Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৩ || “আজ কি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য জিহাদ ফরয নয় ???” ।। মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাফিজাহুল্লাহ || ২য় পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৩ || “আজ কি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য জিহাদ ফরয নয় ???” ।। মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাফিজাহুল্লাহ || ২য় পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
    আজ
    কি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য
    জিহাদ ফরয নয় ???
    ।।মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাফিজাহুল্লাহ ||
    এর থেকে২য় পর্ব


    পুরো ইতিহাসের বিপরীতে আমরা আজ নিজেদের অবস্থার দিকে লক্ষ্য করি। যেন পুরো দুনিয়াটাই উলট-পালট হয়ে গেছে। আজ বাহ্যিক দৃষ্টিতে তো মুসলমান নিজেকে স্বাধীন মনে করে। না হয় পাশ্চাত্যরা নামে মাত্র ‘স্বাধীনতা’ এর সুর এ পরিমাণ গেয়েছে যার ফলে একজন (সাধারণ) মুসলমানের এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, তারা আজ স্বাধীন। অথচ বাস্তবতা হল, ইসলাম আজ পরাজিত। মুসলমান স্বাধীন আর ইসলাম পরাধীন- এ অদ্ভুত বিষয়টি আমরা পনেরতম শতাব্দিতে পেয়েছি। পঞ্চাশের অধিক (মুসলমানদের) রাষ্ট্র- যেখানে মুসলমান নিজেকে স্বাধীন মনে করছে। অথচ কোন একটি রাষ্ট্রও এমন নেই যেখানে ইসলাম স্বাধীন এবং বিজয়ী!! বরং সব জায়গায় ইসলাম পরাজিত এবং গোলাম হয়ে আছে!!!

    ইসলামী রাষ্ট্রগুলো দেখুন! মিশরকে দেখুন, সুদানকে দেখুন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে দেখুন! না ইসলামী শিক্ষা আছে, না ইসলামী আইন-কানুন আছে। না অর্থব্যবস্থা ইসলামী, না সামাজিক জীবন ইসলামের আলোকে গঠিত। এমনকি ব্যক্তি-জীবনেও লোকেরা কুফরী আইনের পাবন্দী হয়ে আছে। অথচ পাশ্চাত্যের দাবী তো ছিল, মানুষ ব্যক্তি-জীবনে নিজ নিজ ধর্মের অনুসরণ করার অধিকার থাকে।

    এছাড়াও ঐ সকল রাষ্ট্রের সরকার এবং সৈনিকরা কাফেরদের টেক্স দিচ্ছে। বাদশাহ থেকে নেমে বাদশাহর গোলাম হয়ে আছে। এ সকল রাষ্ট্রে মুসলমানদের ব্যক্তি-জীবনে সামান্য কিছু ইসলামী বিধানের অনুমতি ছাড়া ইসলামের বিজয় কোথায়! লা হাউলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!!

    অন্য দিকে এমন অনেক মুসলিম রাষ্ট্র আছে যেখানে কাফেররা মুসলমানদের পায়ে পিষ্ট করছে এবং তাদের সেনাবাহিনী মুসলমানদের সাথে যু্দ্ধে লিপ্ত আছে।

    ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, সোমালিয়া এবং ইয়েমেনতেমনিভাবে অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রে আমেরিকার ড্রোন ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। এগুলো কি সরাসরি যুদ্ধ না?

    এগুলো সব মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের অবিরাম যুদ্ধের ফলাফল। যার প্রথম ধাপে তারা উসমানী খেলাফত ধ্বংস করে এবং মুসলিম দেশগুলোকে নিজ অধীনে নিয়ে আসে। এরপর তাকে বিশ্বনীতির অক্টোপাসে আটকিয়ে স্থানীয় দালালদের হাতে তুলে দিয়ে নামে মাত্র স্বাধীনতা দিয়েছে।

    এ সকল যুদ্ধে কাফেরদের মূলত একটি সুক্ষ দুরভিসন্ধি ছিল। সেটি হল, মুসলমান নিজেদের ধর্মকে ব্যক্তি-জীবন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখবে এবং সামাজিক জীবনে ইসলামের বিজয়ের কল্পনা তাদের কাছে দ্বীনের অংশ হবে না। আর এটাই সমাজ থেকে দ্বীনের দূরত্ব এবং রাজনীতি থেকে দ্বীনের দূরত্ব!


    বাস্তবতা হল, পাশ্চাত্যের কুফুরী শক্তি তাদের এ উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হয়েছে। এর প্রথম ধাপটি ছিল, যখন উসমানী খেলাফতের শেষদিকে মোস্তফা কামালের দল ’جمعیتِ اتحاد وترقی‘ (তুর্কী ঐক্য পরিষদ) খলিফার কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে রাষ্ট্রীয় সংসদের কাছে দিয়েছিল এবং শরয়ী আদালতের সাথে শহর কেন্দ্রিক আদালত প্রতিষ্ঠা করেছিল তখন। এ বিষয়ে খেলাফতে উসমানিয়ার শেষ দিকের শায়খুল ইসলাম মোস্তফা সাবারী[1] রাহমাতুল্লাহি আলাইহি জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, এটা রাষ্ট্র থেকে ইসলামকে আলাদা করার পাশ্চাত্যের দুরভিসন্ধি। এবং তিনি বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন,

    "معلوم أن الإمامة الكبرى التي يعبر عنها بالخلافة تتضمن حكومة تنفيذ الشریعة الإسلامية، بل ذلك موضوعها بعينه، فتجريد الحكومة عن الخلافة والتفريق بينهما يخرج الحكومة عن أن تكون حكومة إسلامية كتجريد أحد من المسلمين عن صفته الإسلامية والعياذ بالله. فمآل هذا إلى ارتداد الحكومة التركية عن دينها من حيث إنها حكومة"[2]

    “ ইমামতে কুবরা (বড় ইমামতী) যাকে খেলাফত বলা হয়, তা এমন রাজনীতিকে বুঝায় যা ইসলামী শরীয়তকে বাস্তবায়ন করে। বরং খেলাফত তো বলাই হয় ইসলামী শরীয়ত বাস্তবায়ন করাকে। সুতরাং রাজনীতিকে খেলাফত থেকে আলাদা করা এবং দুইয়ের মাঝে পার্থক্য করা মূলত রাজনীতি ইসলামী হওয়ার বিরোধিতা করার নামান্তর। যেমন মুসলমানদের কোন ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে (মুরতাদ হয়ে) যাওয়া। মায়াযাল্লাহ।”

    আর এর ফলাফল দেখা গেছে তুর্কি খেলাফত ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। যার ফলে এখন তা শুধুই ইসলামী খেলাফতের মূল চিন্তা-চেতনার বিরোধী এক রাষ্ট্র ব্যবস্থা।

    তারপর অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে রাজনীতি ও সমাজ থেকে ইসলামকে কর্মক্ষম করে দেয়ার ব্যাপারে শায়েখ মোস্তফা সাবারী রহ. স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে গেছেন। তাঁর ভাষায়-

    ’’لَكِنَّ حقيقةَ الأمرِ أن هذا الفصلَ مؤامرة بالدين للقضاء عليه، وقد كان في كل بدعة أحدثها العصريون المُتَفَرْنِجُون في البلاد الإسلامية كيد للدين ومحاولة الخروج عليه لكن كيدهم في فصله عن السياسة أدهى وأشد من كل كيد في غيره، فهو ثورة حكومية على دين الشعب‘‘[3]

    “বাস্তবতা হল, রাজনীতি থেকে ইসলামকে আলাদা করা মূলত ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বৈ কিছু নয়। যাতে ইসলামকে ধ্বংস করা যায়। বর্তমানে পশ্চিমারা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে প্রত্যেক নব্য বিষয়ে দ্বীনের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে এবং যুদ্ধ করছে। কিন্তু ইসলামকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা অন্য সকল চক্রান্তের চেয়ে অধিক মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক। কারণ এটা সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগনের ধর্মের বিরুদ্ধে আক্রোশ।”

    বাস্তবতা হল, রাষ্ট্র থেকে ইসলামকে আলাদা করা দ্বীনের বিরোধিতা বৈ কিছু নয়। যেন দ্বীনকে ধ্বংস করা যায়। বর্তমানে পাশ্চাত্যের অনুসারীরা সকল নব্য কাজে দ্বীনের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে। কিন্তু ইসলামকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা অন্য সকল চক্রান্ত থেকে বেশি ধ্বংসাত্মক ও মারাত্মক। কারণ এটা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণের ধর্মের প্রতি আক্রোশ।

    পশ্চিমারা এ কাজটি যেমনভাবে নিজেদের এজেন্ডা দ্বারা তুরস্কে ঘটিয়েছিল তেমনিভাবে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও নামকা ওয়াস্তে স্বাধীনতার পর স্থানীয় এজেন্ডাদের দ্বারা ঘটিয়েছে এবং তুরস্কে যেভাবে ঘটিয়েছে ঠিক সেভাবেই অন্যান্য জায়গাতেও ঘটিয়েছে। পার্থক্য শুধু এতটুকু, তুরস্কে কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে ধর্মহীনতাকে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করে মুসলমানদের ব্যক্তি-জীবনেও ইসলামের উপর বাধা-নিষেধ আরোপ করেছে। আর অন্যান্য (মুসলিম) রাষ্ট্রে পাশ্চাত্যের কুফুরী সস্প্রদায় এই শেষ ধাপটি বাস্তবায়ন করতে অন্য কোন সুযোগের অপেক্ষায় আছে। বাকী দেশ, রাজনীতি এবং সমাজ থেকে ইসলামকে সমূলে নির্মূল করে সেখানে পশ্চিমাদের দেয়া গণতন্ত্র, পুঁজিবাদী ক্ষমতা, আইন ও প্রথা চালু করে দিয়েছে।

    বর্তমানে কুফুরী শক্তির লাগাম আমেরিকা ও ইসরাইলের হাতে। তাদের চিত্র হল, কিছু মুসলিম দেশে নিজেরা আক্রমণ করে মুসলমানদের উপর যুলুম-অত্যাচার অব্যাহত রেখেছে। আর কিছু মুসলিম দেশে নিজেদের অনুগামী ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও সৈনিকদের দ্বারা ধর্মহীনতা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আক্রমণ করেছে। ইসলাম কায়েম ও শরীয়তের বিধান বাস্তবায়নের শব্দ যারা মুখে উচ্চারণ করে তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যে প্রত্যেক মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরজ হয় সে ব্যাপারে উম্মতের ফকীহগণের কিতাবে যথেষ্ট আলোচনা করা হয়েছে। এখানে সবগুলো উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে ফেকাহর যে কোন কিতাব যদি হাতে নিয়ে খুলেন তাহলে দেখতে পাবেন। হিজরী সনের চতুর্থ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ আলেমে দ্বীন ইমাম আবু বকর জাস্সাস হানাফী রহ. তাঁর অনবদ্য গ্রন্থ ‘আহকামুল কুরআনে ’ লিখেছেন-

    ’’وَمَعْلُومٌ فِي اعْتِقَادِ جَمِيعِ الْمُسْلِمِينَ أَنَّهُ إذَا خَافَ أَهْلُ الثُّغُورِ مِنْ الْعَدُوِّ ، وَلَمْ تَكُنْ فِيهِمْ مُقَاوِمَةٌ لَهُمْ فَخَافُوا عَلَى بِلَادِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَذَرَارِيِّهِمْ أَنَّ الْفَرْضَ عَلَى كَافَّةِ الْأُمَّةِ أَنْ يَنْفِرُ إلَيْهِمْ مَنْ يَكُفُّ عَادِيَتَهُمْ عَنْ الْمُسْلِمِينَ۔ وَهَذَا لَا خِلَافَ فِيهِ بَيْنَ الْأُمَّةِ‘‘۔

    “সকল মুসলমানের আকীদায় এ কথা বদ্ধমূল আছে যে, যখন মুসলমান সীমান্ত-অধিবাসীরা শত্রুর পক্ষ থেকে আক্রমণের আশঙ্কা করে এবং তাদের মোকাবেলা করার ক্ষমতাও সেই লোকদের না থাকে, যার ফলে তারা তাদের দেশ, বংশ এবং নিজেদের ব্যাপারে আতঙ্কগ্রস্থ থাকে তাহলে তখন সকল মুসলমানদের উপর সেই (সীমান্তবর্তী) লোকদের পক্ষে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া ফরয হয়ে যায় - যেন মুসলমানদের উপর থেকে শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়। আর এ ব্যাপারে উম্মতের কোন ব্যক্তি দ্বি-মত করেনি।”

    পাঠকবৃন্দ! কথাগুলোতে একটু চিন্তা করুন, যখন কাফের শত্রুদের পক্ষ থেকে আক্রমণের আশঙ্কা থাকে তখন তার মোকাবেলার জন্য জিহাদ ফরয হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের কেউ দ্বিমত করেনি। কারণ এর দ্বারা এমন আক্রমণকারী শত্রুর মোকাবেলা হবে যার আক্রমণ শুধু মানুষের জানের উপর হয় না বরং ঈমানের উপর হয়। এটা শুধু দেহকে শেকলবন্দী করবে না বরং অন্তরে কাষ্ঠ ঢেলে ইসলামকে শেকলবন্দী করবে। যেখানে ইসলাম শুধু জানের আশঙ্কাকে প্রতিহত করার জন্য জিহাদ ফরয করেছে তাহলে যেখানে দ্বীন শঙ্কায় পরে যায় সেখানে কি কোন সত্যিকার মুসলমান ভিন্ন মত পোষণ করতে পারে!! কখনো না।

    পৃথিবীর যে প্রান্তই হোক না কেন, যদি তাতে কোন সময় ইসলাম বিজয়ী ছিল কিন্তু আজ পরাধীন, তাহলে সেখানে আবার ইসলামকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জিহাদ করা ফরয।



    [1] শায়েখ রহঃ তাওকাদ শহরের আনাজুলে ১৮৬৯ সালে জন্ম গ্রহন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা তিনি তাঁর সম্মানিত পিতা শায়েখ আহমাদ তাওকাদি রহঃ। এর নিকট লাভ করেনশায়েখ শৈশবেই কুরআনে কারিম হিফজ করেন। তিনি ১৮৯০ সালে তরুণ সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতেহ জামে মসজিদের খতিব নিযুক্ত হন, অথচ তখন তিনি বিবাহ করেন নি। ১৯৫০ সালে মিসরে স্ট্রোকে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস শায়েখ যাহেদ কাউসারি বলেন- তিনি হচ্ছেন মুজাহিদদের চোখের শীতলতা। আরবের প্রসিদ্ধ হানাফি আলিম শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন- তাঁর কিতাবমাউকিফুল আকলহচ্ছে যুগের শ্রেষ্ঠ একটি গ্রন্থ। ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।

    [2] الشيخ مصطفى صبري و موقفه من الفكر الوافد ـ صفحة 484 ـ مؤلف الدكتور مفرح بن سليمان القوسي
    [3] موقف العقل والعلم والعالم من رب العالمين وعباده المرسلين ـ جلد 4 ـ صفحة 281




    আরও পড়ুন
Working...
X