আরাকানের মুসলমানদের সাহায্যে করণীয় সম্পর্কে AQIS মুখপাত্রের বার্তা
কাজে নামার আহ্বান
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
(আস সাহাব মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত ও আন নাসর মিডিয়া কর্তৃক বাংলায় অনুদিত)
অনলাইনে পড়ুন- https://justpaste.it/kajenamarahban
ডাউনলোড করুন
بسم الله الرحمن الرحيم، الحمد للَّه رب العالمين، والصلاة والسلام على رسوله الكريم
পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্মানিত মুসলমান ভাইয়েরা! আস-সালামু আলাইকুম!
আজ মুসলিম উম্মাহ সর্বত্রই জুলুম-নির্যাতন, নিপীড়ন-নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছে। মিয়ানমারের মুসলিমদের উপর কুফফার কর্তৃক নির্যাতনের খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে। সেখানে অসংখ্য মুসলমানকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। জলন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। লাখ লাখ মুসলমানকে বাড়ি-ঘর থেকে বের করে সমুদ্রের দিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বাড়ি-ঘরে। এটা কোনো নতুন খবর নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববাসী বার্মার বৌদ্ধদের বর্বর হিংস্র নির্যাতনের চিত্র দেখে আসছে। এ সকল মুসলমানদের অপরাধ কী? তাদের অপরাধ শুধু এতটুকু যে, তারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছে এবং সেই উম্মতের অংশ হিসেবে নিজেদেরকে প্রকাশ করছে; যার সাথে আমি আর আপনি সম্পৃক্ত।
প্রিয় ভাইয়েরা! মিয়ানমার, কাশ্মির, এবং সমগ্র বিশ্বের উপর চলমান নির্যাতন বন্ধের জন্য আমি কোনো তাগুতী শক্তির নিকট আবেদন করবো না। কেননা এসব তাগুতী শক্তিগুলো সবাই একযোগে মুসলমানদের উপর জুলুম করে থাকে। বরং আমাকে আর আপনাকেই এর সমাধান করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া উচিত যে একত্ববাদে বিশ্বাসী।
আমরা যুদ্ধ করি বা না করি, প্রস্তুতি গ্রহণ করি বা না করি। আমাদেরকে মৃত্যুর পরে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে। তখন মাজলুম উম্মাহর রক্তাক্ত দৃশ্যগুলো এ সাক্ষ্য দেবে যে, তোমাদের নিকট সকল খবর পৌঁছেছে। তোমরা স্বচক্ষে তা প্রত্যক্ষ করেছো। তখন তোমরা কী করেছো? তোমরা কি সেই দায়িত্ব পালন করেছো, যার জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে? নাকি শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলে? আর দুনিয়ার অন্ধ গোলামে পরিণত হয়েছিলে?
আজ আমাদের দ্বীন পরাজিত কেন? নির্যাতিত মুসলমানরা জুলুমের শিকার কেন? এর কারণ কী? আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র হাদীসের স্পষ্ট ভাষ্য থেকে এর কারণ জানা যায়। তা হলো, দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে দিয়ে পার্থিব আকর্ষণীয় বস্তু নিয়ে ব্যস্ত থাকা। এ দুনিয়াদারির আলামত হলো জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ কে ছেড়ে দেওয়া।
প্রিয় ভাইয়েরা! আমরা যদি দুনিয়ার মোহে পড়ে যাই, নিজেদের সংশোধন না করি। উম্মাহর এ দুরবস্থার কারণ হিসাবে অন্য কিছুকে নির্ধারণ করি; তাহলে অবশ্যই আমরা বাস্তবতাকে অস্বীকার করলাম। আর আল্লাহ এর জন্য আমাদের পাকড়াও করবেন।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
“(হে নবী! মুমিনদেরকে) বলুন, তোমাদের কাছে যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের খান্দান, তোমাদের সেই সম্পদ; যা তোমরা অর্জন করেছো, তোমাদের সেই ব্যবসা; যার মন্দা পড়ার তোমরা আশঙ্কা করো এবং বসবাসের সেই ঘর; যা তোমরা ভালোবাস, এগুলো যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ থেকে বেশি প্রিয় হয়; তাহলে তোমরা আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা করো। আর আল্লাহ তাআলা অবাধ্য সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করেন না। -সূরা তাওবা: ২৪
আল্লাহ তাআলা বলেন, فتربصوا حتي ياتي الله بامره আল্লাহর নির্দেশ (শাস্তি) আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।”
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ان الله لا يحب الظالمين অর্থাৎ আল্লাহ জালেমদেরকে পছন্দ করেন না। জিহাদের উপর পার্থিব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া জুলুম। এমন জুলুমকারী জালেমকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ، وَتَرَكْتُمْ الْجِهَادَ، سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ
“যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে সুদি লেনদেন করবে, গরুর লেজ ধরে রাখবে, কৃষিকাজে সন্তুষ্ট থাকবে, জিহাদ পরিত্যাগ করবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেবেন। আর তোমাদের উপর থেকে এ লাঞ্ছনা দূর করবেন না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের দ্বীনের দিকে (অর্থাৎ কিতালের দিকে) ফিরে না আসো।” -আবু দাউদ: ৩৪৬২, মুসনাদে আহমাদ: ৪৯৮৭
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
يُوشِكُ الْأُمَمُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ كَمَا تَدَاعَى الْأَكَلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا. فَقَالَ قَائِلٌ: وَمِنْ قِلَّةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: بَلْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ، وَلَكِنَّكُمْ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ، وَلَيَنْزِعَنَّ اللَّهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَةَ مِنْكُمْ، وَلَيَقْذِفَنَّ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمُ الْوَهْنَ. فَقَالَ قَائِلٌ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا الْوَهْنُ؟ قَالَ : حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ وفي رواية حب الدنيا وكراهيتكم القتال
“অচিরেই তোমাদের বিরুদ্ধে বিধর্মীরা এমনভাবে একে অপরকে ডাকবে, যেমনিভাবে আহার গ্রহণকারী ব্যক্তিরা খাবারের পাত্রের দিকে একে অপরকে ডাকে। অতঃপর এক ব্যক্তি বললো, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বললেন, বরং সেদিন তোমরা সংখ্যায় অনেক হবে; কিন্তু তোমরা হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে ওয়াহান ঢেলে দেবেন। অতঃপর এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘ওয়াহান’ কী? তিনি বললেন, দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।” -আবু দাউদ: ৪২৯৭
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, “দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও কিতালকে অপছন্দ করা।”
প্রিয় ভাইয়েরা! আজ ইসলাম ও মুসলিমদের দুর্দিনে আমাদের শরয়ী দায়িত্ব কী?
এ বিষয়ে তো কোনো চিন্তা-ফিকিরই করা হয় না। আলোচনা তো দূরের বিষয়। অথচ অন্যান্য ইলমী বিষয়ের আলোচনা ঠিকই হয়ে থাকে। এ আলোচনা হবেই বা কেন?
কারণ আমরা তো নিজ স্বার্থ আর পার্থিব জীবন নিয়েই ব্যস্ত থাকি। যদি কোথাও অন্য বিষয়ের আলোচনা বাদ দিয়ে জিহাদের আলোচনা করতে বলা হয়। তখন দুনিয়ার ভালোবাসা আর মৃত্যুর ভয় তাদের থেকে স্পষ্টরূপে প্রকাশ পায়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতি রহম করুন। এবং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন।
হে প্রিয় ভাইয়েরা! আমাদের অবস্থা তো হলো আমরা চাই ইসলাম বিজয়ী হোক, আর কুফর পরাজিত হোক। অথচ এর বিনিময়ে আমরা নিজেদের জান-মাল কোরবান করতে প্রস্তুত নই।
ঘর-বাড়ি, সন্তান-সন্তুতি কোরবান করা তো দূরের বিষয়। এমনকি দৈনন্দিন জীবনের সামান্য কোরবানি পর্যন্ত আমাদের সহ্য হয় না।
আর বাহ্যিকভাবে এটাই গণতন্ত্রের একমাত্র চাওয়া। যার ফলে দ্বীনের মূলনীতিসমূহের ব্যাপারেও কুফফারদের সাথে সমঝোতা করা হয় এবং তাগুতী শক্তির কাছে নিরাপত্তা ভিক্ষা চাওয়া হয়। এ দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো, জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বাস্তবতাকে অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা থেকে বাঁচার জন্য অনেক পদ্ধতির দিকেই আহবান করা হয়; কিন্তু জিহাদ হলো এমন একটি পথ, যা বাস্তবিকপক্ষে লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি দেয়।
অথচ আজ আমরা সেই ইবাদত থেকে পলায়ন করছি, যাকে আল্লাহ তাআলা كتب عليكم القتال বলে ফরয করেছেন। এটাই বাস্তবতা যে, জিহাদের মাঝেই দ্বীনের হেফাজত রয়েছে। উম্মাহর ইজ্জত, সম্মান, সহায়তা ও নিরাপত্তা জিহাদের মধ্যেই নিহিত আছে। কুরআনের আয়াত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ণ জীবন জিহাদের ফরজিয়্যাত ও গুরুত্ব বর্ননা করে।
আমার প্রিয় ভাইগণ! সমগ্র বিশ্বের মাজলুম মুসলমানদের সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য।
আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তোষ থেকে বাঁচার একটিই পথ। আর এটি সুস্পষ্ট ও সরল পথ। এটি আল্লাহর সামনে বিনয়ী হওয়ার পথ। তাই দুনিয়ার গোলামি ছেড়ে দিয়ে খালেছ ইবাদত করা উচিত এবং পূর্ণ জীবন আল্লাহর শরীয়াহ মোতাবেক আমল করা উচিত।
বর্তমানে শরীয়তের দাবি হলো, ময়দানে জিহাদে অবতীর্ণ হওয়া। জিহাদি দলের সাথে মিলিত হওয়া। এমন দলের সাথে মিলিত হতে হবে, যারা জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহকে কুফফারদের গোলামি ও প্রশাসনের অনুমতির সাথে শর্তারোপ করে না। আমরা যদি এমন মুজাহিদদের সাহায্য-সহায়তা করি; তাহলে মাজলুমদের সাহায্য করা হবে। আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়িত হবে। আর জিহাদের উদ্দেশ্য হতে হবে শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ। অথচ আমরা দাওয়াত ও জিহাদের এই নববী মানহাযের বিপরীত অন্য সকল গায়রে শরয়ী পথসমূহকে কল্যাণকর মনে করি।
প্রিয় ভাইয়েরা!
ইন’শাআল্লাহ। আল্লাহর সাহায্য বেশি দূরে নয়। আমি আরজ করছি যে, আমরা ও আপনারা দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য। আর বিজয় ও ফলাফল আল্লাহর হাতে। সুতরাং আমরা যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করি; তাহলে রাস্তা যতই সংকীর্ণ বা প্রশস্ত হোক না কেন, সর্বক্ষেত্রেই সফলতা আমাদের পদচুম্বন করবে। ইন’শাআল্লাহ।
জিহাদে সফলতা অর্জনের জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত ও শরীয়তের একনিষ্ঠ অনুসরণ পূর্ব শর্ত। এক্ষেত্রে আমাদেরকে সামগ্রিকভাবে দলে দলে দাওয়াত ও জিহাদের সাথে মিলিত হতে হবে; তাহলে মিয়ানমার কেন সমগ্র বিশ্বে ন্যায়পরায়ণতার বরকতময় সূর্য অচিরেই উদিত হবে। এ কাজ মিয়ানমারের মুসলমান ও সারা বিশ্বের মাজলুমদের কী সাহায্য করতে পারে? ও সাহায্যের ধরন কিরূপ হতে পারে। এ বিষয়ে আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে, ইন’শাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের মাজলুম জাতিকে সাহায্য করুন। এবং সে পথে পরিচালিত করুন, যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। যে পথে মাজলুমের সাহায্য হয়। আমীন!
কাজে নামার আহ্বান
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
(আস সাহাব মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত ও আন নাসর মিডিয়া কর্তৃক বাংলায় অনুদিত)
অনলাইনে পড়ুন- https://justpaste.it/kajenamarahban
ডাউনলোড করুন
بسم الله الرحمن الرحيم، الحمد للَّه رب العالمين، والصلاة والسلام على رسوله الكريم
পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্মানিত মুসলমান ভাইয়েরা! আস-সালামু আলাইকুম!
আজ মুসলিম উম্মাহ সর্বত্রই জুলুম-নির্যাতন, নিপীড়ন-নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছে। মিয়ানমারের মুসলিমদের উপর কুফফার কর্তৃক নির্যাতনের খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে। সেখানে অসংখ্য মুসলমানকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। জলন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। লাখ লাখ মুসলমানকে বাড়ি-ঘর থেকে বের করে সমুদ্রের দিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বাড়ি-ঘরে। এটা কোনো নতুন খবর নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববাসী বার্মার বৌদ্ধদের বর্বর হিংস্র নির্যাতনের চিত্র দেখে আসছে। এ সকল মুসলমানদের অপরাধ কী? তাদের অপরাধ শুধু এতটুকু যে, তারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছে এবং সেই উম্মতের অংশ হিসেবে নিজেদেরকে প্রকাশ করছে; যার সাথে আমি আর আপনি সম্পৃক্ত।
প্রিয় ভাইয়েরা! মিয়ানমার, কাশ্মির, এবং সমগ্র বিশ্বের উপর চলমান নির্যাতন বন্ধের জন্য আমি কোনো তাগুতী শক্তির নিকট আবেদন করবো না। কেননা এসব তাগুতী শক্তিগুলো সবাই একযোগে মুসলমানদের উপর জুলুম করে থাকে। বরং আমাকে আর আপনাকেই এর সমাধান করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া উচিত যে একত্ববাদে বিশ্বাসী।
আমরা যুদ্ধ করি বা না করি, প্রস্তুতি গ্রহণ করি বা না করি। আমাদেরকে মৃত্যুর পরে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে। তখন মাজলুম উম্মাহর রক্তাক্ত দৃশ্যগুলো এ সাক্ষ্য দেবে যে, তোমাদের নিকট সকল খবর পৌঁছেছে। তোমরা স্বচক্ষে তা প্রত্যক্ষ করেছো। তখন তোমরা কী করেছো? তোমরা কি সেই দায়িত্ব পালন করেছো, যার জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে? নাকি শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলে? আর দুনিয়ার অন্ধ গোলামে পরিণত হয়েছিলে?
আজ আমাদের দ্বীন পরাজিত কেন? নির্যাতিত মুসলমানরা জুলুমের শিকার কেন? এর কারণ কী? আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র হাদীসের স্পষ্ট ভাষ্য থেকে এর কারণ জানা যায়। তা হলো, দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে দিয়ে পার্থিব আকর্ষণীয় বস্তু নিয়ে ব্যস্ত থাকা। এ দুনিয়াদারির আলামত হলো জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ কে ছেড়ে দেওয়া।
প্রিয় ভাইয়েরা! আমরা যদি দুনিয়ার মোহে পড়ে যাই, নিজেদের সংশোধন না করি। উম্মাহর এ দুরবস্থার কারণ হিসাবে অন্য কিছুকে নির্ধারণ করি; তাহলে অবশ্যই আমরা বাস্তবতাকে অস্বীকার করলাম। আর আল্লাহ এর জন্য আমাদের পাকড়াও করবেন।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
“(হে নবী! মুমিনদেরকে) বলুন, তোমাদের কাছে যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের খান্দান, তোমাদের সেই সম্পদ; যা তোমরা অর্জন করেছো, তোমাদের সেই ব্যবসা; যার মন্দা পড়ার তোমরা আশঙ্কা করো এবং বসবাসের সেই ঘর; যা তোমরা ভালোবাস, এগুলো যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ থেকে বেশি প্রিয় হয়; তাহলে তোমরা আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা করো। আর আল্লাহ তাআলা অবাধ্য সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করেন না। -সূরা তাওবা: ২৪
আল্লাহ তাআলা বলেন, فتربصوا حتي ياتي الله بامره আল্লাহর নির্দেশ (শাস্তি) আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।”
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ان الله لا يحب الظالمين অর্থাৎ আল্লাহ জালেমদেরকে পছন্দ করেন না। জিহাদের উপর পার্থিব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া জুলুম। এমন জুলুমকারী জালেমকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ، وَتَرَكْتُمْ الْجِهَادَ، سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ
“যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে সুদি লেনদেন করবে, গরুর লেজ ধরে রাখবে, কৃষিকাজে সন্তুষ্ট থাকবে, জিহাদ পরিত্যাগ করবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেবেন। আর তোমাদের উপর থেকে এ লাঞ্ছনা দূর করবেন না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের দ্বীনের দিকে (অর্থাৎ কিতালের দিকে) ফিরে না আসো।” -আবু দাউদ: ৩৪৬২, মুসনাদে আহমাদ: ৪৯৮৭
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
يُوشِكُ الْأُمَمُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ كَمَا تَدَاعَى الْأَكَلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا. فَقَالَ قَائِلٌ: وَمِنْ قِلَّةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: بَلْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ، وَلَكِنَّكُمْ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ، وَلَيَنْزِعَنَّ اللَّهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَةَ مِنْكُمْ، وَلَيَقْذِفَنَّ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمُ الْوَهْنَ. فَقَالَ قَائِلٌ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا الْوَهْنُ؟ قَالَ : حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ وفي رواية حب الدنيا وكراهيتكم القتال
“অচিরেই তোমাদের বিরুদ্ধে বিধর্মীরা এমনভাবে একে অপরকে ডাকবে, যেমনিভাবে আহার গ্রহণকারী ব্যক্তিরা খাবারের পাত্রের দিকে একে অপরকে ডাকে। অতঃপর এক ব্যক্তি বললো, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বললেন, বরং সেদিন তোমরা সংখ্যায় অনেক হবে; কিন্তু তোমরা হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে ওয়াহান ঢেলে দেবেন। অতঃপর এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘ওয়াহান’ কী? তিনি বললেন, দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।” -আবু দাউদ: ৪২৯৭
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, “দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও কিতালকে অপছন্দ করা।”
প্রিয় ভাইয়েরা! আজ ইসলাম ও মুসলিমদের দুর্দিনে আমাদের শরয়ী দায়িত্ব কী?
এ বিষয়ে তো কোনো চিন্তা-ফিকিরই করা হয় না। আলোচনা তো দূরের বিষয়। অথচ অন্যান্য ইলমী বিষয়ের আলোচনা ঠিকই হয়ে থাকে। এ আলোচনা হবেই বা কেন?
কারণ আমরা তো নিজ স্বার্থ আর পার্থিব জীবন নিয়েই ব্যস্ত থাকি। যদি কোথাও অন্য বিষয়ের আলোচনা বাদ দিয়ে জিহাদের আলোচনা করতে বলা হয়। তখন দুনিয়ার ভালোবাসা আর মৃত্যুর ভয় তাদের থেকে স্পষ্টরূপে প্রকাশ পায়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতি রহম করুন। এবং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন।
হে প্রিয় ভাইয়েরা! আমাদের অবস্থা তো হলো আমরা চাই ইসলাম বিজয়ী হোক, আর কুফর পরাজিত হোক। অথচ এর বিনিময়ে আমরা নিজেদের জান-মাল কোরবান করতে প্রস্তুত নই।
ঘর-বাড়ি, সন্তান-সন্তুতি কোরবান করা তো দূরের বিষয়। এমনকি দৈনন্দিন জীবনের সামান্য কোরবানি পর্যন্ত আমাদের সহ্য হয় না।
আর বাহ্যিকভাবে এটাই গণতন্ত্রের একমাত্র চাওয়া। যার ফলে দ্বীনের মূলনীতিসমূহের ব্যাপারেও কুফফারদের সাথে সমঝোতা করা হয় এবং তাগুতী শক্তির কাছে নিরাপত্তা ভিক্ষা চাওয়া হয়। এ দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো, জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বাস্তবতাকে অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা থেকে বাঁচার জন্য অনেক পদ্ধতির দিকেই আহবান করা হয়; কিন্তু জিহাদ হলো এমন একটি পথ, যা বাস্তবিকপক্ষে লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি দেয়।
অথচ আজ আমরা সেই ইবাদত থেকে পলায়ন করছি, যাকে আল্লাহ তাআলা كتب عليكم القتال বলে ফরয করেছেন। এটাই বাস্তবতা যে, জিহাদের মাঝেই দ্বীনের হেফাজত রয়েছে। উম্মাহর ইজ্জত, সম্মান, সহায়তা ও নিরাপত্তা জিহাদের মধ্যেই নিহিত আছে। কুরআনের আয়াত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ণ জীবন জিহাদের ফরজিয়্যাত ও গুরুত্ব বর্ননা করে।
আমার প্রিয় ভাইগণ! সমগ্র বিশ্বের মাজলুম মুসলমানদের সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য।
আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তোষ থেকে বাঁচার একটিই পথ। আর এটি সুস্পষ্ট ও সরল পথ। এটি আল্লাহর সামনে বিনয়ী হওয়ার পথ। তাই দুনিয়ার গোলামি ছেড়ে দিয়ে খালেছ ইবাদত করা উচিত এবং পূর্ণ জীবন আল্লাহর শরীয়াহ মোতাবেক আমল করা উচিত।
বর্তমানে শরীয়তের দাবি হলো, ময়দানে জিহাদে অবতীর্ণ হওয়া। জিহাদি দলের সাথে মিলিত হওয়া। এমন দলের সাথে মিলিত হতে হবে, যারা জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহকে কুফফারদের গোলামি ও প্রশাসনের অনুমতির সাথে শর্তারোপ করে না। আমরা যদি এমন মুজাহিদদের সাহায্য-সহায়তা করি; তাহলে মাজলুমদের সাহায্য করা হবে। আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়িত হবে। আর জিহাদের উদ্দেশ্য হতে হবে শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ। অথচ আমরা দাওয়াত ও জিহাদের এই নববী মানহাযের বিপরীত অন্য সকল গায়রে শরয়ী পথসমূহকে কল্যাণকর মনে করি।
প্রিয় ভাইয়েরা!
ইন’শাআল্লাহ। আল্লাহর সাহায্য বেশি দূরে নয়। আমি আরজ করছি যে, আমরা ও আপনারা দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য। আর বিজয় ও ফলাফল আল্লাহর হাতে। সুতরাং আমরা যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করি; তাহলে রাস্তা যতই সংকীর্ণ বা প্রশস্ত হোক না কেন, সর্বক্ষেত্রেই সফলতা আমাদের পদচুম্বন করবে। ইন’শাআল্লাহ।
জিহাদে সফলতা অর্জনের জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত ও শরীয়তের একনিষ্ঠ অনুসরণ পূর্ব শর্ত। এক্ষেত্রে আমাদেরকে সামগ্রিকভাবে দলে দলে দাওয়াত ও জিহাদের সাথে মিলিত হতে হবে; তাহলে মিয়ানমার কেন সমগ্র বিশ্বে ন্যায়পরায়ণতার বরকতময় সূর্য অচিরেই উদিত হবে। এ কাজ মিয়ানমারের মুসলমান ও সারা বিশ্বের মাজলুমদের কী সাহায্য করতে পারে? ও সাহায্যের ধরন কিরূপ হতে পারে। এ বিষয়ে আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে, ইন’শাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের মাজলুম জাতিকে সাহায্য করুন। এবং সে পথে পরিচালিত করুন, যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। যে পথে মাজলুমের সাহায্য হয়। আমীন!
Comment