Announcement

Collapse
No announcement yet.

‘সমাজের ধন বৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধন বৃদ্ধি’

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ‘সমাজের ধন বৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধন বৃদ্ধি’

    ‘সমাজের ধন বৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধন বৃদ্ধি’


    ‘সমাজের ধন বৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধন বৃদ্ধি’ উক্তিটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিড়াল’ গল্পের অন্তর্গত। নিপীড়িত মানুষের প্রতীক হিসেবে বিড়াল মার্জারী এ উক্তিটি করে। ব্যঙ্গাত্মক সরল উক্তিটির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে বর্তমান পুঁজিবাদী বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থার নির্মম, ভয়াবহ কুৎসিত চরিত্র। ধনী গরিবের বৈষম্য বৃদ্ধির কারিগর এই পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় উপকৃত হয় কেবলমাত্র কতিপয় পুঁজিপতি বুর্জোয়া শ্রেণী । আর সমাজশোষক সংখ্যালঘু কতিপয় পুঁজিপতি ধনিকের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়াকেই দেখানো হয় দেশের জিডিপি-জিএনপির প্রবৃদ্ধি এবং দেশের ও সমাজের উন্নতি হিসেবে।ধনীর ধনসম্পদ বৃদ্ধির ফলে দেশের মাথাপিছু আয় বাড়ে সত্যি কিন্তু এতে গরীবের কোন লাভ নেই। তাদের তো আর এতে আয় বৃদ্ধি পায় না। বরং পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় গরিব চিরদিনই গরিব থেকে যায় বা আরো গরিব হয় ।

    পুঁজিবাদী বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থার প্রভাবে পুরো পৃথিবীর সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে গুটিকয়েক পুঁজিপতির হাতে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বের মাত্র ৬২ জনের সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কাছে থাকা সম্পদের সমান। বৈষম্যের এই লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি ইসলামী সুষম বন্টনভিক্তিক অর্থব্যবস্থার বিপরীতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিষফল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বে যে সম্পদ বেড়েছে, তার মাত্র ১ শতাংশ পেয়েছে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সম্পদের বৈষম্যের এই নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছেন হতদরিদ্র মানুষেরা।

    বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক মানচিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রতিনিয়ত কোনো একদিকে সম্পদের পাল্লা ভারী হচ্ছে। একশ্রেণির মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ে চরম ভোগবিলাসে মত্ত। আর অন্য শ্রেণী দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। যা একদিনে হয়নি, ধীরে ধীরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার এই বলয় তৈরি হয়েছে। আর শোষিত হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণীর মজদুর গণমানুষেরা।

    পুঁজিবাদী বিশ্বে সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দিতে শোনানো হয় গড় মাথাপিছু আয়ের প্রতারণাপূর্ণ গল্প। বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয়ের ফাঁকি বুঝতে আসুন একটি হিসেব দেখা যাক। ধরুন একটি মেসে তিন জন মানুষ থাকেন । তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রথম ব্যক্তিটির বাৎসরিক আয় ১ কোটি টাকা, দ্বিতীয় ব্যক্তির বার্ষিক আয় ১ লক্ষ টাকা এবং তৃতীয় ব্যক্তির বাৎসরিক আয় ১০ হাজার টাকা । এখন তিন জনের বাৎসরিক গড় মাথাপিছু আয় হবে {(১০০০০০০০+১০০০০০+১০০০০)÷৩}=৩৩৭০০০০ টাকা ।
    অর্থাৎ মেসের তিন সদস্যের বার্ষিক মাথাপিছু আয় তেত্রিশ লক্ষ সত্তর হাজার টাকা। বাইরে থেকে মেসের সদস্যদের মাথাপিছু আয় শুনে সবাইকে ধনী মনে হলেও বাস্তবতা হচ্ছে একজনের বাৎসরিক আয় এক লক্ষ টাকা এবং অন্য জনের মাত্র দশহাজার টাকা। এটাই হচ্ছে বর্তমান প্রতারণাপূর্ণ গড় মাথাপিছু আয়ের ফাঁকি।

    সেক্যুলার পুঁজিবাদী বাংলাদেশ রাষ্ট্রও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ধূর্ত গল্প দেশবাসীকে শুনিয়ে থাকে। ওয়াল্ড ইকনোমিক আউটলুক ডাটাবেজ, অক্টোবর ২০১৯ এর হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২০৬৮ মার্কিন ডলার। কিন্তু পূর্বের গল্পের মতো এখানেও দেশের মানুষের বাস্তব অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝার উপায় নেই। আরো কিছু পরিসংখ্যান দেখলে হয়তো বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে ।

    বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) থানা আয়-ব্যয় জরিপ:২০১৬ এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের শীর্ষ ধনী পাঁচ শতাংশ মানুষের মাথাপিছু আয় ১২৭৪০ মার্কিন ডলার (১০ লাখেরও বেশী) অপরদিকে সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ শতাংশ মানুষের বাৎসরিক মাথাপিছু আয় মাত্র ১০৪ মার্কিন ডলার বা ৮২২৫ টাকা। এই তথ্য দেখে আশা করি চক্ষুষ্মান বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে পুঁজিবাদী বৈষম্য ও মাথাপিছু আয়ের ফাঁকি অস্পষ্ট থাকা সম্ভব নয়।

    এভাবেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে জিডিপি-জিএনপি বা মাথাপিছু আয় যা কিছুই বৃদ্ধি হোক না কেন, তা মূলত ধনীর ধন বৃদ্ধির হিসেব। এই উন্নতি হচ্ছে কেবল ধনীর জীবনমানের উন্নতি ও সম্পদের পাহাড়ের স্ফীতি। যাতে সাধারণ দরিদ্র মানুষের কোন লাভ নেই, অবদানের মূল্য নেই । তাই বঙ্কিমের বিড়ালের মতো বলতে হয় ”সমাজের ধন বৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধন বৃদ্ধি’ ।


    লেখক: রেদোয়ান সায়িদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

    সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/04/21/36835/
    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    মাশাআল্লাহ,,,,
    ধান্দাবাজ সরকারের গোমঁড় ফাঁস হয়ে গেল।
    মুমিনের একটাই স্লোগান,''হয়তো শরীয়াহ''নয়তো শাহাদাহ''

    Comment

    Working...
    X