মুখ থুবড়ে পড়ে আছে উম্মাহ, করণীয় কী?
আজ পুরো বিশ্বে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মুসলিম উম্মাহ, ক্রুসেডারদের আঘাতে যন্ত্রণাদগ্ধ উম্মাহর চিৎকার-কান্না, প্রার্থনার বিনীতভঙ্গীই আজ হয়ে উঠেছে এই উম্মাহর প্রতিদিনের চিত্র। চলছে বিশ্বময় তাদের উপর গণহত্যা। তাদের আর্তনাদ শোনার মত যেন কেউ নেই!
পবিত্র জাজিরাতুল আরবজুড়ে উৎপেতে বসে আছে ক্রুসেডারদের কোলে পালিত মরুভাল্লুকগুলো, ক্রুসেডাররা নিজেরাও উড়ে এসে ঝেঁকে বসেছে এই ভূমিতে হিংস্র শকুনের রূপে, শকুনের দলেরা ঠোকরে ঠোকরে খাচ্ছে এই উম্মাহ ও তাদের জীবন্ত বিবেক-বোধকে। নিজেদের তৈরি নিকৃষ্ট আইনকে চাপিয়ে দিচ্ছে, মরুভাল্লুকদের দ্বারা তৈরি করা হচ্ছে সমাজ ধ্বংসের নীলনকশা, আধুনিকতার নামে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অপসংস্কৃতি ও বেহায়াপনা। নারী স্বাধীনতা আর সমান অধিকারের আড়ালে করা হচ্ছে নারীকে উলঙ্গ ও ব্যবসার পণ্য।
সমগ্র আরবজুড়ে আজ একই চিত্র। ক্রুসেডারদেরকে তাদের ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করছে আরবীয় দালাল শাসকগোষ্ঠী। আর, সেই সুযোগে কোথাও মুসলিমদের ইমানের উপর আঘাত হেনেছে কাফেররা, আবার কোথাও আঘাত হেনেছে মুসলিমদের ঘাড়ে, মুসলিমদের বাড়ি-ঘরে। ইরাক, শাম, ইয়ামান, সিনাই, আল-কুদসের ভূমিসহ প্রতিটি মুসলিম ভূমিই আজ উম্মাহর রক্তে রঞ্জিত, মালিক নিজঘরে আজ করুণার ভিখারী। চারদিক থেকে ভেসে আসছে ধর্ষিতা বোনের চিৎকার, শিশুদের কান্নার আওয়াজ।
হাদিসে বর্ণিত শামের বরকতময় ভূমিও আজ ক্ষতবিক্ষত। ক্রুসেডার আমেরিকা, রাশিয়া ও মুসলিম দাবিদার মুরতাদ শিয়ারা অগ্নিবোমা, বিষাক্ত রাসায়নিক বোমা নিক্ষেপ করে উত্তপ্ত করে তুলেছে এই ভূমিকে, পুড়ছে গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর। মাটিতে যেন মিশে গেছে শহরের আকাশ চুম্বী উঁচু উঁচু দালানগুলো, যার নিচে প্রাণ যাচ্ছে শত শত নিষ্পাপ ছোট্ট ছোট্ট আমাদের ভাই-বোনদের, রক্ষা পাচ্ছেননা বৃদ্ধ-যুবক কেউই। ওদেশের বাতাসে মৃতদেহ ও বারুদের বিষাক্ত গন্ধ মিশে আছে।
যাদেরকে আজ সুলতানসহ নানা উপাধিতে ভূষিত করা হচ্ছে, সীমান্তে এরা যেন একেকটা পুতুল, নিজ সৈন্যের চেকপোস্টের সামনে দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে দখলদাররা, তখন যেন এই মানব মূর্তিগুলো একটি মাছিকে তাড়াতেও সক্ষম নয়। আসলে, তাদেরকে তাদের দুনিয়ার প্রভুরা বারণ করছে।
যোদ্ধা নবীর উম্মত ও বিশ্বজয়ী বীর মুজাহিদদের উত্তরসূরী ও তাদের বংশধরদের আজ এ কেমন করুণ অবস্থা! আজ কি তাদের উত্তরসুরীদের মধ্যে এমন লোকের এতই অভাব, যারা ভূ-আরবসহ পূর্ব থেকে পশ্চিম উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু সীমান্তকে নিজেদের সাহস ও স্বপ্নের ভেতর দিয়ে বিজয় করবে, এই পৃথিবী আবারো হয়ে উঠবে ইসলামের আলোয় আলোকিত। খেলাফতের মুক্তাদানা আবারো বিচ্ছুরণ ছড়াবে এই পৃথিবীতে। যারা দামেস্কের আল-গুতাকে তৈরি করবে নিজেদের সামরিক হেডকোয়ার্টার। যার সেক্টর তৈরি করা হবে ইয়ামান, ইরাক ও হিন্দের এই ভূমীতে। ভূ-আরবকে করে তুলবে মুসলিম উম্মাহর প্রাণকেন্দ্র। উম্মাহ কি পারবেনা মরুশুষ্কতার বুকে বৃষ্টির আশা দেখাতে?
চেয়ে দেখুন উম্মাহর ছোট্ট ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুদের দিকে, শাম, ইরাক ও আফগানিস্তানে ক্রুসেডার ও মুরতাদদের বোমার আঘাতে তাদের ছোট্ট হাড় থেকে আলাদা হয়ে খসে খসে ভাঁজে ভাঁজে ঝুলে পড়া মাংস ও ত্বককে, যারা নাকি আজ তাদের মাথা তোলার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে, চোখ খুলে পৃথিবীর আলো বাতাস ও তার সবুজতাকে দেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, যেই শিশুটি আম্মু আম্মু বলে ডাক ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতোনা সেও নিশ্চুপ হয়ে গেছে। স্বরণ আছে কি সাগরপাড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ছোট্ট আইলানদের মৃতদেহের কথা?
আফ্রিকা ও ইয়ামানে আমাদের ছোট্ট শিশুদের দেখুন, ক্রুসেডার ও স্বদেশীয় মরুভাল্লুকদের দেওয়া অবরোধ ও নিজেদের স্বার্থের বলিতে পরিণত হয়ে খাদ্যের অভাবে যাদের দেহগুলো শুষ্ক হয়ে গেছে, পা ও পায়ের পাতায় পানি নেমে অপুষ্টিতে ফুলে আছে। তাদের মায়েদের হাতও নিস্তেজ, তারাও খাদ্যের অভাবে নিজ দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দুধ পান করাতে পারছেন না। তাকিয়ে দেখুন পুষ্টির অভাবে শিশুরা অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিংবা তাদের এমন ঘা হচ্ছে যা সেরে ওঠার নয়। শিশুদের মা-বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখুন, যারা জানে যে তাদের সন্তান আর কখনো সুস্থ হয়ে উঠবে না। আর সবচেয়ে কঠিন দৃশ্যটি দেখুন গত রাতে যে শিশুটি মারা গেছে আর মৃতদেহ এখনো পড়ে আছে সেখানেই, তাকে তুলে নেওয়ার যে কেউ নেই!’
উপমহাদেশের ভারতে বসবাসরত মুসলিমদের কথাগুলো স্বরণ করুন, যাদেরকে গরু জবাই করা, গরুর গোস্ত বহন করা কিংবা তা খাওয়ার মত হালাল কাজের জন্য নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে চলছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় মালাউনরা, স্বরণ করুন গুজরাটের মুসলিম গণহত্যার কথাকে। চোখের সামনে সারাবিশ্বের সাথে কাশ্মীরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া এবং সেখানে পূর্ব থেকেই চালানো গণহত্যার কথা তো ভুলে যাওয়ার নয়। ওখানে এখনো ৭ লাখ সেনাকে মোতায়েন করে রেখেছে ভারতীয় মালাউন সরকার, কেউ জানেনা সত্যিকারে সেখানে কী হচ্ছে। ভুলে যাওয়ার কথা নয় বাবরি মসজিদের ইতিহাস ও তা নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে এবং মালাউনদের মানবরচিত আদালতের একপাক্ষিক রায়কে।
নাফের স্রোতে ভাসতে থাকা রোহিঙ্গা মুসলিমদের কীভাবে ভুলে যাওয়া যায়? ভুলে যাওয়া যায় না ঐ শিশুকে, যার মা প্রচণ্ড শীতে নাফের স্রোতে ভাসতে ভাসতে তাকে জন্ম দিয়েছিল! নিজ দেশের তাওহিদী জনতাকে রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যা করার মত ঘটনাগুলোও কি ভুলে যাওয়া যায়? কীভাবে ভুলে থাকতে পারেন ভোলার তাওহিদী জনতার উপর গুলি চালানোর ঘটনাকে! এমন ঘটনাতো এদেশে একটি নয়, একের পর এক ঘটেই যাচ্ছে। কীভাবে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন, যখন সীমান্তে প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে এদেশের মুসলিমদেরকে! তবে, কি ভারতের দালাল সরকারের পানে এখনো আশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন?
কি নিদারুণ এক অবস্থা! এত কিছুর পরেও আমরা কাদেরকে নিজেদের মুক্তিদাতা ভেবে বসে আছি, আমরা ভাবছি তুর্কির কথিত সুলতান আমাদের সহায়তা করবে, অথচ সে নিজেই আফ্রিকা ও আফগানিস্তানে মুসলিম হত্যায় নিজ দেশের অর্থ ও সৈন্য দিয়ে ক্রুসেডার ও মুরতাদ বাহিনীকে সহায়তা করছে, যার বাহিনী সিরিয়ায় অবস্থান করা সত্ত্বেও মুসলিমদের স্বার্থে একটি বুলেটও ছোড়ার প্রয়োজন অনুভব করেনা!
আমরা তাকিয়ে আছি ১৯ শতকে আফগানিস্তানসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে গণহত্যাকারী ও বর্তমানে সিরিয়াকে ধ্বংসস্তুপে পরিণতকারী কুফ্ফার রাশিয়ার দিকে, তাকিয়ে আছি ক্রুসেডার আমেরিকা ও তাদেরই স্বার্থ রক্ষার্থে ঘটিত বিভিন্ন কুফ্ফার সংঘের দিকে অথচ যাদের হাত এখনো রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া, ইয়ামান, আফগানিস্তান ও আফ্রিকার লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ নেয়ার দ্বারা।
আমরা আল-কুদুসকে ইহুদীদের নাপাক দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখি, কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমাদের কর্মপন্থা কী, আমাদের প্রস্তুতি কী? সর্বোচ্চ মুক্তির দাবি নিয়ে যাই ঐসকল সংঘ ও দেশের কাছে যারা নিজেরাই আল-কুদুসের ভূমিকে সন্ত্রাসী ইহুদীদের মজবুত ঘাঁটিতে পরিণত করতে সবচাইতে বেশি সাহায্য করছে, যারা আল-কুদুসকে ইহুদীদের রাজধানী বলে ঘোষণা দিচ্ছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি ফিলিস্তিনের এক বিগত জায়গার উপরেও ইহুদীদের অধিকার নেই, সেখানে কীভাবে ইসরাঈল নামক একটি অবৈধ রাষ্ট্রের মানচিত্র তৈরি হয়? আল-কুদুসের ভূমি ভাগ-বাটোয়ারাতে সমাধান আসবে না— এ সত্য আমাদেরকে বুঝতে হবে। আর, সমাধান হিসেবে বেছে নিতে হবে সেই পথ, যে পথ গ্রহণ করেছেন সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে শুরু করে, গাজি সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রহিমাহুল্লাহ এর মতো উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানরা।
সর্বশেষ আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় বার্তার কিছু অংশ বলে যাচ্ছি- “আমরা এক জাতি, আমাদের প্রভু এক, কাবা এক, পথ পদর্শনকারী কিতাব এক, আমাদের কালিমা এক, আমাদের শত্রুও এক, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সাথে ক্রুসেডারদের শত্রুতা পুরাতন এবং এর কোন শেষ নেই, তা কিয়ামতের উত্থান পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।
আজ পঙ্গপালের মতো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ক্রুসেডাররা। তারা আমাদের জাতিকে টার্গেট করে হামলা করছে। তাই আসুন আমরা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে একাধিক ঘাঁটি এবং মোর্চায় এই জায়নবাদী ক্রুসেডার শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়াই। তারা যেমন আমাদের জাতিকে টার্গেট করছে, তেমনি এখন মু’মিনদের জন্যও আবশ্যক হলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্রুসেডারদের উপর আঘাত হানা।
হে আমাদের ভাইয়েরা, প্রত্যেক চক্ষুষ্মানের সামনে রাস্তা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কেবল ইয়াহুদিরাই আপনাদেরকে আপনাদের ঘর থেকে বের করে দেয়নি এবং বের করার ব্যাপারে সাহায্য করেনি, বরং এই কাজে ইয়াহুদীদের দোসর ও মুরতাদরাও অংশ নিয়েছে।
নিশ্চয়ই আমাদের কুদুসকে ফিরিয়ে আনা যা আপনাদেরও কুদুস, আমাদের ঘর সমূহকে ফিরিয়ে আনা যা আপনাদেরও ঘর— শুধু একটি আন্দোলন অথবা একটা দলের পক্ষে সম্ভব নয়। বরং এর জন্য আবশ্যক এক উম্মাহর মানসিকতা জাগিয়ে তোলা এবং তা প্রতিষ্ঠা করা। যাতে পুরো উম্মাহ তার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক ঘাঁটিতে যুদ্ধ করতে পারে। প্রত্যেক দেশে ক্রুসেডারদের উপর আক্রমণ করতে পারে। হে আমাদের ভাইয়েরা, আমরা আপনাদের সাহায্যকারী। তাই আপনারাও আমাদের সাহায্যকারী হয়ে যান। আমরা আপনাদের সাথে একত্রিত হয়েছি একটি ফরজকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সুতরাং আপনারা কোনো নফল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবেন না। আমরা ও আপনারা ইসলামকে উঁচু করতে চাই। সুতরাং আমরা সেই হাতগুলোকে ভেঙ্গে দিবো যা ইসলামকে নিচু করতে চায়।”
লেখক: ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/02/06/32648/
আজ পুরো বিশ্বে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মুসলিম উম্মাহ, ক্রুসেডারদের আঘাতে যন্ত্রণাদগ্ধ উম্মাহর চিৎকার-কান্না, প্রার্থনার বিনীতভঙ্গীই আজ হয়ে উঠেছে এই উম্মাহর প্রতিদিনের চিত্র। চলছে বিশ্বময় তাদের উপর গণহত্যা। তাদের আর্তনাদ শোনার মত যেন কেউ নেই!
পবিত্র জাজিরাতুল আরবজুড়ে উৎপেতে বসে আছে ক্রুসেডারদের কোলে পালিত মরুভাল্লুকগুলো, ক্রুসেডাররা নিজেরাও উড়ে এসে ঝেঁকে বসেছে এই ভূমিতে হিংস্র শকুনের রূপে, শকুনের দলেরা ঠোকরে ঠোকরে খাচ্ছে এই উম্মাহ ও তাদের জীবন্ত বিবেক-বোধকে। নিজেদের তৈরি নিকৃষ্ট আইনকে চাপিয়ে দিচ্ছে, মরুভাল্লুকদের দ্বারা তৈরি করা হচ্ছে সমাজ ধ্বংসের নীলনকশা, আধুনিকতার নামে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অপসংস্কৃতি ও বেহায়াপনা। নারী স্বাধীনতা আর সমান অধিকারের আড়ালে করা হচ্ছে নারীকে উলঙ্গ ও ব্যবসার পণ্য।
সমগ্র আরবজুড়ে আজ একই চিত্র। ক্রুসেডারদেরকে তাদের ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করছে আরবীয় দালাল শাসকগোষ্ঠী। আর, সেই সুযোগে কোথাও মুসলিমদের ইমানের উপর আঘাত হেনেছে কাফেররা, আবার কোথাও আঘাত হেনেছে মুসলিমদের ঘাড়ে, মুসলিমদের বাড়ি-ঘরে। ইরাক, শাম, ইয়ামান, সিনাই, আল-কুদসের ভূমিসহ প্রতিটি মুসলিম ভূমিই আজ উম্মাহর রক্তে রঞ্জিত, মালিক নিজঘরে আজ করুণার ভিখারী। চারদিক থেকে ভেসে আসছে ধর্ষিতা বোনের চিৎকার, শিশুদের কান্নার আওয়াজ।
হাদিসে বর্ণিত শামের বরকতময় ভূমিও আজ ক্ষতবিক্ষত। ক্রুসেডার আমেরিকা, রাশিয়া ও মুসলিম দাবিদার মুরতাদ শিয়ারা অগ্নিবোমা, বিষাক্ত রাসায়নিক বোমা নিক্ষেপ করে উত্তপ্ত করে তুলেছে এই ভূমিকে, পুড়ছে গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর। মাটিতে যেন মিশে গেছে শহরের আকাশ চুম্বী উঁচু উঁচু দালানগুলো, যার নিচে প্রাণ যাচ্ছে শত শত নিষ্পাপ ছোট্ট ছোট্ট আমাদের ভাই-বোনদের, রক্ষা পাচ্ছেননা বৃদ্ধ-যুবক কেউই। ওদেশের বাতাসে মৃতদেহ ও বারুদের বিষাক্ত গন্ধ মিশে আছে।
যাদেরকে আজ সুলতানসহ নানা উপাধিতে ভূষিত করা হচ্ছে, সীমান্তে এরা যেন একেকটা পুতুল, নিজ সৈন্যের চেকপোস্টের সামনে দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে দখলদাররা, তখন যেন এই মানব মূর্তিগুলো একটি মাছিকে তাড়াতেও সক্ষম নয়। আসলে, তাদেরকে তাদের দুনিয়ার প্রভুরা বারণ করছে।
যোদ্ধা নবীর উম্মত ও বিশ্বজয়ী বীর মুজাহিদদের উত্তরসূরী ও তাদের বংশধরদের আজ এ কেমন করুণ অবস্থা! আজ কি তাদের উত্তরসুরীদের মধ্যে এমন লোকের এতই অভাব, যারা ভূ-আরবসহ পূর্ব থেকে পশ্চিম উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু সীমান্তকে নিজেদের সাহস ও স্বপ্নের ভেতর দিয়ে বিজয় করবে, এই পৃথিবী আবারো হয়ে উঠবে ইসলামের আলোয় আলোকিত। খেলাফতের মুক্তাদানা আবারো বিচ্ছুরণ ছড়াবে এই পৃথিবীতে। যারা দামেস্কের আল-গুতাকে তৈরি করবে নিজেদের সামরিক হেডকোয়ার্টার। যার সেক্টর তৈরি করা হবে ইয়ামান, ইরাক ও হিন্দের এই ভূমীতে। ভূ-আরবকে করে তুলবে মুসলিম উম্মাহর প্রাণকেন্দ্র। উম্মাহ কি পারবেনা মরুশুষ্কতার বুকে বৃষ্টির আশা দেখাতে?
চেয়ে দেখুন উম্মাহর ছোট্ট ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুদের দিকে, শাম, ইরাক ও আফগানিস্তানে ক্রুসেডার ও মুরতাদদের বোমার আঘাতে তাদের ছোট্ট হাড় থেকে আলাদা হয়ে খসে খসে ভাঁজে ভাঁজে ঝুলে পড়া মাংস ও ত্বককে, যারা নাকি আজ তাদের মাথা তোলার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে, চোখ খুলে পৃথিবীর আলো বাতাস ও তার সবুজতাকে দেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, যেই শিশুটি আম্মু আম্মু বলে ডাক ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতোনা সেও নিশ্চুপ হয়ে গেছে। স্বরণ আছে কি সাগরপাড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ছোট্ট আইলানদের মৃতদেহের কথা?
আফ্রিকা ও ইয়ামানে আমাদের ছোট্ট শিশুদের দেখুন, ক্রুসেডার ও স্বদেশীয় মরুভাল্লুকদের দেওয়া অবরোধ ও নিজেদের স্বার্থের বলিতে পরিণত হয়ে খাদ্যের অভাবে যাদের দেহগুলো শুষ্ক হয়ে গেছে, পা ও পায়ের পাতায় পানি নেমে অপুষ্টিতে ফুলে আছে। তাদের মায়েদের হাতও নিস্তেজ, তারাও খাদ্যের অভাবে নিজ দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দুধ পান করাতে পারছেন না। তাকিয়ে দেখুন পুষ্টির অভাবে শিশুরা অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিংবা তাদের এমন ঘা হচ্ছে যা সেরে ওঠার নয়। শিশুদের মা-বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখুন, যারা জানে যে তাদের সন্তান আর কখনো সুস্থ হয়ে উঠবে না। আর সবচেয়ে কঠিন দৃশ্যটি দেখুন গত রাতে যে শিশুটি মারা গেছে আর মৃতদেহ এখনো পড়ে আছে সেখানেই, তাকে তুলে নেওয়ার যে কেউ নেই!’
উপমহাদেশের ভারতে বসবাসরত মুসলিমদের কথাগুলো স্বরণ করুন, যাদেরকে গরু জবাই করা, গরুর গোস্ত বহন করা কিংবা তা খাওয়ার মত হালাল কাজের জন্য নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে চলছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় মালাউনরা, স্বরণ করুন গুজরাটের মুসলিম গণহত্যার কথাকে। চোখের সামনে সারাবিশ্বের সাথে কাশ্মীরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া এবং সেখানে পূর্ব থেকেই চালানো গণহত্যার কথা তো ভুলে যাওয়ার নয়। ওখানে এখনো ৭ লাখ সেনাকে মোতায়েন করে রেখেছে ভারতীয় মালাউন সরকার, কেউ জানেনা সত্যিকারে সেখানে কী হচ্ছে। ভুলে যাওয়ার কথা নয় বাবরি মসজিদের ইতিহাস ও তা নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে এবং মালাউনদের মানবরচিত আদালতের একপাক্ষিক রায়কে।
নাফের স্রোতে ভাসতে থাকা রোহিঙ্গা মুসলিমদের কীভাবে ভুলে যাওয়া যায়? ভুলে যাওয়া যায় না ঐ শিশুকে, যার মা প্রচণ্ড শীতে নাফের স্রোতে ভাসতে ভাসতে তাকে জন্ম দিয়েছিল! নিজ দেশের তাওহিদী জনতাকে রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যা করার মত ঘটনাগুলোও কি ভুলে যাওয়া যায়? কীভাবে ভুলে থাকতে পারেন ভোলার তাওহিদী জনতার উপর গুলি চালানোর ঘটনাকে! এমন ঘটনাতো এদেশে একটি নয়, একের পর এক ঘটেই যাচ্ছে। কীভাবে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন, যখন সীমান্তে প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে এদেশের মুসলিমদেরকে! তবে, কি ভারতের দালাল সরকারের পানে এখনো আশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন?
কি নিদারুণ এক অবস্থা! এত কিছুর পরেও আমরা কাদেরকে নিজেদের মুক্তিদাতা ভেবে বসে আছি, আমরা ভাবছি তুর্কির কথিত সুলতান আমাদের সহায়তা করবে, অথচ সে নিজেই আফ্রিকা ও আফগানিস্তানে মুসলিম হত্যায় নিজ দেশের অর্থ ও সৈন্য দিয়ে ক্রুসেডার ও মুরতাদ বাহিনীকে সহায়তা করছে, যার বাহিনী সিরিয়ায় অবস্থান করা সত্ত্বেও মুসলিমদের স্বার্থে একটি বুলেটও ছোড়ার প্রয়োজন অনুভব করেনা!
আমরা তাকিয়ে আছি ১৯ শতকে আফগানিস্তানসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে গণহত্যাকারী ও বর্তমানে সিরিয়াকে ধ্বংসস্তুপে পরিণতকারী কুফ্ফার রাশিয়ার দিকে, তাকিয়ে আছি ক্রুসেডার আমেরিকা ও তাদেরই স্বার্থ রক্ষার্থে ঘটিত বিভিন্ন কুফ্ফার সংঘের দিকে অথচ যাদের হাত এখনো রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া, ইয়ামান, আফগানিস্তান ও আফ্রিকার লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ নেয়ার দ্বারা।
আমরা আল-কুদুসকে ইহুদীদের নাপাক দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখি, কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমাদের কর্মপন্থা কী, আমাদের প্রস্তুতি কী? সর্বোচ্চ মুক্তির দাবি নিয়ে যাই ঐসকল সংঘ ও দেশের কাছে যারা নিজেরাই আল-কুদুসের ভূমিকে সন্ত্রাসী ইহুদীদের মজবুত ঘাঁটিতে পরিণত করতে সবচাইতে বেশি সাহায্য করছে, যারা আল-কুদুসকে ইহুদীদের রাজধানী বলে ঘোষণা দিচ্ছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি ফিলিস্তিনের এক বিগত জায়গার উপরেও ইহুদীদের অধিকার নেই, সেখানে কীভাবে ইসরাঈল নামক একটি অবৈধ রাষ্ট্রের মানচিত্র তৈরি হয়? আল-কুদুসের ভূমি ভাগ-বাটোয়ারাতে সমাধান আসবে না— এ সত্য আমাদেরকে বুঝতে হবে। আর, সমাধান হিসেবে বেছে নিতে হবে সেই পথ, যে পথ গ্রহণ করেছেন সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে শুরু করে, গাজি সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রহিমাহুল্লাহ এর মতো উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানরা।
সর্বশেষ আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় বার্তার কিছু অংশ বলে যাচ্ছি- “আমরা এক জাতি, আমাদের প্রভু এক, কাবা এক, পথ পদর্শনকারী কিতাব এক, আমাদের কালিমা এক, আমাদের শত্রুও এক, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সাথে ক্রুসেডারদের শত্রুতা পুরাতন এবং এর কোন শেষ নেই, তা কিয়ামতের উত্থান পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।
আজ পঙ্গপালের মতো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ক্রুসেডাররা। তারা আমাদের জাতিকে টার্গেট করে হামলা করছে। তাই আসুন আমরা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে একাধিক ঘাঁটি এবং মোর্চায় এই জায়নবাদী ক্রুসেডার শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়াই। তারা যেমন আমাদের জাতিকে টার্গেট করছে, তেমনি এখন মু’মিনদের জন্যও আবশ্যক হলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্রুসেডারদের উপর আঘাত হানা।
হে আমাদের ভাইয়েরা, প্রত্যেক চক্ষুষ্মানের সামনে রাস্তা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কেবল ইয়াহুদিরাই আপনাদেরকে আপনাদের ঘর থেকে বের করে দেয়নি এবং বের করার ব্যাপারে সাহায্য করেনি, বরং এই কাজে ইয়াহুদীদের দোসর ও মুরতাদরাও অংশ নিয়েছে।
নিশ্চয়ই আমাদের কুদুসকে ফিরিয়ে আনা যা আপনাদেরও কুদুস, আমাদের ঘর সমূহকে ফিরিয়ে আনা যা আপনাদেরও ঘর— শুধু একটি আন্দোলন অথবা একটা দলের পক্ষে সম্ভব নয়। বরং এর জন্য আবশ্যক এক উম্মাহর মানসিকতা জাগিয়ে তোলা এবং তা প্রতিষ্ঠা করা। যাতে পুরো উম্মাহ তার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক ঘাঁটিতে যুদ্ধ করতে পারে। প্রত্যেক দেশে ক্রুসেডারদের উপর আক্রমণ করতে পারে। হে আমাদের ভাইয়েরা, আমরা আপনাদের সাহায্যকারী। তাই আপনারাও আমাদের সাহায্যকারী হয়ে যান। আমরা আপনাদের সাথে একত্রিত হয়েছি একটি ফরজকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সুতরাং আপনারা কোনো নফল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবেন না। আমরা ও আপনারা ইসলামকে উঁচু করতে চাই। সুতরাং আমরা সেই হাতগুলোকে ভেঙ্গে দিবো যা ইসলামকে নিচু করতে চায়।”
লেখক: ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/02/06/32648/
Comment