আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ.
প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা! আশা করি- আল্লাহর রহমতে চলমান প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেও ভাল আছেন। যদিও প্রকৃতঅর্থে আমরা কেউই ভাল নেই। তার কারণও কারো নিকট অস্পষ্ট থাকার কথা না। আচ্ছা যাই হোক!
পর কথা হলো-
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন-
وَأَنفِقُوا مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِينَ. وَلَن يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
“আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, এর আগে যে, তোমাদের কারো মৃত্যু এসে যাবে আর তখন সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে কিছু কালের জন্য সুযোগ দিলে না কেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। যখন কারো নির্ধারিত কাল এসে যাবে তখন আল্লাহ তাকে কিছুতেই অবকাশ দিবেন না। আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবহিত।” [সূরা মুনাফিকূন(৬৩): ১০-১১]
হাদীসে শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.
মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার তিনটি আমল ছাড়া সমস্ত আমল তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমল তিনটি হচ্ছে- সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম, যা থেকে উপকৃত হওয়া যায় এবং নেক সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩১০
আরেকটি হাদীসে এসেছে, ‘মানুষ যা কিছু রেখে যায় তার মধ্যে তিনটি জিনিস উত্তম- নেক সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে। এমন সদকা যা অব্যাহত থাকে। এর সওয়াব সে লাভ করে। এবং এমন ইলম, যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়।’ -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৪১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ২৪৯৫
প্রিয় ভাইয়েরা আমার! আমরা প্রতিনিয়মত মৃত্যু পানে এগিয়ে চলছি। আর মৃত্যুর পর তো কোন আমলের সুযোগ থাকবে না। তাই মৃত্যু পূর্ববর্তী সময়ের মাঝেই আমাদের আমল করে যেতে হবে। আর এটাই হবে বুদ্ধিমানে কাজ। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ، وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا، وَتَمَنَّى عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ.
বুদ্ধিমান সে-ই যে নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম সে-ই যে নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলে এবং আল্লাহর কাছে (বৃথা) আশা পোষণ করে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৫৯
বুদ্ধিমান সে-ই যে নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম সে-ই যে নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলে এবং আল্লাহর কাছে (বৃথা) আশা পোষণ করে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৫৯
তো আমাদেরকে ভেবে দেখা দরকার আমরা কি পরিমাণ আমল করতে পেরেছি? মুহাসাবা করা দরকার। তাহলে দেখতে পাবো যে, আমাদের আমলের পরিমাণ নিতান্তই কম। কারণ, আমাদের জীবনের মহামূল্যবান সময়গুলো আমরা অবহেলা-গাফলতের ঘুমে কাটিয়ে দিয়েছি। তাই আমাদের আমলের মাঝে এমন আমলও থাকা চাই- যা আমাদের মৃত্যু পরবর্তী সময়েও চালু থাকবে। আর সেটা হলো সদকায়ে জারিয়ার আমল দুনিয়াতে চালু করে যাওয়া।
উপরোল্লিখ হাদীসসমূহের ভাষ্য মতে- সদকায়ে জারিয়ার অন্যতম আমল হলো: দুনিয়াতে উপকারী ইলমের চর্চা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করে যাওয়া। আর উপকারী ইলম অর্জনের গুরুত্ব ও ফযীলত অপরিসীম। এর উপকারিতা হাসিল করতে পারে প্রথমত ব্যক্তি নিজেই। সেই সাথে যদি এর প্রচার-প্রসার করা হয়, মানুষকে শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়া হয়, যা দ্বারা তারা যুগ-যুগ ধরে উপকৃত হতে থাকবে, কল্যাণ ও শান্তির পথে এগুতে থাকবে এবং যার ধারাবাহিকতা ব্যক্তির মৃত্যুর পরও চলমান থাকবে, তবে তা আরো বেশি মহিমময়। যতদিন এই ইলম দুনিয়াতে আলো ছড়াতে থাকবে ততদিন তার সওয়াবের ভুবনও আলোকিত হতে থাকবে।
তো আমার ভাইয়েরা! একটি দাওয়াতি প্রজেক্টের অংশ হিসেবে কিছু পিডিএফ ও ভিডিও থেকে টেক্সট বের করা বা টাইপ করে দেওয়ার উদ্যোগ অনেকদিন আগেই কিছু ভাই শুরু করেছেন। এরপর এই প্রজেক্টে অনেক ভাই অংশগ্রহনও করেছেন। বর্তমানেও এই ধারা চলমান, আলহামদু লিল্লাহ।
তাই যাদের পক্ষে এখন এই প্রজেক্টে অংশগ্রহনের সুযোগ আছে, তারা অনতিবিলম্বে অনুগ্রহ করে একক মশওয়ারাতে ম্যাসেস দিলে ভাল হয়।
কারণ, বর্তমানে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের পরম সম্মানিত আলিম-উলামা ও তালিবুল ইলম এবং জেনারেল লাইনে পড়ুয়া দ্বীনি ভাইয়েরা অনেকটা অবসর সময় পার করছেন। তাই আপনাদেরকে বিশেষভাবে এই প্রজেক্টে অংশগ্রহন করার অনুরোধ করছি।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের অবসর সময়গুলোকে তাঁর দ্বীনের কাজে ব্যয় করার তাওফীক দিন ও আমাদের ক্রটিযুক্ত আমলগুলোকে কবুল করে নিন।
পরিশেষে চতুর্থ খলীফা আলী ইবনে আবী তালিব রা.-এর একটি বক্তব্য উল্লেখ করে লেখার ইতি টানছি। তিনি দুনিয়া-আখেরাতের স্বরূপ ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে বলেন-
إِنَّ الدُّنْيَا قَدْ تَرَحَّلَتْ مُدْبِرَةً، وَإِنَّ الْآخِرَةَ مُقْبِلَةٌ وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ، فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ، فَإِنَّ الْيَوْمَ عَمَلٌ وَلَا حِسَابَ، وَغَدًا حِسَابٌ وَلَا عَمَلَ.
দুনিয়া ফিরে যাচ্ছে আর আখেরাত এগিয়ে আসছে। আর এ দুটির প্রত্যেকটিরই আছে সন্তানাদি। তোমরা আখেরাতের সন্তান হও। কারণ আজ শুধু আমল, হিসাব নেই। আর আগামীকাল শুধু হিসাব, আমল নেই। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৫৬৩৬
*************************
বি.দ্র. যারা ইতিপূর্বে যুক্ত ছিলেন ও বর্তমানেও আছেন, তাদের সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং দু‘আ করছি-
আল্লাহ আপনাদের মেহনতগুলোকে কবুল করুন ও উম্মাহকে উপকৃত করুন এবং আপনাদেরকে উত্তম থেকে উত্তম জাযা দান করুন।
ভবিষ্যতেও যারা যুক্ত হবেন- তাদের জন্যও অগ্রীম জাযাকুমুল্লাহ।
Comment