ফিলিস্তিন সংকটের আসল কারণ কী?
=========================================
.
সেই ছোটবেলা থেকেই খবরের কাগজ আর টিভি সংবাদে ‘নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন’, ‘ফিলিস্তিনিদের বাড়ীঘর বিধ্বস্ত’, ‘ফিলিস্তিনি হতাহত’ এই জাতীয় জিনিস দেখে আসছি। আমার মনে হয় এ প্রজন্মের সবাই ছোটবেলা থেকেই কম-বেশি এ জাতীয় সংবাদ দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। প্রত্যেক বছর কয়েকজন ফিলিস্তিনি মরবে, ১-২শ ইহুদি বসতি বৃদ্ধি পাবে, ইস্রায়েলী বাহিনী ‘একটু-আধটু’(?) জুলুম করবে- এই সংবাদগুলো আমাদের এখন আর চোখে বা কানে পীড়া দেয় না। “ফিলিস্তিনি জাতটার সৃষ্টিই হয়েছে মার খাবার জন্য”— মোটামুটি সবার মনের ভেতরেই এমন একটা বিল্ট ইন প্রোগ্রাম সেট হয়ে গেছে। মুসলিম উম্মাহর শাসকদের মনগুলোও এই ‘প্রোগ্রাম’ থেকে মুক্ত নয়। এ কারণেই বছর বছর এই জাতীয় সংবাদ আসছে এবং আসতে থাকবে। যা হোক, এবার একটু ব্যতিক্রম কিছু সংবাদ এখলাম। “মশা-মাছির মত করে” তো প্রায়ই কিছু ফিলিস্তিনি মেরে ফেলা হয়, এবার ইহুদিরা আঘাত হেনেছে খোদ মসজিদ আল আকসা বা বাইতুল মুকদ্দাসে। এমন খবর সচরাচর দেখা যায় না। বেশ কয়েক দিন ধরে আল আকসা মসজিদে আগ্রাসন চালিয়ে গেল সন্ত্রাসী ইস্রায়েল বাহিনী [লিঙ্কঃ https://goo.gl/PM2emq ; https://goo.gl/TXA7Q8 ; https://goo.gl/amHVNP ] ১৯৪৮ সালে অবৈধ ইস্রায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৬৭ সালে জেরুজালেম জবর-দখল করার পর এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। ‘বিজ্ঞ’(?) বিশ্লেষকরা সব সময়েই সংবাদ মাধ্যমে এই চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা করছেন, কারণ বিশ্লেষণ করছেন ও সংকট নিরসনের পথ বাতলে দিচ্ছেন। পশ্চিমা বিশ্বও মায়াকান্না কেঁদে শান্তির রোডম্যাপ দেখাচ্ছে, আর সেই রোডম্যাপ বেয়ে ইস্রায়েল আস্তে আস্তে ফিলিস্তিনের সব ভুখণ্ড খেয়ে ফেলছে। তাদের ধোঁকাবাজি বিশ্লেষণ আর ধাপ্পাবাজি রোডম্যাপের ধুম্রজাল ভেদ করে অনেকেরই জানতে ইচ্ছা করে— আসলে কী কারণে এই সঙ্কট? ঐ ভুখণ্ডটাতে আসলে কী আছে? এই সংকট সমাধাণের উপায় কী? এটা কি আসলেই রাজনৈতিক বা জাতীয়তাবাদী ইস্যু? –এসব বিষয় নিয়েই আজকে কিছু লেখার চেষ্টা করছি।
.
প্রথমেই একটা জিনিস বলে নেই—এটা কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটা আগা গোড়াই একটা ধর্মীয় ইস্যু। ফিলিস্তিনের সেকুলার নেতারা এবং ধোঁকাবাজ পশ্চিমারা সব সময়েই এটাকে ফিলিস্তিন-ইস্রায়েল জাতীয় ইস্যু বলে মূল সংকটকে ধামাচাপা দিয়ে দিয়ে রেখেছে।
.
ঠিক কী কারণে ঐ ভূমির প্রতি ইহুদিদের এত আকর্ষণ? কেন পশ্চিমা শক্তি তাদেরকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে?
এর উত্তর লুকিয়ে আছে তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে।
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থের নাম হচ্ছে তানাখ(Tanakh)। ঈসা(আ) এর আগে যেসব নবী এসেছেন, তাঁদের নামে লেখা বিকৃত কিছু কিতাবের সমষ্টি এটি। খ্রিষ্টানরাও এই কিতাবগুলোকে ঈশ্বরের বাণী বলে বিশ্বাস করে। তানাখ এর বইগুলোকে খ্রিষ্টানরা তাদের বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old testament) অংশে রেখেছে। অর্থাৎ খ্রিষ্টান বাইবেলের Old testament অংশের বইগুলো ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কমন ধর্মগ্রন্থ। বাইবেলের এই পুরাতন নিয়ম(Old testament) অংশে Promised Land(ওয়াদাকৃত ভূমি) বলে একটা ধারণা আছে। সেখানে আদিপুস্তক(পয়দায়েশ/Genesis) ১৫ নং অধ্যায়ে আব্রাম/আব্রাহাম{ইব্রাহিম(আ)} এর কাছে ঈশ্বর অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি মিসরের সীমা থেকে ইরাকের সীমা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল অর্থাৎ বৃহত্তর শাম দেশ বা বৃহত্তর সিরিয়া-ফিলিস্তিন অঞ্চল তিনি তাঁর বংশধর বনী ইস্রাঈলকে দান করবেন [বাইবেল থেকে লিঙ্কঃ https://goo.gl/WrihNc ]। আদিপুস্তক ৩৫:১০-১২তে ইয়াকুব(আ){Jacob} এর নামকরণ করা হয়েছে ‘ইস্রায়েল’ এবং তাঁর বংশধরদেরকে ঐ ভূমি দিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে [সংশ্লিষ্ট অংশের লিঙ্কঃ https://goo.gl/RB5kGb]। বাইবেলের Old Testamentএ বার বার উল্লেখ আছে যে ইহুদিদেরকে ঐ ভূমিতে ফিরিয়ে আনা হবে [লিঙ্কঃ https://goo.gl/FDUjDv ; https://goo.gl/27mz7X; https://goo.gl/oTrsLD ]। যিরমিয়(Jeremiah) ১২:১৪-১৭তে বলা আছে, ঈশ্বর ইহুদিদেরকে ঐ ভূমিতেই প্রতিষ্ঠিত করবেন; এবং ইহুদিদের কোন প্রতিবেশি এটা মেনে না নিলে ঈশ্বর তাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন [লিঙ্কঃ https://goo.gl/jJZ4XC ] জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠা করা হবে ইহুদিদের ৩য় মহামন্দির(3rd Temple) [লিঙ্কঃ https://goo.gl/aYj6Uy ; https://goo.gl/m9Lt2u; https://goo.gl/Wg2PjD ]।
.
শুধুমাত্র ইস্রাঈল বংশের মানুষ বলে তারা ঐ ভূমির মালিক। অর্থাৎ আক্ষরিকভাবেই তারা ফিলিস্তিনকে “বাপ-দাদার সম্পত্তি” ভাবে। খ্রিষ্টান এবং ইহুদি উভয় সম্প্রদায় এই গ্রন্থে বিশ্বাসী। কাজেই এটা তাদের ধর্মীয় আকিদার অংশ। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইহুদিরা হচ্ছে 'chosen race' বা ঈশ্বরের বেছে নেওয়া জাতি। ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে জায়োনিস্ট ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ওয়েবসাইটগুলো কিভাবে ফিলিস্তিনের ভূমির একচ্ছত্র অধিকার একমাত্র ইহুদিদের বলে প্রচার করছে তা দেখুনঃ
১। https://goo.gl/TehmsD
২। https://goo.gl/Juwnt5
৩। https://goo.gl/YC4LrY
অর্থাৎ শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণেই জায়নবাদী{Zionist-ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্রপন্থী} ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে বহিরাগত ইহুদিদের বসতি স্থাপন করতে চাচ্ছে। এই অসভ্য, বর্বর ও বর্ণবাদী কর্মের পেছনে একমাত্র কারণ হচ্ছে তাদের ধর্ম। এর পেছনে কোন রাজনৈতিক কারণ নেই। তারা যা করছে তা বাইবেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই করছে। এর পেছনে অন্য কোন কারণ নেই। বাইবেলকে 'ঈশ্বরের বাণী' বলে বিশ্বাস করে বলে পশ্চিমা খ্রিষ্টানরাও ইস্রায়েলকে সাহায্য করতে বাধ্য। এ কারণে শত নিন্দার মুখেও আমেরিকা কখনো ইস্রায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে না।
.
উপরে সংক্ষেপে আলোচনা করলাম আসলে ঠিক কোন কারণে ফিলিস্তিন ভুখণ্ডের প্রতি ইহুদিদের এত আকর্ষণ এবং কেন পশ্চিমা শক্তি সবসময়ে এই অন্যায় দাবির প্রতি সমর্থন দেয়।
এবার প্রশ্ন জাগতে পারে - কেন এত বছর ধরে ফিলিস্তিনে এত অশান্তি আর রক্তপাত? এর মূল কারণ আসলে কোথায়?
"ইহুদি রাষ্ট্র" প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল কী ফর্মুলা দেয়? রক্তপাতের পথ? নাকি শান্তির পথ?
লেখার আগামী পর্বে ইন শা আল্লাহ এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব।
#চলবে
.
"এবং যখন তোমার প্রভু ইবরাহিমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল;
তিনি[আল্লাহ] বলেছিলেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মানবমণ্ডলীর নেতা করব।
সে[ইবরাহিম(আ)] বলেছিলঃ আমার বংশধরগণ হতেও?
তিনি বলেছিলেনঃ আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের প্রতি প্রযোজ্য হবেনা।"
(কুরআন, বাকারাহ ২:১২৪)
.
“বলঃ হে ইহুদিরা! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানবগোষ্ঠী নয়— তাহলে তোমরা মৃত্যু কামনা কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
(কুরআন, জুমু’আহ ৬২:৬)
.
“আর উপদেশ দেয়ার পর আমি যাবুরে লিখে দিয়েছি যে, ‘‘আমার যোগ্যতর বান্দাগণই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে’’।
নিশ্চয়ই এতে ইবাদাতকারী সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশবাণী রয়েছে।”
(কুরআন, আম্বিয়া ২১:১০৫-১০৬)
.
“ইবরাহিম ইহুদিও ছিল না, খ্রিষ্টানও ছিল না; বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদের(অংশীবাদী/polytheist) অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ইবরাহিমের সবচেয়ে নিকটবর্তী তারা, যারা তাঁর অনুসরণ করেছে এবং এই নবী[মুহাম্মাদ (ﷺ)] ও মুমিনগণ। আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক।
এবং কিতাবীদের[ইহুদি ও খ্রিষ্টান] মধ্যে এক দলের বাসনা যে, তোমাদেরকে পথভ্রান্ত করে; কিন্তু তারা নিজেদের ব্যতিত অন্য কাউকে বিপথগামী করেনা এবং তারা তা বুঝছেনা।”
(কুরআন, আলি ইমরান ৩:৬৭-৬৯)
.
===
=========================================
.
সেই ছোটবেলা থেকেই খবরের কাগজ আর টিভি সংবাদে ‘নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন’, ‘ফিলিস্তিনিদের বাড়ীঘর বিধ্বস্ত’, ‘ফিলিস্তিনি হতাহত’ এই জাতীয় জিনিস দেখে আসছি। আমার মনে হয় এ প্রজন্মের সবাই ছোটবেলা থেকেই কম-বেশি এ জাতীয় সংবাদ দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। প্রত্যেক বছর কয়েকজন ফিলিস্তিনি মরবে, ১-২শ ইহুদি বসতি বৃদ্ধি পাবে, ইস্রায়েলী বাহিনী ‘একটু-আধটু’(?) জুলুম করবে- এই সংবাদগুলো আমাদের এখন আর চোখে বা কানে পীড়া দেয় না। “ফিলিস্তিনি জাতটার সৃষ্টিই হয়েছে মার খাবার জন্য”— মোটামুটি সবার মনের ভেতরেই এমন একটা বিল্ট ইন প্রোগ্রাম সেট হয়ে গেছে। মুসলিম উম্মাহর শাসকদের মনগুলোও এই ‘প্রোগ্রাম’ থেকে মুক্ত নয়। এ কারণেই বছর বছর এই জাতীয় সংবাদ আসছে এবং আসতে থাকবে। যা হোক, এবার একটু ব্যতিক্রম কিছু সংবাদ এখলাম। “মশা-মাছির মত করে” তো প্রায়ই কিছু ফিলিস্তিনি মেরে ফেলা হয়, এবার ইহুদিরা আঘাত হেনেছে খোদ মসজিদ আল আকসা বা বাইতুল মুকদ্দাসে। এমন খবর সচরাচর দেখা যায় না। বেশ কয়েক দিন ধরে আল আকসা মসজিদে আগ্রাসন চালিয়ে গেল সন্ত্রাসী ইস্রায়েল বাহিনী [লিঙ্কঃ https://goo.gl/PM2emq ; https://goo.gl/TXA7Q8 ; https://goo.gl/amHVNP ] ১৯৪৮ সালে অবৈধ ইস্রায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৬৭ সালে জেরুজালেম জবর-দখল করার পর এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। ‘বিজ্ঞ’(?) বিশ্লেষকরা সব সময়েই সংবাদ মাধ্যমে এই চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা করছেন, কারণ বিশ্লেষণ করছেন ও সংকট নিরসনের পথ বাতলে দিচ্ছেন। পশ্চিমা বিশ্বও মায়াকান্না কেঁদে শান্তির রোডম্যাপ দেখাচ্ছে, আর সেই রোডম্যাপ বেয়ে ইস্রায়েল আস্তে আস্তে ফিলিস্তিনের সব ভুখণ্ড খেয়ে ফেলছে। তাদের ধোঁকাবাজি বিশ্লেষণ আর ধাপ্পাবাজি রোডম্যাপের ধুম্রজাল ভেদ করে অনেকেরই জানতে ইচ্ছা করে— আসলে কী কারণে এই সঙ্কট? ঐ ভুখণ্ডটাতে আসলে কী আছে? এই সংকট সমাধাণের উপায় কী? এটা কি আসলেই রাজনৈতিক বা জাতীয়তাবাদী ইস্যু? –এসব বিষয় নিয়েই আজকে কিছু লেখার চেষ্টা করছি।
.
প্রথমেই একটা জিনিস বলে নেই—এটা কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটা আগা গোড়াই একটা ধর্মীয় ইস্যু। ফিলিস্তিনের সেকুলার নেতারা এবং ধোঁকাবাজ পশ্চিমারা সব সময়েই এটাকে ফিলিস্তিন-ইস্রায়েল জাতীয় ইস্যু বলে মূল সংকটকে ধামাচাপা দিয়ে দিয়ে রেখেছে।
.
ঠিক কী কারণে ঐ ভূমির প্রতি ইহুদিদের এত আকর্ষণ? কেন পশ্চিমা শক্তি তাদেরকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে?
এর উত্তর লুকিয়ে আছে তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে।
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থের নাম হচ্ছে তানাখ(Tanakh)। ঈসা(আ) এর আগে যেসব নবী এসেছেন, তাঁদের নামে লেখা বিকৃত কিছু কিতাবের সমষ্টি এটি। খ্রিষ্টানরাও এই কিতাবগুলোকে ঈশ্বরের বাণী বলে বিশ্বাস করে। তানাখ এর বইগুলোকে খ্রিষ্টানরা তাদের বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old testament) অংশে রেখেছে। অর্থাৎ খ্রিষ্টান বাইবেলের Old testament অংশের বইগুলো ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কমন ধর্মগ্রন্থ। বাইবেলের এই পুরাতন নিয়ম(Old testament) অংশে Promised Land(ওয়াদাকৃত ভূমি) বলে একটা ধারণা আছে। সেখানে আদিপুস্তক(পয়দায়েশ/Genesis) ১৫ নং অধ্যায়ে আব্রাম/আব্রাহাম{ইব্রাহিম(আ)} এর কাছে ঈশ্বর অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি মিসরের সীমা থেকে ইরাকের সীমা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল অর্থাৎ বৃহত্তর শাম দেশ বা বৃহত্তর সিরিয়া-ফিলিস্তিন অঞ্চল তিনি তাঁর বংশধর বনী ইস্রাঈলকে দান করবেন [বাইবেল থেকে লিঙ্কঃ https://goo.gl/WrihNc ]। আদিপুস্তক ৩৫:১০-১২তে ইয়াকুব(আ){Jacob} এর নামকরণ করা হয়েছে ‘ইস্রায়েল’ এবং তাঁর বংশধরদেরকে ঐ ভূমি দিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে [সংশ্লিষ্ট অংশের লিঙ্কঃ https://goo.gl/RB5kGb]। বাইবেলের Old Testamentএ বার বার উল্লেখ আছে যে ইহুদিদেরকে ঐ ভূমিতে ফিরিয়ে আনা হবে [লিঙ্কঃ https://goo.gl/FDUjDv ; https://goo.gl/27mz7X; https://goo.gl/oTrsLD ]। যিরমিয়(Jeremiah) ১২:১৪-১৭তে বলা আছে, ঈশ্বর ইহুদিদেরকে ঐ ভূমিতেই প্রতিষ্ঠিত করবেন; এবং ইহুদিদের কোন প্রতিবেশি এটা মেনে না নিলে ঈশ্বর তাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন [লিঙ্কঃ https://goo.gl/jJZ4XC ] জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠা করা হবে ইহুদিদের ৩য় মহামন্দির(3rd Temple) [লিঙ্কঃ https://goo.gl/aYj6Uy ; https://goo.gl/m9Lt2u; https://goo.gl/Wg2PjD ]।
.
শুধুমাত্র ইস্রাঈল বংশের মানুষ বলে তারা ঐ ভূমির মালিক। অর্থাৎ আক্ষরিকভাবেই তারা ফিলিস্তিনকে “বাপ-দাদার সম্পত্তি” ভাবে। খ্রিষ্টান এবং ইহুদি উভয় সম্প্রদায় এই গ্রন্থে বিশ্বাসী। কাজেই এটা তাদের ধর্মীয় আকিদার অংশ। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইহুদিরা হচ্ছে 'chosen race' বা ঈশ্বরের বেছে নেওয়া জাতি। ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে জায়োনিস্ট ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ওয়েবসাইটগুলো কিভাবে ফিলিস্তিনের ভূমির একচ্ছত্র অধিকার একমাত্র ইহুদিদের বলে প্রচার করছে তা দেখুনঃ
১। https://goo.gl/TehmsD
২। https://goo.gl/Juwnt5
৩। https://goo.gl/YC4LrY
অর্থাৎ শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণেই জায়নবাদী{Zionist-ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্রপন্থী} ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে বহিরাগত ইহুদিদের বসতি স্থাপন করতে চাচ্ছে। এই অসভ্য, বর্বর ও বর্ণবাদী কর্মের পেছনে একমাত্র কারণ হচ্ছে তাদের ধর্ম। এর পেছনে কোন রাজনৈতিক কারণ নেই। তারা যা করছে তা বাইবেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই করছে। এর পেছনে অন্য কোন কারণ নেই। বাইবেলকে 'ঈশ্বরের বাণী' বলে বিশ্বাস করে বলে পশ্চিমা খ্রিষ্টানরাও ইস্রায়েলকে সাহায্য করতে বাধ্য। এ কারণে শত নিন্দার মুখেও আমেরিকা কখনো ইস্রায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে না।
.
উপরে সংক্ষেপে আলোচনা করলাম আসলে ঠিক কোন কারণে ফিলিস্তিন ভুখণ্ডের প্রতি ইহুদিদের এত আকর্ষণ এবং কেন পশ্চিমা শক্তি সবসময়ে এই অন্যায় দাবির প্রতি সমর্থন দেয়।
এবার প্রশ্ন জাগতে পারে - কেন এত বছর ধরে ফিলিস্তিনে এত অশান্তি আর রক্তপাত? এর মূল কারণ আসলে কোথায়?
"ইহুদি রাষ্ট্র" প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল কী ফর্মুলা দেয়? রক্তপাতের পথ? নাকি শান্তির পথ?
লেখার আগামী পর্বে ইন শা আল্লাহ এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব।
#চলবে
.
"এবং যখন তোমার প্রভু ইবরাহিমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল;
তিনি[আল্লাহ] বলেছিলেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মানবমণ্ডলীর নেতা করব।
সে[ইবরাহিম(আ)] বলেছিলঃ আমার বংশধরগণ হতেও?
তিনি বলেছিলেনঃ আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের প্রতি প্রযোজ্য হবেনা।"
(কুরআন, বাকারাহ ২:১২৪)
.
“বলঃ হে ইহুদিরা! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানবগোষ্ঠী নয়— তাহলে তোমরা মৃত্যু কামনা কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
(কুরআন, জুমু’আহ ৬২:৬)
.
“আর উপদেশ দেয়ার পর আমি যাবুরে লিখে দিয়েছি যে, ‘‘আমার যোগ্যতর বান্দাগণই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে’’।
নিশ্চয়ই এতে ইবাদাতকারী সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশবাণী রয়েছে।”
(কুরআন, আম্বিয়া ২১:১০৫-১০৬)
.
“ইবরাহিম ইহুদিও ছিল না, খ্রিষ্টানও ছিল না; বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদের(অংশীবাদী/polytheist) অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ইবরাহিমের সবচেয়ে নিকটবর্তী তারা, যারা তাঁর অনুসরণ করেছে এবং এই নবী[মুহাম্মাদ (ﷺ)] ও মুমিনগণ। আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক।
এবং কিতাবীদের[ইহুদি ও খ্রিষ্টান] মধ্যে এক দলের বাসনা যে, তোমাদেরকে পথভ্রান্ত করে; কিন্তু তারা নিজেদের ব্যতিত অন্য কাউকে বিপথগামী করেনা এবং তারা তা বুঝছেনা।”
(কুরআন, আলি ইমরান ৩:৬৭-৬৯)
.
===
Comment