ইসরায়েল-আমিরাত ‘শান্তিচুক্তি’:
নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের জাল
নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের জাল
গতো ১৩ই আগস্ট পারস্য-উপসাগরীয় প্রথম দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
চুক্তির ব্যাপারে দুই দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চলমান মধ্যপ্রাচ্য-ইসরায়েল সংকট নিরসন এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধের লক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘এ এক বিরাট সফলতা। আমাদের ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু ইসরাইল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিতে পৌঁছেছে।’
সমঝোতার অংশ হিসেবে শীঘ্রই ইসরায়েলের সাথে বিনিয়োগ, পর্যটন, সরাসরি বিমান চলাচল, নিরাপত্তা ও পারস্পরিক দূতাবাস স্থাপনের পদক্ষেপ নেবে আরব-আমিরাত।
চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় আনন্দে ভাসছে তেলআবিব। সিটি হলের দেয়ালে দুই দেশের পতাকার আলোক প্রদর্শনী করে চুক্তি উদযাপন করেছে দেশটি। অন্যদিকে ক্ষোভে ফুঁসছেন ফিলিস্তিনিরা। এই চুক্তিকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে মনে করছেন আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক বিশ্লেষকগণ।
এক বিবৃতিতে হামাস এই চুক্তিকে ফিলিস্তিনিদের জন্য ছুরিকাঘাত এবং গভীর ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছে।
পর্যালোচনা:
১. তথাকথিত এই শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলকে মূলত বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, চুক্তির কোথাও স্পষ্টভাবে পশ্চিম তীর দখল বন্ধের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি৷ এটা মূলত একধরনের আই-ওয়াশিং।
২. চুক্তির ফলে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে লাভবান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই চুক্তি ট্রাম্পের জন্য দাবার চাল। নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়নেই ট্রাম্প এতোটা যেচে পড়ে চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করে গেছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব মোকাবিলায় এই ‘শান্তিচুক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ডি-ফ্যাক্টো।
৩. বিবৃতিতে আমিরাত দাবি করেছে, এই চুক্তি ‘টু-স্টেট সল্যুশন’ কার্যকরে ভূমিকা রাখবে। অথচ খোদ ফিলিস্তিনিরা ‘টু-স্টেট সল্যুশনের’ বিরোধিতা করেন। সচেতন মহলের জানা আছে কথিত ‘দুই দেশ সমাধান নীতি’ অত্র অঞ্চলে ইসরায়েলের একক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার নামান্তর। এছাড়াও ‘টু-স্টেট সল্যুশনস’ এর ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের নির্ধারিত সীমান্তলাইন ইসরায়েল মেনে নেয়নি; বরং তারা নিজেদের চাহিদামতো সীমারেখা নির্ধারণ করার ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত। তাহলে এই ‘টু-স্টেট সল্যুশন’ এর পক্ষে সাফাই গাওয়া ইসরায়েলের পক্ষ অনুসরণ নয়কি? এটা কীভাবে ফিলিস্তিনিদের সুবিধার কথা বিবেচনায় হতে পারে?
৪. চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিরা তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, চলমান সমঝোতার মাধ্যমে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের ব্যাপারে আপোষ করা হয়েছে । এই চুক্তির ফলশ্রুতিতে আগামী দিনে উপসাগরীয় অন্যান্য দেশগুলোও আরব আমিরাতের দেখানো পথেই হাঁটবে। ফলে সেটা ফিলিস্তিনিদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। অত্র অঞ্চলে ইসরায়েলের শক্তিমত্তা আরো বাড়বে; পক্ষান্তরে কোণঠাসা হয়ে পড়বে ফিলিস্তিন। ট্রাম্পও সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। চুক্তি পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা রাখি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য ইসলামি দেশগুলোও ইসরায়েলের সাথে সমঝোতার পথে হাঁটবে।’
৫. চুক্তির দুদিন না পেরুতেই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার রাতভর চলে এই হামলা। এতে হতাহত হয়েছেন শতশত ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণ। এসব হামলাই প্রমাণ করে সদ্যসমাপ্ত চুক্তি ফিলিস্তিনিদের সাথে আরব-আমিরাতের গাদ্দারি ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
মূলত আরব আমিরাতের তাগুত শাসক জাতিরাষ্ট্রের সুবিধা-অসুবিধা, আঞ্চলিক হিসেবনিকেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সন্তুষ্টির কথা মাথায় রেখেই এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এটা ফিলিস্তিনিদের জন্য বিন্দুমাত্র ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে না।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চেপে বসা তাগুত শাসকগুলো মুসলিমদের বিরোধিতায় সিদ্ধহস্ত। ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখতে এরা দীন-ধর্ম বিকিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমাদের চাটুকারিতাই এখন তাদের প্রধান এবং একমাত্র ধর্ম।
লেখক: আবু নাফি আল-হিন্দি
Comment