পশ্চিমা মিডিয়ার দৃষ্টিতে মানুষের চেয়ে একটি গাধার মূল্য বেশি
আফগানিস্তানে স্থানীয় যুদ্ধবাজদের সাথে লড়াই চলাকালে তালেবানদের হামলায় কয়েকটি গাধা নিহত হয়েছে। গাধাগুলো অবরুদ্ধ সেনাঘাঁটিতে বয়ে নিচ্ছিল। তালেবানরা অন্যান্য জেলার মত গোর প্রদেশের চার সাদাহ জেলাতেও সরকারি সেনা ও স্থানীয় মিলিশিয়াদেরকে কোণঠাসা করে ফেলেন, তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেন। স্থানীয় যুদ্ধবাজরা কয়েকটি গাধার মাধ্যমে সেখানে রসদ সরবরাহের চেষ্টা চালায়। তখন তালেবানদের হামলায় তাদের রসদবাহী চারটি গাধা নিহত হয়। সাথে স্থানীয় এক যুদ্ধবাজ কমান্ডারের অল্পবয়স্ক দুই ছেলে বন্দী হয়। তখন সে তার ছেলেদের মুক্তির জন্য স্ত্রীকে তালেবানের কাছে পাঠায়। তালেবানরা জানায় যে, স্থানীয় যুদ্ধবাজরা অস্ত্র সমর্পণ করলে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে। ঘটনা এতটুকুই ছিল।
কিন্তু বিবিসিসহ অন্যান্য পশ্চিমা মিডিয়া বিষয়টি এতোটা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করেছে যে, চীনের করোনা ভাইরাসের ইস্যু চাপা পড়ে যাওয়ার দশা! ফেসবুক, টুইটারসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তারা গাধাগুলোর জন্য যেন শোক প্রকাশ করে যাচ্ছে।
এদিকে গোর প্রদেশের নিকটস্থ ফারাহ প্রদেশে সেদিনই মার্কিন সেনারা বেশ কয়েকজন সাধারণ আফগানকে হত্যা করেছে। সোমবারে ফারাহ প্রদেশে তাবেদারদের মর্টারের আঘাতে একজন বৃদ্ধ ও একজন বৃদ্ধা নিজ বাড়িতে শহীদ হয়েছেন। এই ঘটনার আগের দিন একই জেলার লঙ্গর এলাকায় আসহাবে সুফ্ফা নামের একটি দ্বীনী মাদ্রাসা কিতাবাদি ও আসবাবপত্রসহ অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। এলাকাবাসীর সাথে যারপরনাই খারাপ ব্যবহার করে। যাওয়ার সময় তারা এলাকাবাসীর একটি ট্রাক্টর এবং চারটি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সোমবার দিন সন্ধ্যায় ফারাহের শিমালগাহ এলাকায় বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে চার শিশু আহত হয় এবং সর্বসাধারণের সম্পদ বিনষ্ট হয়। এই হচ্ছে শুধু গোরের পার্শ্ববর্তী ফারাহ প্রদেশের সেই দিনের অবস্থা, যেদিন চারটি গাধা নিহত হয়েছিল।
এর একদিন আগে কুনদুযের বিএইচসি নামক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায় শত্রুরা। এতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন কর্মী আহত হয় এবং প্রায় সকল চিকিৎসা সামগ্রী ধ্বংস হয়ে যায়। তেমনি মার্কিন ও তার তাবেদার সেনারা রোজগান প্রদেশের দাহজোজ এলাকায় সর্বসাধারণের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এতে হাজী অলী মোহাম্মদ ও হাজীগালালীর বাড়িঘর ধ্বংস হয় এবং নারী ও শিশুসহ 12 জন হতাহত হয়।
বিবিসি ও পশ্চিমা মিডিয়ায় আপনি এসকল সংবাদ শুনতে পাবেননা। কারণ এখানে যারা নিহত হয়েছে তারা হচ্ছে মানুষ এবং তারা নিহত হয়েছে মার্কিন ও তার তাঁবেদারদের হামলায়। মার্কিনীদের হামলায় যারা নিহত হয়, পশ্চিমা মিডিয়ার চোখে তাদের রক্তের কোনই মূল্য নেই। এসব মৃত্যুকে তারা মৃত্যুই মনে করে না। আর বিপক্ষের গুলিতে রসদবাহী গাধা নিহত হলে সেটাও হয়ে যায় গভীর তাৎপর্যপূর্ণ সংবাদ। এই হচ্ছে পশ্চিমা সভ্যতা। তাদের শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বরূপ।
মানবাধিকার সংস্থা সমূহের রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছর 8000 বোমাবর্ষণ করা হয়েছে এবং তাদের হামলায় নিহত হয়েছে সমসংখ*্যক লোক। কয়েক বছর ধরেই এমনটি হয়ে আসছে। তবে পশ্চিমা মিডিয়ার চোখে এসব সংবাদ তাৎপর্যহীন বিধায় তারা তা প্রচার করছে না। তারা বরং “গাধা নিহত হয়েছে” জাতীয় সংবাদ প্রচার করতে বেশি আগ্ৰহী। এর মাধ্যমে সামান্য প্রাণীর প্রতি তাদের যে শ্রদ্ধাবোধ(!) তা প্রকাশ করে বিশ্বের মানুষের সামনে ভালোমানুষির নজির স্থাপন করতে পারে।
------------------------------------------------------------
মূল লেখক: হাবীব মুজাহিদ, আল-ইমারাহ উর্দু।
অনুবাদক: মাওলানা আব্দুল্লাহ ইউনুস।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/02/28/33707/
Comment