অল্পকালের জন্য তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবেও অধিষ্ঠিত ছিলেন। (অনুবাদক)
[2] মুরাবিতিন হল দক্ষিণ মরোক্কো, আলজেরিয়া ও মৌরিতানিয়ার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত একটি রাজ্য। মুরাবিতিন রাজ্য একদল মুসলিম যোদ্ধা ও আলেম দ্বারা পরিচালি হত। (অনুবাদক)
[3] জিনকী সাম্রাজ্য ছিল অঘুজ তুর্কি বংশোদ্ভূত একটি মুসলিম সাম্রাজ্য। সেলজুক সাম্রাজ্যের পক্ষ হয়ে তারা সিরিয়ার অংশবিশেষ ও উত্তর ইরাকের শাসন পরিচালনা করে। ইমাদউদ্দিন জিনকী রহিমাহুল্লাহ এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই সাম্রাজ্য (১১২৭ থেকে ১২৫০) তের শতক পর্যন্ত উত্তর ইরাকে শাসন করতে সক্ষম হয়। ইতিহাসের অন্যতম নায়ক নুরুদ্দিন জিনকী রহিমাহুল্লাহ এই সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন।
[4] কুর্দি বংশোদ্ভূত মুসলিম সাম্রাজ্য। ক্রুসেডরদের যম সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি রহিমাহুল্লাহ এটির প্রতিষ্ঠাতা এবং মিশর এর কেন্দ্রবিন্দু ছিল। বার ও তের শতকে (১১৫৪-১২৫৮( এই সাম্রাজ্য মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত। ১১৮৩ সাল নাগাদ মিশর, সিরিয়া, উত্তর মেসোপটেমিয়া, হেজাজ, ইয়েমেন ও আধুনিক তিউনিসিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত উত্তর আফ্রিকার উপকূল এই সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। ১১৮৭ সালে হিত্তিনের যুদ্ধের পর জেরুজালেম রাজ্যের অধিকাংশ ও জর্ডান নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা সালাউদ্দিন আইয়ুবি রহিমাহুল্লাহর করায়ত্ত হয়।
[5] মামলুক সালতানাত ছিল মধ্যযুগের মিশর, লেভান্ট, তিহামাহ ও হেজাজ জুড়ে বিস্তৃত একটি মুসলিম রাজ্য। আইয়ুবীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে ১৫১৭ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের মিশর বিজয়ের আগ পর্যন্ত মামলুকরা ক্ষমতায় ছিল। সালতানাতের শাসকশ্রেণী মামলুক ছিল।
[6] উসমানীয় সাম্রাজ্য ঐতিহাসিকভাবে তুর্কি সাম্রাজ্য বা তুরস্ক বলে পরিচিত, ছিল একটি ইসলামি সাম্রাজ্য। ১২৯৯ সালে অঘুজ তুর্কি বংশোদ্ভূত প্রথম উসমান উত্তরপশ্চিম আনাতোলিয়ায় এই সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন।সুলতান প্রথম মুরাদ কর্তৃক বলকান জয়ের মাধ্যমে উসমানীয় সাম্রাজ্য বহুমহাদেশীয় সাম্রাজ্য হয়ে উঠে। ১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের (হাদিসে ভবিষ্যতবাণীকৃত) কনস্টান্টিনোপল জয় করার মাধ্যমে উসমানীয়রা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য উচ্ছেদ করে এবং ১৬শ ও ১৭শ শতাব্দীতে বিশেষত সুলতান প্রথম সুলায়মানের সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, ককেসাস, উত্তর আফ্রিকা ও হর্ন অব আফ্রিকা জুড়ে বিস্তৃত একটি শক্তিশালী বহুজাতিক, বহুভাষিক সাম্রাজ্য ছিল। ১৭শ শতাব্দীর শুরুতে সাম্রাজ্যে ৩২টি প্রদেশ ও বেশ কয়েকটি অনুগত রাজ্য ছিল। এসবের কিছু পরে সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত করে নেয়া হয় এবং বাকিগুলোকে কিছুমাত্রায় স্বায়ত্ত্বশাসন দেয়া হয়।
উসমানীয় সাম্রাজ্য ছয় শতাব্দী ধরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে।
[7] প্রথম বায়েজীদ (ডাকনাম ইলদিরিম অর্থ "বজ্রপাত") (১৩৬০ – ৮ মার্চ ১৪০৩) ছিলেন বুজুর্গ উসমানীয় সুলতান। তিনি ১৩৮৯ থেকে ১৪০২ সাল পর্যন্ত শাসন করেছেন। তিনি সুলতান প্রথম মুরাদ ও গুলচিচেক খাতুনের পুত্র।
বায়েজিদ ইয়ালদরম ছিলেন অত্যন্ত সাহসী সুলতান যিনি কুছতুনতুনিয়া তথা কন্সট্যান্টিনোপল ও সমগ্র ইউরোপ জয়ের জন্য মনস্থির করেন। তুর্কি ‘ইয়ালদরম’ শব্দের অর্থ ‘বজ্র’। তিনি এমনই তেজস্বী ব্যক্তি ছিলেন যে, জনগণই তাঁকে ‘ইয়ালদরম’ নামে অভিহিত করতো। ১৩৯৭ খৃস্টাব্দে তিনি এতটাই ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন যে কুছতুনতুনিয়া তথা কন্সট্যান্টিনোপল অবরোধ করেন এবং বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান। কিন্তু কন্সট্যান্টিনোপলের খ্রিস্টান শাসক জিজিয়া কর দিতে সম্মত হয় ও বায়েজিদ ইয়ালদরমের নিকট আরও শপথ করে যে, তাঁকে না জানিয়ে কন্সট্যান্টিনোপলে নতুন কোন শাসনকর্তা কখনও নিয়োগ করবে না এবং এ বিষয়ে বায়েজিদ ইয়ালদরমের নিকট থেকে অনুমতি লাভ করে। এই শর্তাবলী বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ছিলো যারা কিনা একসময় সমগ্র খ্রিস্টান জগতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলো, এখন তারা এমন নাজুক পরিস্থিতিতে পতিত হল যে তাদের শাসকগণ মুসলমানদের অনুমতির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়লো।
সুলতান বায়েজীদ ওরফে ইয়ালদরম (১৩৮৯ – ১৪০২ খ্রি) তার সর্বশক্তি দিয়ে শহর অবরোধ করেছিলেন। কিন্তু মুসলিম জাতির দুর্ভাগ্য তৈমুর লং নামক এক ল্যাংড়া যুদ্ধবাজ সুলতানকে কাপুরোষোচিত হামলার মাধ্যমে পরাজিত ও বন্দী করেন। তৈমুর লং এর এহেন আহাম্মকীর কারণে মুসলমানগণ ইউরোপে খ্রিস্টানদের যে চাপের মুখে রেখেছিলো তা থেকে খ্রিস্টানরা রেহাই পেয়ে যায়। সুলতান বায়েজিদ ইয়ালদরম বন্দী অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
[8] তিনি হচ্ছেন ইসলামের ইতিহাসে নৌ-জিহাদের এক অকুতোভয় নায়ক। প্রথম উসমানি খলীফা সুলতান সেলিম ও তদ্বীয় পুত্র মহামতি সোলায়মানের আমলে তিনি ছিলেন খেলাফতের নৌ-বাহিনীর প্রধান। ১৪৭২ সালে জন্ম নেওয়া এই বীরের মৃত্যু হয় ১৫৪৬ সালে। তাঁর সুদক্ষ নৌ-পরিচালনায় তৎকালীন ইউরোপের সব রাষ্ট্র তটস্থ থাকতো। ভূ-মধ্য সাগরে তখন ছিলো উসমানি খিলাফতের একচ্ছত্র আধিপত্য। তিনি একে একে হামলা পরিচালনা করেন ফ্রান্স-স্পেন, পর্তুগাল সহ সমস্ত ইউরোপের নৌ-বহরে। তাই ইউরোপের প্রত্যেক দেশকেই সমুদ্রপথে খিলাফাহকে ট্যাক্স দিয়ে চলতে হতো। স্পেন থেকে যখন মুসলিম উচ্ছেদাভিযান চলছিলো, তখন এই বারবারুস ১৫০৪ ও ১৫১০ সালে তাঁর নৌবহর নিয়ে স্পেন উপকূলে উপস্থিত হন। উদ্ধার করেন ৭০ হাজারের মতো স্পেনের মুসলিম মুহাজিরকে। তাঁর এই অবদানের কারণে ইসলামের ইতিহাসে তিনি আজও নৌজিহাদের প্রতীক হয়ে আছেন। তাঁর প্রকৃত নাম হচ্ছে খাজির বিন ইয়াকূব, সুলতান সেলিম ১ম তাঁকে খায়রুদ্দীন পাশা উপাধি দেন। যেহেতু তাঁর দাড়ি লাল ছিলো এজন্যে ইউরোপীয়রা তাকে বারবারোসা অর্থাৎ, লাল দাড়িবিশিষ্ট উপনামে ডাকতো।
Comment