কথাগুলো নানাভাবে শোনা যায়। নিশ্চয় এর আগেও শুনেছেন। কেউ বলেন আকিদা সহিহ নেই, কেউ বলেন ফজরের নামাজে জুমার জামাতের সমান মুসল্লি নেই, কেউ বলেন সাড়ে তিন হাত শরীরে ইসলাম কায়েম নেই। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর উপর জিহাদের হুকুম কী হবে, এ প্রশ্ন আসলেই, কেউ উত্তেজিত হয়ে, কেউ রসিয়ে রসিয়ে, কেউ তিক্ততা নিয়ে এ জাতীয় যুক্তিগুলো দেখান। আর খুব একটা চিন্তা না করলে এ কথাগুলোকে গ্রহনযোগ্যও মনে হয়। মনে হয় 'যুক্তি আছে'। এভাবে এধরনের ভুল ধারণা ও সংশয় সমাজে বদ্ধমূল হয়ে যায়।
.
জিহাদের ব্যাপারে এধরনের বক্তব্যগুলোর দেওয়ার সময় জিহাদকে যেন সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের এক ইবাদত হিসাবে দেখানো হয়। শরীয়তের অন্যসব ফরজ বিধানের জন্য একরকমের যুক্তি, আর জিহাদের বেলায় অন্যরকম। নামায, রোজা, হজ্জ জাকাত, ঈদ, জুমা – কোন ক্ষেত্রেই উপরে বলা ত্রুটিগুলোর কারণে ফরজিয়াত পালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয় না। কিন্তু জিহাদের ক্ষেত্রে বলা হয়। আর ঠিক কতোতুকু দাওয়াত, ইসলাহ, তারবিয়াত ইত্যাদির পর জিহাদ করার মতো অবস্থায় উম্মাহ পৌছাতে পারবে সেটাও বলা হয় না। বক্তাদের এ নিয়ে তেমন চিন্তিতও দেখা যায় না। মনে হয় দায়সারাভাবে কোন দুর্বল কিংবা যুতসই অজুহাত দিয়ে এই টপিকটা এড়িয়ে গেলেই যেন তারা বাঁচেন। তাই এভাবেই বছরের পর বছর চায়ের আড্ডার খেজুরে আলাপের মতো এই যুক্তিগুলো প্রচার করা হয়। একসময় মানুষ এগুলোকে সত্য বলে মেনে নেয়, অথচ এসব কথার শরয়ী ভিত্তি কতোটুকু, বা আদৌ আছে কি না সেটা দেখা হয় না।
.
আজ আমরা এ কাজটাই করবো। এধরনের তথাকথিত ওজরের পেছনের বাস্তবতার দিকে আমরা তাকাবো। কথার ফুলঝুড়ি নামের পর্দার পেছনে চাপা পড়ে যাওয়া সত্যের দিকে তাকাবো। এ কাজটা আমরা করবো ইতিহাস ও দলীলকে সাথে নিয়ে। আমাদের পক্ষ থেকে না, এ দাবিগুলোর খন্ডন করা হবে সীরাহ ও উম্মাহর পূর্ববর্তী ও বর্তমান আলিমদের ঘোষিত অবস্থানের আলোকেই।
.
একইসাথে লক্ষণীয় আরেকটি বিষয় হল, আকিদা সহিহ হওয়া, নামাজে মুসল্লির সংখ্যা কিংবা শরীরে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মতো যুক্তিগুলো এই অর্থে বিপদজনক যে এগুলো মানুষের একটি ফরয ইবাদতের ব্যাপারে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে। কিন্তু এই ভিডিওতে এমন কিছু বক্তব্য আপনারা শুনবেন যা আরো অনেক বেশি বিপদজনক, যেমন - বাংলাদেশের ৯০% মানুষের তাওহিদ নেই, ইমান নেই, একদল মুশরিক নিয়ে আপনি কী খেলাফত কায়েম করবেন’ ইত্যাদি। এই কথাগুলো শুধু জিহাদের ব্যাপারে বিভ্রান্ত করে না, বরং একইসাথে চরমপন্থার বীজও অন্তরে রোপন করে। আমরা শাইখদের প্রতি সুধারনাই রাখি, এবং মনে করি যে এটা তাদের উদ্দেশ্য না। কিন্তু এ জাতীয় কথা শ্রোতাদের সবার উপর একরকম প্রভাব ফেলে না।
.
এধরনের কথার সবচেয়ে কম যে ফলাফল, তা হল ভিন্ন ঘরানার মুসলিম ভাইবোনদের ব্যাপারে চরম তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মনোভাব এবং অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া। আর এর সম্ভাব্য ফলাফলের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হল, এই ধারণা তৈরি হওয়া যে বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম দাবিদার বাস্তবে কাফির-মুশরিক। এবং দুঃখজনকও হলেও একথা স্বীকার করতে হবে যে এর আগে ‘মাযহাব মানা শিরক’ – জাতীয় কথা কিন্তু আমরা শুনেছি। এবং ঘরানার আলিম ও দা’ঈদের অনুসারীদের কাছ থেকেই। সুতরাং এ জাতীয় কথাবার্তা যে চরমপন্থা তৈরি করে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই আমরা শায়খদের অনুরোধ করবো এমন ধরনের কথা এড়িয়ে চলতে যা থেকে আপাতভাবে গ্বুলুহ ও উগ্রতা প্রকাশ পায়। নইলে অতি সহজেই ‘খারেজি’ হবার যে অভিযোগ তারা মানুষের দিকে ছুড়ে দেন, সেটা তাদের দিকে ফিরে আসতে পারে।
.
একারণেই ‘প্রচলিত সংশয়’ হিসাবে এ ভিডিওর বিষয়বস্তু আমরা নিয়েছি “৯০% মানুষের তাওহিদ নেই, তাই জিহাদও নেই!’ কারণ এধরনের সব বক্তব্যের মধ্যে এটি সবচেয়ে বিপদজনক। তবে এখানে যে দলীল-প্রমান উপস্থাপন করা হয়েছে তা এজাতীয় অন্যান্য যেসব অপব্যাখ্যা ও যুক্তি আছে (মসজিদ মুসল্লির সংখ্যা, শরীরে ইসলাম প্রতিষ্ঠা) সেগুলোর খন্ডনেও প্রযোজ্য হবে।
.
মাওলানা সাঈদ ইউসুফ বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে শরীয়তের আলোকে এধরনের বক্তব্যের গ্রহনযোগ্যতা কতোটুকু তা আপনাদের সামনে তুলে ধরবেন। আর আলোচনা বিস্তারিত হবার কারণে ভিডিও দৈর্ঘ্যও মোটামুটি বড়ই। কিন্তু ইনশা আল্লাহ এ আলোচনা পুরো শুনা ও দেখার পর আদল-ইনসাফহীন ব্যক্তি ও অন্ধ অনুসারী ব্যাতীত সবার সম্পূর্ণভাবে এ সংশয়ের ব্যাপারে ভুল ধারণা ভেঙ্গে যাবে। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লাহ বিল্লাহ।
.
ভিডিও ভালো লাগলে কপি-শেয়ারের মাধ্যমে প্রচার করতে ভুলবেন না।
ডাউনলোড লিঙ্ক –
https://archive.org/details/Bangladesher90
Comment