ডিএমপি নিউজের বাল্যবিবাহ বিষয়ক প্রতিবেদনের পর্যালোচনা
গত ৯-ই মার্চ ২০২০, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অফিসিয়াল নিউজ সাইটে বাল্যবিবাহ নিয়ে “বাল্যবিবাহে নষ্ট হচ্ছে সমাজের ভবিষ্যৎ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । যেখানে বাল্যবিবাহকে ঘৃণ্য কাজ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে ।
প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে , “বাল্যবিবাহ বা শিশুবিবাহ বলতে ঐ বিবাহকে বোঝানো হয়, যেখানে বর ও কনে উভয়ে বা যে কোনো একজন শিশু। বর-কনে দুজনেরই বা একজনের বয়স বিয়ের জন্য আইন দ্বারা নির্ধারিত বয়সের কম হলে তা আইনের চোখে বাল্যবিবাহ বলে চিহ্নিত হবে। সদ্যপ্রণীত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুসারে বাল্যবিবাহ বলতে ১৮ বছরের কম বয়সের কোন মেয়ের সাথে ২১ বছরের কম বয়সি কোন ছেলের বিয়েকে বোঝানো হয়েছে।”
অর্থাৎ বিবাহ বৈধ হবার জন্য শর্ত করা হচ্ছে মেয়েদের ১৮ আর ছেলেদের ২১ বছর বয়স হতে হবে । যদিও শারীরিক সম্পর্ক করার সক্ষমতা আরো অনেক আগে থেকেই ছেলে ও মেয়ে উভয়েই অর্জন করে। বারো-তেরো বছর পর থেকেই ছেলে-মেয়েদের কিশোর-কিশোরী ধরা হলেও এখানে আইনে ১৮ বছরের আগ পর্যন্ত শিশু বলা হচ্ছে। যা অত্যন্ত হাস্যকর, বালখিল্যতা *।
এরপর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “বাল্যবিবাহ যে সমাজের জন্য একটা বিষফোঁড়া এবং অভিশাপ তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। সমাজকে এই অভিশাপ মুক্ত করার জন্য শুধু নারীদের সচেতন হলেই চলবে না। সমাজের সকলকে সচেতন হতে হবে ।”
এরপর সমগ্র প্রবন্ধে বাল্যবিবাহকে বারবার নানা বিশেষণে নেতিবাচক বলা হলেও কেন নেতিবাচক বা সমাজের জন্য কেন ক্ষতিকর তা উল্লেখ করতে দেখা যায়নি সমগ্র প্রবন্ধ জুড়ে। যেখানে মেডিক্যালি ও ফিজিক্যালিভাবে কিশোর-কিশোরীরা মিলনে সক্ষম সেখানে তারা কোন যুক্তিতে বা কারণে কথিত বাল্যবিবাহকে “সমাজের জন্য একটা বিষফোঁড়া এবং অভিশাপ” বলছে তা বোধগম্য নয়।
এরপর চমৎকার কিছু কথা বলা হয়েছে যার সাথে আমরাও আক্ষরিকভাবে একমত। প্রতিবেদনে বলা হয় ,
“যথাযথভাবে বাংলা অর্থসহ কোরআন শিক্ষা এবং সহীহ হাদিস চর্চা করানো হলে সেখানে গোঁড়ামী, অসচেতনতা, বিশৃঙ্খলতার জায়গা কমে আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।”
আসলেই গোঁড়ামী, অসচেতনতা, বিশৃঙ্খলতার দমনে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু ইসলামের শিক্ষাই তো হলো ছেলে-মেয়ের বিয়ের বয়স হলেই তাকে উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী দেখে বিবাহ দিয়ে দেওয়া। এখন কথা হলো, বিয়ের বয়সটা আসলে কখন হয়? এই বিষয়ে ইসলামে সুস্পষ্টভাবে কোনো সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি, বরং সাবালক-সাবালিকা হওয়ার পর থেকেই মূলত ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে ইসলামে উৎসাহিত করা হয়। তাই, ১৮ বছরের আগে মেয়ে এবং ২১ বছরের আগে ছেলের বিয়ে বাল্যবিয়ে বলে গণ্য করে বাংলাদেশে যে আইন রয়েছে, তা ইসলাম অনুযায়ী হয়নি।
তাই, ডিএমপি একদিকে বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী মেয়েদের ১৮ এবং ছেলেদের ২১ এর আগের বিয়েকে বাল্যবিয়ে আখ্যায়িত করে অন্যদিকে ইসলামী অনুশাসন মানার যে পরামর্শ দিচ্ছে, তা আদতে সুখপাঠ্য হলেও, এতে ডিএমপির স্ববিরোধিতা, মূর্খতা নয়তো প্রতারণার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মুখে ইসলামী অনুশাসন মানার কথা বললেও, এসকল রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা নিজেরাই ইসলাম সম্মত বিবাহকে বাল্যবিবাহ আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে বিবাহে বাধা দিয়ে প্রেম করতে উৎসাহিত করছে।
এভাবে জিনা করার দিকে যুবসমাজকে ঠেলে দিয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও নৈতিক পরিশীলতা ধ্বংস করছে এই সকল ইসলামবিদ্বেষী সরকারী গোষ্ঠী ।
প্রকৃতপক্ষে, বাল্যবিবাহ নয় বরং বিয়েকে কঠিন করে ফেলাতেই সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হচ্ছে। বিবাহকে কঠিন করার ফলে এবোরশন , ইভটিজিং, নৈতিক অধঃপতনসহ নানা অপকর্মের দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে ।
লেখক: রেদোয়ান সায়িদ, ইসলামী চিন্তাবিদ।
Comment