প্রবন্ধ
কাশ্মীরের জিহাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী এজেন্সিগুলোর ষড়যন্ত্র
কাশ্মীরের জিহাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী এজেন্সিগুলোর ষড়যন্ত্র
কাশ্মীরের জিহাদের দুটি ঐতিহাসিক শত্রু রয়েছে। প্রথমটি হল হিন্দুত্ববাদী মালাউন গোষ্ঠী। এ শত্রুর কথা সকলেই জানে। দ্বিতীয় শত্রু হল পাকিস্তানের সরকার, সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো। এই শত্রুর ব্যাপারে অনেকেই বেখবর। এখনো বাংলাদেশের অনেকে বিশ্বাস করেন যে পাকিস্তানের বাহিনী আর এজেন্সি আন্তরিকভাবে কাশ্মীরের জিহাদের কল্যাণ চায়। অথচ বৈশ্বিক জিহাদ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, আল-কায়েদা উপমহাদেশের সম্মানিত আমীর, কাশ্মীরে আল কায়েদার শাখা আনসার গাযওয়াতুল হিন্দের নেতৃবৃন্দ বারবার এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, এবং সতর্ক করেছেন। এ বিষয়ে ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসা জরুরী। তাই এ প্রসঙ্গে আনসার গাযওয়াতুল হিন্দের সাথে সম্পর্কিত ‘তাওহিদ আওয়েকেনিং মিডিয়া’ কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভিডিওর মূল বক্তব্য আমরা বাংলাভাষাভাষী পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি। উল্লেখ্য ‘তাওহিদ আওয়েকেনিং মিডিয়া’, আনসার গাযওয়াতুল হিন্দের অফিশিয়াল মিডিয়া নয়।
.
.
“ব্যর্থ অভ্যুত্থান” – ২০১৬ সালে কাশ্মীর অভ্যুত্থান কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
সীমান্তের ওপার থেকে যারা কাশ্মীরের জিহাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয় তাদের কারণেই ২০১৬এর অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। ২০১৬ সালে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি মুজাহিদদের সামনে ভালো একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। এই সুযোগ যদি মুজাহিদরা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারতেন তবে এটি একটি সফল বিদ্রোহে পরিণত হতে পারত।
মুজাহিদদের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন ছিল। জনসমর্থন কাজে লাগিয়ে হয়তোবা মুজাহিদরা একটি স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করতে পারতেন। আশেপাশের অঞ্চলগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। এছাড়াও, পরিস্থিতি, সক্ষমতা ও জনসমর্থন কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার যুবককে নিজেদের দলভুক্ত করাও সম্ভব ছিল। তারপর মুজাহিদদের জন্য সহজেই শত্রু ঘাঁটিগুলিতে আক্রমণ করা এবং বিপুল পরিমাণ গনিমত লাভ করার সুযোগও ছিল। ২০১৬ সালে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনেক এলাকায় সাধারণ নাগরিকদের দ্বারাই (নিরস্ত্র পুরুষ ও মহিলারা) শত্রু ঘাটিগুলোতে আক্রমণ ও গনিমত লাভের অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছিল। কাজেই মুজাহিদরা ব্যাপক আক্রমণ চালাতে পারতেন এটা সহজেই বোধগম্য।
সৈয়দ সালাহউদ্দীন ছিল কাশ্মীরের সেময়কার তথাকথিত জিহাদি নেতা। এই সৈয়দ সালাহউদ্দীনই, পাকিস্তানের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর নির্দেশে কাশ্মীরিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসে। সে, তার কর্মীদের বলেছিল, “এটি শুধু জনগণের আন্দোলন। জনগণের এই আন্দোলনে আমাদের কোনোরকম হস্তক্ষেপ করা যাবে না”। সে তার লোকদের আদেশ দিয়েছিল যেন তারা বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আত্মগোপনে থাকে। এবং এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ না করে।
প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তান এবং তার সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাশ্মীরের জিহাদকে কখনই নিজের পায়ে দাঁড়াতে দেয়নি। বরঞ্চ, তারা সবসময় মুজাহিদ ও কাশ্মীরের মানুষদের নিরস্ত্র করতে চেয়েছে। তারা চেয়েছে, কাশ্মীরিরা সশস্ত্র জিহাদ বাদ দিয়ে যেন কেবল নিস্ফল রাজনীতি এবং অবরোধের মধ্যেই তাদের প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ রাখুক। শুধুমাত্র এ কারণেই ২০১৬ সালের অভ্যুত্থান কাশ্মীরের ইতিহাসের বৃহত্তম ব্যর্থতায় রূপান্তরিত হয়।আর এ ঘটনা সৈয়দ সালাহউদ্দিনের কপালে বিশ্বাসঘাতকতার ছাপ মেরে দিয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদার সম্মানিত আমির, মাওলানা আসেম উমর কাশ্মীর সম্পর্কে তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, কাশ্মীরের মুজাহিদদের নিরস্ত্রীকরণ এবং তাঁদেরকে অনর্থক প্রতিবাদ ও হরতালে লিপ্ত করা -পাকিস্তানি এজেন্সিগুলির ইচ্ছাকৃত ষড়যন্ত্র ছিল। এই ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল – পাকিস্তানের মাটি থেকে কাশ্মীরের সংগ্রামকে নিয়ন্ত্রণ করা। কারণ, কাশ্মীরিদের হাতে যখন কোনও অস্ত্র থাকবে না, তখন অস্ত্র এবং গোলাবারুদের জন্য ভারতের বাইরের কোন রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হতে হবে তাঁদের। আর পাকিস্তান এই সুযোগটায় নিতে চেয়েছিল।
পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সমস্ত প্রশিক্ষণ শিবিরগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল পাকিস্তানি এজেন্সিগুলি। তারপর মুজাহিদদের জন্য আইএসআই-তে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করেছিল। এ কারণেই এ অঞ্চলের অনেক একনিষ্ঠ, আন্তরিক মুজাহিদ আফগানিস্তান এবং ওয়াজিরিস্তানে হিজরত করে চলে গিয়েছিলেন। তাঁরা পাকিস্তানি এজেন্সির অধীনে পরিচালিত জিহাদে সন্তুষ্ট ছিলেন না। এখন আপনারা কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিজেদের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন। কাশ্মীরিরা এই জিহাদের জন্য সবকিছু উৎসর্গ করেছেন। তারপরও এ জিহাদ সফলতার মুখ দেখেনি।
কিন্তু, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, শেষ বিচারের পূর্ব পর্যন্ত পৃথিবীতে জিহাদ জারি থাকবে। মুনাফিক ও মুরতাদদের বিশ্বাসঘাতকতা, পেছন থেকে পিঠে ছুরি বসানো সত্ত্বেও কাশ্মীরের জিহাদ থেমে যাবেনা। নিন্দুকের নিন্দা সত্ত্বেও আল্লাহর ইচ্ছায় এই জিহাদ জারি থাকবে যতক্ষণ না জিহাদের ঢেউ নয়াদিল্লি পর্যন্ত পৌঁছায়। এই জিহাদ জারি থাকবে যতক্ষণ না কুফর ও শিরকের ফিতনা পুরোপুরি নির্মূল হয়। ইনশাআল্লাহ। আর সেই সাথে ইতিহাস মনে রাখবে যে, সৈয়দ সালাহউদ্দীন কাশ্মীর জিহাদের কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলনা, বরং সে ছিল একজন বিশ্বাসঘাতক।
সীমান্তের ওপাশ থেকে কাশ্মীরি জিহাদের ঠিকাদারী করা মানুষদের, আমরা এই অভ্যুত্থানের ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত করছি। তাদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং প্রতারণার জন্য আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই অভিযোগ জানাই। পাকিস্তানি মনিবদের খুশি করার জন্য কাশ্মীরের জনগণের সাথে তারা অনেক বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
তবে, মুশরিকদের বিরুদ্ধে এই অভ্যুত্থানের কিছু ভালো দিকও আছে। এই বিদ্রোহের ঘটনায় দুইটি দলের ভবিষ্যৎ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কাশ্মীরে মুশরিকদের বিরুদ্ধে এই জনবিদ্রোহ প্রমাণ করে দিয়েছে যে গান্ধীবাদী ইসলামিক দলগুলোর (যারা জিহাদ পরিত্যাগ করে এবং শরীয়তের সীমার বাহিরে গিয়ে রাজনীতি করে) কোনো ভবিষ্যৎ নেই। অন্যদিকে,শরীয়তে বৈধ এমন রাজনীতিকে উপেক্ষা করে যারা শুধুমাত্র শক্তি দিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের পদ্ধতির অসারতাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এর মাধ্যমে। এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারেছি যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আহলুস সুন্নাহ ওয়া জামাআহ’র গৃহীত ‘মধ্যম পন্থায়’ সবচেয়ে উত্তম পথ। বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি দুটিই পরিত্যাগ করে তাঁরা সার্বিকভাবে আল্লাহর দ্বীনকে গ্রহণ করে থাকেন।
আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট আর তিনিই উত্তম অবিভাবক।
-----------------------------------------
আবদুল্লাহ সালিম, লেখক, অনুবাদক
Comment