নামাজ বাধ্যতামূলক করা বেআইনী :
কে অপরাধী?
কে অপরাধী?
চলতি মাসে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গাজীপুরের একটি গেঞ্জিপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান “মাল্টিফ্যাবস” এর মালিক প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত মুসলিম শ্রমিকদের জন্য প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালীন সময়ে তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে বলে একটি নোটিশ জারি করেন। শ্রমিকদেরকে নামাজের প্রতি উৎসাহ দেওয়া এবং ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তুলে শ্রমিকদের মাঝে ঐক্য গড়ার জন্যই কোম্পানির মালিক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু, দেশের চরম ইসলামবিদ্বেষী মহলের এই সিদ্ধান্তটি সহ্য হয়নি। ধর্মনিরপেক্ষতার ঝাণ্ডা হাতে জ্বলে উঠে এসকল মুরতাদরা।
ঐ ঘটনা সম্পর্কে তথ্যসন্ত্রাসী হলুদ মিডিয়া বিবিসিকে একটু বেশি আগ্রাসী দেখা গিয়েছে। তারা নামাজ বাধ্যতামূলকের সিদ্ধান্তকে সাম্প্রদায়িক আখ্যায়িত করে দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে প্রচার করার চেষ্টা করেছে। আর বরাবরের মতোই তাদের পদাংক অনুসরণ করেছে এদেশীয় ইসলামবিদ্বেষী মিডিয়াগুলো। আবার, নামাজ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির বিরোধী মনে করেছে। তার মতে, “বাংলাদেশের আইন কেন সংবিধানেই তো বলা আছে ধর্ম কারো উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। কোন আইন দিয়েই এটা বাধ্যবাধকতা দেয়া যায় না।”
তার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে আবার বলছেন, আইনমন্ত্রী নিজেই বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী কাজ করেছে। কিন্তু, আসলেই কি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মন্তব্য বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী?
এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর হলো, না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেশের সংবিধানের পরিপন্থী নয়, বরং সংবিধানসিদ্ধ কথা-ই বলেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতির একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। বাংলাদেশ সংবিধান আরো বলে, “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷” তথা, আল্লাহর আইন যদি বাংলাদেশের ঐ কুফুরি সংবিধানের বিপরীত হয়, তাহলে তারা আল্লাহর আইনকে বাদ দিবে। আর এজন্যই আল্লাহ যে নামাজকে ফরজ তথা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের রক্ষক আনিসুল হকরা সেই নামাজকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না বলতে পারে।
অর্থাৎ, বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মন্তব্য কোনো অপরাধ নয়। তবে, ইসলামের আইন অনুযায়ী ইসলামবিদ্বেষী আনিসুল হক অপরাধী। আর, এসকল অপরাধীদের অপরাধের উৎস হলো দেশের সেই সংবিধান, যাকে ‘পবিত্র সংবিধান’ বলে উপস্থাপন করা হয়। দেশের এই সংবিধানই ইসলামবিদ্বেষীদের মূল হাতিয়ার। এই সংবিধানের উপর ভিত্তি করেই তাগুত আনিসুল হক নামাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও একই কাজ করতো। ধর্মনিরপক্ষেতার কথা বলে আঘাত হানতো ইসলামের উপর।
বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি রক্ষার কথা বলে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর উপর আঘাত হানার ঘটনা এদেশে এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১০ সালে এই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেই দেশের হাইকোর্ট থেকে রায় দেওয়া হয়েছিল, ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না। অর্থাৎ, আপনি আপনার স্ত্রীকে বোরকা পরতে তথা পর্দা করতে বাধ্য করতে পারবেন না। আপনার স্ত্রী পর্দাহীন ঘোরাফেরা করবে, আপনি তাকে বাধা দিতে পারবেন না। যদি বাধা দেন, তাহলে আপনি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অপরাধী সাব্যস্ত হবেন, আপনার কাজটি হবে বেআইনী।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সংবিধানের সেই ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির আলোকেই বলেছে, নামাজ বাধ্যতামূলক করা বেআইনী, তথা আপনি আপনার সন্তানদেরও নামাজের আদেশ দিতে পারবেন না। যদিও নামাজকে আল্লাহ তা’য়ালা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন, সন্তানদেরকে নামাজের আদেশ দিতে বলেছেন। আর বেনামাজীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির কথা বলেছেন। আখিরাতে তো বেনামাজীদের শাস্তি দিবেনই, দুনিয়াতেও আল্লাহ তা’য়ালা বেনামাজীর উপর শাস্তি প্রয়োগের বিধান রেখেছেন। ইসলামী ফিকহের হানাফী মাযহাব অনুযায়ী, বেনামাজীকে ৩দিন বন্দী করে রাখা হবে। এর মধ্যে নামাজ আদায় করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর, এরপরও নামাজ আদায় না করলে তাকে বন্দী করেই রাখা হবে, পাশাপাশি বিচারক তাকে শাস্তিমূলক বেত্রাঘাতও করতে পারবেন।
তাই, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও বিবিসিগংরা বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী কিছু না বললেও, বলেছে ইসলামের বিরুদ্ধে, আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে। আর, একজন ইসলামপ্রেমিক মুসলিম হিসেবে তাদের এই অপরাধ রোধ করতে গেলে সর্বপ্রথম আপনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বাংলাদেশের সংবিধান। কেননা, দেশের সংবিধান এগুলোকে অপরাধ তো বলেই না, বরং সংবিধানের মূলনীতি বলে উল্লেখ করে। সুতরাং, এই ইসলামবিরোধী সংবিধানের মাধ্যমে ইসলামবিদ্বেষী আনিসুল হকদের বিচার অসম্ভব। তাহলে মুসলিমদের সমাধান কোথায়? সমাধান হলো- দেশের ইসলামবিরোধী সংবিধানকে তাগুত শাসকদের মুখে ছুড়ে ফেলে, সেখানে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত করা।
লেখক: আহমাদ উসামা আল-হিন্দ,, সম্পাদক আল-ফিরদাউস নিউজ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/02/21/33345/
Comment