মোদির রাজ্যে
কেমন আছে মুসলিমরা?
কেমন আছে মুসলিমরা?
ভারতে মুসলিম নিধন নতুন কিছু নয়। বর্তমানে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী দল বিজেপির প্রকাশ্য মদদে চলছে মুসলিম দমন। তারই কৌশল হিসেবে ভারতের পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) সংশোধন করা হয়। এই আইনে সুস্পষ্টভাবে মুসলিমদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে আলাদা করা হয়েছে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে- ‘বিদেশ থেকে যেকোনো ধর্মের লোক ভারতে এলে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে, কিন্তু মুসলিমরা পাবে না।’
এর বিরুদ্ধে দিল্লিতে মুসলিম জনগণ ব্যাপক আন্দোলন করেছে। কেবল দিল্লির শাহীনবাগে হাজার হাজার মুসলিম নারী বিক্ষোভে নেমে প্রায় দুই মাস যাবত রাজপথে অবস্থান নেন। সব নির্যাতন উপেক্ষা করেই তারা রাস্তায় থাকে। ভারতের অন্য সব অংশে একইভাবে মুসলিম নারী-পুরুষ এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির উত্তর-পূর্ব অংশে গেরুয়া সন্ত্রাসীরা মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালায়। এই বর্বর পগরমে শতাধিক মুসলমান নিহত হয়। তাদের সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়। পুলিশকে মুসলিম গণহত্যায় সরাসরি অংশ নিতে দেখা। অন্যদিকে, বিজেপির নেতারা এ গণহত্যার মূল হোতারা ভূমিকা পালন ।
কিন্তু গণহত্যার অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে গণহত্যার অন্যতম উসকানিদাতা বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রসহ অন্যান্যদেরকে। উল্টো মালাউন প্রশাসন বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সিআইআই, এনআরসি এবং এনআরপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের অন্যায়ভাবে হয়রারানি বন্ধের প্রতিবাদে গত ২৬ শে জুন শুক্রবার আওরাঙ্গবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন মুসলিম প্রতিনিধি পরিষদের প্রধান জিয়াউদ্দিন সিদ্দিকি। (খবর মিল্লাত টাইমসের।)
দিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী,সাধারণ মানুষ, জনগণের অধিকারের পক্ষে কথা বলা সাংবাদিক ও আন্দোলনে সমর্থন জানানো ব্যক্তিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে জেলে বন্দী করা হচ্ছে। তাই এই অন্যায় জুলুম নির্যাতন বন্ধে মুসলিম প্রতিনিধি পরিষদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় মুসলিমদের ভয়ের বিষয় হলো, কেন্দ্রীয় সরকারের নাকের ডগায়, দিল্লির উত্তর-পূর্ব অংশে এ গণহত্যা চালানো হয়েছে। যদি রাজধানীতে এ রকম হতে পারে, তাহলে রাজধানীর বাইরে কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
ভারতে মালাউনরা জোর করে মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করছে। (‘ঘরওয়াপসি’ বা ঘরে ফেরার নামে, অর্থাৎ তাদের মতে হিন্দু ধর্ম হচ্ছে আসল ঘর। মুসলমানদের ঠিক আসল ঘরে ফিরে আসতে হবে) মায়াজাআল্লাহ। বিজেপির সন্ত্রাসীরা ইসলামপরিপন্থী যোগব্যায়াম মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। যা প্রকাশ্য শিরিক। কেননা যোগব্যায়ামে সূর্যকে প্রণাম করতে হয়; যা আল্লাহ তায়ালা নিষিদ্ধ করেছেন।
এদিকে, ভারতীয় আরএসএস সন্ত্রাসীরা নানা অযুহাতে মুসলমানদের উপর হামলা চালাচ্ছে।
আরএসএস সন্ত্রাসীদের কথা হলো হিন্দু গ্রামের পাশে মুসলিমরা বাড়ি করতে পারবে না। এজন্য মুসলিম ডাক্তার নাইমুল হকের বাড়ি তৈরি বন্ধ করতে কয়েকমাস ধরে হুমকি দিয়ে বলেছে, তাদের কথা না মানলে ফল খারাপ হবে। সব ধরণের বৈধ কাগজপত্র থাকলেও মুসলিম কাউকে বাড়ি করতে দিবে না বলে তারা হুমকি দিতে থাকে। প্রশাসনকে জানানোর পরও কোন পদক্ষেপ নেয় নি। অবশেষে ২১ শে জুন ২০-২৫ জন আরএসএস সন্ত্রাসী অস্ত্র হাতে হামলা চালায় মুসলিম বাড়িতে । ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায়।
সংবাদ মাধ্যম বেঙ্গল নিউজ সূত্রে জানা যায়, হিন্দুত্ববাদীরা সাদ্দাম হোসেন, সরজেমা বিবি, সোনাভান খাতুনকে তলোয়ার ও ভোজালি দিয়ে আক্রমণ করা হয়।
সাদ্দামের পেটের নাড়িভুড়ি বের করে ফেলে। তাঁর মাথাতেও আঘাত করেছে। এক মুসলিম মহিলার স্তন তলোয়ার দিয়ে কেটে দেয়। এমনকি দুষ্কৃতিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি সাদ্দামের গর্ভবতী স্ত্রী সোনা ভান বিবিও। হামলার পর সকলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ভালুকা গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অবস্থা খারাপ দেখে কর্তব্যরত ডাক্তাররা মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে।
এমনিভাবে, ১৮ই জুন এক মুসলিম কাট মিস্ত্রিকে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে পিঠিয়ে হত্যা করেছে। তার নাম ইসরার ।
এমনিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা গেছে ভারতের মসজিদে হিন্দুরা শুকর ছেড়ে দিয়ে মসজিদের পবিত্ররাকে নষ্ট করছে।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক হিন্দু মেয়ে মসজিদে এসে মুসলিমদের সাথে আজান দেওয়া নিয়ে তর্ক বিতর্ক করছে।
আর দিন দিন ভারতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার বেড়েই চলেছে। গো রক্ষার নামে পিটিয়ে মারা, ট্রেনে বাসে জয় শ্রী রাম না বলায় অত্যাচার করা। মুসলিম বলে বাড়ি ভাড়া না দেওয়া, হিন্দিভাষী এলাকাতে মুসলিম অত্যাচার। হিজাব নিয়ে হেনেস্থা, নতুন যোগ হলো বাড়ি করতে বাধা দেওয়া। ।
বিগত ছয় বছরে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস কম করে হলেও সাড়ে তিনশো নতুন শাখা খুলেছে।
এদিকে, ভারতীয় মালাউন বাহিনীর আগ্রাসনে কাশ্মীর এখন মৃত্যুপুরী।
মহামারিতে ভারতজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে, এমন পরিস্থিতিতে দখলকৃত কাশ্মীরে গত কয়েক মাস ধরে ‘জঙ্গি’ দমনের নামে সেনা অভিযান চালিয়ে নীরবে মুক্তিকামী ও বিরোধীদের হত্যা করছে মোদি সরকার। এনকাউন্টারের নামে সেখানে প্রতিদিনই ভারতীয় সন্ত্রাসী বাহিনী হত্যা করছে সাধারণ মানুষ ও স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের।
জুন মাসের নিহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন। কাশ্মীরে গত আগস্ট মাসে স্বায়ত্বশাসন বাতিলের পর থেকে মালাউনদের চাপিয়ে দেওয়া লকডাউন চলছে এখনো। তীব্রতা বাড়ানো হয়েছে সামরিক অভিযানেও।
কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামীদের লক্ষ্য করে ভারতীয় মালাউন সেনাদের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন এক বৃদ্ধ বেসামরিক লোক। মৃত দাদুর রক্তমাখা দেহের উপর বসে অসহায়ভাবে কাঁদছে তিন বছরের শিশু। গত ১ জুলাই বুধবার সকাল থেকে এই ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
অসহায় শিশুটির ছবি দেখে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নাগরিকরা। চোখের সামনে গুলি চলার ঘটনা দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা শিশুর ভয়ার্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সকালে গাড়ি করে দাদুর সঙ্গে শ্রীনগর থেকে হান্ডওয়ারা যাচ্ছিলো বাচ্চাটি। এসময় ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের ধাওয়া করছিলো। এসময় মালাউন সন্ত্রাসীদের গুলির ঝাঁকের মধ্যে পড়ে যায় গাড়িটি। তাতেই ঝাঁঝরা হয়ে যায় ওই অবুঝ দাদুর দেহ।
দখলদার ইসরায়েলের কায়দায় কাশ্মীর দখল করতে চায় মালাউন মোদি:-
প্রায় ২৫ হাজার ভারতীয়কে ভারত দখলকৃত কাশ্মীরে নাগরিকত্ব সনদ দেশটির সরকার। এর মাধ্যমে বিজেপি সরকার কাশ্মীরে জনসংখ্যার বিন্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলো।
এই নাগরিকত্ব সনদের ফলে এখন থেকে সেখানে অ-কাশ্মীরিরা স্থায়ী বসতি গড়তে পারবে এবং সরকারি চাকরির সুযোগ পাবে।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সরকারের এই পদক্ষেপে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে কাশ্মীরের জনগণ। তাদের অভিযোগ, নতুন এই আইনকে হাতিয়ার করে দেশের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের জনসংখ্যার বিন্যাস বদলানোর ছক করছে বিজেপি সরকার।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ৩৫এ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের রাজ্য ও স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি সরকার। বাতিল করা হয় কাশ্মীরের নাগরিকত্ব সুরক্ষা আইনও। এর আগে জম্মু-কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান। সেই সংবিধান অনুযায়ী, বাইরের রাজ্যের কেউ ভূস্বর্গের স্থায়ী নাগরিক হতে পারতেন না। জমি, স্থাবর সম্পত্তির মালিকও হতে পারতেন না। তবে এখন থেকে ভারতীয়রা কাশ্মীরের নাগরিকত্বের জন্য তহশিলদারের কাছে আবেদন করতে পারবেন। শর্ত পূরণ করলে যে কাউকে এই সনদ দিতে কোনো কর্মকর্তা অকারণে দেরি করলে তাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
ভারতের মুসলমান সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। এটা বিশাল সংখ্যা এবং শক্তি, যা যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে মুসলিমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। চেষ্টা করলেই আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে মুক্তির উপায় বের হবে। হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনে চুপ করে না থেকে আল্লাহ তায়ালার বিধানে ফিরে আসতে হবে মুসলিমদের। তাওহিদের পতাকাতলে একত্রিত হয়ে মালাউন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কিতালের পথে ফিরে আসার বিকল্প নেই। বিজয় মুসলমানদেরই হবে বিইযনিল্লাহ।
লেখক: উসামা মাহমুদ, প্রতিবেদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/07/10/39851/
Comment