দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, দায় কার?
কেউ কারো উপর জুলুম করেছে এটি শুনলেই চোখের সামনে যেন ভেসে উঠে অন্যায়ভাবে অত্যাচারের নানা দৃশ্য । কিন্তু কারো মনে হয়তো আসেই না নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিও খেটে খাওয়া মানুষের উপর কত বড় জুলুম। অতি সম্প্রতি দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বলাবাহুল্য, বর্তমানে বেশির ভাগ দ্রব্যের মূল্য ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে কয়েকদিনের ব্যবধানে ১শত টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। বছর দেড়-দুয়েক আগে পেঁয়াজ খুচরা বাজারেই বিক্রি হতো ২০-২৫ টাকা দরে। এখন আলু আর চালের দামও আকাশছোঁয়া। কাঁচামরিচ, বেগুন ও অন্যান্য সব্জির দামও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ তিনগুণ হয়েছে। ২০ টাকার শসা বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এভাবে শাকসবজির পাশাপাশি বেড়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ প্রভৃতির মূল্যও।
বর্ষা-বন্যায় এসব পণ্যের দাম কিছুটা বাড়ে তবে এবার যেভাবে বেড়েছে ততটা নয়। বাজারে এবার দ্রব্যমূল্য বেড়েছে অবিশ্বাস্যভাবে। অথচ করোনা সংকটে এবার মানুষের আর্থিক সঙ্গতিও কমেছে; পকেটে পয়সা নেই। এসব নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও তা প্রশাসনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে যথেষ্ট নয়। দেশের সরকার আছে উন্নত দেশের স্বপ্নে বিভোর। তাদের ভাবখানা এমন যে, সব ঠিকঠাক, দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। হাত-পা ঝাড়া দিয়ে একটা ফিটফাট ভাব বজায় রাখার কসরত চারদিকে। অথচ কাঁচা বাজারের আগুন মেঘ ছুঁইছুঁই; মানুষ না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আলুর দাম বাড়ার পেছনে উৎপাদন ও মজুদ কম, ত্রাণ ও রপ্তানি বাড়াকে কারণ হিসেবে তুলে ধরলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাজারে সুশাসনের অভাবেই দাম নিয়ন্ত্রণহীন। আবার কৃষিমন্ত্রী যে চারটি কারণ তুলে ধরেছে, সেগুলোর দায়ও সরকার এড়াতে পারে না। কেননা উৎপাদন কম হওয়ার কারণ হলো ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা কৃষিপণ্য উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। আর কৃষিপণ্য উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়াতেই বেশি দামে বিক্রি করেও কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পান না; উৎপাদনে খরচ বেশি হয় উৎপাদন সহায়ক পণ্যের দাম বেশি হওয়ায়। আর এ সবকিছুর দাম বেশি হয় সরকারের আরোপিত করের কারণে।
এরপর প্রশাসনিক দুর্বলতা, গাফলতি, দুর্নীতির কারণে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরকারীভাবে মজুদ করা যায় না। ফলে তা চলে যায় সিন্ডিকেট চক্রের হাতে। আবার সরাসরি কৃষকদের থেকে না কিনে সরকারও কিনে মজুদদার সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে। সিন্ডিকেট চক্রই আবার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায়। তাছাড়া, সরকারের আমদানি-রপ্তানি নীতিও দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ। বিশেষভাবে, বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ার পেছনে যে সরকারের ভারততোষণ নীতি ও কূটনৈতিক দুর্বলতাই প্রধান কারণ, তা স্পষ্ট।
অন্যদিকে পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ। আর পুঁজিবাদি অর্থব্যবস্থা ও নাস্তিক্যবাদী সরকার ব্যবস্থাই এ ধরনের নৈতিক অবক্ষয় ঘটিয়ে থাকে। মানুষের মধ্যে প্রবল ভোগ-প্রবণতা অন্যায় মজুদদারি ও মূল্যবৃদ্ধিতে উৎসাহিত করে।
দেখা যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী প্রত্যেকটি কারণের পেছনেই সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সরকারকে দায়ী করলে তা মোটেই অত্যুক্তি হবে না।
লেখক: উসামা মাহমুদ, প্রতিবেদক আল-ফিরদাউস নিউজ
কেউ কারো উপর জুলুম করেছে এটি শুনলেই চোখের সামনে যেন ভেসে উঠে অন্যায়ভাবে অত্যাচারের নানা দৃশ্য । কিন্তু কারো মনে হয়তো আসেই না নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিও খেটে খাওয়া মানুষের উপর কত বড় জুলুম। অতি সম্প্রতি দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বলাবাহুল্য, বর্তমানে বেশির ভাগ দ্রব্যের মূল্য ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে কয়েকদিনের ব্যবধানে ১শত টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। বছর দেড়-দুয়েক আগে পেঁয়াজ খুচরা বাজারেই বিক্রি হতো ২০-২৫ টাকা দরে। এখন আলু আর চালের দামও আকাশছোঁয়া। কাঁচামরিচ, বেগুন ও অন্যান্য সব্জির দামও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ তিনগুণ হয়েছে। ২০ টাকার শসা বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এভাবে শাকসবজির পাশাপাশি বেড়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ প্রভৃতির মূল্যও।
বর্ষা-বন্যায় এসব পণ্যের দাম কিছুটা বাড়ে তবে এবার যেভাবে বেড়েছে ততটা নয়। বাজারে এবার দ্রব্যমূল্য বেড়েছে অবিশ্বাস্যভাবে। অথচ করোনা সংকটে এবার মানুষের আর্থিক সঙ্গতিও কমেছে; পকেটে পয়সা নেই। এসব নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও তা প্রশাসনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে যথেষ্ট নয়। দেশের সরকার আছে উন্নত দেশের স্বপ্নে বিভোর। তাদের ভাবখানা এমন যে, সব ঠিকঠাক, দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। হাত-পা ঝাড়া দিয়ে একটা ফিটফাট ভাব বজায় রাখার কসরত চারদিকে। অথচ কাঁচা বাজারের আগুন মেঘ ছুঁইছুঁই; মানুষ না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আলুর দাম বাড়ার পেছনে উৎপাদন ও মজুদ কম, ত্রাণ ও রপ্তানি বাড়াকে কারণ হিসেবে তুলে ধরলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাজারে সুশাসনের অভাবেই দাম নিয়ন্ত্রণহীন। আবার কৃষিমন্ত্রী যে চারটি কারণ তুলে ধরেছে, সেগুলোর দায়ও সরকার এড়াতে পারে না। কেননা উৎপাদন কম হওয়ার কারণ হলো ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা কৃষিপণ্য উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। আর কৃষিপণ্য উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়াতেই বেশি দামে বিক্রি করেও কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পান না; উৎপাদনে খরচ বেশি হয় উৎপাদন সহায়ক পণ্যের দাম বেশি হওয়ায়। আর এ সবকিছুর দাম বেশি হয় সরকারের আরোপিত করের কারণে।
এরপর প্রশাসনিক দুর্বলতা, গাফলতি, দুর্নীতির কারণে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরকারীভাবে মজুদ করা যায় না। ফলে তা চলে যায় সিন্ডিকেট চক্রের হাতে। আবার সরাসরি কৃষকদের থেকে না কিনে সরকারও কিনে মজুদদার সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে। সিন্ডিকেট চক্রই আবার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায়। তাছাড়া, সরকারের আমদানি-রপ্তানি নীতিও দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ। বিশেষভাবে, বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ার পেছনে যে সরকারের ভারততোষণ নীতি ও কূটনৈতিক দুর্বলতাই প্রধান কারণ, তা স্পষ্ট।
অন্যদিকে পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ। আর পুঁজিবাদি অর্থব্যবস্থা ও নাস্তিক্যবাদী সরকার ব্যবস্থাই এ ধরনের নৈতিক অবক্ষয় ঘটিয়ে থাকে। মানুষের মধ্যে প্রবল ভোগ-প্রবণতা অন্যায় মজুদদারি ও মূল্যবৃদ্ধিতে উৎসাহিত করে।
দেখা যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী প্রত্যেকটি কারণের পেছনেই সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সরকারকে দায়ী করলে তা মোটেই অত্যুক্তি হবে না।
লেখক: উসামা মাহমুদ, প্রতিবেদক আল-ফিরদাউস নিউজ
Comment