শরীয়াহ ও আল ক্বায়েদা প্রশ্নে অনড় তালিবানঃ বিজয়ী বার্তায় আমিরের দৃঢ় প্রত্যয়
নিজেদের অস্তিত্বের জন্যে আফগান সরকার বেপরোয়া ও মরিয়া হয়ে উঠছে। এমতাবস্থায় দোহা চুক্তি পরবর্তী প্রথম ঈদ বার্তায় মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাহ সরকার ও তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্যে ঘোষণা করেছেন সাধারণ ক্ষমা।
তালিবানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভয়েস অব জিহাদে ২০ মে প্রকাশিত ওই বার্তায় আবারও ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা করে তালিবান আমির বলেন, “আমাদের জিহাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন, আমাদের দেশের স্বাধীনতা এবং একটি ইসলামি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যে জনগণ ও মুজাহিদদের ত্যাগ, কষ্ট ও দুর্দশা কারোই অজানা নয় … ।”
তিনি আরো বলেন, “শত্রুপক্ষের যারা শত্রুতা ত্যাগ করবে এমন সবার জন্যে আমরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করছি। আমরা সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, এই সুযোগের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে। এবং সেই ইসলামি হুকুমাতের পথে প্রতিবন্ধক না হতে – যা লক্ষ শহীদ, জখমী, বিকলাঙ্গ, এতিম, বিধবা আর নিপীড়িত আফগানদের ঐকান্তিক চাওয়া।”
সম্মানিত আমিরুল মুমিনীন মোল্লা হায়বাতুল্লাহ’র সর্বশেষ এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করে আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসির মুখপত্র Long War Journal লিখেছে, “আফগান সরকারের বিপক্ষে তালিবান নিজেদেরকে বিজয়ী হিসেবেই দেখছে। এবং তাদের শত্রুপক্ষের জন্যে ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা বিজয়ীরই বার্তা। এবং নিশ্চিতভাবেই আমিরাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে শরীয়াহ কায়েম করবে।” [১]
২৯ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত দোহা চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই অন্তর্বর্তীকালীন শান্তি চুক্তি হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বারবার এই চুক্তিকে শান্তির জন্যে সমঝোতা বলে উল্লেখ করে আসলেও তালিবান যথারীতি দাবি করে আসছে মোল্লা বারাদাররা (শান্তি আলোচনায় তালিবানের প্রধান আলোচক) কোনো শান্তি চুক্তিতে সই করেননি।
তালিবানের দৃষ্টিতে দোহাতে আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো বাহিনী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের জন্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রূপরেখার ব্যাপারে যুদ্ধরত দুই পক্ষ (তালিবান ও যুক্তরাষ্ট্র) সমঝোতায় পৌঁছেছে। এটা কোনো শান্তি চুক্তি না। এবং কোনো অস্ত্রবিরতিও না।
Long War Journal জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, আফগান সরকারসহ আরো অনেকের বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও তালিবান কোনোরকম যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে আগ্রহী হয়নি। তাহলে ? তারা কি শান্তি চায় না?
গত ১৯ মে অপারেশন ফ্রিডম’স সেন্টিনেল (আমেরিকার ঘোষিত বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধের বর্তমান পর্যায়ের সামরিক নাম) এর ইন্সপেক্টর জেনারেলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের অবস্থা পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে । সেখানে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে, তালিবান নেতৃত্ব আল-ক্বায়েদার সাথে সম্পর্ক ভাঙ্গার ব্যাপারে উৎসাহী নয়।
আল-ক্বায়েদার জেনারেল কমান্ড দোহা চুক্তিকে বড় বিজয় হিসেবে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি, আমিরাতে ইসলামিয়ার প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে যোগ দিতে লোকদেরকে উৎসাহিত করেছে। অথচ আমেরিকা বারবার বলেছে, তারা তালিবানকে আর শত্রু হিসেবে দেখতে চায় না বরং সমঝোতার মাধ্যমে আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল সরকারের পাশাপাশি আল-ক্বায়েদার মত দলগুলোর জন্যে আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করতে চায়। এখানেও প্রশ্ন এসে যায় – আমেরিকার ইচ্ছাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাহলে কী চায় তালেবান?
তালিবান নেতাদেরকে মার্কিনিদের সাথে এক টেবিলে দেখে, অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষকও ভেবেছিলে – তালিবান হয়ত আফগানিস্তানে শান্তি স্থাপনের জন্যে ভবিষ্যৎ আফগান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এমনকি গণতান্ত্রিক নির্বাচনেও অংশ নিতে পারে। আর এমনটি হলে, আল-ক্বায়েদার সাথে দীর্ঘ সম্পর্ক থেকেও তারা নিজেদেরকে গুটিয়ে নেবে। এমনটাই আশা করেছিল এসব বিশ্লেষকরা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দোহা চুক্তির কোনো অংশেই এমন কোনো সম্ভাবনার উল্লেখ নেই। বরং যা আছে তা কেবল তালিবানকেই আফগানিস্তানের গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে মেনে নিতে পশ্চিমা বিশ্বকে বাধ্য করা।
উদাহরণস্বরূপ, চুক্তিতে থাকা বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসার প্রসঙ্গ যেমন বলা যায় তেমনি ভবিষ্যৎ সরকারের ব্যাপারে তালিবানের উদ্যোগে আফগানিস্তানের সকল অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীর সাথে আলোচনার প্রসঙ্গও বলা যেতে পারে। বন্দী বিনিময়ের ব্যাপারে সংখ্যার তারতম্য এবং আন্তর্জাতিক জিহাদী গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কোন পরিষ্কার শর্তের অনুপস্থিতি – উল্লেখযোগ্যভাবে এই মতের পক্ষেই সায় দেয় যে, চুক্তির শর্তগুলো প্রস্তাবনার ক্ষেত্রে তালিবানই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিল।
এরকমটা যদি আসলেই ঘটে থাকে, তাহলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ সেটা আমেরিকান জনগণের সামনে স্বীকার করবেনা।এটাই অনুমেয়।উল্টো প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মার্কিন পক্ষের প্রধান মধ্যস্থতাকারী সকলেই বারবার আমেরিকা এই চুক্তির মধ্য দিয়ে কী কী অর্জন করতে পারল বা পারবে সেই ফিরিস্তিই শুনিয়ে গেছে। যার মধ্যে আল-ক্বায়েদাকে তালিবান থেকে বিচ্ছিন্ন করে বৈশ্বিক জিহাদকে দুর্বল করে ফেলা আমেরিকার জন্যে অন্যতম অর্জন হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে।
তবে মার্কিন জনগণের কাছে গোপন করা হলেও মার্কিন সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব ভালভাবেই বুঝেছে। এরকম ধারণার পেছনে একটা শক্ত কারণ হচ্ছে দোহা সমঝোতার এক সপ্তাহের মধ্যেই রাশিয়ার সাথে আমেরিকা আরেকটি সমঝোতা করেছে। পাকিস্তানি ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডন তাদের মার্চ ৯ সংখ্যায় হোয়াইট হাউজ ও ক্রেমলিনের যৌথ বিবৃতি উদ্ধৃত করে লিখেছে, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমিরাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রত্যাবর্তনকে যাতে কোনভাবেই মেনে না নেয় কিংবা এই প্রক্রিয়ায় কোন সহযোগিতা না করে – সে বিষয়ে রাশিয়া ও আমেরিকা একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।” [২]
এই যৌথ বিবৃতিতে রাশিয়া ও আমেরিকার পক্ষ থেকে তালিবানকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, তারা যেন আল-ক্বায়েদা ও অন্যান্য বৈশ্বিক জিহাদীদেরকে আফগানের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়ার ব্যাপারে সত্যিকার ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়। তারা আরো বলেছে, সব আফগানের জন্যে অংশগ্রহণমূলক একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সামধানের মাধ্যমেই যথাযথ ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
সেই সাথে রাশিয়া ও আমেরিকা ভবিষ্যৎ ইসলামি সরকারে তালিবানের সক্রিয় অংশগ্রহণকেও স্বাগত জানিয়েছে। সহজেই অনুমেয় এখানে তারা যে ইসলামি সরকারের কথা বলছে তা ২০০১ পূর্ববর্তী ইসলামি ইমারাত নয় বরং পাকিস্তান কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের মত পশ্চিমাবান্ধব নামমাত্র ইসলামি রাষ্ট্রই বোঝানো হচ্ছে। এই ব্যাখ্যা ব্যতীত রূশ-মার্কিন যৌথ বিবৃতিতে একই সাথে ইসলামি সরকারের জন্যে সাধুবাদ এবং ইসলামি ইমারাতে বিরোধিতার মর্মোদ্ধার অসম্ভব!
একই সময়ে তালিবানও তাদের ওয়েবসাইট ভয়েস অব জিহাদে একটি নতুন ফতোয়া প্রকাশ করে। মার্চের ৫ তারিখে পশতু ভাষায় প্রকাশিত ওই ফতোয়াতে ঘোষণা দেয়া হয়, “আমিরাতে ইসলামিয়ার আমিরই আফগানিস্তানের একমাত্র বৈধ রাষ্ট্রপ্রধান, আমেরিকার সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি এই বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না”। তালিবান আমিরের “ইসলামি দায়িত্ব হচ্ছে বিদেশি সৈন্যরা আফগানিস্তান ত্যাগের পর দেশে একটি ইসলামি শাসনব্যবস্থা কায়েম করা..। বৈধ একজন আমিরের (মোল্লা হায়বাতুল্লাহ) উপস্থিতিতে দেশে আর অন্য কোনো রাষ্ট্রনেতা থাকতে পারে না”।
এই ফতোয়াতে আরো বলা হয়েছে, “যতক্ষণ পর্যন্ত বিদেশি দখলদারিত্বকে এর শেকড়সহ সম্পূর্ণভাবে উপড়ে ফেলা না হচ্ছে, এবং একটি ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মুজাহিদরা সশস্ত্র জিহাদ চালিয়ে যাবেন। এবং ইসলামি শাসন কায়েমের জন্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যহত রাখবেন”। এখানে স্পষ্ট যে, মার্কিন সৈন্যরা আফগানিস্তান ত্যাগ করলেই তালিবানের যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে না।
ভয়েস অব জিহাদে ২৮ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি বিবৃতির থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়। সেখানে যা বলা হয়েছিল তার স্পংক্ষিপ্তরূপ হচ্ছে , “আমিরাতে ইসলামিয়া উদারহস্তে এই মৃত্যু আর ধ্বংস কেবল তুচ্ছ মন্ত্রিত্ব আর ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার জন্যে মেনে নেয়নি। বরং একটি ন্যায়পরায়ণ ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে ইসলামি আইন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং জাতীয় স্বার্থের নিরিখে দেশকে গড়ে তোলার যে আকাঙ্ক্ষা আফগান জনগণ লালন করে, সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের জন্য মেনে নিয়েছে। আফগানিস্তানের মানুষ এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যেই তাদের সন্তানদের স্বানন্দে কোরবানি করে। এবং জনগণের সত্যিকার আশা- আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে আমিরাতে ইসলামিয়াও এই উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং স্বশস্ত্র প্রচেষ্টা বন্ধ করবে না।”
অপারেশন ফ্রিডম’স সেন্টিনেলের প্রকাশিত নতুন রিপোর্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করা যায়। সেই রিপোর্টে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তালিবানের ওপর যথাক্রমে ৪১৭ এবং ২২৮ টি বিমান হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মার্চ মাসের হিসাব প্রকাশ করা হয়নি। সেই সাথে গোপন রাখা হয়েছে শত্রুপক্ষের শুরু করা হামলার জবাবে মার্কিন বাহিনীর পাল্টা হামলার হিসাব। অন্যদিকে, কেবল মার্চের শেষ দুই সপ্তাহেই আফগান সরকারি বাহিনীর ওপর ৩০০’র বেশি হামলা চালিয়েছে তালিবান। এবং ২৯ ফেব্রুয়ারির পরের ৪৫ দিনে পুরো আফগানিস্তান জুড়ে তাদের হামলার সংখ্যা ৪৫০০’র বেশি!
রয়টার্স জানিয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তালিবানদের হামলা এবার ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, দোহা চুক্তির আগের সপ্তাহকে যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবানের সম্মতিতে ‘সহিংসতা পরিহার’ সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়েছিল। তখন তালিবানদের হামলার পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় । আর এটা প্রমাণ করে তালিবান নেতৃত্ব বেশ শক্তভাবেই তৃণমূল মুজাহিদদেরকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখেন।
এখন পর্যন্ত দোহা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনে সবচেয়ে অগ্রবর্তী আফগান সরকার। ওই চুক্তি ও এ বিষয়ে আলোচনা চলাকালেই তালিবানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছিল – আফগান সরকার ও এর প্রতিরক্ষা বাহিনী চুক্তির আওতার বাইরে। এবং এদের ওপর আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই বন্ধ করা হবে না। তবে, সৈন্য প্রত্যাহারের শর্তে বিদেশী বাহিনীর ওপর হামলা বন্ধ রাখা হবে। তাই, চুক্তি পরবর্তী তালিবানদের হামলার পরিসংখ্যান মোটেও চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন নয়, সেটা সব পক্ষই জানে।
দোহা চুক্তির ফলে আফগান সরকারই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এমনকি আন্তঃআফগান সংলাপেও তারা কেবল অন্যান্য গোত্র, গোষ্ঠী বা দলের মতই অংশ নেবে, গ্রহণযোগ্য বা ক্ষমতাসীন সরকার হিসেবে নয়! এই মনস্তাত্বিক পরাজয়ের গ্লানি প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি উগরে দিয়েছে চুক্তির পরেই বন্দী বিনিময় ভেস্তে দিয়ে। তালিবানও আক্রমণ জোরদার করে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
সবশেষ গত ১৪ মে, আফগান সরকার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তালিবানের বিরূদ্ধে সর্বাত্মক হামলার ঘোষণা দিয়েছে। গজনী ও গারদেজ শহরে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা দপ্তরের ওপর ইস্তিশহাদী হামলার মাধ্যমে তালিবানও এর জবাব দিয়েছে। আশরাফ গণি যখন ব্যাপক যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছেন, মোল্লা হায়বাতুল্লাহ তখন শত্রুর জন্যে ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। তালিবানের ক্ষমা ঘোষণা যে দুর্বলতা নয় সেটা পুরো বিশ্বই ভালোভাবে জানে।
তালিবানের ভাষায় পুতুল ও ভাঁড় আশরাফ গণি ও তার সরকার যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েও আরো একবার পরাজিত হল। অবশ্য তাদের পক্ষে মরিয়া লড়াই কিংবা তালিবান ঘোষিত ক্ষমার সুযোগ নেয়া ছাড়া অন্য কোনো কৌশল আর অবশিষ্ট নেই। এরকম পরিস্থিতিতে আশরাফ গণি সরকার ক্ষমার সুযোগ নিতে চাইলে, তাদের প্রভু আমেরিকা যেমন মেনে নেবে না – তেমনি তারা ন্যাটোবাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগ করা সমর্থন করতে পারবে না। কারণ মাত্র কয়েক হাজার হলেও এই ন্যাটোবাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে আফগান সেনাবাহিনী টিকে আছে।
দোহা চুক্তিকে যারা শান্তির প্রথম ধাপ ভেবেছিলেন – আশা করি তাদের ভুল ভেঙ্গেছে। তালিবানের জন্যেও কাবুলের নিয়ন্ত্রণ যে আলোচনার মাধ্যমে আসবে না – সেটা স্পষ্ট। তালিবান যেহেতু ২০০১ পূর্ববর্তী ইসলামি ইমারাত ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য থেকেও সরে আসছে না, ফলে ন্যাটোজোটও হয়ত সহসা আফগানিস্তান ত্যাগ করছে না। সেই সাথে ভঙ্গুর আমেরিকা প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার সাথে একাত্ম হচ্ছে ইসলামি ইমারাতের ফিরে আসা ঠেকাতে। যদিও ময়দানের মুরোদ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ই দেখিয়ে শেষ করেছে আফগানের মাটিতে। আফগান সরকারও একাকি নিজেদেরকে রক্ষা করতে অসমর্থ।
তাহলে ময়দানে কে রুখবে তালিবানকে? নতুন কোনো মার্কিন-রূশ মদদপুষ্ট প্রক্সি-কোয়ালিশনকে আমরা দেখব আফগানের মাটিতে? নাকি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির তোয়াক্কা না করে তালিবান দ্বিতীয়বার ইসলামি রাষ্ট্র গড়বে খুব দ্রুতই? সময়ই বলে দেবে কোথাকার জল কোথায় গড়াল। তবে আফগানের পাহাড়ি নদীগুলোর মতই আফগানের ভবিষ্যৎও তরঙ্গে উত্তাল সেকথা আমরাই বলতে পারি!
আফগান যুদ্ধের ওপর জাতিসংঘের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, তালিবানই আফগান যুদ্ধের মূল নিয়ন্ত্রক। যুদ্ধ ও রাজনীতির তরঙ্গ যতই উত্তাল হোক তালিবানের প্রভাব, শক্তি, কৌশল, ধৈর্য, সাহস, ত্যাগ আর সত্যনিষ্ঠতা বিশ্ববাসীর সামনে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি স্পষ্ট – আর সেটাই তালিবানের জন্যে বিজয়ীর তকমা বয়ে আনছে খোদ মার্কিনীদের মুখ থেকেও।
লেখক: আবিদ বিন আব্দুল্লাহ
সূত্রঃ
[১] Taliban emir demands ‘Islamic government’ for Afghanistan- https://tinyurl.com/yad5auq2
[২] US, Russia not to accept ‘Islamic emirate’ in Afghanistan- https://tinyurl.com/ya36dlhq
Comment